আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ

 ১৯৪৭ খ্রিঃ স্বাধীনতা লাভের আনন্দের স্মৃতির সঙ্গেই আরেকটি ট্র্যাজেডির স্মৃতি আমাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে, তা হলো দেশভাগ। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সবথেকে বেশি অবদান রাখা পাঞ্জাব ও বাংলাকে দুটুকরো করেই দেশভাগ সম্পন্ন করা হয়েছিলো।

১৯৪৭ খ্রিঃ ১৪ ই আগস্ট অথবা ১৫ ই আগস্ট যখন ভারতীয় উপমহাদেশের একটা বড়ো অংশ জুড়ে স্বাধীনতার উৎসব উৎযাপন করা চলেছিলো, সরকারি ভাবে তখনও কিন্তু ভারত ভাগ হয় নি বা খন্ডিত ভারতের মানচিত্র প্রকাশিত হয় নি। ফলতঃ স্বাধীনতার আনন্দের পাশাপাশি ভারতের সীমান্তবর্তী এমন বহু অঞ্চল ছিলো, যেখানকার মানুষদের মনে একটা চাপা উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছিলো। দেশভাগ হলে তারা কোন পাড়ে পড়বেন? প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনে তারা বুঝে উঠতেই পারলেন না, তারা কোন দেশের স্বাধীনতা উদযাপন করবেন, ভারতের না পাকিস্তানের?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ
আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ 

(১.) সিরিল রেডক্লিফের ভারত ভাগ :-

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষের দিকটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিলো। মুসলিম লিগ ও জিন্না সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং খুনখারাপির মধ্য দিয়ে এমন একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যাতে ইংরেজরা ভারত ভাগ করতে বাধ্য হয় এবং কংগ্রেস সেটা মেনে নেয়। বাস্তবে জিন্না যেটা চেয়েছিলেন, সেটাই হলো। 

দেশভাগ অনিবার্য হয়ে উঠলো। দেশভাগ ঠেকানোর জন্য সেই সময় সবচেয়ে বড়ো রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা বহু চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘদিন লড়াই করতে করতে কোথাও তারাও যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমন অনেক মধ্যম স্তরের নেতা ছিলেন, ক্ষমতা লাভের অদম্য আকাঙ্খায় যারা অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। স্বাধীনতালাভ বা ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে যতটা ধৈর্য্যধরে তারা অপেক্ষা করেছিলেন, দেশভাগ আটকাতে ততটা ধৈর্য বা অপেক্ষা তারা করতে প্রস্তুত ছিলেন না।

জিন্না এবং লিগ দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু বিরোধিতার সঙ্গে ভারত বিরোধিতাকে এমনভাবে মিলিয়ে মিশিয়ে দিয়েছিলেন, যার ফলে ভারত নামক দেশটির প্রতি বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম তাদের অনুগামীদের মনে ছিলো না। এখনোও নেই। সুতরাং ধৈর্য্যধরে দেশভাগ আটকানোর দায় ও দায়িত্ব কোনটাই তাদের ছিলো না। তারাও চাইছিলেন, খুব শীঘ্রই ভারত নামক দেশটাকে দুটুকরো করে তারই এক ফালি তাদের দিয়ে দেওয়া হোক।

স্বাধীনতা লাভের সময় যত এগোচ্ছিলো তত বোঝা যাচ্ছিলো, ইংরেজদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার রাশটাও ধীরে ধীরে আলগা হচ্ছে। দেশে বিরাট সেনা ও পুলিশ থাকা সত্ত্বেও, দুর্ভাগ্যক্রমে তখনও দেশে ভয়ঙ্কর দাঙ্গা চলছিলো। দাঙ্গা থামিয়ে দেওয়ার মতো কোন সদিচ্ছা অথবা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কোনটাই তখন ব্রিটিশ প্রশাসনের ছিলো না। ধৈর্য্যচ্যুতি তাদেরও ঘটেছিলো। অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে, কোনরকমে এদেশের লোকেদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এবং ভাগবাঁটোয়ারা করে চলে যেতে পারলেই যেন তারা বেঁচে যায়। এজন্য ১৯৪৮ এ ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বললেও, তারা এর অনেক আগেই ১৯৪৭ খ্রিঃ আগস্ট মাসে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিয়েছিলো।

