দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা ও বুরবোঁ রাজতন্ত্র

"দৈব রাজতন্ত্র" হলো এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা যেখানে রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে প্রচার করতেন। রাষ্ট্রে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র ও রাজার অপ্রিহত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা প্রচার করা হয়েছিলো।

দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা ও বুরবোঁ রাজতন্ত্র
দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা ও বুরবোঁ রাজতন্ত্র 

(ক.) দৈব রাজতন্ত্রের মূল বক্তব্য ও বৈশিষ্ট্য :- 

দৈব রাজতন্ত্রের ধারনাটি হলো রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত একটি "ঐশ্বরিক মতবাদ"। এই মতবাদে বলা হয়েছে - 

(১.) ঈশ্বরের ইচ্ছায় রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। রাজা তাঁরই ইচ্ছায় শাসক নিযুক্ত হয়েছেন। 

(২.) "ঈশ্বরের প্রতিনিধি" হিসাবেই রাজা শাসনকার্য পরিচালনা করেন। 

(৩.) রাজা যেহেতু "ঈশ্বরের প্রতিনিধি" তাই তিনি সাধারন মানুষ বা প্রজাগনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নমস্য ব্যক্তি। 

(৪.) জনগন রাজাকে  নিয়োগ বা নির্বাচন করেন নি। তাই রাজা তার শাসন কাজের জন্য জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। 

(৫.) রাজা যেহেতু ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তাই তিনি সব পার্থিব বা রাষ্ট্রীয় আইন, শাসন ও বিচারের উর্ধ্বে ছিলেন। 

(৬.) রাজা কোন ভুল করেন না এবং রাজাকে সমালোচনা করার অধিকার কারো নেই। 

(৭.) রাজা যেহেতু ঈশ্বর নির্দিষ্ট ব্যক্তি তাই রাজাকে অস্বীকার বা অমান্য করা মানে ঈশ্বরকে অস্বীকার বা অমান্য করা। 

(৮.) রাজাকে যেহেতু ঈশ্বর নিয়োগ করেন তাই রাজা তার শাসন কাজের জন্য একমাত্র ঈশ্বরের কাছেই দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি করতে বাধ্য। 

(৯.) রাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রভু ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার উৎস যেহেতু রাজা, তাই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা রাজার মধ্যেই নিহিত। 

(১০.) রাজা ঈশ্বর নির্দিষ্ট বা প্রেরিত হওয়ায় শাসনকার্যে তাঁর ইচ্ছাই ছিলো শেষকথা। 

(খ.) দৈব রাজতন্ত্রের ইতিহাস :- 

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই "রাজপদ" সম্পর্কে "দৈব রাজতন্ত্র" ধারনটি চালু ছিলো। প্রাচীনকালে বিভিন্ন দেশে দৈব রাজতন্ত্রের ধারনাটির প্রথম উদ্ভব ঘটেছিলো। প্রাচীন ভারতে অনেক রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে প্রচার করতেন। প্রাক্ আধুনিক যুগ পর্যন্ত চিনের সম্রাটরা নিজেদের ঈশ্বরের পুত্র এবং  চিনকে "স্বর্গীয় ভূমি" বলে প্রচার করতেন। দৈব রাজতন্ত্রের ধারনার জন্যই চিনা সম্রাটের সঙ্গে দেখা করার সময়ে "কাউটাউ প্রথায়" নত মস্তকে রাজাকে অভিবাদন জানাতে হতো। 

মধ্য যুগের ভারতে গিয়াসউদ্দিন বলবন দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা তুলে ধরে নিজেকে "আল্লার ছায়া" বলে ঘোষনা করেছিলেন। তিনি রাজদরবারে সিজদা ও পাইবস অর্থাৎ সুলতানের সামনে নতজানু হয়ে পদচুম্বনের প্রথা প্রচলন করেছিলেন। আধুনিক যুগের আগে ইওরোপের বহু দেশে দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা প্রচলিত ছিলো। ফ্রান্সেও ১৭৮৯ খ্রিঃ ফরাসি বিপ্লবের আগে বুরবোঁ রাজারা দৈব রাজতন্ত্রের ধারনায় বিশ্বাস করতেন। চতুর্থ হেনরির আমলে লোয়াজো রাজাকে একসঙ্গে প্রজাদের আধিকারিক ও ঈশ্বরের লেফটেন্যান্ট বলে উল্লেখ করেন। 

