অভিজাতদের তরফে রাজার বিরোধিতা ও বিদ্রোহ

 ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে "অভিজাত বিদ্রোহ" ছিলো একটি দিগনির্নায়কারী ঘটনা। জর্জ লেফেভর, আলবেফুব মাতিয়ে, কোবান প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতে, বুরবোঁ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফরাসি অভিজাতদের বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ফ্রান্সে বিপ্লবের প্রকৃত সূচনা ঘটেছিলো। রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ ফ্রান্সের গন - বিপ্লবের পথকে অনেকখানি সহজ ও মসৃন করে দিয়েছিলো বলে অনেক ঐতিহাসিক অভিজাত বিদ্রোহকে শুধুমাত্র "বিদ্রোহ" নামে অভিহিত না করে "বিপ্লব" নামে অভিহিত করেছেন।

অভিজাতদের তরফে রাজার বিরোধিতা ও বিদ্রোহ
অভিজাতদের তরফে রাজার বিরোধিতা ও বিদ্রোহ 


(১.) রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিরোধিতা ও বিদ্রোহের কারন :- 

ফ্রান্সে রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিরোধিতা ও বিদ্রোহের পিছনে ৩ টি কারন ছিলো। যথা - 

  • (১.) নিরঙ্কুশ ও বিশেষ ক্ষমতার প্রশ্নে রাজা বনাম অভিজাত দ্বন্দ্ব, যা বেশ পুরাতন ছিলো। 
  • (২.) রাজার তরফে অভিজাতদের বিশেষ সুবিধাবাদে আঘাত এবং 
  • (৩.) নিজেদের শ্রেনী স্বার্থ বজায় রাখতে গিয়ে অভিজাতদের সম্মিলিত ভাবে রাজার আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করা। 

(ক.) রাজা বনাম অভিজাত দ্বন্দ্বের দীর্ঘ ঐতিহ্য :- 

ফ্রান্সে অভিজাতদের তরফে রাজার বিরোধিতা বা রাজার তরফে অভিজাতদের বিরোধিতা নতুন কোন ঘটনা ছিলো না। চূড়ান্ত ক্ষমতার প্রশ্নে অভিজাতদের সঙ্গে রাজার লড়াই লেগেই থাকতো। পার্লেমোকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে রাজার সঙ্গে অভিজাতদের বিরোধ প্রবল আকার ধারন করেছিলো। 

ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রদেশ গুলিতে "পার্লেমো" নামে অভিজাতদের একধরনের বিচারসভা ছিলো। রাজার তৈরি করা কোন আইন প্রদেশ গুলিতে চালু করার আগে পার্লেমো গুলিতে নথিবদ্ধ করতে হতো। এদের অনেক রকম কাজ ছিলো। রাজার আদেশ নথিবদ্ধ করে জনগনের মধ্যে প্রচার করা, বিচারকার্য সম্পাদন করা, ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা ইত্যাদি। ফ্রান্সে মোট ১৩ টি পার্লেমো ছিলো। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ছিলো "পার্লেমো অব প্যারিস"। পার্লেমোর পদ গুলিতে অভিজাতরা বংশানুক্রমিক ভাবে ক্ষমতা ভোগ করতো। অভিজাতদের তরফ থেকে রাজার বিরোধিতার ক্ষেত্রে পার্লেমো গুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। 

