ইতিহাসের যুগ বিভাজন

বিশ্বব্রহ্মান্ডে "কাল" বা "সময়কালের" ধারনা অনন্ত ও অসীম। "যুগ" সেই অনন্ত সময়কালেরই একটি অংশ মাত্র। "যুগ"শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো "নির্দিষ্ট সময়কাল"। ইতিহাসে আমরা অতীতে ঘটে যাওয়া অনন্ত সময়কালের ঘটনাবলীর কথা পড়ি। এই কাল বা সময়কালের ব্যাপ্তি অনন্ত ও অসীম। বিরাট সমুদ্রের মতোই বিশাল তার ব্যাপ্তি এবং ব্যপকতা। আমরা দেখেছি, সমুদ্রের জলরাশির এক একটি ঢেউ নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে উপকূলে আছড়ে পড়ে এবং প্রচন্ড অভিঘাত সৃষ্টি করে পুরাতনকে ধ্বংস করে। 

অনন্ত সময়কালও তাই। সমুদ্রের জলরাশির মতোই কালসমুদ্রে অসংখ্য পরিবর্তনের ঢেউ আসে এবং প্রচন্ড অভিঘাত সৃষ্টি করে পুরাতন যা কিছু সব ধ্বংশ করে। কালের গর্ভে পুরাতন বিলীন হয়ে যায় এবং কালসমুদ্রের উপকূলে আবার নতুন ভাবে উদ্ভাসিত হয় নতুনত্ব ও অভিনবত্বের স্পন্দন। 

এজন্য বলা হয়, ইতিহাস শুধু পুরানো দিনের গল্পকথা বলে না, বদলে যাওয়া সময়ের কথাও বলে। সময়কে বদলে দেওয়া পরিবর্তনের কথাও বলে। আসলে ইতিহাসের প্রধান চালিকা শক্তিই হলো "কালের" পরিবর্তন। আমরা আগেই বলেছি, এই কাল বা সময়কাল অনন্ত এবং অসীম। এই অনন্ত সময়কালের সব ঘটনাবলী এক সরলরেখায় সমান্তরাল ভাবে বিরাজ করে না। সব ঘটনাবলীর গুরুত্বও এক নয়। তাছাড়া, অনন্ত সময়কালের সব ঘটনাবলীকে একসঙ্গে মনে রাখা এবং তার গুরুত্বকে অনুধাবন করাও সহজ কাজ নয়। 

তাই মানব ইতিহাসে কালের গতি ও পরিবর্তনকে সঠিক ভাবে বোঝবার জন্য, এবং ঘটনাবলীর গুরুত্বকে সম্যকভাবে উপলব্ধি ও বিশ্লেষন করবার জন্য "যুগ বিভাজন" অনিবার্য হয়ে পড়ে।  

ইতিহাসের যুগ বিভাজন
ইতিহাসের যুগ বিভাজন 

(অ.) ইতিহাসে যুগ বিভাজনের উদ্দেশ্য ও সুবিধা :- 


ইতিহাসে অনেক গুলি উদ্দেশ্যে ও সুবিধার কথা ভেবে যুগ বিভাজন করা হয়। সংক্ষেপে বলা যায় - 

(১.) অনন্ত অতীতের সব ঘটনাবলীকে একসঙ্গে মনে রাখা যায় না। তাই অনন্ত সময়কালের ঘটনাবলীকে সহজে মনে রাখা এবং স্মরন যোগ্য করে রাখার জন্য সময়কালকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করা হয় এবং  "যুগ বিভাজন" করা হয়। 
(২.) কালের পরিবর্তন ও তার বৈশিষ্ট্যকে সঠিক ভাবে বোঝবার জন্যও ইতিহাসে যুগ বিভাজন করা হয়। 
(৩.) কোন ঘটনাবলীর গুরুত্বকে সম্যকভাবে উপলব্ধিবিশ্লেষন করবার তাগিদেও ইতিহাসে যুগ বিভাজন ঘটানো হয়। 
(৪.) এছাড়া, ইতিহাসে যুগ বিভাজনের আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো, সময়কাল অনুসারে ইতিহাসের ঘটনা গুলিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা, যাতে কোন ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যায় ও আলোচনা করা সম্ভব হয়। 