(গ.) দৈব রাজতন্ত্রের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক :-

পৃথিবীর সব দেশেই রাজার নিরঙ্কুশ রাজক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য দৈব রাজতন্ত্রের প্রচার করা হয়েছিলো। রাজা ও রাষ্ট্রের স্বপক্ষে দৈব রাজতন্ত্রের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক যেমন লক্ষ্য করা যায়, তেমনি বহু নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। 

ইতিবাচক দিক :- 

দৈব রাজতন্ত্রের যেসব ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যায়, তা হলো - 

(১.) দৈব রাজতন্ত্র রাষ্ট্রে রাজার নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। 

(২.) দৈব রাজতন্ত্রে রাজা ঈশ্বর নির্দিষ্ট প্রচারিত হওয়ায় রাজক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো প্রতিষ্ঠান বা প্রবনতা গুলির সমূলে বিনাষ ঘটে। 

(৩.) প্রজাদের ধর্মীয় আনুগত্য ও অনুভূতিকে ব্যবহার করে জনসাধারণের মধ্যে রাজার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দৈব রাজতন্ত্র বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। 

(৪.) নির্বিঘ্নে শাসন চালানোর ক্ষেত্রে দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা বিশেষ সাহায্য করেছিলো।

নেতিবাচক দিক :- 

দৈব রাজতন্ত্রের প্রভাবে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বহু নেতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন - 

(১.) দৈব রাজতন্ত্রের প্রভাবে রাজারা চূড়ান্ত স্বৈরাচারী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেন। 

(২.) দৈব রাজতন্ত্রের দোহাই দিয়ে রাজারা বংশানুক্রমিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। 

(৩.) বংশানুক্রমিক শাসনে যোগ্য রাজার পরে বহু অযোগ্য রাজার অপশাসন চলতে থাকে। 

(৪.) দৈব অধিকারের দোহাই দিয়ে রাজা রাজ্যশাসনে কোন জনপ্রতিনিধিসভা বা জনমতের নিয়ন্ত্রণ মানতেন না। 

(৫.) রাজা নিজেকে পার্থিব আইন, শাসন ও বিচারের উর্ধ্বে বলে ঘোষনা করেন। 

(৬.) দৈব রাজতন্ত্রে জনমত বা জনসমর্থনের গুরুত্ব উপেক্ষিত থাকায় প্রজাকল্যানের প্রতি রাজার কোন দায় বা দায়িত্ব ছিলো না। 

(৭.) দৈব রাজতন্ত্রে রাজা ঈশ্বর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে স্বীকৃত হন। এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রাজা বিপুল ঐশ্বর্য, বৈভব, ও জাকজমকের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্রকে সাজিয়ে তোলেন। 

(ঘ.) বুরবোঁ রাজতন্ত্রের ওপর দৈব রাজতন্ত্রের প্রভাব :- 

ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজারা দৈব রাজতন্ত্রের ধারনায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করতেন। বুরবোঁ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা চতুর্থ হেনরিকে লোয়াজো ঈশ্বরের লেফটেন্যান্ট বলে উল্লেখ করেন। 

বুরবোঁ রাজাদের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজার ঐশ্বরিক মহিমাকে প্রচার করা হতো। ফ্রান্সে রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানের পরদিন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, যেখানে রাজা গলগন্ড রোগীদের স্পর্শ করে বলতেন, "রাজা তোমাকে স্পর্শ করেছেন, ঈশ্বর তোমাকে নিরাময় করুন।

(১.) দৈব রাজতন্ত্রের প্রভাবে বুরবোঁ রাজবংশ ফ্রান্সে চরম স্বৈরাচারী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলো। স্বৈরাচারিতার চরম নিদর্শন দিয়ে বুরবোঁ রাজা চতুর্দশ লুই বলতেন -" আমি-ই রাষ্ট্র"। ষোড়শ লুই বলতেন -" আমার ইচ্ছাই আইন।" 

