দীর্ঘদিন স্কুলে পড়াতে গিয়ে প্রায় প্রত্যেক বছরেই দেখেছি, মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়টি ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটু কঠিন বলে মনে হয়। অনেক ছাত্র ছাত্রীই এই অধ্যায়টি ঠিক করে বুঝে উঠতে পারে না। তাদের কাছে অন্যান্য অধ্যায় থেকে এটি অনেক বেশি জটিল বলে মনে হয়।
ষষ্ঠ অধ্যায়ের সিলেবাসকে মাথায় রেখে কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা ইতিপূর্বেই আমাদের ওয়েবসাইটে করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমার নিজের স্কুলের এবং HISTORY CLASS ROOM এর বহু অনুরাগী ছাত্র ছাত্রী মাধ্যমিকের উপযোগী করে এই অধ্যায়টি আলোচনার অনুরোধ করে আসছিলো। তাদের প্রয়োজন ও সুবিধার দিকে তাকিয়ে এই অধ্যায়টির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি পর্বে ভাগ করে বিশ শতকে কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করবো। পরে শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে এরকমই কয়েকটি পর্বে ভাগ করে আলোচনা করা হবে।
বিশ শতকে কৃষক আন্দোলন, পার্ট - ০১ |
(ক.) বিশ শতকে কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি কিভাবে পড়তে হবে, এবং পড়বার সময়ে কোন কোন দিক গুলিকে খেয়াল রাখতে হবে?
বিশ শতক বলতে ১৯০১ থেকে ২০০০ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালকে বোঝায়। এই সময়কালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতে অসংখ্য কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিলো। বিশ শতকে ভারতে প্রধান চারটি জাতীয়তাবাদী গনআন্দোলন সংগঠিত হয়েছিলো। যথা -
- ১৯০৫ খ্রিঃ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন
- ১৯২১ খ্রিঃ অসহযোগ আন্দোলন
- ১৯৩০ খ্রিঃ আইন অমান্য আন্দোলন এবং
- ১৯৪২ খ্রিঃ ভারত ছাড়ো আন্দোলন।
- কে কোন কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
- বিভিন্ন কৃষক আন্দোলনের নাম, স্থান বা এলাকা,
- বিভিন্ন কৃষক সভার নাম, প্রতিষ্ঠাতার সাল, ইত্যাদি বিষয় গুলিকে পৃথক তালিকা করে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
প্রায় ৭ টি পর্বে আমরা বিশ শতকে কৃষক আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু করছি। আশা করছি, কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি সংক্ষিপ্ত পরিসরে তোমাদের কাছে আরোও আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে।
(খ.) মাধ্যমিক পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন :-
মাধ্যমিক - ২০১৭
(১.) একা আন্দোলনের নেতা ছিলেন - (ক) মাদারি পাশি (খ) ড. আম্বেদকর (গ.) মহাত্মা গান্ধী (ঘ) বাবা রামচন্দ্র।
উত্তর :- (ক.) মাদারি পাশি।
(২.) বারদৌলি সত্যাগ্রহ হয়েছিল - (ক) বোম্বাইয়ে (খ) পাঞ্জাবে (গ.) মাদ্রাজে (ঘ) গুজরাটে।
উত্তর :- গুজরাটে
(৩.) বিবৃতি : একা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে
ব্যাখ্যা - ১ : এটি ছিল ব্যক্তিগত আন্দোলন
ব্যাখ্যা - ২ : এটি ছিল একটি কৃষক আন্দোলন
ব্যাখ্যা - ৩ : এটি ছিল একটি শ্রমিক আন্দোলন।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ২ : এটি ছিল একটি কৃষক আন্দোলন ।
মাধ্যমিক - ২০১৮
(১.) বয়কট আন্দোলনের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল - (ক) বাংলার কৃষক শ্রেনি (খ) মধ্যবিত্ত শ্রেনি (গ) জমিদার শ্রেনি (ঘ) ছাত্রসমাজ।
উত্তর :- (ক) বাংলার কৃষক শ্রেনি।
(২.) বাবা রামচন্দ্র কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন - (ক) বিহারে (খ) যুক্তপ্রদেশে (গ) রাজস্থানে (ঘ) মহারাষ্ট্রে।
উত্তর :- (খ) যুক্তপ্রদেশে।
(৩.) রম্পা উপজাতীয় বিদ্রোহ শুরু হয় - (ক) মালাবার অঞ্চলে (খ) কোঙ্কন উপকূলে (গ) ঊড়িষ্যায় (ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়।
উত্তর :- (ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়।
(৪.) একা আন্দোলন শুরু হয় কেন?