এককথায়, যুগ বিভাজন ইতিহাসের জানা, বোঝা এবং আলোচনার কাজটিকে অনেক সহজ করে দেয়। 

(আ) ইতিহাসে যুগ বিভাজনের পদ্ধতি :- 


বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নিরিখে ইতিহাসে যুগ বিভাজন করা হয়। যেমন - 

(১.) ব্যক্তির প্রভাবকে মাথায় রেখে অনেক সময় ইতিহাসে যুগ বিভাজন করা হয়। যেমন -  নেপোলিয়ানের যুগ, মেটারনিখের যুগ, ভিক্টোরিয়ান যুগ, গান্ধী যুগ, নেহেরু যুগ ইত্যাদি।

(২.) অনেক সময় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও যুগ বিভাজন করা হয়। যেমন - 

(ক.) সুবর্ন যুগ - শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, স্থাপত্য ও জ্ঞান চর্চার উৎকর্ষের দিকটি পর্যবেক্ষণ করে কোন বিশেষ সময়কালকে ইতিহাসে "সুবর্নযুগ" বলা হয়। যেমন - গুপ্ত যুগ সুবর্নযুগ, শাহজাহানের রাজত্বকাল সুবর্নযুগ, ইত্যাদি। 

(খ.) অন্ধকারময় যুগ - কোন সময় কালের সাংস্কৃতিক অবনমন বা অবক্ষয়কে তুলে ধরার জন্য সেই সময়কালটিকে বলা হয় অন্ধকারময় যুগ বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। যেমন সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকরা ভারতে প্রাক্ ব্রিটিশ যুগকে অন্ধকারময় যুগ বলে অভিহিত করেন। আবার সাম্প্রদায়িক ঐতিহাসিকরা মুসলিম শাসনকালের যুগকে অন্ধকারময় যুগ হিসাবে আখ্যায়িত করেন। অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ১২০১ খ্রিঃ থেকে ১৩৫০ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালকে অন্ধকারময় যুগ হিসাবে অভিহিত করা হয়। 

(গ.) রেনেসাঁ যুগ - পঞ্চদশ,ষোড়শ শতকে ইতালি সহ ইওরোপে নতুন করে ধ্রুপদী জ্ঞান বিজ্ঞান, সাহিত্য ও দর্শনকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। এর ফলে মানুষের চিন্তা চেতনা ও ব্যবহারিক জগতে এক আমূল পরিবর্তন আসে। একেই বলা হয় "রেনেসাঁ" বা "নবজাগরন"। পরবর্তীকালে ইওরোপীয় রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য গুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুসন্ধান করে নির্দিষ্ট সময়কালকে "রেনেসাঁ যুগ" বলে চিহ্নিত করা হয়। যেমন উনিশ শতকে বাংলার সংস্কার আন্দোলনকে "বঙ্গীয় নবজাগরন" বা "বঙ্গীয় নবজাগরনের যুগ" বলে আখ্যায়িত করা হয়। 

(৩.) এগুলি ছাড়াও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনেকে ইতিহাসের যুগ বিভাজন করে থাকেন। যেমন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস্ মিল সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের ইতিহাসকে ৩ টি যুগে ভাগ করেছিলেন। ভারতে কখনো না এসেও ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে তিনি তিন খন্ডে প্রকাশ করেন - "দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ব্রিটিশ ইন্ডিয়া"গ্রন্থ। ১৮১৮ খ্রিঃ তিনি এই গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এখানে তিনি ভারতের প্রাচীন যুগকে হিন্দু যুগ, মধ্য যুগকে মুসলিম যুগ এবং আধুনিক যুগকে ব্রিটিশ যুগ বলে চিহ্নিত করেন। 

যদিও সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তৈরি করা তার যুগ বিভাজনকে পরবর্তীকালে ভারতীয় ঐতিহাসিকরা তীব্র ভাবে সমালোচনা করেছিলেন। 

