ফরাসি বিপ্লবের গল্পকথা - চতুর্থ পর্ব

আমাদের ফরাসি বিপ্লবের গল্পকথার তৃতীয় পর্বের গল্প  রাজতন্ত্রের শবযাত্রায় এসে ঠেকেছিলো। এরপর ফ্রান্সে রাজাকে নিয়ে ঠিক কি কি করা হয়েছিলো, নতুন সংবিধানের পাতায় কিভাবে পুরাতনতন্ত্রের বিদায় ঘটিয়ে বিপ্লবের সুফল গুলোকে গেঁথে দেওয়া হয়েছিলো, সেই গল্পটাই আজকের গল্পে তোমাদের শোনাবো।

তাহলে চলো.. বাদবাকি গল্পটা শোনা যাক।..

ফরাসি বিপ্লবের গল্পকথা - চতুর্থ পর্ব
ফরাসি বিপ্লবের গল্পকথা 


১৭৮৯ খ্রিঃ ৯ জুলাই
জাতীয় সভা ফ্রান্সে নতুন সংবিধান লেখার যে কাজটা শুরু করেছিলো, সেটা ১৭৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ শেষ হলো। অ্যাবে সিয়েস, লাফায়েৎ, মিরাব্যু, মুনিয়ে, তাঁলেরার মতো লোকগুলো দিনরাত এক করে এই সংবিধানটা তৈরি করেছিলো।

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র

নতুন সংবিধান উদ্বোধনের আগেই অবশ্য সংবিধান সভার লোকগুলো আরোও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষনা করে দিয়েছিলো, যেটাকে নতুন সংবিধানের মুখবদ্ধ বলে কেউ কেউ বলেছিলেন। এই ঘোষনাটা ১৭৮৯ খ্রিঃ ২৬ আগস্ট দিনটিতে করা হয়েছিলো। "ব্যক্তি ও নাগরিকের আধিকারপত্র" নাম দিয়ে এই ঘোষনাপত্রটিতে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বকালের সেরা মানবিক অধিকারের কিছু কথা লিখে দেওয়া হয়েছিলো।যেখানে বলা হয়েছিলো - 

(১.)পৃথিবীতে সব মানুষই তার ইচ্ছে মতো সময়েই জন্ম নেয়। কারো বলে দেওয়া সময়ে কেউ কখনো জন্মায় না। সুতরাং স্বাধীনতা প্রত্যেক মানুষেরই একটা জন্মগত অধিকার। 

(২.) কথা বলবার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা, সম্পত্তি ভোগ দখলের স্বাধীনতা, প্রত্যেক মানুষেরই সার্বজনীন অধিকার

(৩.) আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। আইনের চোখে সবাই সমান

(৪.)  রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার শিকড় জনগন এবং জাতির হাতেই ন্যাস্ত আছে।

এককথায়, এই চারটি মূল ঘোষনার মধ্য দিয়ে "শাসনতান্ত্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে" নাগরিক সমাজের স্বাধীনতাকে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিলো। ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ - "সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা"র প্র্যাকটিক্যাল প্রয়োগও এই ঘোষণা পত্রের মধ্যে করে দেওয়া হয়েছিলো। 

প্রথম বিপ্লবী সংবিধান 

যাইহোক, ১৭৯১ খ্রিঃ ফ্রান্সে যে নতুন সংবিধানটি তৈরি হলো, সেখানে সংবিধানের লেখকেরা রাজাকে খুব করে টাইট দিয়ে দিলেন। প্রথমেই তারা রাজার ডানা দুটোকে কেটে ফেলবার ব্যবস্থা করলেন, এবং এটা করতে গিয়ে খস খস করে লিখে ফেললেন,এখন থেকে রাজা যা খুশি তাই আর করতে পারবেন না। তিনি আইনসভার কাছে বাঁধা থাকবেন। বিদেশনীতি থেকে টাকা পয়সার খরচ, সব আইনসভাই দেখাশোনা করবে। এইভাবেই নতুন সংবিধানে রাজাকে কার্যত "ঠুটো জগন্নাথ" করে ফেলা হলো। 

এর পর ভগবানের সঙ্গে রাজার যোগাযোগটাকেও কেটে দিয়ে বলা হলো, ফ্রান্সে নতুন সংবিধানের অধীনে যে রাজতন্ত্রটা থাকছে, ওটা নেহাতই নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র। রাজা আর ঈশ্বরের পাঠানো কোন লোক থাকছেন না। 