(২.) দৈব রাজতন্ত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বুরবোঁ রাজারা শাসন পরিচালনায় জনমত বা জনসমর্থনকে সম্পূর্ন ভাবে উপেক্ষা করেন। রাজারা নিজেদের সর্বময় ক্ষমতাকে নিশ্চিত করতে ফ্রান্সের পার্লেমেন্ট সভা "স্টেটস জেনারেলকে" ১৬১৪ খ্রিঃ থেকে বন্ধ করে দিয়ে প্রায় ১৭৫ বছর ধরে নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্রের শাসন চালান। 

(৩.) নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য রাজারা "লেতর দ্য ক্যাশে" নামক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সাহায্যে যেকোন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে রাখতো। অনেক সময় মিথ্যা অভিযোগ এনে সাধারন মানুষকে বাস্তিল দুর্গে বন্দী রাখা হতো। 

(৪.) রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতা তত্ত্বের অন্যতম নিদর্শন ছিলো" লেতর দ্য গ্রেস" নামক রাজকীয় পরোয়ানা নামা। এর দ্বারা রাজা আদালতে যে কোন অপরাধী ব্যক্তির শাস্তি মুকুব করতে পারতেন। শুধু তাই নয় ঐশ্বরিক ক্ষমতা তত্ত্বের বলে বুঁরবো রাজারা আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের প্রধান ও সর্বোচ্চ ব্যক্তি বলে পরিগনিত হতেন। 

(৫.) দৈব রাজতন্ত্রের প্রভাবে বুরবোঁ রাজারা নিজেদের রাজকীয় ঐশ্বর্য ও ভোগবিলাসে প্রভূত অর্থ অপচয় করেন। প্রজাকল্যান ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারকার্যে তারা ভীষনরকম ভাবে অনীহা প্রকাশ করতেন। রাষ্ট্রীয় আয়ের মাত্র ২% অর্থ তারা প্রজাকল্যানে ব্যয় করেন। 

(৬.) দৈব রাজতন্ত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বুরবোঁ রাজারা জনগনের থেকে নিজেদের সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন। তারা ছিলেন অত্যন্ত রক্ষনশীল, পুরাতনপন্থী ও সংস্কার বিরোধী। 

(৭.) দৈব রাজতন্ত্রের প্রভাবে বুরবোঁ রাজারা ফ্রান্সে বংশানুক্রমিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। বংশানুক্রমিক রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যোগ্য সম্রাট কেন্দ্রে থাকলে প্রশাসনে যে সক্রিয়তা ও কর্মক্ষমতা দেখা যায়, দুর্বল উত্তরাধিকারী রাজার আমলে সেই প্রশাসনই দুর্বল, অলস, অদক্ষ ও অপদার্থ হয়ে ওঠে। প্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্নীতি দেখা যায়। 

ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজাদের শাসনের ক্ষেত্রেও এটি দেখা গিয়েছিলো। চতুদর্শ লুয়ের পর তাঁর পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা সকলেই ছিলেন দুর্বল, অলস ও অপদার্থ। চতুদর্শ লুইয়ের পর "প্রজাপতি রাজা" নামে পরিচিত পঞ্চদশ লুই ছিলেন অসল ও ব্যভিচারী। নারীদেহলোভী এই রাজা শাসন অপেক্ষা ভোগবিলাস ও শিকারেই অধিক সময় অতিবাহিত করতেন। তাঁর দুর্বলতার সুযোগে অভিজাতরা প্রশাসনের সর্বত্র তাদের প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। পঞ্চদশ লুইয়ের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ষোড়শ লুই ছিলেন সম্পূর্ন রাজকীয় ব্যক্তিত্বহীন একজন রাজা। পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুইয়ের আমলে ফ্রান্সে প্রশাসনের সর্বত্র দুর্নীতি ও অপদার্থতা মানুষের মনে দৈব রাজতন্ত্রের গ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তুলে দেয়। 

(ঙ.) বুরবোঁ রাজতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা :- 

ঐশ্বরিক ক্ষমতা তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে বুরবোঁ রাজারা তাদের রাজতন্ত্রকে নিরঙ্কুশ ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার নানাবিধ উদ্যোগ নিলেও, এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিলো না। বুরবোঁ রাজতন্ত্রের মধ্যে নানা সীমাবদ্ধতা ছিলো। 