ক্ষমতা হস্তান্তরের কয়েকমাস আগে ভারত বিভাজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্যার সিরিল রেডক্লিফকে। রেডক্লিফ ছিলেন একজন দিকপাল ইংরেজ ব্যারিস্টার এবং আইনজ্ঞ১৯৪৭ খ্রিঃ ২৭ শে জুন ব্রিটিশ সরকার তাকে ভারত বিভাজনের দায়িত্ব দিয়ে ভারতে পাঠান। রেডক্লিফকে নিয়োগের মূল কারন ছিলো, তিনি এর আগে কখনো ভারতে আসেন নি। তার চেনা পরিচিত কোন লোক বা বন্ধুবান্ধব কেউই ভারতীয় ছিলেন না। ফলে তার নিরপেক্ষতা ছিলো প্রশ্নাতীত।

জুলাই মাসের একেবারে শুরুতেই রেডক্লিফ তার কাজ শুরু করেন। ভারত বিভাজনের জন্য তাকে মাত্র ৫ মাস সময় দেওয়া হয়েছিলো। এই অল্প সময়ের মধ্যে কিছু মান্ধান্তা আমলের ভুলে ভরা মানচিত্র নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ তিনি বাংলা ও পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন। 

বলা বাহুল্য, সেই সময় পাঞ্জাব এবং বাংলাতে হাড় হিম করা দাঙ্গা চলছিলো। একদল লোক আগুন আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে আরেকদল লোককে আক্রমণ করতে ছুটে বেড়াচ্ছিলো। যে পথ দিয়ে তিনি সীমাক্ষায় যাচ্ছিলেন, তার কোন একটিতেই একটু আগে ঘটে গিয়েছিলো এক নারকীয় ঘটনা, যার সাক্ষ্য বহন করছে শত শত অচৈতন্য লাশ, নগ্ন নিথর দেহ আর রক্তে ভেজা মাটি। এসব দেখে রেডক্লিফ এতটাই ভয় পেয়ে যান যে তিনি ব্রিটিশ সরকারকে শর্ত দেন, তাঁর ভারত ত্যাগের পরেই যেন সরকার বিভাজিত ভারতের মানচিত্র প্রকাশ করে। 

আসলে রেডক্লিফ জানতেন, যে কঠিন কাজের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে, অতি অল্প সময় (মাত্র ৫ সপ্তাহ) তার সেই কাজকে আরও কঠিন ও জটিল করে তুলেছে। এর মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি থেকে যাওয়ার সম্ভবনাও প্রবল, যে কারনে এই উপমহাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ কখনই তাকে ক্ষমা করতে পারবেন না। তিনি যাদের দুর্ভাগ্য ও দেশত্যাগের কারন হবেন, তারা কখনই তাকে ছেড়ে দেবে না। প্রত্যেকটি ভারতবাসীর প্রতিশোধের লাল রক্তচক্ষুকে তিনি স্বচক্ষে দেখেছিলেন। ব্রিটিশ প্রশাসনের ওপরেও তার ভরসাও ছিলো না। তাঁর আশঙ্কা ছিলো, দেশভাগের মানচিত্র প্রকাশিত হবার পর তিনি যেকোন সময় খুন হয়ে যেতে পারেন।

ভারত স্বাধীন হয় ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্ট। ঐ দিনই ভারত বিভাজনের মানচিত্র তৈরি করে ব্রিটিশ সরকারের হাতে দিয়ে রেডক্লিফ অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে বিমানে ভারত ত্যাগ করেন। শোনা যায়, ভারত বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা পারিশ্রমিক না নিয়েই তিনি ভারত ত্যাগ করেন। এরপর আর কোনদিনও তিনি ভারতে আসেন নি। ভারত ত্যাগ করার আগে যে সমস্ত কাগজপত্র, মানচিত্র ও নোট নিয়ে রেডক্লিফ ভারত বিভাজনের কাজ করেছিলেন, সেসবই তিনি পুড়িয়ে দেন। 