উত্তর :- যুক্তপ্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকদের একাধিক ক্ষোভের কারনে মাদারি পাশির নেতৃত্বে ১৯২১ খ্রিঃ একা আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
একা আন্দোলনের প্রধান কারন গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল -
- (ক) কৃষকদের ওপর ধার্য করের থেকেও আরোও অতিরিক্ত ৫০% বলপূর্বক কর আদায়,
- (খ) কৃষকদের ওপর ঠিকাদার ও ইজারাদারদের অত্যাচার,
- (গ) কর প্রদানে অসমর্থ কৃষকদের বলপূর্বক জমি থেকে উচ্ছেদ,
- (ঘ) কৃষকদের বাধ্যতামূলক বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা।
- (ঙ.) এই সমস্ত ক্ষোভের পাশাপাশি "অসহযোগ আন্দোলনের জাতীয়তাবাদী প্রভাব" একা আন্দোলনের অন্যতম কারন ছিলো।
(৫.) বারদৌলি সত্যাগ্রহ কেন শুরু হয়?
উত্তর :- ১৯২৮ খ্রিঃ গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে খাজনা বন্ধের জন্য যে অহিংস কৃষক আন্দোলন শুরু হয়, তাকেই "বারদৌলি সত্যাগ্রহ" বলা হয়।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ শুরু হবার দুটি কারন ছিল - (১.) বারদৌলি তালুকে ২২% খাজনা বৃদ্ধি, যা ঐ অঞ্চলের কৃষকদের ওপর মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছিলো। এবং (২.) অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের হতাশাকে কাটিয়ে গান্ধীবাদী মত ও পথের যৌক্তিকতা তুলে ধরা ও দেশবাসীর হতাশা দূর করার জন্য জাতীয় কংগ্রেস বারদৌলি সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলো।
(৬.) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল কোন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন?
উত্তর :- বীরেন্দ্রনাথ শাসমল অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মেদিনীপুরের কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মাধ্যমিক - ২০১৯
(১.) সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন - (ক) এন জি রঙ্গ (খ) স্বামী সহজানন্দ (গ) বাবা রামচন্দ্র (ঘ) লালা লাজপত রায়।
উত্তর :- স্বামী সহজানন্দ।
(২.) কংগ্রেস সমাজতন্ত্র দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো - (ক) কলকাতায় (খ) দিল্লিতে (গ) বোম্বাইতে (ঘ) মাদ্রাজে।
উত্তর :- (গ) বোম্বাইতে।
(৩.) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল যুক্ত ছিলেন কোন আন্দোলনে?
উত্তর :- অসহযোগ আন্দোলনে /মেদিনীপুরের কৃষক আন্দোলনে।
(৪.) বিবৃতি :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক কৃষকদের জন্য কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় নি।
ব্যাখ্যা - ১: শ্রমিক কৃষকরা এই আন্দোলনের বিরোধী ছিল
ব্যাখ্যা - ২: ব্রিটিশ সরকার শ্রমিক কৃষকদের আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্দোলন।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ৩: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্দোলন।
(৫.) বিবৃতি :- গান্ধীজি জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন সমর্থন করেননি।
ব্যাখ্যা - ১: গান্ধীজি ছিলেন জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি
ব্যাখ্যা - ২: গান্ধীজি হিংসাত্মক আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩: গান্ধীজি শ্রেনী সংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেনি সমন্বয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ৩: গান্ধীজি শ্রেনী সংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেনি সমন্বয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।
(৬.) কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের কিরূপ ভূমিকা ছিল?