চতুর্দশ লুইয়ের সময়কাল থেকেই ক্ষমতার প্রশ্নে অভিজাতদের সঙ্গে রাজার বিরোধিতা দেখা দিলে ১৬৬৬ খ্রিঃ পার্লেমো গুলিকে চতুর্দশ লুই বলেছিলেন, "আমার মধ্যেই রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, আইন প্রণয়নের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাও আমার, সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থা আমার মধ্য থেকে উদ্ভূত।" বলা বাহুল্য, এই উক্তির মধ্য দিয়ে চতুর্দশ লুই অভিজাত ও পার্লেমোর আইন নথিবদ্ধকরনের বিশেষ ক্ষমতাকে নসাৎ করতে চান। চতুদর্শ লুইয়ের পর পঞ্চদশ লুইয়ের আমলে নানা কারনে অভিজাতদের সঙ্গে রাজার বিরোধ বাঁধে। পার্লেমোর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভয় পেয়ে পঞ্চদশ লুই ১৭৭১ খ্রিঃ পার্লেমো গুলি ভেঙ্গে দিলে সারা দেশব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ দেখা দেয়। এরপর ১৭৭৪ খ্রিঃ ষোড়শ লুই সিংহাসন লাভ করে পার্লেমো গুলি পুনরায় গঠন করে অভিজাতদের আস্থা ও আনুগত্য লাভের চেষ্টা করেন। যদিও তাঁর এই প্রচেষ্টা ছিলো সাময়িক ও ক্ষনস্থায়ী। 

১৭৭৪ খ্রিঃ বিপুল ঋনের বোঝা ও অর্থনৈতিক সংকটের চাপ নিয়ে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন পঞ্চদশ লুইয়ের পৌত্র (নাতি) ষোড়শ লুই। পঞ্চদশ লুইয়ের আমল থেকেই অভিজাতরা প্রশাসনের সর্বত্র তাদের অধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। অভিজাতদের প্রভাব বলয় থেকে ষোড়শ লুইয়ের স্ত্রী মেরি আঁতোয়ানেৎও মুক্ত ছিলেন না। ষোড়শ লুই মাত্র কুড়ি বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। প্রকৃতিগত দিক থেকে তিনি ছিলেন অনভিজ্ঞ ও দুর্বলচিত্ত। অভিজাতদের সামলে রেখে অথবা অভিজাতদের প্রভাব বলয়কে ছিন্ন করে রাজপাট চালানোর মতো কার্যকরী চারিত্রিক দৃঢ়তা ষোড়শ লুইয়ের ছিলো না। এমতাবস্থায় রাজা ও অভিজাতদের বিরোধ ছিলো অবশ্যম্ভাবী এবং এটি রাষ্ট্রে এক নতুন সংকট ডেকে নিয়ে এসেছিলো। 

(খ.) ষোড়শ লুইয়ের আর্থিক সংস্কার ও অভিজাতদের সুবিধাবাদে আঘাত :- 

১৭৭৪ খ্রিঃ সিংহাসনে বসার অল্প দিনের মধ্যেই ষোড়শ লুই তীব্র আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন। এই আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি লাভের জন্য ষোড়শ লুই ১৭৭৪ খ্রিঃ থেকে ১৭৮৮ খ্রিঃ মধ্যে পরপর চারজন অর্থমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেন। এরা হলেন যথাক্রমে রবার্ট তুর্গো (১৭৭৪ - ১৭৭৫), জ্যাকস নেকার (১৭৭৬ - ১৭৮৩), চার্লস ক্যালোন (১৭৮৩ - ১৭৮৭) এবং লমেনি দ্য ব্রিয়াঁ (১৭৮৭ - ১৭৮৮)। এই চারজন অর্থমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে ষোড়শ লুই ফ্রান্সে আর্থিক সংস্কারের প্রচেষ্টা শুরু করেন। 

তুর্গোর সংস্কার :- রবার্ট তুর্গো ছিলেন একজন বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ এবং ফিজিওক্র্যাট মতবাদের অনুসারী। ষোড়শ লুই তুর্গোকে অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করার পর ফ্রান্সের আর্থিক সংকট দূর করার জন্য তুর্গো ছয়টি কঠোর আর্থিক সংস্কারের প্রস্তাব দেন। এগুলি হলো - (১.) রাজপরিবারের অমিতব্যয়িতা ও সরকারি ব্যয় সংকোচন, (২.) বেগার প্রথার অবসান, (৩.) অন্তশুল্ক ব্যবস্থা রদ, (৪.) অবাধ বানিজ্যের প্রসার, (৫.) আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ না দেওয়া এবং (৬.) যাজক ও অভিজাতদের ওপর ভূমিকর আরোপ করা। 