(৪.) তবে সময়কালের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যুগ বিভাজনকে ইতিহাসে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পৃথিবীর সব দেশের "অতীত সময়কালের" বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ইতিহাসকে ৩ টি যুগে ভাগ করা হয়। যেমন - প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ এবং আধুনিক যুগ। সাম্প্রতিক কালের ঐতিহাসিকরা আরও একটি নতুন যুগ বিভাজন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত অবস্থাকে তারা "উত্তর আধুনিক যুগ" বলে চিহ্নিত করছেন।

যুগ বা সময়কাল শ্রেনী বিভাগ
১. প্রাচীন যুগ ১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ, ২. প্রায় ঐতিহাসিক যুগ, ৩. ঐতিহাসিক যুগ।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ ১. প্রাচীন প্রস্তর যুগ, ২. মধ্য প্রস্তর যুগ, ৩. নব্য প্রস্তর যুগ।
২. মধ্য যুগ ১. আদি মধ্য যুগ, ২. পূর্ন মধ্য যুগ।
৩. আধুনিক যুগ ১. প্রাক্ আধুনিক কাল, ২. পূর্ন আধুনিক যুগ/কাল।
৪. উত্তর আধুনিক যুগ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত।

সময়কাল অনুযায়ী ইতিহাসের যুগবিভাজন :- 


 👉এখন সময়কাল অনুসারে ভাগ করা প্রত্যেকটি যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি দেখে নেওয়া যাক। 

(ক.) প্রাচীন যুগ :- 

যেকোন দেশের মানব সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে বিকাশের সময়কালের ইতিহাস প্রাচীন যুগের অন্তর্গত।

পৃথিবীর সব দেশের প্রাচীন যুগের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলি গুলি হলো - 

১. আদিম মানুষের বিবর্তন, জীবনচর্চা ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, 
২. রাজবংশের শাসন, 
৩. দাস সমাজ ও দাসশ্রমের উপস্থিতি, 
৪. ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ, 
৫. কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, 
৬. পেগান ধর্ম বা পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসের অস্তিত্ব ইত্যাদি।

 তবে এই মূল বৈশিষ্ট্য গুলির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য অনুসারে বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্বও লক্ষ্য করা যায়।

যেমন - ভারতে প্রাচীন যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গুলির মধ্যে ছিলো - কৃষিভিত্তিক সমাজ, বর্নবিভক্ত সমাজ ব্যবস্থা, জাতিভেদ প্রথার প্রাবল্য, রাজতন্ত্রের উপস্থিতি বা রাজবংশের শাসন, ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার, লিখিত উপাদানের অপ্রতুলতার বা অভাব ইত্যাদি। 

ভারত ও ইওরোপে প্রাচীন যুগের সময়কাল :-

পৃথিবীর সব দেশে প্রাচীন যুগের সূচনা এবং শেষের সময়কাল এক থাকে না। যেমন ভারতে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ৬০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালের ইতিবৃত্ত প্রাচীন যুগের অন্তর্গত। আবার ইওরোপে প্রাচীন যুগের সময়কাল হলো প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ৪৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত, অর্থাৎ রোমান সাম্রাজ্যের পতনকাল পর্যন্ত। 

ভারত ও ইওরোপের প্রাচীন যুগের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে, ভারতের তুলনায় ইওরোপে অনেক আগেই প্রাচীন যুগের সমাপ্তি ঘটেছিলো। 

প্রাচীন যুগকে আবার লিখিত উপাদান প্রাপ্তি ও তার পাঠোদ্ধারের ভিত্তিতে ৩ টি যুগে ভাগ করা হয়। যথা - 

(i.) প্রাক্ ইতিহাস যুগ/প্রাগৈতিহাসিক যুগ :-

 যে সময়ে কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় নি, সেই সময়কালের ইতিহাসকেই বলা হয় প্রাক্ ইতিহাস যুগ। 