উত্তর :- শ্রীধর বলবন্ত জোধপুরকর উত্তরপ্রদেশে রামায়ন পাঠ করে প্রচার করতেন বলে বাবা রামচন্দ্র নামে আখ্যায়িত হন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তাঁর নেতৃত্বে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং জমিদারদের বিরুদ্ধে খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করে।
১৯২০ খ্রিঃ বাবা রামচন্দ্র অযোধ্যা কিষান সভা প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুদিনের মধ্যেই এর ৩৩০ টি শাখা স্থাপিত হয়। বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা তালুকে কৃষক আন্দোলন দুর্বার হয়ে উঠলে ব্রিটিশ সরকার ১৯২১ খ্রিঃ বাবা রামচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে এবং ঐ বছরেই অযোধ্যা খাজনা আইন পাশ করে কৃষকদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়।
(৭.) মাদারি পাশি কে ছিলেন?
উত্তর :- মাদারি পাশি ছিলেন একা আন্দোলনের প্রধান নেতা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বেই ১৯২১ খ্রিঃ উত্তর প্রদেশে একা আন্দোলন শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকার ১৯২২ খ্রিঃ তীব্র দমন নীতি প্রয়োগ করে একা আন্দোলন দমন করে। ঐ বছরেই মাদারি পাশিকে কারারুদ্ধ করা হয়।
মাধ্যমিক - ২০২০
(১.) দেশপ্রান নামে পরিচিত ছিলেন - (ক) সতীশচন্দ্র সামন্ত (খ) অশ্বিনীকুমার দত্ত (গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল (ঘ) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত।
উত্তর :- (গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।
(২.) মোপলা বিদ্রোহ (১৯২১) হয়েছিল - (ক) মালাবার উপকূলে (খ) কোঙ্কন উপকূলে (গ) গোদাবরী উপত্যকায় (ঘ) তেলেঙ্গানা অঞ্চলে।
উত্তর :- (ক) মালাবার উপকূলে।
(৩.) সত্য / মিথ্যা :- বাবা রামচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের নেতা।
উত্তর :- ভুল
(৪.) বিবৃতি :- বারদৌলি সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৮ খ্রিঃ।
ব্যাখ্যা - ১: এই আন্দোলন ছিল ভূস্বামী ধনী কৃষকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষি শ্রমিকদের আন্দোলন।
ব্যাখ্যা - ২: এই আন্দোলন ছিল ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে ভূস্বামী ধনী কৃষকদের আন্দোলন।
ব্যাখ্যা - ৩: এই আন্দোলন ছিল ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূস্বামী ধনী কৃষক শ্রেনি এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক শ্রেনির মিলিত আন্দোলন।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ৩: এই আন্দোলন ছিল ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূস্বামী ধনী কৃষক শ্রেনি এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক শ্রেনির মিলিত আন্দোলন।
(৫.) মোপলা বিদ্রোহের কারন কী?
উত্তর :- কেরালার মালাবার অঞ্চলে মুসলমান কৃষকদের "মোপলা" বলা হতো।বিভিন্ন সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে তারা বিদ্রোহ করলেও, অসহযোগ আন্দোলনের সময় তাদের বিদ্রোহ চরম আকার ধারন করেছিলো।
মোপলা বিদ্রোহের প্রধান কারন গুলি ছিলো - (১.) কেরালার মালাবার অঞ্চলে নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার পত্তন ও তাতে হিন্দুদের নিয়োগ। (২.) ভূমিরাজস্বের চড়া হার ও রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থ মোপলাদের জমি থেকে উচ্ছেদ, (৩.) দরিদ্র মোপলাদের ওপর ইসলাম ধর্মের প্রভাব ও খিলাফত আদর্শের প্রভাব।
(৬.) কি উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর :- ১৯৩৪ খ্রিঃ ২৩ শে অক্টোবর, আচার্য নরেন্দ্র দেব, জয়প্রকাশ নারায়ন, রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন প্রমুখের নেতৃত্বে বোম্বাইয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই প্রতিষ্ঠিত হয় "কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল। এই দলের প্রথম সম্পাদক হন জয়প্রকাশ নারায়ন।
উদ্দেশ্য :-