যাজক ও অভিজাতরা ফ্রান্সের মোট কৃষিজমির প্রায় ৮০% ভোগদখল করতো। এমতাবস্থায় অভিজাতদের ওপর তুর্গোর ভূমিকর আরোপের প্রস্তাবে অভিজাতরা মারাত্মক অসন্তুষ্ট হয়। তারা রানী আঁতোয়ানেতের সাহায্যে ষোড়শ লুইয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে তুর্গোকে অপসারন করা যায়। এই সময় অজন্মার ফলে ফ্রান্সে কৃষিতে সংকট দেখা দিলে খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি পায়। সাঁকুলেৎরা রুটির দাঙ্গা শুরু করে। তুর্গো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দাঙ্গা প্রতিরোধ করেন। এর ফলে তার জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়ে। অভিজাত শ্রেনী এবং পার্লেমেন্ট এইসময় রাজা ও তুর্গোর বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে শুরু করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অভিজাতদের চাপে এইসময় ষোড়শ লুই তুর্গোকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত করেন। 

নেকারের সংস্কার :- তুর্গোকে অপসারিত করে ষোড়শ লুই ১৭৭৬ খ্রিঃ নেকার নামে জেনেভাবাসী এক ব্যাঙ্ক মালিককে অর্থমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন। নেকার প্রথম দিকে কোনরকম কর কাঠামোর সংস্কার না করে ঋন নিয়ে আর্থিক সমস্যার নিরসন ঘটানোর চেষ্টা করেন। এটি করতে গিয়ে তিনি ফরাসি অর্থনীতিকে বিপুল ঋনের জালে জড়িয়ে ফেলেন। তার ঋননীতির ফলে ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলে নেকার বাধ্য হয়ে সরকারি ব্যয় সংকোচন ও অভিজাতদের ওপর কর বসানোর প্রস্তাব দিয়ে অভিজাতদের বিরাগভাজন এবং পদচ্যুত হন। 

ক্যালোনের সংস্কার :- নেকারকে পদচ্যুত করার পর ষোড়শ লুই ১৭৮৩ খ্রিঃ চার্লস ক্যালোনকে পরবর্তী অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন। ক্যালোন ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট দূর করার জন্য কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রস্তাব পেশ করেন। এগুলি হলো - (১.) সকল সম্প্রদায়ের ওপর ভূমিকর, লবনকর ও তামাক কর আরোপ, (২.) করভি বা বেগার প্রথা এবং অন্তশুল্ক প্রথা লোপ এবং (৩.) খাদ্যদ্রব্যের অবাধ বানিজ্য নীতি গ্রহণ। 

ক্যালোনের প্রস্তাবে অভিজাতদের ওপর ভূমিকর ও লবনকর বসানোর স্পষ্ট নির্দেশ ছিলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অভিজাতরা ক্যালোনের আর্থিক সংস্কারের তীব্র বিরোধিতা করেন। ক্যালোনও জানতেন, অভিজাতদের বিরোধিতার জন্য তার প্রস্তাব গুলি কার্যকর হবে না। এজন্য তিনি রাজাকে পার্লেমোঁর বদলে বিশিষ্টদের পরিষদ Council of Notables গঠন করে তার পরামর্শ নিয়ে আর্থিক সংস্কার পাশ করার পরামর্শ দেন। ক্যালোন তার আর্থিক সংস্কার পাশ করিয়ে নেবার জন্য পার্লেমোঁ গুলিকে বাদ দিয়ে সামন্তপ্রভু, যাজক, উচ্চপদস্থ কর্মচারী, ইনটেনডেন্ট ও প্রাদেশিক সভার সদস্যদের নিয়ে Council of Notables গঠন করেন

Council of Notables এর সদস্যদের ক্যালোন নিজে মনোনীত করলেও, মনে রাখতে হবে বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের যাজক থেকে উচ্চপদস্থ কর্মচারী, প্রশাসনের সকল পদ গুলিই অভিজাতদের দখলে ও নিয়ন্ত্রনে ছিলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ক্যালোনের আর্থিক সংস্কারের তীব্র বিরোধিতা Council of Notables এর সকল সদস্যরাই করেন। এর ফলস্বরূপ ক্যালোন তার পূর্বসূরীদের মতোই পদচ্যুত হন। 