১৯৪৭ খ্রিঃ ১৭ ই আগস্ট রেডক্লিফ ভারত ত্যাগ করার পর ব্রিটিশ সরকার ভারত বিভাজনের মানচিত্র প্রকাশ করেন। নতুন মানচিত্র প্রকাশিত হবার পর পাঞ্জাব এবং বাংলা বিভাজনের অনেক অসঙ্গতি দেখা গেলো। বেশ কিছু হিন্দুপ্রধান জেলা বা অঞ্চল, যাদের ভারতে পড়বার কথা ছিলো, তারা পড়ে গেলেন পাকিস্তানে। অন্যদিকে বেশ কিছু মুসলিম প্রধান অঞ্চল, যাদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিলো, রেডক্লিফ আর নিয়তির উপহাসে তারা থেকে গেলেন এদেশে।

এর ফল ভোগ করতে হলো অগনিত সাধারন মানুষদের। ১৯৪৭ খ্রিঃ দেশভাগের ফলে আমরা হারিয়েছিলাম ভারতের এক বিশাল পরিমান ভূখন্ডকে, যা "পাকিস্তান" নামে পরিচিত হয়েছিলো। ১৯৪৭ এ আমরা হারিয়েছিলাম এদেশেরই এক বিরাট অংশের মানুষকে যারা একসময় আমাদের ভ্রাতৃসম ছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিঃ অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে দেশভাগের ফলে প্রায় এক কোটি মানুষ হারিয়েছিলো তাদের দেশ। বহু মানুষ তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন ভারতে অথবা তাদের চলে যেতে হয়েছিলো পাকিস্তানে। তারা পরবর্তী জীবনে কোনদিনই দেশভাগ আর দেশত্যাগের যন্ত্রনাময় স্মৃতিকে ভুলে যেতে পারেন নি।

দেশভাগ ও দেশত্যাগের মানুষিক অনুভূতি আর যন্ত্রনার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে পরবর্তীকালে অনেকেই লিখেছিলেন আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, উপন্যাস ও কবিতা। পরবর্তীকালে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের লেখা দেশভাগ সম্পর্কিত আত্মজীবনীস্মৃতিকথামূলক সাহিত্য গুলি দেশভাগের ইতিহাস চর্চার আকর উপাদানে পরিনত হয়।

(২.) দেশভাগের ইতিহাস বুঝতে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মাথায় রাখতে হবে, দেশভাগ হয়েছিলো বাংলা ও পাঞ্জাব এই দুই প্রদেশের মধ্য দিয়ে। দেশভাগের ফলে এই দুটি প্রদেশই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই দুই প্রদেশের অগনিত মানুষদেরই সবথেকে বেশি দেশত্যাগ করতে হয়। এমনকি দাঙ্গার ফলও এই দুটি প্রদেশের মানুষকে সবথেকে বেশি ভোগ করতে হয়েছিলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেশভাগের স্মৃতিকে অবলম্বন করে বাংলা ও পাঞ্জাবে বহু আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা রচিত হয়

সরকারি নির্দেশনামায় দেশভাগ ছিলো একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বৃহত্তর জনসমাজকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিলো তা বুঝবার একমাত্র উপায় হলো, দেশভাগের দ্বারা প্রভাবিত প্রত্যক্ষদর্শীদের রেখে যাওয়া বিবরন। দেশভাগের যন্ত্রনা জনমনে এবং ছিন্নমূল মানুষের মনকে কতটা প্রভাবিত করেছিলো, তা জানার একমাত্র উপায়ই হলো ছিন্নমূল মানুষের লেখা নানা আত্মজীবনীস্মৃতিকথা। 