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের অন্যতম উদ্দেশ্য গুলি ছিল -
- শ্রমিক ও কৃষক শ্রেনীর স্বার্থরক্ষা করে তাদের কল্যান করা,
- শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা,
- ভারতের জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে বৃহত্তর কৃষক ও শ্রমিক সমাজকে যুক্ত করা,
- জাতীয় কংগ্রেসকে কৃষক ও শ্রমিক অভিমুখী করে তোলা,
- সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করে তোলা।
- জাতীয় কংগ্রেসকে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় পরিচালিত করা।
- কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিকে সুসংহত করা,
- কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থে ব্যপক সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করা।
(৭.) বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল? (৪ নম্বর)
উত্তর :- এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য নিন্মলিখিত পেজের লেখাটি পড়ে দেখো। 👇
বারদৌলি সত্যাগ্রহে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব ও অবস্থান সম্পর্কে এই কয়েকটি দিককে মনে রাখবে :-
- বারদৌলি তালুক যেহেতু একটি রায়তওয়ারি এলাকা ছিলো, তাই জাতীয় কংগ্রেস বারদৌলির কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলো এবং
- আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।
- বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা বল্লভভাই প্যাটেল। সরকার বর্ধিত রাজস্বের হার না কমালে গান্ধীজি নিজে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন বলেছিলেন।
- বারদৌলি সত্যাগ্রহ ছিলো একটি পরিকল্পিত আন্দোলন। কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলনের সময়েই বারদৌলি সত্যাগ্রহের পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্তু নানা কারনে তা করে ওঠা সম্ভব হয় নি।
- অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষনা বারদৌলি তালুকে জাতীয় কংগ্রেসের বৈঠক থেকেই করা হয়েছিলো। গান্ধীজির আকস্মিক অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারে দেশব্যাপী যে হতাশা দেখা দিয়েছিলো, ১৯২৮ খ্রিঃ বারদৌলি সত্যাগ্রহের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস সেই হতাশাকে দূর করতে চেয়েছিলো।
- অসহযোগ পরবর্তী পর্বে বারদৌলি সত্যাগ্রহ গান্ধী প্রদর্শিত মত ও পথের গ্রহনযোগ্যতাকে দেশব্যাপী সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলো।
মাধ্যমিক - ২০২২
করোনা মহামারির কারনে এই বছর সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিলো। তাই এই বছরটিতে ষষ্ঠ অধ্যায়টি সিলেবাসের বাইরে রাখা হয়েছিলো এবং এখান থেকে পরীক্ষায় কোন প্রশ্ন আসে নি।
মাধ্যমিক - ২০২৩
(১.) দেশপ্রান নামে পরিচিত ছিলেন - (ক) অশ্বিনীকুমার দত্ত (খ) সতীশচন্দ্র সামন্ত (গ) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত (ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।
উত্তর :- (ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।
(২.) কৃষক প্রজাপার্টি প্রতিষ্ঠা করেন - (ক) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল (খ) প্রফুল্লচন্দ্র সেন (গ) বাবা রামচন্দ্র (ঘ) ফজলুল হক।
উত্তর :- (ঘ) ফজলুল হক।
(৩.) বাবা রামচন্দ্র কোথায় কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
উত্তর :- উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা তালুকে।
(৪.) বিবৃতি :- ১৯২১ খ্রিঃ মোপলা বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।
ব্যাখ্যা - ১ : এটি ছিল কৃষকদের একটি জঙ্গী আন্দোলন
ব্যাখ্যা - ২ : এটি ছিল একটি উপজাতীয় বিদ্রোহ
ব্যাখ্যা - ৩ : এটি ছিল শিল্প শ্রমিকদের একটি অভ্যুত্থান।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ১ : এটি ছিল কৃষকদের একটি জঙ্গী আন্দোলন।
(৫.) আল্লুরি সীতারাম রাজু কে ছিলেন?