ব্রিঁয়ার সংস্কার :- ১৭৮৭ খ্রিঃ ষোড়শ লুই ক্যালোনকে পদচ্যুত করে পরবর্তী অর্থমন্ত্রী হিসাবে ব্রিঁয়াকে নিযুক্ত করেন। ব্রিঁয়া যাজক ও অভিজাতদের সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক অধিকার অক্ষত রেখে, আর্থিক সংকটের নিরসনের জন্য শুধুমাত্র স্ট্যাম্প কর ও ভূমিকর ধার্য করেন। ব্রিঁয়া তার কর প্রস্তাবের অনুমোদনের জন্য Council of Notables ভেঙ্গে দিয়ে প্রস্তাব গুলি পার্লেমেন্ট অব প্যারিসে পাঠান। কিন্তু পূর্ববর্তী অর্থমন্ত্রীদের মতো ব্রিঁয়ার কর প্রস্তাবেও পার্লেমেন্ট অব প্যারিস তীব্র আপত্তি জানায় এবং অভিজাতদের ওপর কর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।

এইভাবে নতুন কর প্রস্তাব ও আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে অভিজাতরা রাজার বিরোধিতা করে চলে। এর ফলে সিংহাসন লাভের পর থেকেই ষোড়শ লুইয়ের সঙ্গে অভিজাতদের সংঘাত ও দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। শেষপর্যন্ত রাজা ষোড়শ লুই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তার কর প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিরোধিতা - "বিদ্রোহের রূপ" ধারন করে ও বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করে। 

(৩.) অভিজাতরা কেন রাজার আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছিলো? 

প্রকৃতপক্ষে অভিজাতরা ৩ টি কারনে রাজার আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছিলো - 

(১.) দীর্ঘদিন ধরে অভিজাতরা যে কর মুক্তির সুবিধা ভোগ করে আসছিলো, তা তাদের কাছে ঐতিহ্যগত ও চিরন্তন বলে মনে হয়েছিলো। 

(২.) অভিজাত শ্রেনী মনে করেছিলো, তৃতীয় শ্রেণির সমানহারে কর দিতে বাধ্য হলে (লবন কর, তামাক কর, ভূমিকর) তাদের বংশকৌলিন্য ও বিশেষ সুবিধাবাদ অক্ষত থাকবে না এবং পরিনামে সাম্যতা তাদের অস্তিত্বের সংকট ডেকে আনবে। 

(৩.) ফ্রান্সের মোট কৃষিজমির প্রায় ৮০% ছিলো যাজক - অভিজাতদের হাতে। ষোড়শ লুইয়ের সকল অর্থমন্ত্রী ফ্রান্সের সব সম্প্রদায়ের ওপর ভূমিকর আরোপ করলে, তা প্রকারান্তরে অভিজাতদের ওপরেই সবথেকে বেশি আর্থিক বোঝা ও চাপ সৃষ্টি করতো। তাই নিজেদের আর্থিক ও শ্রেনী স্বার্থ বজায় রাখার জন্য অভিজাতরা রাজার কর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। 

ষোড়শ লুইয়ের আমলে আর্থিক সংকট দূর করার জন্য অভিজাতদের ওপর কর বসানো ছাড়া রাজার সামনে দ্বিতীয় কোন বিকল্প পথ খোলা ছিলো না। ফরাসি বিপ্লবের বেশ কয়েক বছর আগে কৃষিতে সংকট দেখা যায়। অজন্মা, মড়ক, শস্যহানি ইত্যাদির ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন মারাত্মক ভাবে কমে যায়। দেশে প্রবল খাদ্যাভাব দেখা যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। এমতাবস্থায় বাস্তবিক কারনেই ফ্রান্সের কৃষক শ্রেনীর ওপর বাড়তি কর ধার্য করা সম্ভব ছিলো না। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় অভিজাতদের ওপর কর আরোপই ছিলো একমাত্র পথ। 

