ইতিহাসে নারী সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ইতিহাসে নারী সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে সাজিয়ে নীচের আলোচনাটি তুলে ধরা হলো। মূলত পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ইতিহাসের বর্তমান সিলেবাসকে মাথায় রেখে এই আলোচনাটি করা হলেও, ইতিহাস অনুরাগী সকল পাঠকবৃন্দই এই আলোচনা থেকে উপকৃত হবেন। 

ইতিহাসে নারী সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ইতিহাসে নারী সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 

(ক.) নারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন "নারী কেন্দ্রীক" প্রতিষ্ঠানের নাম ও প্রতিষ্ঠাতা :- 

(১.) "সখী সমিতি" প্রতিষ্ঠা করেন - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা স্বর্নকুমারী দেবী।

(২.) "লক্ষীর ভান্ডার" (১৯০৩) প্রতিষ্ঠা করেন - স্বর্নকুমারী দেবীর কন্যা সরলাদেবী চৌধুরানী।

(৩.) "ভারত স্ত্রী মহামন্ডল" (১৯১১) প্রতিষ্ঠা করেন - সরলাদেবী চৌধুরানী।

(৪.) "মহিলা পরিষদ" (১৯০৫)," ভারত মহিলা পরিষদ" ও "সেবাসদন" প্রতিষ্ঠা করেন - এম জি রানাডের স্ত্রী রমাবাই রানাডে। 

(৫.) "নারী কর্মমন্দির"(১৯২১) প্রতিষ্ঠা করেন - দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বোন ঊর্মিলা দেবী। 

(৬.) " ভারতীয় মহিলা সমিতি / Women's India Association" (1917 - WIA) প্রতিষ্ঠা করেন - সরোজিনী নাইডু।

(৭.) "নারী সত্যাগ্রহ সমিতি" (১৯৩০) প্রতিষ্ঠা করেন - চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী। 

(৮.) "দীপালি সংঘ" (১৯২৩) প্রতিষ্ঠা করেন - লীলা রায়। 

(৯.) "দীপালি ছাত্রী সংঘ" (১৯২৬) প্রতিষ্ঠা করেন -লীলা রায়।

(১০.) "রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ" প্রতিষ্ঠা করেন - সরোজিনী নাইডু।

(১১.)" ছাত্রীভবন" (১৯৩০) নামে মহিলা আবাসকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন - লীলা রায়। 

(১২.) "ঢাকা উইমেন্স কমিটি"(১৯২১) গঠন করেন - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় এটি গঠন করেন লীলা রায়। 

(১৩.) "ভগিনী সেনা" (১৯৪২) গঠিত হয় - ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে মেদিনীপুরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের উদ্যোগে ভগিনী সেনা গঠিত হয়। 

(১৪.) "দীপালি ছাত্রীসংঘ" (১৯২৬) প্রতিষ্ঠা করেন - লীলা রায়। 

(১৫.) "ভয়েস অব ফ্রিডম" নামে রেডিও স্টেশন গঠন করেন - ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভয়েস অব ফ্রিডম প্রতিষ্ঠা করেন ঊষা মেহতা। 

(১৬.) "All India womens conference" প্রতিষ্ঠিত হয় - ১৯২৭ খ্রিঃ। 

(১৭.) "শিল্পাশ্রম" (১৯২১) প্রতিষ্ঠা করেন - খদ্দরের পোশাক তৈরি ও বিক্রির জন্য অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ঢাকার গেন্ডারিয়ার আশালতা সেন শিল্পাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।

(খ.) ইতিহাসে "প্রথম নারী" সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য :- 

(১.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা গ্রাজুয়েট ছিলেন - কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও চন্দ্রমুখী বসু। 

(২.) ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক ছিলেন - ডঃ কাদম্বিনী গাঙ্গুলি। 

(৩.) ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন ছিলো - দীপালি ছাত্রী সংঘ (১৯২৬ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয়) 

(৪.) জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম ভারতীয় মহিলা সভানেত্রী ছিলেন - সরোজিনী নাইডু।

(৫.) স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মন্ত্রী ছিলেন - রেনুকা রায়। 

(৬.) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম মহিলা বিপ্লবী শহিদ ছিলেন - প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

(৭.) ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত থাকার অপরাধে দন্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় মহিলা ছিলেন - দুকড়িবালা দেবী। 

(৮.) মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির প্রথম মহিলা চিকিৎসক এবং ভারতের আইনসভার প্রথম মহিলা সদস্য ছিলেন - মুথুলক্ষী রেড্ডি। 