উত্তর :- আল্লুরি সীতারাম রাজু ছিলেন কৃষক বিদ্রোহের নেতা। তার নেতৃত্বেই ১৯২২ খ্রিঃ অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী অঞ্চলের উপজাতি কৃষকরা রাম্পা বিদ্রোহ সংগঠিত করে। ১৯২৪ খ্রিঃ ব্রিটিশ সরকার আল্লুরি সীতারাম রাজুকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করে।
(৬.) বারদৌলি আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরন দাও। তুমি কি মনে করো যে, এই আন্দোলন ভূমিহীন কৃষক শ্রেনী এবং কৃষি শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সফল হয়েছিলো? ৫+ ৩ =৮
উত্তর :- এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য নিন্মলিখিত পেজের লেখাটি পড়ে দেখো। 👇
মাধ্যমিক - ২০২৪
(১.) সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন - (ক) বাবা রামচন্দ্র (খ) এন জি রঙ্গ (গ) স্বামী সহজানন্দ (ঘ) ফজলুল হক।
উত্তর :- (গ) স্বামী সহজানন্দ।
(২.) কৃষক আন্দোলনে মতিলাল তেজওয়াত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন - (ক) বিহারে (খ) গুজরাতে (গ) রাজস্থানে (ঘ) যুক্তপ্রদেশে।
উত্তর :- (গ) রাজস্থানে।
(৩.) ঠিক/ভুল :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল কৃষক শ্রেনীর মধ্যে।
উত্তর :- ভুল।
(৪.) বিবৃতি :- বারদৌলি সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৮ খ্রিঃ।
ব্যাখ্যা - ১ : এটি ছিল কারখানার মালিক শ্রেণির শোষনের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর একটি আন্দোলন।
ব্যাখ্যা - ২ : এটি ছিল মূলত সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ধনী কৃষক শ্রেনী ও কৃষি শ্রমিকদের যৌথ আন্দোলন।
ব্যাখ্যা - ৩ : এটি ছিল ঋন দাস কৃষি শ্রমিকদের ধনী কৃষক শ্রেনীর শোষন অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ২ : এটি ছিল মূলত সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ধনী কৃষক শ্রেনী ও কৃষি শ্রমিকদের যৌথ আন্দোলন।
(৫.) বিবৃতি : - দেশপ্রান বীরেন্দ্রনাথ শাসমল ছিলেন বাংলার একজন জনপ্রিয় নেতা।
ব্যাখ্যা - ১: তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে মেদিনীপুরে কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা - ২: তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩: তিনি ছিলেন বাংলায় ভারত ছাড়ো আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
উত্তর :- ব্যাখ্যা - ১: তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে মেদিনীপুরে কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
(৬.) কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল?
উত্তর :- শ্রীধর বলবন্ত জোধপুরকর উত্তরপ্রদেশে রামায়ন পাঠ করে প্রচার করতেন বলে বাবা রামচন্দ্র নামে আখ্যায়িত হন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তাঁর নেতৃত্বে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং জমিদারদের বিরুদ্ধে খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করে।
১৯২০ খ্রিঃ বাবা রামচন্দ্র অযোধ্যা কিষান সভা প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুদিনের মধ্যেই এর ৩৩০ টি শাখা স্থাপিত হয়। বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা তালুকে কৃষক আন্দোলন দুর্বার হয়ে উঠলে ব্রিটিশ সরকার ১৯২১ খ্রিঃ বাবা রামচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে এবং ঐ বছরেই অযোধ্যা খাজনা আইন পাশ করে কৃষকদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়।
(৭.) একা আন্দোলনের একটি সমালোচনামূলক বিবরন দাও। (৪ নম্বর)
উত্তর :- এই প্রশ্নটির উত্তরের জন্য নিন্মলিখিত পেজের লেখাটি পড়ে দেখো। 👇
(৮.) কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? (৪ নম্বর)
উত্তর :- কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল : প্রতিষ্ঠার কারন (১৯৩৪)
১৯৩৪ খ্রিঃ ২৩ শে অক্টোবর, আচার্য নরেন্দ্র দেব, জয়প্রকাশ নারায়ন, রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন প্রমুখের নেতৃত্বে বোম্বাইয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই প্রতিষ্ঠিত হয় "কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল। এই দলের প্রথম সম্পাদক হন জয়প্রকাশ নারায়ন।
প্রতিষ্ঠার কারন :-
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারন গুলি ছিল -
- শ্রমিক ও কৃষক শ্রেনীর স্বার্থরক্ষা করে তাদের কল্যান করা,
- শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা,
- ভারতের জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে বৃহত্তর কৃষক ও শ্রমিক সমাজকে যুক্ত করা,
- জাতীয় কংগ্রেসকে কৃষক ও শ্রমিক অভিমুখী করে তোলা,
- সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করে তোলা।
- জাতীয় কংগ্রেসকে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় পরিচালিত করা,
- কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিকে সুসংহত করা,
- কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থে ব্যপক সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করা।