(৪.) নতুন কর স্থাপন বিষয়ে রাজা ও পার্লেমেন্টের বিরোধ :- 

নতুন কর স্থাপনকে কেন্দ্র করে ষোড়শ লুইয়ের সঙ্গে অভিজাতদের যে বিরোধ চলছিলো, অর্থমন্ত্রী ব্রিঁয়ার আমলে তা তীব্র আকার ধারন করে। ব্রিয়েন তার আর্থিক সংস্কার গুলি প্যারিসের সর্বোচ্চ বিচারালয় পার্লেমেন্ট অব প্যারিসের কাছে প্রেরন করলে, পার্লেমেন্ট দু একটি সাধারণ সংস্কার মেনে নিয়ে স্ট্যাম্প কর ও ভূমিকরের প্রস্তাব বাতিল করে দেয়।

এই ঘটনায় ষোড়শ লুই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে "লিট দ্য জাস্টিস" (Lit de justice) নামে রাজার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নতুন কর প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পার্লেমো এই কাজকে অবৈধ বলে ঘোষনা করে, এবং জানায় রাজা আদেশ জারি করে নতুন কর স্থাপন করতে পারেন না। নতুন কর স্থাপন করতে হলে রাজাকে স্টেটস জেনারেলের অনুমোদন নিতে হবে। 

পার্লেমেন্টের প্রবল বিরোধিতার জন্য ষোড়শ লুই পার্লেমেন্টের তিনজন সদস্যকে প্যারিস থেকে নির্বাসিত করেন। এই ঘটনায় পার্লেমেন্টের সদস্যগন ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭৮৮ খ্রিঃ ৩ রা মে একটি ঘোষনা পত্রে জানায় - 

  • (১.) রাজতন্ত্র বংশগত অর্থাৎ ঐশ্বরিক বা চিরন্তন নয়। 
  • (২.) কর ধার্য করার অধিকার একমাত্র স্টেটস জেনারেলের। 
  • (৩.) কোন ফরাসি নাগরিককে ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার বা কারারুদ্ধ করা যাবে না। 
  • (৪.) বিচারকদের অপসারন বা প্রদেশগুলির ঐতিহ্যগত অধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না। 

এই ঘোষনাপত্র জারির পরের দিন ১৭৮৮ খ্রিঃ ৪ মে রাজা বলপূর্বক ভাবে পার্লেমেন্টের দুজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন। পার্লেমেন্টের হাত থেকে আইন নথিভুক্ত করার অধিকার কেড়ে নেন। পার্লেমেন্ট নামক বিচারসভা গুলি ভেঙ্গে দিয়ে ৪৫ টি নতুন বিচারালয় গঠন করেন এবং লিট দ্য জাস্টিসের প্রয়োগ করে ব্রিঁয়ার আর্থিক সংস্কার গুলি আইনে রূপদানের উদ্যোগ নেন। 

(৫.) রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ :- 

ষোড়শ লুইয়ের গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ১৩ টি পার্লেমেন্ট সভায় অভিজাতরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পার্লেমেন্টের ক্ষমতা লোপের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জা তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অভিজাত বিদ্রোহে যোগ দেয়। রাজপ্রশাসন বিরোধী সকলকে একত্রিত করে অভিজাতরা তাদের সংগ্রামকে জাতীয় স্তরে নিয়ে যান। পার্লামেন্টের ক্ষমতা হরন ও রাজার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতরা সর্বত্র দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু করে। রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অভিজাতরা সাধারন মানুষ ও বুর্জোয়াদেরও আহ্বান জানায়। 