(৯.) দক্ষিণ আফ্রিকাতে গান্ধীজি সর্বপ্রথম মহিলাদের প্রকাশ্য বিক্ষোভ প্রদর্শনে নামিয়েছিলেন। 

(১০.) এশিয়ার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন - শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। 

(১১.) এশিয়ার প্রথম নারী সেনা বাহিনী বা রেজিমেন্ট ছিল - আজাদ হিন্দ ফৌজের "ঝাঁসির রানি ব্রিগেড"। 

(গ.) উল্লেখযোগ্য নারীদের উপাধি/উপনাম/ছদ্মনাম :- 

(১.) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "লোকমাতা" নামে অভিহিত করেন - ভগিনী নিবেদিতাকে। 

(২.) "ভারতের নাইটিঙ্গেল" নামে পরিচিত ছিলেন - সরোজিনী নাইডু।

(৩.) "গান্ধী বুড়ি" নামে পরিচিত ছিলেন - মাতঙ্গিনী হাজরা।

(৪.) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "অগ্নিকন্যা" বলে অভিহিত করেন - কল্পনা দত্তকে। 

(৫.) "ফুলতার" ছদ্মনাম ছিলো - প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের।

(৬.) "ভারতের বিপ্লববাদের জননী" বলা হয় - মাদাম কামাকে।

(৭.) "বিপ্লবীদের পিসিমা" নামে পরিচিত ছিলেন - ননীবালা দেবী।

(৮.) "ভারতের বুলবুল" বলা হয় - সরজিনী নাইডুকে।

(৯.) "ভারতের মার্গারেট থ্যাচার" বলা হয় - শ্রীমতি ইন্দিয়া গান্ধীকে।

(১০.) "রানি" নামে পরিচিত ছিলেন - আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের নারী সৈনিকরা। 

(ঘ.) নারীদের দ্বারা প্রকাশিক উল্লেখযোগ্য পত্রিকা/গ্রন্থ :- 

(১.) "ভারতী" পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন - সরলাদেবী চৌধুরানী। 

(২.) "ভারত মহিলা" পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন - সরযুবালা দত্ত। 

(৩.) অসহযোগ আন্দোলনের সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের "বাংলার কথা" পত্রিকার কিছুকাল সম্পাদনা করেন তাঁর স্ত্রী - বাসন্তীদেবী। 

(৪.) "জয়শ্রী" পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন - লীলা নাগ। 

(৫.) "সুপ্রভাত" পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন - কৃষ্ণ কুমার মিত্রের কন্যা কুমুদিনী মিত্র। 

(৬.) "জীবনের ঝরাপাতা" লিখেছিলেন - সরলাদেবী চৌধুরানী।

(৭.) "ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল" - চিত্রা দেব। 

(৮.) "কমন উইল" ও "নিউ ইন্ডিয়া " পত্রিকার প্রকাশক - শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত।

(৯.)" বন্দেমাতারম" পত্রিকা - মাদাম কামা (সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে তিনি এই মাসিক পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন।) 

(১০.) "শৃঙ্খল ঝঙ্কার" লিখেছিলেন - বীনা দাস (বীনা দাসের আত্মজীবনী) 

(ঙ.) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের নাম :- 

(১.) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী :- 

  • লীলাবতী মিত্র
  • হেমাঙ্গিনী দাস
  • নির্মলা সরকার
  • অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত
  • পুন্যলতা গুপ্তা
  • হিরন্ময় দেবী
  • কামিনী রায়
  • কুমুদিনী বসু
  • খায়রান্নেসা খাতুন। 

(২.) অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী :- 

  • বাসন্তী দেবী
  • উর্মিলা দেবী
  • সুনীতি দেবী
  • হেমপ্রভা মজুমদার
  • আশালতা সেন
  • নেলী সেনগুপ্তা
  • সুশীলা মিত্র
  • সরোজিনী নাইডু। 

(৩.) আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী :- 

  • কমলা নেহরু
  • সরোজিনী নাইডু
  • বাসন্তী দেবী
  • সরলাবালা দেবী
  • লীলা নাগ
  • কস্তুরবা গান্ধী
  • উর্মিলা দেবী
  • নেলি সেনগুপ্তা