রাজাকে অবশ্য দুটো নতুন জিনিস দেওয়া হলো, "ফরাসি জাতীর রাজা" নামে গালভরা একটা উপাধি, আর "ভেটো" নামের অদ্ভুত একটা ক্ষমতা, যেটাকে কাজে লাগিয়ে রাজা যেকোন আইন তৈরির সময়ে একটু বেগড়া দিয়ে সুখানুভূতি লাভ করতে পারেন। 

 রাজার জমিজমা থেকে ধনদৌলত, প্রায় সবকিছুই কেড়ে নেওয়া হলো। এর বিনিময়ে একটা মাসিক ভাতা অবশ্য বরাদ্দ করা হলো। বলা হলো, ঐ টাকাটার মধ্যেই রাজাকে মেরেকেটে সারা মাসের সংসারটি চালিয়ে নিতে হবে। 

সংবিধানে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা আইনসভার ওপর অর্পন করা হলো। এর সাথেই বলা হলো, ৭৪৫ জন লোকেদের নিয়ে দুবছর মেয়াদের আইনসভা গঠন করা হবে। আইনসভার সদস্যদের ভোটের মাধ্যমেই বেছে নেওয়া হবে। দেশের মধ্যে যারা তিনদিনের রোজগারটা কর হিসাবে সরকারকে দেবে, তারাই এক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার অধিকারটি লাভ করবে। 

নতুন সংবিধানে ফ্রান্সকে ৮৩ টি প্রদেশে বিভক্ত করা হলো। আইন,শাসন ও বিচার বিভাগকেও আলাদা আলাদা করে দেওয়া হলো। বংশকৌলিন্যের বদলে যোগ্যতা অনুযায়ী সবাই চাকুরি এবং পদ পাবে, এটাও ভালো করে লিখে দেওয়া হলো। 

প্রথম আইনসভা ও রাজনৈতিক দল

নতুন সংবিধান অনুযায়ী ফ্রান্সে ভোটের দিন ঘোষনা করে দেওয়া হয়েছিলো। ভোটদানে সক্ষম সক্রিয় নাগরিকদের ভোটে ১৭৯১ খ্রিঃ নতুন আইনসভার গঠনও হয়ে গেলো।

 এই আইনসভাতে অনেকগুলো নতুন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে ফ্রান্সের লোকজন দেখতে পেলেন। ফিউল্যান্ট নামে একটি দল ছিলো, যারা নিয়মতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলো।জিরোন্ডিষ্ট বলে আরেকটা দল ছিলো। ফ্রান্সের জিঁরোদ প্রদেশ থেকে এদের বেশিরভাগ সদস্য ভোটে জিতে আসতেন বলে এদের এমন নাম হয়েছিলো। জ্যাকোবিন নামেও একটা দল ছিলো। জ্যাকোবিন মঠে এই দলের লোকেদের সভা গুলো হতো বলে, ফ্রান্সের লোকেরা এদের অমন নামে ডাকতো। আইন সভার উঁচু দিকের আসন গুলোতে এরা বসতো বলে এদের অনেকে মাউন্টেন বলেও ডাকাডাকি করতো। এই তিনটে দল ছাড়াও আইনসভায় মডারেট বা মধ্যপন্থী নামে আরেকটা দলও ছিলো। 

আইনসভা বনাম রাজার লড়াই 

নতুন আইনসভা শুরুতেই দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আইন তৈরি করতে উদ্যোগী হলো। 

প্যারিসে গন অভ্যুত্থানের সময় ফ্রান্সের অভিজাতরা দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। প্রানের দায়ে চলে যাওয়ার সময় তারা তাদের বিপুল সম্পত্তির কানাকড়িও নিয়ে যেতে পারেন নি। এই অবস্থায় নতুন আইনসভা ঠিক করলো, একটা আইন আনা হবে যেখানে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করে বলে দেওয়া হবে, ঐ দিনের মধ্যেই দেশত্যাগী সব অভিজাতকে দেশে ফিরে আসতে হবে। নচেৎ তাদের সব সম্পত্তি গুলো সরকার বাজেয়াপ্ত করে অধিগ্রহণ করে নেবে। 

এছাড়া "ধর্মযাজকদের সংবিধান" নামে  আর একটা নতুন আইন আনবার কথাও ভাবা হলো। যে আইনটির মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের গির্জাগুলোর ওপর থেকে রোমের পোপের খবরদারি বন্ধ করা হবে এবং ফ্রান্সের গির্জাগুলোকে রাষ্ট্রের অধীন বেতনভুক একটি বিভাগে পরিনত করা হবে। এই ঘোষণার সময় কেউ একজন বলেছিলো,গির্জার বিপুল সম্পত্তি গুলো জাতীয়করন করে নিয়ে, ঐ সম্পত্তির সমমূল্যের কিছু টাকা(অ্যাসাইনেট) ছেপে দিতে পারলেই দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার অনেকখানি সমাধান হয়ে যাবে। 