ফ্রান্সের ফ্রাসকতে, দোফিনে, প্রভস, দিজ, তুলুজে, রেনে, প্রভৃতি প্রদেশ ও শহরে অভিজাতদের বিদ্রোহ চরম আকার ধারন করেছিলো। অভিজাতদের সঙ্গে সরকারি কর্মচারী ও সৈন্যবাহিনীর সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষুব্ধ জনগন ইনটেনডেন্টদের বন্দী করে রাখে। গ্রেনোবল নামক স্থানে জনতার সঙ্গে সরকারি সেনার সংঘাত চরমে উঠেছিলো। ১৭৮৮ খ্রিঃ ৭ ই জুন গ্রেনোবলে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি সেনার দিকে টালি ছুঁড়ে আক্রমন করতে থাকে। এই ঘটনার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিলো যে ১৭৮৮ খ্রিঃ ৭ ই জুন তারিখটিকে ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে "টালির দিন" নামে অভিহিত করা হয়। 

টালির দিনের পর ১৭৮৮ খ্রিঃ ২১ শে জুলাই অভিজাত, যাজক ও বুর্জোয়ারা ভিজিলে নামক স্থানে মিলিত হয়ে জাতীয় সভা বা স্টেটস জেনারেল আহ্বানের দাবি জানায়। এর পাশাপাশি ভেঙ্গে দেওয়া পার্লেমেন্ট গুলিকে পুনর্গঠিত করা ও তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ারও জোরালো দাবি তোলা হয়। অভিজাত বিদ্রোহ ফ্রান্সে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও জনমত সৃষ্টি করে, তার চাপে ১৭৮৮ খ্রিঃ ৫ ই জুলাই রাজা ষোড়শ লুই প্রতিশ্রুতি দেন ১৭৮৯ খ্রিঃ ১লা মে স্টেটস জেনারেল আহ্বান করা হবে। রাজার এই ঘোষনার ফলে অভিজাত বিদ্রোহ প্রশমিত হয়। 

(৬.) অভিজাত বিদ্রোহের প্রকৃতি ও তাৎপর্য :- 

রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহকে ঐতিহাসিক মাতিয়ে, রুদে "অভিজাত বিদ্রোহ" বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ঐতিহাসিক জর্জ লেফেভর একে "অভিজাত বিপ্লব" বলেছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে অভিজাতদের বিদ্রোহের প্রকৃতি ও তাৎপর্য কি ছিলো। 

আমরা সবাই জানি "বিপ্লব" বলতে বোঝায় আমূল পরিবর্তন। অভিজাতরা কিন্তু আমূল পরিবর্তন চান নি। তারা পুরাতন ব্যবস্থার পরিবর্তন বা সংস্কারও চান নি। তারা ছিলেন রক্ষনশীল। তাদের ঐতিহ্যগত সুবিধা গুলিকে রক্ষা করাই ছিলো অভিজাতদের বিদ্রোহের একমাত্র উদ্দেশ্য। 

অভিজাতদের বিদ্রোহ ছিলো বস্তুতপক্ষে তাদের শ্রেনীস্বার্থ বজায় রাখার সংগ্রাম। এতদিন ধরে তারা যে করছাড়ের সুবিধা ভোগ করছিলেন, সেই সুবিধা বা "প্রিভিলেজ" বজায় রাখা এবং রাজতন্ত্রের ওপর প্রথম দুই এস্টেটের (যাজক ও অভিজাত) আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করাই ছিলো তাদের প্রধান লক্ষ্য। 

তাই রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাত বিদ্রোহের উদ্দেশ্যের মধ্যে কোন বৈপ্লবিক উপাদানের সন্ধান পাওয়া যায় না। অভিজাতদের একটি ক্ষুদ্র অংশে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের সংস্কারের সমর্থক হলেও, এই উদ্দেশ্যের কোন প্রতিফলন অভিজাতদের বিদ্রোহে পরিলক্ষিত করা যায় নি। মাথায় রাখতে হবে, রাজতন্ত্রের সঙ্গে অভিজাতদের বিশেষ অধিকার ও সুবিধাগুলি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকার কারনে অভিজাতদের পক্ষে প্রকাশ্যে রাজতন্ত্রকে দুর্নীতিমুক্ত ও প্রগতিশীল করে তোলা সম্ভব ছিলো না। অভিজাতদের প্রথম ও শেষ আশ্রয়স্থল ছিলো স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র।কিন্তু এই রাজতন্ত্রকে রক্ষা করার ব্যাপারে অভিজাতদের মধ্যে কোন সুস্পষ্ট ধারনা বা ঐক্যমত ছিলো না। 