(৪.) ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী :- 

  • অরুনা আসফ আলি
  • কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় 
  • উষা মেহতা
  • সুচেতা কৃপালনী
  • লীলা রায়
  • কনকলতা বড়ুয়া
  • ভোগেশ্বরী ফুকোননী
  • মাতঙ্গিনী হাজরা
  • শান্তশীলা পালিত
  • আশালতা সেন
  • লাবন্যপ্রভা দাশগুপ্ত। 

(৫.) সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী :- 

  • লীলা নাগ
  • প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
  • কল্পনা দত্ত
  • দুকড়িবালা দেবী
  • ননীবালা দেবী
  • বীনা দাস
  • সুহাসিনী গাঙ্গুলি
  • সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ
  • উজ্জ্বলা মজুমদার। 

(চ.) স্মরনীয় ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্কিত নারী :- 

(১.) সরলাদেবী চৌধুরানী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনি ছিলেন। 

(২.) স্বর্নকুমারী দেবীর কন্যা ছিলেন - সরলাদেবী চৌধুরানী। 

(৩.) কৃষ্ণ কুমার মিত্রের কন্যার নাম ছিল - কুমুদিনী মিত্র।
 
(৪.) বিপ্লবী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেজো পিসিমা ছিলেন - ননীবালা দেবী। 

(৫.) মতিলাল নেহেরুর স্ত্রী ছিলেন - স্বরুপরানী নেহেরু।
 
(৬.) জওহরলাল নেহেরুর স্ত্রী ছিলেন - কমলা নেহেরু। 

(৭.) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী ছিলেন - বাসন্তী দেবী।
 
(৮.) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ভগিনী ছিলেন - উর্মিলা দেবী। 
(৯.) চিত্তরঞ্জন দাশের ভাইঝি ছিলেন - সুনীতি দেবী। 

(১০.) বিপ্লবী অনিল রায়ের স্ত্রী ছিলেন - লীলা রায় (নাগ)।
 
(১১.) মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী ছিলেন - কস্তুরবা গান্ধী। 

(১২.) জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ছিলেন - ইন্দিরা নেহেরু (গান্ধী)। 

(১৩.) মহাদেব গোবিন্দ রানাডের স্ত্রী ছিলেন - রমাবাই রানাডে। 

(১৪.) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কন্যা ছিলেন - গিরিজাসুন্দরী দেবী। 

(১৫.) মতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী ছিলেন - নেলী সেনগুপ্ত। 

(১৬.) সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষা গুরু বেনীমাধব দাসের কন্যা ছিলেন - বীনা দাস। 

(১৭.) দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ছিলেন - কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। 

(১৮.) বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রীর নাম ছিলো - শ্রীমতি অবলা বসু।

- এই সকল নারীদের সকলেই ভারতের একাধিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। 

(ছ.) নারী সম্পর্কিত আরও কিছু স্মরনীয় তথ্য :- 

  1. উনিশ শতকের সবথেকে উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় নারী কেন্দ্রীক পত্রিকা ছিলো - বামাবোধিনী পত্রিকা
  2. "বীরাষ্টমীব্রত", "প্রতাপাদিত্য উৎসব" ও "উদয়াদিত্য উৎসব" প্রচলন করেন - সরলাদেবী চৌধুরানী। 
  3. ভারতে দেবদাসী প্রথা বিলোপের জন্য আইনসভায় প্রথম বিল আনেন - মুথুলক্ষী রেড্ডি।
  4. অসহযোগ আন্দোলনের সময় নারীদের ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করেন - ডা. মুথুলক্ষী রেড্ডি, হীরাবাই টাটা, সিথিবাই টাটা প্রমুখ নারীরা। 
  5. ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন - কল্পনা দত্ত। 
  6. চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে যুক্ত ছিলেন - প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। 
  7. বাংলার গভর্নর জন এন্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করেন - উজ্জ্বলা মজুমদার। 
  8. কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করেন - সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি দাস। 
  9. তমলুকের লালবাড়ির দখল নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে শহীদ হন - মাতঙ্গিনী হাজরা। 
  10. আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ হল - ১৯৭৫ সাল। 
  11. আন্তর্জাতিক নারী দশক হল - ১৯৭৫ - ১৯৮৫ সাল। 
  12. আন্তর্জাতিক নারী দিবস হল - ৮ ই মার্চ। 
  13. দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন - লীলা রায়। 
  14. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কন্যা গিরিজাসুন্দরী দেবী মুর্শিদাবাদের কান্দী গ্রামে ৫০০ জন নারীর উপস্থিততে বঙ্গলক্ষীর ব্রতকথা পরিবেশন করেন। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post