মানব সভ্যতার সূচনা লগ্নের ইতিহাস প্রাক্ ইতিহাস পর্বের অন্তর্গত। এই সময়কালে মানুষ ছিলো অসভ্য ও যাযাবর। এই সময়ে তারা শিকার করে খাবার সংগ্রহ করতো। তাদের জীবনধারার সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত ছিলো প্রস্তর বা পাথর। পাথরকে তারা শিকার করার অস্ত্র এবং বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতো। 

প্রাক্ ইতিহাসকে আবার ঐতিহাসিকরা ৩ টি যুগে ভাগ করেছেন। যেমন - প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ এবং নব্য প্রস্তর যুগ। 

(ii) প্রায় ঐতিহাসিক যুগ :- 

যে সময়কালে লিখিত উপাদান পাওয়া গেছে কিন্তু তার পাঠোদ্ধার করা যায় নি, সেই সময়কালের ইতিহাসকেই বলা হয় প্রায় ঐতিহাসিক যুগ। 

ভারতে সিন্ধু সভ্যতায় লিখিত উপাদান পাওয়া গেলেও, তার পাঠোদ্ধার করা যায় নি। এইজন্য সিন্ধু সভ্যতাকে প্রায় ইতিহাস যুগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

(iii.) ঐতিহাসিক যুগ :- 

যে সময়কালে লিখিত উপাদান পাওয়া গেছে এবং তার পাঠোদ্ধারও করা গেছে, সেই সময়কালের ইতিবৃত্তকেই বলা হয় ঐতিহাসিক যুগ

ভারতে সর্বপ্রথম পাঠোদ্ধার করা হয় অশোকের ব্রাহ্মি লিপি। এইদিক থেকে বিচার করে বলা হয়, ভারতে খ্রিঃ পূর্ব তৃতীয় শতক থেকেই ঐতিহাসিক যুগের সূত্রপাত হয়। 

 (খ.) মধ্য যুগ :- 

প্রাচীন যুগের অবসান থেকে আধুনিক যুগের সূচনার মধ্যবর্তী সময়কালকেই যেকোন দেশে মধ্য যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। 

পৃথিবীর সব দেশেই মধ্যযুগীয় সময়কালের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন - 

১. সামন্ততন্ত্রের উপস্থিতি, 
২. ভূমিদাস প্রথার অস্তিত্ব, 
৩. সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রন
৪. দুর্বল কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও আঞ্চলিক স্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদ
৫. আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ও চিন্তা চেতনার অভাব, 
৬. শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে চরম বর্বরতার নিদর্শন
৭.রাজনৈতিক অস্থিরতা, হানাহানি ও বৈদেশিক বর্বর আক্রমন, 
৮. সভ্যতা ও সংস্কৃতির অবনমন
৯. সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নানা গোড়ামী, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং রক্ষনশীলতার উপস্থিতি,
১০. মানসিক সংকীর্ণতা, উন্নত প্রযুক্তির অভাব, গতানুগতিক জীবনধারা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব, আঞ্চলিকতা বা স্থানীয় সীমাবদ্ধতা - ইত্যাদি মধ্য যুগের সময়কালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন যুগের পরবর্তীকালীন সময়ে পৃথিবীর সব দেশেই এই বৈশিষ্ট্য গুলি লক্ষ্য করা যায়।

ভারতে মধ্য যুগের সময়কাল :-

প্রাচীন যুগের মতোই পৃথিবীর সব দেশে মধ্য যুগের সূচনা এবং অবসানের সময়কাল এক ছিলো না। 
যেমন - ভারতের ক্ষেত্রে মধ্য যুগের সূচনা কাল ছিলো ৬০৬ খ্রিঃ, এবং অবসানের কাল ছিলো ১৭০৭ খ্রিঃ পর্যন্ত, অর্থাৎ ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর সময়কাল পর্যন্ত। তবে যদুনাথ সরকারের মতো কোন কোন ঐতিহাসিক ভারতে মধ্য যুগের সময়কালকে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে চান এবং বলেন, ভারতে মধ্য যুগের যথার্থ সময়কাল হবে ৬০৬ খ্রিঃ থেকে ১৭৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্ত। 