বস্তুতপক্ষে অভিজাতরা ছিলো ঘোর স্বার্থপর। তীব্র অর্থসংকটে রাজা অভিজাতদের ওপর কর আরোপ করাতে তাদের শ্রেনী স্বার্থে আঘাত লাগে। এর ফলেই তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তাদের বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো দুটি - (১.) প্রথাগত সুযোগ সুবিধা ও অধিকার গুলি অক্ষুন্ন রাখা এবং (২.) রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে তাই রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহকে "বিপ্লব" না বলে "বিদ্রোহ" বলাই যুক্তিসঙ্গত বলে অনেকে মনে করে থাকেন। 

তবে এর পাশাপাশি আমাদের এটিও মাথায় রাখতে হবে, ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহের ফলাফল বা তাৎপর্য ক্ষনস্থায়ী বা তাৎক্ষণিক ছিলো না। অভিজাত বিদ্রোহের পরোক্ষ ফলের বিচারে যদি আমরা অভিজাতদের বিদ্রোহকে মূল্যায়ন করি, তাহলে অবশ্যই অভিজাতদের বিদ্রোহকে আমরা "অভিজাত বিপ্লব" নামে অভিহিত করতে পারি। 

ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহের পরোক্ষ ও অপ্রত্যাশিত ফল ছিলো গভীর ও সুদূরপ্রসারী। 

প্রথমত, অভিজাতদের বিদ্রোহের ফলে রাজা যে আর্থিক সংস্কারের প্রচেষ্টা চালান তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অভিজাতদের চাপে পূর্ববর্তী অর্থমন্ত্রীদের মতো ব্রিয়েনের আর্থিক সংস্কারের প্রস্তাব গুলিও বাতিল হয়ে যায়। অভিজাতদের চাপে রাজা ১৭৮৮ খ্রিঃ ২৪ শে আগস্ট ব্রিঁয়াকে পদচ্যুত করে নেকারকে পুনরায় অর্থমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেন। 

দ্বিতীয়ত, অভিজাত বিদ্রোহে অভিজাতরা রাজার সঙ্গে সংঘাতে জয়ী হয়। পার্লেমোকে ফিরিয়ে আনা হয়। স্ট্যাম্পকর ও ভূমিকর প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তার থেকেও বড়ো কথা, এই বিদ্রোহে অভিজাতদের রাজার বিরোধিতা ফ্রান্সে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে।ঈশ্বরপ্রদত্ত রাজক্ষমতার প্রচারকারী রাজতন্ত্রকে অভিজাতরা "বংশগত রাজতন্ত্র" বলে যেভাবে আক্রমণ ও প্রচার চালায় তা রাজতন্ত্রের আনুগত্যকারীদের শ্রদ্ধার ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করে। দার্শনিকদের রচনা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে এইসময় অভিজাতরা রাজকীয় স্বৈরাচারকে আক্রমণ করে। জাতি, গনতন্ত্র, নাগরিক অধিকারের কথা এই বিদ্রোহে উঠে আসে। 

তৃতীয়ত, অভিজাতদের বিদ্রোহ ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের মর্যাদাকে আঘাত ও ধ্বংস করে। এর ফলে রাজার ঐশ্বরিক ও স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। তাছাড়া, অভিজাতদের দাবির কাছে বারংবার রাজার নতিস্বীকার ও পরাজয় রাজতন্ত্রের দুর্বলতাকেও প্রকট করে তোলে। অভিজাত বিদ্রোহ রাজার স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তিমূলে যে ফাটল সৃষ্টি করে তার ফলেই অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজতন্ত্র ভেঙে পড়েছিলো। রাজার বিরুদ্ধে আক্রমণ, বিরোধিতা ও সমালোচনা পরবর্তীকালে তৃতীয় সম্প্রদায়ের বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের বিপ্লবে উজ্জিবীত করেছিলো। প্রকৃতপক্ষে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে অভিজাতরা তৃতীয় এস্টেটের রাজনৈতিক কর্তৃত্বে আরোহনের পথকে অচেতনভাবে খুলে দিয়েছিলো। 

