ইতিহাসের যুগ বিভাজন : সংক্ষিপ্ত তথ্য


সংক্ষিপ্ত তথ্যের আলোকে ইতিহাসের যুগ বিভাজন
সংক্ষিপ্ত তথ্যের আলোকে ইতিহাসের যুগ বিভাজন 

যুগ বিভাজন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :- 

(১.) ইতিহাস চর্চার সুবিধার জন্য ঐতিহাসিকরা ইতিহাসকে  বেশ কয়েকটি যুগ বা পর্বে ভাগ করেন। 

(২.) সব দেশের ইতিহাসকেই সাধারনত প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ ও আধুনিক যুগ - এই ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়।

(৩.) সময়কালের বিশেষ কোন পরিবর্তনকে লক্ষ্য করেই ইতিহাসে যুগ বিভাজন করা হয়। ইতিহাসের প্রত্যেকটি সময়কালের সীমার মধ্যে সাধারন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যের নিরিখেই ইতিহাসে "যুগ বিভাজন" করা হয়।

(ক.) যুগ বিভাজনের দরকার পড়ে কেন? 

ইতিহাসে অনেকগুলি কারনে যুগ বিভাজনের দরকার পড়ে। যেমন - 

(১.) ইতিহাসের ঘটনা গুলিকে ভালো ভাবে বোঝা, জানা ও তাকে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার জন্য, 

(২.) ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারন মানুষের জীবনযাপন ও তার আর্থ - সামাজিক বৈশিষ্ট্য গুলিকে সঠিক ভাবে অনুধাবন ও আলোচনা করার জন্য,

(৩.) কোন বিশেষ সাম্রাজ্য বা রাজবংশের শাসনকালের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনে,  

(৪.) নির্দিষ্ট সময়কাল ও তার ঘটনাবলীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে সঠিক ভাবে তুলে ধরা বা উপস্থাপন করার জন্য, এবং 

(৫.) প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ বিশ্লেষন করার জন্যও ইতিহাসে যুগ বিভাজন করা হয় ।

******************************************

(খ.) ইওরোপে যুগ বিভাজন :-

(১.) ইওরোপের ইতিহাসকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগে প্রথম ভাগ করেন :-  ক্রিস্টোফার সেলরিয়াস।

(২.) ইওরোপে প্রাচীন যুগের সময়কাল :- ৫০০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ থেকে ৪৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত।

(৩.) ইওরোপে মধ্য যুগের সময়কাল :- ৪৭৬ খ্রিঃ থেকে ১৪৫৩ খ্রিঃ পর্যন্ত ।

(৪.) ইওরোপে আধুনিক যুগের সময়কাল :- ১৪৫৩ খ্রিঃ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত।

******************************************

(গ.) ভারতে যুগ বিভাজন :- 

(১.) সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকদের হাত ধরে ভারতে ইতিহাস চর্চার সূত্রপাত হয়েছিলো।

(২.) সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকদের মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল তার "HISTORY OF BRITISH INDIA" গ্রন্থে ভারতের ইতিহাসকে ৩ টি যুগে ভাগ করেন -

  •  হিন্দু যুগ(প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ১২০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত) 
  • মুসলিম যুগ (১২০৬ থেকে ১৭০৭ খ্রিঃ পর্যন্ত) 
  • ব্রিটিশ যুগ (১৭০৭ থেকে পরবর্তী সময়কাল পর্যন্ত) 
(৩.) মিলের যুগ বিভাজনকে পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা অস্বীকার করেন এবং এই যুগ বিভাজনকে তারা অনৈতিহাসিক, অবৈজ্ঞানিক ও সাম্রাজ্যবাদী বলে আখ্যা দেন। 