সাম্প্রতিক কালে ভারতের ঐতিহাসিকরা মধ্য যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি গভীর ভাবে নিরীক্ষন করে ভারতের মধ্য যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা - আদি মধ্য যুগ এবং পূর্ন মধ্য যুগ। 

(i.) আদি মধ্য যুগ - 

৬৫০ খ্রিঃ থেকে ১২০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত, অর্থাৎ হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পরবর্তী কাল থেকে কুতুবউদ্দিক আইবকের তথাকথিত দাস বংশ প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত সময়কালকে ঐতিহাসিকরা "আদি মধ্য যুগ" বলে চিহ্নিত করেছেন। মধ্য যুগের যা যা বৈশিষ্ট্য আছে, তার কিছু কিছু এই সময়ে অর্থাৎ ৬০৬ খ্রিঃ হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর থেকে ভারতে দেখা যেতে শুরু করে। ৬৫০ খ্রিঃ থেকে ১২০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাসে প্রাচীন যুগের যেমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তেমনই মধ্য যুগেরও কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে শুরু করে। 

তাই আধুনিক ঐতিহাসিকরা এই সময়কালকে প্রাচীন যুগ বলতে যেমন আপত্তি জানিয়েছেন। তেমনই পুরোপুরি অর্থে মধ্য যুগ বলতেও আপত্তি করেছেন। কেননা মধ্য যুগের সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলো এই সময়ে দেখা যায় নি। মধ্য যুগের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বা প্রবনতা এবং লক্ষন এই সময় থেকে দেখা যেতে শুরু করেছিলো। কিন্তু এই সময় প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য গুলোও বিদ্যমান ছিলো। সব দিক বিবেচনা করে তাই এই সময়কালকে ঐতিহাসিকরা "আদি মধ্য যুগ" বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেছেন। 

(ii) পূর্ন মধ্য যুগ - 

১২০৬ খ্রিঃ থেকে ১৭০৭ খ্রিঃ বা ১১৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত, অর্থাৎ কুতুবউদ্দিন আইবকের দাস বংশ প্রতিষ্ঠা কাল থেকে ১৭৫৭ খ্রিঃ পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্ত সময়কাল পূর্ন মধ্য যুগের অন্তর্গত। মধ্যযুগের যা বৈশিষ্ট্য তা এই সময়ে দেখা যায়। মধ্যযুগকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয় যেমন - সুলতানি যুগ (১২০৬ - ১৫২৬) এবং মুঘল যুগ (১৫২৬ থেকে ১৭০৭/১৭৫৭)।

ইওরোপে মধ্য যুগের সময়কালে - 

ইওরোপের ক্ষেত্রে মধ্য যুগের সময়কাল ছিলো ৪৭৬ খ্রিঃ থেকে ১৪৫৩ খ্রিঃ, কনস্ট্যানটিনোপেলের পতনের সময়কাল পর্যন্ত। অর্থাৎ পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের পতন থেকে ১৪৫৩ খ্রিঃ পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময়কাল পর্যন্ত সময়কাল ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগ নামে পরিচিত। 

ইওরোপ ও ভারতের মধ্য যুগের সময়কালের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায়, ভারতের তুলনায় ইওরোপে মধ্য যুগের সময়কাল ছিলো অনেক সংক্ষিপ্ত। ইওরোপে ভারতের তুলনায় অনেক আগে মধ্য যুগ শুরু হয়েছিলো এবং শেষ হয়েছিলো। 

(গ.) আধুনিক যুগ :-

মধ্য যুগের অবসানের পরবর্তীকালীন সময়কালকে ঐতিহাসিকরা "আধুনিক যুগ" বলে চিহ্নিত করেছেন। 

পৃথিবীর সব দেশেই বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে আধুনিক যুগকে ঐতিহাসিকরা চিহ্নিত করে থাকেন। যেমন - 