চতুর্থত, অভিজাত বিদ্রোহের চাপে বুরবোঁ বংশীয় রাজা ষোড়শ লুই দীর্ঘ ১৭৫ বছর পর স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, কর বসানোর ক্ষমতা রাজার নয়, স্টেটস জেনারেলের। পরবর্তীকালে স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকার অব্যবহিত পরেই বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে ফ্রান্সে বিপ্লব শুরু হয়ে যায়। যদি অভিজাত বিদ্রোহ না হতো, তাহলে স্টেটস জেনারেলের অধিবেশনও বসতো না এবং সেখানে বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে বিপ্লবও হতো না। তাই সঙ্গত কারনেই বলা হয় অভিজাতরাই বিদ্রোহের মাধ্যমে বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। 

পঞ্চমত, রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতরা তাদের বিদ্রোহকে সফল করে তোলার জন্য যেভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধ চালায়, গ্রামীন চাষী ও ভূমিদাসদের ক্ষেপায় ও ব্যবহার করে, পরবর্তীকালে বুর্জোয়ারাও একই পন্থা অবলম্বনে বিপ্লব করে অভিজাতদের পদপ্রদর্শক পন্থা গুলি তাদের বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করে। 

ষষ্ঠত, অভিজাত বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে তৃতীয় সম্প্রদায় সম্মিলিত প্রতিরোধের কার্যকারিতা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে। এই শিক্ষার জন্যই পরবর্তীকালে টেনিস কোর্টের শপথের মধ্য দিয়ে তৃতীয় সম্প্রদায় নিজেদের আরোও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলো। 

সপ্তমত, অভিজাত বিদ্রোহ থেকে স্টেটস জেনারেল আহ্বান এবং স্টেটস জেনারেলের আহ্বানের সাথে সাথে বিপ্লবের সূচনা - এসবই একই মূল ঘটনার সূত্রধর ছিলো। অভিজাত বিদ্রোহ না হলে স্টেটস জেনারেলের অধিবেশ বা স্টেটস জেনারেলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের বিপ্লব কোনটাই হওয়ার সুযোগ ছিলো না। এই কারনে বলা হয় অভিজাত বিদ্রোহ থেকেই ১৭৮৯ খ্রিঃ ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়। বিপ্লবের সূচনাকারী ঘটনা হিসাবেই অভিজাত বিদ্রোহ ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। 

শেষকথা :- 

জন্মের পর কাঁকড়াবিছে তার মায়ের পিঠে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার মাঝে তার মাকেই ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে ফেলে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও রাজা ও অভিজাত সম্পর্কের মাঝে তাই হয়। ফ্রান্সে অভিজাতদের বিশেষ সুবিধা ও অধিকারের রক্ষক ও ধারক বাহক ছিলো স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র। নিজেদের শ্রেনী স্বার্থ রক্ষায় সেই অভিজাতরাই  "বিদ্রোহের" মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রকে প্রবলভাবে আঘাত করে এবং রাজতন্ত্রের ভিত্তি শিথিল করে দেয়। 

প্রকৃতপক্ষে রাজতন্ত্রকে দুর্বল করতে গিয়ে অভিজাতন্ত্র নিজেদের অবস্থানকেও দুর্বল ও শিথিল করে ফেলেছিলো। এরই পরিনতিতে অভিজাত বিদ্রোহের অব্যবহিত পরে স্টেটস জেনারেলে একদিকে শ্রেনী স্বার্থ রক্ষা অন্যদিকে তৃতীয় এস্টেটের স্বাধীনতা ও অধিকারের সমতা প্রতিষ্ঠার লড়াই চলেছিলো। এই লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত অভিজাত ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র দুটিরই পরাজয় ঘটে

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post