 মধ্যযুগ থেকে যাজক, অভিজাতরা যে সম্পত্তির পাহাড় তৈরি করেছিলেন, সেই পাহাড়কে আইনের অস্ত্রে কিছুটা কেটে এনে ফ্রান্সের আর্থিক সমস্যার সুরাহা কথা ভাবা হয়েছিলো। সেইমতো নতুন দুটো আইনের খসড়া তৈরি করা হলো, তারপর সেগুলো রাজার কাছে সই সাবুদ করবার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো। 

এই সময় রাজা ভয়ানক একটা বেয়াদপির কাজ করলেন। আইন দুটোতে সই করার বদলে ভেটো দিয়ে দিলেন। রাজার এই আচরনে আইনসভার সদস্যরা মারাত্মক ভাবে রেগে গেলেন। আইনসভার ভিতরে আর বাইরে বেশ কিছু উগ্র রাজনৈতিক দল এইসময় খুব চেঁচামেচি জুড়ে দিলো। 

এদের চেঁচামেচিতে প্যারিসের লোকজনও খুব খেপে গেলো। সবাই একরকম বুঝতে পারলো, রাজা বিপ্লবকে মেনে নিতে পারছেন না বলেই অমন কাজটি করেছেন। 

রাজার পলায়ন

১৭৯১ খ্রিঃ ২০ জুন একদল লোক টুইলারিস প্রাসাদে ঢুকে রাজাকে খুব করে শাসিয়ে এলো। এই ঘটনার পর লুই খুবই ভয় পেয়ে গেলেন এবং ঠিক করলেন, ছেলে বউ নিয়ে অন্য কোথাও তিনি চলে যাবেন। তাদের জন্য ফ্রান্স মোটেই নিরাপদ নয়। 

কথায় বলে, দায়ে পড়লেই পুরুষমানুষ শ্বশুর বাড়ির কথা ভাবে। লুইয়ের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হলো না। রানী এ্যান্টোয়ানেটের বাপের বাড়ি ছিলো অষ্ট্রিয়া। সেইমতো রাজা রানী একরকম ঠিক করেই ফেললেন খুব শীঘ্রই তারা ওখানে চলে যাবেন। ১৭৯১ খ্রিঃ ২১ জুন রাজা রানী ছেলেপুলে সঙ্গে নিয়ে ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করলেন। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে যাবার পর ভেরেন্নে নামে একটা গ্রামে সপরিবারে গ্রামের লোকেদের কাছে ধরা পড়ে গেলেন। 

টুইলারিসে বন্দী রাজা এবং বৈদেশিক হুমকি 

সেখান থেকে রাজাকে যাচ্ছেতাই ভাবে আবার প্যারিসে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হলো এবং টুইলারিস প্রাসাদে বন্দী করে রাখে দেওয়া হলো। 

এদিকে রাজার ধরা পড়ার খবর তখন যেমন করেই হোক,তার শ্বশুর বাড়ি অষ্ট্রিয়াতে পৌঁছে গিয়েছিলো। ওখান থেকেই ষোড়শ লুইয়ের শালাবাবু লিওপোল্ড প্রাশিয়ার রাজা ফ্রেডারিখ উইলিয়াম কে সঙ্গে নিয়ে ভয়ানক একটা হুমকি দিয়ে বসলো। ফ্রান্সের লোকজন ওর দিদি জামাইবাবুর যদি কোনরকম ক্ষতি করবার চেষ্টা করে, তাহলে ওরা ফ্রান্স আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেবে। 

এই ঘটনার পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক দল গুলো খুব খেপে গেলো। জেকোবিন দল পরিষ্কার করে বলেই ফেললো,এই রাজা যতদিন থাকবে, ততদিন বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য বিদেশীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে যাবেন। সুতরাং রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে ফেলতে হবে এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

রাজা রানীর আইনসভায় আশ্রয়

জেকোবিন দল এইসময় রাজার বিরুদ্ধে প্যারিসের লোকজনকে এতটাই খেপিয়ে তুললো যে, উত্তেজিত জনতা দ্বিতীয় বারের জন্য টুইলারিস প্রাসাদে হামলা করলো। রাজা, রানী প্রানবাঁচাতে এইসময় আইনসভাতে আশ্রয় নিলেন। উত্তেজিত জনতাও ছাড়বার পাত্র নয়। তারা চারদিক থেকেই আইনসভাকে ঘিরে ফেললো। 

শেষপর্যন্ত রাজাকে টেম্পল কারাগারে বন্দী করে লোকজনকে শান্ত করা হলো। তাদের আশ্বস্ত করা হলো এই বলে যে, খুব শীঘ্রই রাজার বিচার করা হবে। 