১.সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়
২. মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব এবং আর্থ - সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব, 
৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং বৃহত্তর সমাজে তার প্রভাব, 
৪. আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার উদ্ভব ও প্রসার
৫. গনতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রসার, 
৬. ধর্ম নিরপেক্ষ চিন্তা চেতনার উদ্ভব, 
৭. কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি
৮.ব্যক্তিসত্ত্বা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের বিকাশ, 
৯.উন্নত যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকাশ, 
১০. জাতীয়তাবাদ,গনতন্ত্রবাদ ও উদারনীতিবাদের উদ্ভব ও প্রসার, 
১১. আইনের শাসন ও দক্ষ আমলাতন্ত্রের প্রচলন, 
১২. পুঁজিবাদের বিকাশ, 
১৩. মানবতাবাদের উদ্ভব ও প্রসার, 
১৪. যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান মনস্কতা ও মানব মুক্তি, 
১৫. জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থান, 
১৬. কারখানা ভিত্তিক শিল্প উৎপাদন ও শ্রম বিভাজন নীতি, 

ভারতে আধুনিক যুগের সময়কাল :- 

বলা বাহুল্য, প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগের মতো আধুনিক যুগের সূচনা এবং অবসানের সময়কাল সবদেশে এক নয়। ভারতে মধ্যযুগের সূচনা কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যেমন একমত লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক যুগের সূচনার ক্ষেত্রে তেমনটি কিন্তু লক্ষ্য করা যায় না। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, ভারতে ১৭০৭ খ্রিঃ থেকেই আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়েছিলো। আবার যদুনাথ সরকারের মতো অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে ১৭৫৭ খ্রিঃ পলাশীর যুদ্ধের পর থেকেই ভারতে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়। যদিও এই মতকেও ঐতিহাসিকদের একটা বড়ো অংশ মেনে নিতে চান নি। তাদের প্রধান যুক্তি হলো, আধুনিক যুগের যা কিছু বৈশিষ্ট্য, যেমন জাতীয়তাবাদ, আধুনিক যুক্তিবাদী শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার সুফল, এসব পলাশীর যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই ভারতে শুরু হয়ে যায় নি। অনেক পরে হয়েছিলো। 

আমরা জানি, ইংরেজ শাসনের হাত ধরেই ভারতে আধুনিক যুগের সব সম্ভবনাময় বৈশিষ্ট্য গুলির জন্ম হয়েছিলো। মাথায় রাখতে হবে, পলাশীর যুদ্ধের পরেই ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় নি। বাংলার নবাবের বদল ঘটেছিলো মাত্র। এই যুদ্ধের পর ইংরেজ কোম্পানি কিছু বানিজ্যিক ও আর্থিক সুবিধা লাভ করেছিলো। তাছাড়া, পলাশীর যুদ্ধ একটি গোপন ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিমূলক ঘটনা ছিলো। কি করা হবে এবং কি পাওয়া যাবে, সবটাই পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। ষড়যন্ত্রের মতো একটি কুচক্রী ঘটনা দিয়ে কখনো কি একটি দেশের আধুনিক যুগ শুরু হতে পারে? 

সবদিক বিবেচনা করে তাই ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দকেই ভারতে আধুনিক যুগের সূচনা বলে গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত হবে। কেননা ১৭৬৪ খ্রিঃ বক্সারের যুদ্ধের পর ১৭৬৫ খ্রিঃ এলাহাবাদের সন্ধি অনুসারে ইংরেজ কোম্পানি বাংলাদেশের দেওয়ানির ক্ষমতা লাভ করে। দেওয়ানির ক্ষমতা লাভের মধ্য দিয়ে কোম্পানি ভারতের মূল শাসন ব্যবস্থায় অঙ্গীভূত হয়। এর পর ধীরে ধীরে ভারতে ইংরেজরা ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এই ব্রিটিশ শাসনের সুবাদেই ভারতে আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে।

সাম্প্রতিক কালের ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭৬৫ খ্রিঃ থেকে ইংরেজদের ভারত ত্যাগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৭ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস আধুনিক যুগের অন্তর্গত। 