মনে রাখতে হবে, দেশভাগের ফলে যাদের দেশত্যাগ করতে হয় নি, দেশভাগের যন্ত্রনা কখনই তাদের মনকে প্রভাবিত করে নি। দেশভাগের যন্ত্রনাকে তুলে ধরতে তাই তারা কখনো কোনও আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথাও লেখেন নি । একমাত্র দেশভাগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ছিন্নমূল মানুষদের লেখাপত্র থেকেই দেশভাগের যন্ত্রনার কথা জানা যায়। দেশভাগের মনস্তাত্ত্বিক পরিচয় ও দিকটিকে বুঝতে সাহায্য করে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা। 

(১.) দেশভাগ কেন হলো, (২.) দেশভাগের পর দুই পাড়ের মানুষের বদলে যাওয়া আচরন ও সামাজিকবোধের পরিবর্তনের দিক গুলি কেমন ছিলো, (৩.) দেশভাগের পর ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষদের উদ্বাস্তু জীবনে অসহায়তার ছবি কেমন ছিলো,(৪.) দাঙ্গা মানুষের মন এবং তার সমাজজীবনকে কতখানি প্রভাবিত করেছিলো, (৫.) দেশভাগের বেদনা মানুষের মনকে কতখানি প্রভাবিত করেছিলো -  সামাজিক ইতিহাসের এইসব অজানা দিক গুলির কথা একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীদের বিভিন্ন স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী গুলি থেকে জানা যায়।

(৩.) পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের স্মৃতিকথার মধ্যে পার্থক্য :-

আগেই বলেছি, দেশভাগের স্মৃতিকে অবলম্বন করে পূর্ব ভারতে বাংলা এবং পশ্চিম ভারতে পাঞ্জাব প্রদেশের অনেকেই স্মৃতিকথা লিখেছিলেন। এইসব স্মৃতিকথা গুলি থেকে পূর্ব ভারত ও পশ্চিম ভারতে যন্ত্রনাবিদ্ধ মানুষের দুই ধরনের ছবি পাওয়া যায়। 

দেশভাগের আগে পাঞ্জাবে দাঙ্গার তীব্রতা ছিলো অনেক বেশি। ফলতঃ পাঞ্জাব অঞ্চলের স্মৃতিকথা গুলিতে দাঙ্গা, হিংসা এবং মৃত্যুর ভয়াবহ বিবরনের বর্ননা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে বাংলার স্মৃতিকথা গুলিতে উঠে আসে একটা চাপা আতঙ্ক, দেশত্যাগের ব্যাথা ও যন্ত্রনা, প্রিয়জন হারানোর বেদনা এবং উদ্বাস্তু জীবনের অসহায়তা ও বঞ্চনার সকরুন ছবি। 

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন, দেশভাগের সময় পুরো পাঞ্জাব জুড়ে শুরু হয়েছিলো ভয়ঙ্কর দাঙ্গা। ফলে ১৯৪৭ এ দেশভাগের সময় একবারেই সেখানে সকলে দেশত্যাগ করেছিলেন বা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দাঙ্গার ভয়াবহতার ছবি এই কারনে পাঞ্জাবের স্মৃতিকথা গুলিতে বেশি দেখা যায়। 

বাংলার ক্ষেত্রে কিন্তু চিত্রটি ভিন্ন ছিলো। বাংলায় বহু জায়গায় হিন্দু - মুসলিম সদ্ভাব ছিলো। এই কারনে পাঞ্জাবের মতো পুরো প্রদেশ জুড়েই সেখানে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে নি। ফলে বাংলার ক্ষেত্রে একেবারেই সকলে দেশত্যাগ করেন নি বা দেশত্যাগের প্রয়োজনও পড়ে নি। বাংলায় দফায় দফায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা হয়েছিলো। ফলে ১৯৪৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে বাঙালি হিন্দুরা দেশত্যাগ করেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার স্মৃতিকথা গুলির ক্ষেত্রে দাঙ্গার ভয়াবহ ছবির থেকেও সম্পর্ক ছেদের যন্ত্রনার ছবিগুলিই সবচেয়ে তীব্র ভাবে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিলো।

