বিপ্লবের অর্থ ও ধারনা

 ইওরোপের ইতিহাসে মধ্য যুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরনের ক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় ঘটনা ও অধ্যায় ছিলো - "ফরাসি দেশের বিপ্লব"। ফ্রান্সের বিপ্লব প্রচলিত আর্থ - সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর বদল ঘটিয়ে যে নতুন পথ, মত ও কাঠামোর জন্ম দেয়, তা সারা ইওরোপকে প্রভাবিত করে। মূলত ফরাসি বিপ্লবের প্রবল অভিঘাতে ইওরোপের রাজনীতি নতুন খাতে প্রবাহিত হয় এবং মধ্যযুগীয় খোলসকে বিদীর্ণ করে ইওরোপ আধুনিক যুগে পদাপর্ন করে। 

বিপ্লবের অর্থ ও ধারনা
বিপ্লবের অর্থ ও ধারনা 


ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কিত আলোচনার একেবারে গোড়াতেই ৩ টি বিষয় সম্পর্কে আমরা নিজেদের ধারনাকে একটু স্পষ্ট করে নেবো। এগুলি হলো - 

এক, বিপ্লবের অর্থ ও ধারনা, 
দুই, ইওরোপের দেশ গুলিকে বাদ দিয়ে ফ্রান্সেই কেন প্রথম বিপ্লবের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো, এবং 
তিন, ফরাসি বিপ্লবের রূপ ও তার গতিপ্রকৃতির ধারা কেমন ছিলো? 

তিনটি পৃথক পর্বে আমরা এই বিষয় গুলিকে তুলে ধরবো। আজকের আলোচনা আমরা বিপ্লবের অর্থ ও ধারনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো। 

(১.) বিপ্লবের অর্থ ও ধারনা

প্রচলিত অর্থে "বিপ্লব" বলতে হিংসা বা রক্তপাতের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলকে বুঝালেও, প্রকৃত অর্থে  প্রচলিত ব্যবস্থার খুব দ্রুত, ব্যপক ও আমূল কাঠামোগত পরিবর্তন এবং আর্থ - সামাজিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি বৃহত্তর ক্ষেত্রে তার প্রভাবকেই সাধারনত "বিপ্লব" বলা হয়।

(ক.) উদ্দেশ্য ও উদাহরন :- 

পৃথিবীর যেকোন দেশেই বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য প্রায় একই থাকে, তা হলো প্রচলিত গতানুগতিক সিস্টেম বা কাঠামোকে উচ্ছেদ করে নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। এই লক্ষ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিপ্লব সংগঠিত হয়। এই সব বিপ্লব গুলির মধ্যে অন্যতম হলো - ১৭৮৯ খ্রিঃ ফ্রান্সের ফরাসি বিপ্লব, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব, ১৯১৭ খ্রিঃ রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব ইত্যাদি। আবার এইসব বিপ্লব গুলির পাশাপাশি বিপ্লবের উদাহরন হিসাবে আমরা সবুজ বিপ্লব, মুদ্রন বিপ্লব, বিজ্ঞান বিপ্লব, প্রযুক্তি বিপ্লব ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করতে পারি।


(খ.) বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য :- 

বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা প্রবনতা বিপ্লবের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হলো - 
  1. বিপ্লব আকস্মিক ভাবে সংঘটিত হয় না। এর পিছনে দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকে। এই প্রস্তুতি আমরা ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, মুদ্রন বিপ্লব বা বিজ্ঞান বিপ্লব সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করি। 
  2. যেকোন বিপ্লবের ফলেই আর্থ - সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটে থাকে। উদাহরন হিসাবে ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সের সামাজিক বা রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন, রুশ বিপ্লবের পর বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার বদলে আর্থ - সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা, শিল্প বিপ্লবের পর সমাজে নতুন শ্রেনী ও উপনিবেশবাদের প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির কথা আমরা তুলে ধরতে পারি। 
  3. বিপ্লবের ফলে প্রচলিত কাঠামো বা স্টাকচার ও গতানুগতিক সিস্টেমের /ধারার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বদলে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। আবার শিল্প বিপ্লবের ফলে গতানুগতিক কুটির শিল্পের বদলে বৃহৎ যন্ত্রনির্ভর কারখানা ভিত্তিক শিল্প ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। 
  4. বিপ্লবের পিছুনে একটি বৌদ্ধিক, নৈতিক ও আদর্শগত দিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। উন্নত চিন্তাধারার সৃষ্টিশীল বহিঃপ্রকাশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ঘটে থাকে
  5. বিপ্লবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে বা একে সমর্থন করে। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post