(১.) ফরাসি গির্জার ওপর রাজারা হস্তক্ষেপ করতে পারতেন না। 

(২.)  গির্জার ভূ সম্পত্তির ওপর রাজা কোন কর আরোপ করতেও পারতেন না। 

(৩.) অভিজাতদের সঙ্গে রাজার প্রায়ই সংঘাত লেগে থাকতো।

(৪.) অভিজাতরা অনেক সময়ে রাজার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করতো ও রাজার ক্ষমতায় ভাগ বসাতো। 

(৫.) ফরাসি অভিজাতরা প্রায়ই রাজার সঙ্গে সমকক্ষতা দাবি করতো। 

(৬.) অনেক ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সভা বা পার্লেমোঁ গুলি রাজার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করতো। 

(৭.) পার্লেমোঁ গুলিতে স্থানীয় অভিজাতরা প্রাধান্য ভোগ করতো। রাজা কোন নতুন আইন জারি করলে তা পার্লেমোঁতে নথিবদ্ধ করতে হতো। পার্লেমোঁর সম্মতি ও অনুমোদন ছাড়া রাজার কোন নির্দেশ প্রদেশ গুলিতে কার্যকরী করা যেতো না। 

(৮.) "Lit de Justice" পরোয়ানার সাহায্যে রাজা পার্লেমোঁর বিরোধিতা করে যেকোন আইন পাস করিয়ে নেওয়ার অধিকারী হলেও, কার্যক্ষেত্রে রাজা অভিজাতদের ক্ষমতা খর্ব করতে সাহসী হতেন না।

এইসব কারনে অষ্টাদশ শতকে বুরবোঁ রাজতন্ত্র একটি সীমাবদ্ধ রাজতন্ত্রে পরিনত হয়েছিলো। 

(চ.) দৈব রাজতন্ত্রের পতন :- 

অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজাদের শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে ব্যপক দুর্নীতি, আর্থিক দুরাবস্থা, রাজাদের ভ্রান্ত যুদ্ধ ও বিদেশনীতি, প্রজাকল্যানে বিমুখতা, রাজাদের অতিরিক্ত ভোগবিলাস ও ব্যভিচার দৈব রাজতন্ত্রের গ্রহনযোগ্যতা ও উৎকর্ষতা নিয়ে মানুষের মনকে নানা প্রশ্নে বিদ্ধ করে তোলে। এক্ষেত্রে দার্শনিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। 

দৈব রাজতন্ত্রের গ্রহনযোগ্যতা ও তার ভিত্তিমূলে তীব্র কুঠারাঘাত করেন ফরাসি দার্শনিকরা। দার্শনিক মন্তেস্কু দৈব রাজতন্ত্রের ধারনার মূলে তীব্র আঘাত হেনে তাঁর বিখ্যাত "দ্য স্পিরিট অব লজ" গ্রন্থটি লেখেন। এই গ্রন্থে তিনি রাজার স্বৈরাচারিতাকে প্রতিহত করার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরন নীতির কথা তুলে ধরেন এবং আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরনের কথা বলেন। ইংল্যান্ড ও ফরাসি দার্শনিকদের কেউ কেউ রাজার দৈব অধিকারের বিরুদ্ধে "সামাজিক চুক্তি" মতবাদের প্রতিষ্ঠা করেন। 

ফ্রান্সের দৈব বুরবোঁ রাজতন্ত্র ছিলো পুরাতনতন্ত্রের রক্ষক এবং ধারক ও বাহক। অষ্টাদশ শতকে এই দৈবানুগ্রহ রাজতন্ত্রের নানা সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতা ও স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে দার্শনিকরা নিরন্তর সমালোচনা করে ও বিকল্প রাষ্ট্রতত্ত্ব উপস্থাপিত করে দৈব রাজতন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আনুগত্যের বন্ধন শিথিল করে দেন। এর পরিনামেই ১৭৮৯ খ্রিঃ ফরাসি বিপ্লবে দৈব রাজতন্ত্রের ধারনা তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছিলো। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post