ইওরোপে আধুনিক যুগের সময়কাল :- 

ইওরোপে ১৪৫৩ খ্রিঃ অটোমান তুর্কিদের দ্বারা কনস্ট্যানটিনোপেলের পতন থেকে শুরু করে ১৯৪৫ খ্রিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস আধুনিক যুগের অন্তর্গত

সাম্প্রতিক কালে ইওরোপের ঐতিহাসিকগন আধুনিক যুগকে দুটি পর্বে ভাগ করেছেন। যথা প্রাক্ আধুনিক যুগ বা ইওরোপের বিবর্তন যুগ এবং আধুনিক যুগ। 

পঞ্চদশ শতক থেকে সপ্তদশ শতাব্দী ( মতান্তরে অষ্টাদশ শতাব্দী) পর্যন্ত ইওরোপের ইতিহাসের সময়কাল প্রাক্ আধুনিক যুগের অন্তর্গত। অন্যদিকে ১৭৮৯ খ্রিঃ ফরাসি বিপ্লব থেকে ১৯৪৫ খ্রিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস ( অর্থাৎ ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস) আধুনিক যুগের অন্তর্গত।

(ঘ.) উত্তর - আধুনিক যুগ :- 

একদল ঐতিহাসিকদের মতে, ১৯৪৫ খ্রিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আধুনিক যুগ শেষ হয়ে গেছে। এর পর বিশ্বে শুরু হয়েছে "উত্তর আধুনিক যুগ" বা "post modern age"। 

উত্তর আধুনিক যুগ কাকে বলে বা উত্তর আধুনিকতা বলতে ঠিক কি বোঝায়, তা একটি জটিল এবং গোলমেলে বিষয়। সহজ করে বলা যায়, উত্তর আধুনিকতা হচ্ছে "আধুনিকতা" বিরোধী একটি দর্শন বা মতাদর্শফ্রান্সের মিশেল ফুকো, জ্যাঁক ডেরিডা প্রমুখ ছিলেন এর প্রবক্তা। 

উত্তর আধুনিকতাবাদের মূল কথা 

উত্তর আধুনিকতাবাদের প্রবক্তারা উপরে উল্লেখিত সকল "আধুনিক" চিন্তা ভাবনারই বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেছেন, আধুনিকতা একটি বিভ্রান্তিমূলক শব্দ ও ধারনা। মনে রাখতে হবে, সব যুগের মানুষরাই তাদের যুগটিকে পূর্ববর্তী যুগ অপেক্ষা আধুনিক বা অগ্রগামী বলেই মনে করতেন। অনেক সময় ইওরোপের ধ্যান ধারনা গুলিকে অনুকরন, অনুসরন বা আত্মস্থ করে নিজেকে আধুনিক দেখানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন ঊনবিংশ বিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পরিপুষ্ট হয়ে একদল শিক্ষিত বাঙালি ধুতি পাঞ্জাবি বা তারা এলাকার জলবায়ুর উপযোগী পোশাক পরিত্যাগ করে কোর্ট প্যান্ট পরে নিজেদের আধুনিক বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইওরোপের কোর্ট প্যান্ট যে আধুনিক সেটি আমরা কোন কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে বুঝবো? 

উত্তর আধুনিকতাবাদের প্রবক্তারা তাই বলেছেন, আধুনিকতা কোন দর্শন নয়। স্থায়ী লক্ষনও নয়। ইওরোপীয় সভ্যতার একটি রূপমাত্র। এই সভ্যতা মানব মুক্তির কথা বলেছিলো। মানব কল্যানের কথা বলেছিলো। ঈশ্বরীয় নিয়ন্ত্রন ও ভীতির নাগপাশ থেকে মানুষকে মুক্ত ও স্বাধীন ভাবে বিকশিত হবার পথ দেখিয়েছিলো। মানব মুক্তির জন্য আধুনিক যুগে নানা প্রগতিশীল চিন্তাধারা ও স্ট্রাকচারের উদ্ভব ঘটে। যেমন - গনতন্ত্র, শিল্পবিপ্লব, সমাজতন্ত্রবাদ, পুঁজিবাদ, উপনিবেশবাদ, উদারনীতিবাদ, নারীবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি। 

কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আধুনিক (ইওরোপীয়) সভ্যতা সম্পর্কে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। দেখা গেলো মানব মুক্তির জন্য আধুনিক যুগে যে সব স্ট্রাকচার বা ফর্ম গুলো তৈরি করা হয়েছিলো, যেমন - গনতন্ত্র, শিল্পবিপ্লব, সমাজতন্ত্রবাদ, পুঁজিবাদ, উপনিবেশবাদ, জাতীয়তাবাদ, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি - এগুলো মানুষের কোন কল্যান সাধন করতে পারে নি। এগুলির কদর্য রূপ ও অভ্যাসের মর্মান্তিক পরিনতি দেখা যায় বিশ্বযুদ্ধ গুলিতে। এইসময় মানুষের মুক্তির বদলে বহু মানুষের মৃত্যু ও বিপর্যয় আধুনিকতাবাদ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দেয়। 

এর ফলে ইওরোপীয় সভ্যতার মোহ থেকে একের পর এক দেশগুলি বেরিয়ে আসতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া,আফ্রিকার প্রায় সব দেশ পাশ্চাত্যের অধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভ করতে শুরু করে। ইওরোপীয় চিন্তাভাবনার বিপরীতে তারা নতুন করে বিকল্প ভাবনা চিন্তা শুরু করে। এর ফলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের বিপ্রতীপে শুরু হয়েছিলো বিকল্প চিন্তা ভাবনা এবং নির্জোট আন্দোলন। শুধু তাই নয়, ইওরোপীয় রাষ্ট্রসংঘের বিপ্রতীপে গড়ে ওঠ  থাকে একের পর এক বিকল্প সংঘ বা রাষ্ট্রজোট। 

এককথায়, উত্তর আধুনিকতাবাদ তথাকথিত আধুনিকবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেএর মূল বক্তব্য হলো চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু হয় না। এটি প্রচলিত বা প্রথাগত ধারনা বা স্ট্রাকচারের বিপরীতে কাজ করার কথা বলে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি, বিশ্বায়ন, পাশ্চাত্য প্রাধান্যের বিরোধীতা, মহাকাশ ফেরিয়ান ইত্যাদি উত্তর আধুনিক যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তথ্য প্রযুক্তি ও বিশ্বায়ন জাতীয়তাবাদের মতোই আধুনিক যুগের অনেক ফর্ম বা স্ট্রাকচারকে ভেঙ্গে দিতে শুরু করছে। 


দেশ ও মহাদেশ সময়কালের পরিধি
১. ভারতে প্রাচীন যুগের সময় কাল প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ৬০৬ (মতান্তরে ৬৫০) খ্রিঃ পর্যন্ত।
২. ইওরোপে প্রাচীন যুগের সময় কাল প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ৪৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত।
৩. ভারতে মধ্য যুগের সময় কাল ১২০৬ খ্রিঃ থেকে ১৭৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত।
৪. ভারতে আদি মধ্য যুগের সময় কাল ৬০৬ (মতান্তরে ৬৫০) খ্রিঃ থেকে ১২০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত।
৫. ইওরোপে মধ্য যুগের সময় কাল ৪৭৬ খ্রিঃ থেকে ১৪৫৩ খ্রিঃ পর্যন্ত।
৬. ভারতে আধুনিক যুগের সময় কাল ১৭৫৭ (মতান্তরে ১৭৬৫) খ্রিঃ থেকে ১৯৪৭ খ্রিঃ।
৭. ইওরোপে আধুনিক যুগের সময় কাল ১৪৫৩ খ্রিঃ থেকে ১৯৪৫ খ্রিঃ পর্যন্ত।
৮. উত্তর আধুনিক যুগ ১৯৪৫ খ্রিঃ পর থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post