আগস্ট মাসের এই ঘটনার পরও অবশ্য লোকজনের রাগ কমলো না। ইতিমধ্যে বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপরাধে কয়েক হাজার রাজতন্ত্রীকে বন্দী করে ফেলা হয়েছিলো। 

সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড

১৭৯২ খ্রিঃ, ২ রা সেপ্টেম্বর একটা কুখ্যাত ঘটনা ঘটে গেলো। একদল লোক ফ্রান্সের কারগারগুলিতে ঢুকে গিয়ে   ৫ দিন ধরে রাজতন্ত্রীদের মেরে ফেলে মনের জ্বালা মিটিয়ে নিলো। "সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ড" নামে এই নারকীয় ঘটনাটা যখন  চলছিলো ফ্রান্সের আইনসভা কিছুই করে নি। চুপটি করে বসেছিলো। 

কয়েক হাজার রাজতন্ত্রী খুন হবার পর, তারা এই ভেবে আশ্বস্ত হলো যে, রাজাকে এবার বেশ দূর্বল করে দেওয়া গেছে। রাজার পাশে দাঁড়ানোর মতো কোন লোকই আর সেভাবে রইলো না। গাছকে কেটে ফেলবার আগে তার ডালপালাকে আগে ভাগেই ছেটে দিতে হয়। সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ড সেই কাজটাই করে দিয়েছিলো। 

দ্বিতীয় বিপ্লবী আইনসভা - ন্যাশনাল কনভেনশন 

১৭৯২ খ্রিঃ রাজাকে বন্দী করবার ফলে ১৭৯১ খ্রিঃ সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়লো। এই অবস্থায় পুরানো সংবিধানকে বাতিল করে দিয়ে নতুন করে সংবিধান লেখার প্রয়োজন পড়লো। আপাতত ঠিক করা হলো, গনভোটের ভিত্তিতে নতুন একটা আইনসভা গড়ে তোলা হবে। পরে ঐ আইনসভার উদ্যোগে নতুন সংবিধান রচনা করে নেওয়া হবে। কথামতো একটা গনভোটের আয়োজন করে ১৭৯২ খ্রিঃ "ন্যাশনাল কনভেনশন" নামে নতুন আইনসভা তৈরি করে নেওয়া হলো। 

আইনসভায় রাজার বিচার

নতুন আইনসভা রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষনা করে দিলো। এই মূল্যবান ঘোষনাটির পরেই আইনসভাতে রাজার বিচার চলতে থাকলো। রাজা দোষী নাকি নির্দোষী, সেটা নিয়ে আলোচনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, রাজাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে, নাকি মেরে ফেলা হবে। 

রাষ্ট্রকে বাঁচাতে গেলে রাজাকে মরতে হবে

রোবসপিয়ের সদম্ভে বললেন, "রাষ্ট্রকে বাঁচাতে গেলে রাজাকে মরতে হবে"। রাজা যতদিন বেঁচে থাকবেন সিংহাসন দখলের জন্য চক্রান্ত করে যাবেন। সুতরাং বিপ্লবকে বাঁচাতে গেলে রাজাকে মারতেই হবে। 

শেষপর্যন্ত ষোড়শ লুইয়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীর অভিযোগ নিয়ে আসা হলো। বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি দেশ বিরোধী চক্রান্ত করেছেন। এরই শাস্তি স্বরূপ ষোড়শ লুই কে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো। জিরোন্ডিষ্ট দল অবশ্য এতটা চরম শাস্তির পক্ষপাতী ছিলেন না। এই মতপার্থক্যের জন্য ভোটদানের ব্যবস্থা করা হলো। সবশেষে মাত্র ১ টি ভোটের গরিষ্ঠতায় ষোড়শ লুইয়ের মৃত্যুদন্ডে শিলমোহর পড়লো।

ষোড়শ লুইয়ের মৃত্যুদন্ড 

১৭৯৩ খ্রিঃ, ২১ জানুয়ারি ষোড়শ লুইকে গিলোটিনে হত্যা করা হলো। মৃত্যুর আগে জল্লাদ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, আপনার কি কিছু বলবার আছে? উত্তরে স্মিত হাস্যে লুই বলেছিলেন, "আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমার রক্ত ফ্রান্সের সুখ নিশ্চিত করুক"। কোন এক ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে স্মরন করে লিখেছিলেন, ষোড়শ লুই সিংহাসন অপেক্ষা, মৃত্যুর মঞ্চে বেশি মহান ছিলেন। 


চলবে...




Post a Comment (0)
Previous Post Next Post