(৪.) ইওরোপের ধাঁচে ভারতের ইতিহাসকে তারা ৩ টি ভাগে ভাগ করেন। যথা - 
  • প্রাচীন যুগ ( প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ১২০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত) 
  • মধ্য যুগ (১২০৬ থেকে ১৭০৭)
  • আধুনিক যুগ (১৭০৭ খ্রিঃ থেকে  বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত) 
(৫.) সাম্প্রতিক কালে ঐতিহাসিকরা ভারতের ইতিহাসকে ৪টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা - 

প্রাচীন যুগ :- প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল অর্থাৎ ৬৫০ খ্রিঃ আগে পর্যন্ত

প্রাচীন যুগকে আবার ঐতিহাসিকরা ৩ টি উপযুগে ভাগ করেছেন। যথা - 
  • (ক.) প্রাক্ ইতিহাস যুগ :- লিখন বিদ্যার আগে থেকে আনুমানিক ১৯০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কাল। 
  • (খ.) প্রায় ঐতিহাসিক যুগ :- প্রাক্ ইতিহাস ও ঐতিহাসিক যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল। সিন্ধু সভ্যতার যুগ এই সময়কালের অন্তর্গত। 
  • (গ.) ঐতিহাসিক যুগ :- খ্রিঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে পরবর্তী সময়কাল ঐতিহাসিক যুগের অন্তর্গত। 
আদি মধ্য যুগ :- ৬৫০ খ্রিঃ থেকে ১২০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কাল হলো ভারতের আদি মধ্যযুগ। মধ্য যুগের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বা প্রবনতা এই সময়কাল থেকে দেখা যায়। 

মধ্য যুগ :- ১২০৬ খ্রিঃ থেকে ১৭০৭ খ্রিঃ (ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু পর্যন্ত) সময়কাল ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগ নামে পরিচিত। 

আধুনিক যুগ :- ১৭০৭ খ্রিঃ থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত হলো ভারতের আধুনিক যুগ। 

*****************************************

(ঘ.) যুগ বিভাজন নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক :- 

(১.) ইতিহাসে সব দেশেই যুগ বিভাজনের সময়কাল নিয়ে বিতর্ক দেখা যায়। যেকোন যুগের সমাপ্তি ও সূচনার কালসীমা নিয়েই মূলত বিতর্ক দেখা যায়। যেমন - 
  • ভারতের অনেক ঐতিহাসিকই আধুনিক যুগের সূচনা হিসাবে ১৭০৭ খ্রিঃ কে মানেন না। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে, ভারতে আধুনিক যুগ শুরু হয়েছিলো ১৭৫৭ খ্রিঃ পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আবার সুমিত সরকারের মতে, ১৮৮৫ খ্রিঃ থেকে ভারতের আধুনিক যুগ শুরু হয়েছিলো। 
  • ভারতের মতোই বিতর্ক ইওরোপেও দেখা যায়। ঐতিহাসিক লর্ড ব্রাইসের মতে, ৮০০ খ্রিঃ পোপ কর্তৃক শার্লেমানের রাজ্যাভিষেকের মধ্য দিয়েই ইওরোপে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। আবার ফরাসী ঐতিহাসিকদের মতে ১৭৮৯ খ্রিঃ থেকেই ইওরোপে আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে। 
(২.) ইতিহাসের যুগ বিভাজন সম্পর্কে শেষ ও চূড়ান্ত কথা বলেছিলেন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল। তাঁর মতে, নির্দিষ্ট সন তারিখ মেনে ইতিহাসের কোন পর্ব শুরু কিংবা শেষ হয় না। অতীতের অনন্ত কালপ্রবাহের গতিকে কখনই ছেদ করা যায় না, বা খন্ডিত করা যায় না। এটি করলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা অস্বীকার করা হয়। 

ইতিহাসের যুগ বিভাজন সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত ভাবে জানতে নিন্মলিখিত লেখাটি পড়ে দেখতে পারো। 

ইতিহাসের যুগ বিভাজন

মক টেস্ট 

মক টেস্ট দেওয়ার জন্য নিন্মলিখিত প্রশ্ন গুলির উত্তর দাও :-

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post