(৪.) আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় বর্নীত বিষয়বস্তু :- 

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় বর্নীত বিষয়বস্তুকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি :-

(ক.) পূর্ব দেশের স্মৃতি :-

দেশভাগের পর যারা এপাড়ে এসেছিলেন, তারা কোনদিনই তাদের পূর্বদেশকে ভুলতে পারেন নি। দেশভাগের আগে তাদের ছেড়ে আসা গ্রাম বা শহরের পরিবেশ কেমন ছিলো, সাংস্কৃতিক জীবনধারা কেমন ছিলো এবং সামাজিক আদান প্রদানের নানা রীতি ও বৈশিষ্ট্য গুলি বা কেমন ছিলো, সে সব সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়।

যেমন মনিকুন্তলা সেনের "সেদিনের কথা" তে উঠে আসে পূর্ববঙ্গে পূর্বতন বরিসালের স্মৃতি। দক্ষিনারঞ্জন বসুর "ছেড়ে আসা গ্রাম" এ উঠে আসে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমার সাকরাইল গ্রামের স্মৃতি। অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা "যুক্তবঙ্গের স্মৃতি" থেকে জানা যায়, দেশভাগের বহু বছর আগে রাজশাহীতে, মুসলমানরাও হিন্দুদের মতো ধুতি পরতো, এমনকি নামও রাখতো।

কিন্তু হঠাৎ করেই হিন্দু বাঙালি সংস্কৃতিকে বর্জন করে পূর্ববঙ্গে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইসালামিকরনে জোর দেওয়া হয়। হিন্দু সমন্বয়বাদী ভাবধারাকে বর্জন করে ধীরে ধীরে ইসলামি প্রতীক গুলিকে অবলম্বন করে পূর্ববঙ্গে কিভাবে মুসলিম স্বাতন্ত্রবোধ ও সাম্প্রদায়িক চেতনার সৃষ্টি হয়েছিলো, তার নিঁখুত ছবি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুলিতে উঠে আসে।

(খ.) দেশভাগের স্মৃতি :-

দেশভাগের ফলে অগনিত ছিন্নমূল মানুষের মানসিক যন্ত্রনা ও অনুভূতির ছবি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুলিতে উঠে এসেছে। দেশভাগের কারনে একটা চাপা ক্ষোভ, আতঙ্ক আর যন্ত্রণার ছবি সেখানে ফুটে উঠেছে।

দক্ষিণারঞ্জন বসুর "ছেড়ে আসা গ্রাম" এ এই ক্ষোভ আর যন্ত্রনার সুরই উঠে আসে। সেখানে লেখক লেখেন - "ঘর আছে, গ্রাম আছে, সম্পত্তি আছে, অথচ আজ আমি উদ্বাস্তু।" দেশভাগ দেশের একটি বড়ো অংশের মানুষের জীবনে অভিশাপ হিসাবে উঠে এসেছিলো। দেশভাগের ফলে অনেকেই তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সম্পদ হারিয়ে কিভাবে সর্বশ্বান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তারই মর্মস্পর্শী বর্ননা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুলিতে পাওয়া যায়। 

(গ.) দেশত্যাগের স্মৃতি :-

দেশভাগের ফলে কি পরিমান অমানুষিক যন্ত্রনা ও দুঃখের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ত্যাগ করে এপাড়ে আসতে হয়েছিলো, তার ছবি দেশভাগ সম্পর্কিত স্মৃতিকথা গুলিতে পাওয়া যায়। 

দেশত্যাগের পাশাপাশি উঠে এসেছে দাঙ্গা, মৃত্যু, হিংসা, গভীর উদ্বেগ আর আশঙ্কার ছবি। খুশবন্ত সিংয়ের "এ ট্রেন টু পাকিস্তান", খালিকুজ্জামানের "পাথওয়ে টু পাকিস্তান" এ এমন অনেক ছবি ধরা আছে। কিভাবে দাঙ্গায় স্বজন হারিয়ে প্রান বাঁচানোর তাগিদে মানুষকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসতে হয়েছিলো, তারই সকরুন ছবি স্মৃতিকথা গুলিতে তুলে ধরা আছে।

এই সময়ে লিখিত স্মৃতিকথা গুলি থেকে জানা যায়, পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের দেশত্যাগের জন্য স্থানীয় ধর্মান্ধ মুসলিমরা মুসলিম ছেলেদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। এর ফলে অনেক মুসলিম যুবক হিন্দুদের পুকুর থেকে মাছ চুরি, খেত থেকে বলপূর্বক ধান চুরি বা ধান কেটে নেওয়ার মতো অপরাধমূলক কাজগুলি করতে থাকে। তারা বিভিন্ন আগ্রাসী আচার আচরনের মধ্য দিয়ে হিন্দুদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, পূর্ব পাকিস্তান শুধু মুসলমানদের। সেখানকার সমস্ত সম্পদের ওপরে মুসলমানদেরই অধিকার আছে। 

যতই দিন যাচ্ছিলো, মুসলমানদের এই অত্যাচার বেড়েই চলেছিলো। বহু মুসলিম আত্মীয় স্বজন এইসময় হিন্দু প্রতিবেশিদের আকারে ইঙ্গিতে দেশত্যাগের হুমকি বা চাপ দিতে থাকে। এসবের ফলে হিন্দুরা পূর্ববঙ্গে জলের দরে জমিজমা বিক্রি করে এদেশে চলে আসে। কোন কঠিন পরিস্থিতি ও চাপের মুখে লক্ষ লক্ষ হিন্দু পাকিস্তান ত্যাগ করে এদেশে আসেন, তার এক মনজ্ঞ বিবরনের পরিচয় স্মৃতিকথা গুলি থেকে পাওয়া যায়

(ঘ.) উদ্বাস্তু জীবনের ছবি :-

দেশভাগের পর কয়েক লক্ষ মানুষকে পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে উদ্বাস্তু বা রিফিউজি হিসাবে চলে আসতে হয়েছিলো। দেশত্যাগের পর উদ্বাস্তু হিসেবে তাদের কঠিন জীবন সংগ্রামের ইতিহাস একমাত্র স্মৃতিকথা থেকেই জানতে পারা যায়। উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য জানতে পারা যায়, হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "উদ্বাস্তু", প্রফুল্ল চক্রবর্তীর "প্রান্তিক মানব" এবং মিহির সেনগুপ্তের "বিষাদ বৃক্ষ" স্মৃতিকথা নামক গ্রন্থ থেকে।

প্রফুল্ল চক্রবর্তীর "প্রান্তিক মানব" গ্রন্থে ফুটে উঠেছে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার ছবি। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত শিখ ও হিন্দিভাষী হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য একাধিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠা ও পুনর্বাসনে যথাযথ ব্যবস্থা নিলেও,পশ্চিমবঙ্গে আগত উদ্বাস্তুদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছিলো।

হিন্দিভাষীরা বাঙালি উদ্বাস্তুদের অবর্ননীয় দুর্দশার জন্য তাদের অলস ও অকর্মন্য বলে দেগে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রফুল্ল চক্রবর্তী গভীর বিশ্লেষন করে দেখিয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুরা বাংলা ভাষার কারনেই পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ করে অন্যভাষী রাজ্যে যেতে চান নি। ফলে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সমস্যার চরিত্র ছিলো যথেষ্ট জটিল। 

হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায়ের "উদ্বাস্তু" নামক স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, মুসলমানদের অত্যাচারের সংবাদে কলকাতায় যে দাঙ্গা শুরু হয়েছিলো, তাতে উদ্বাস্তুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে কি কি উদ্যোগ নিয়েছিলো, উদ্বাস্তুদের সমস্যা পশ্চিমবঙ্গকে কতখানি প্রভাবিত করেছিলো, কতটা অবর্ননীয় দুর্দশার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তুদের জীবন কাটাতে হয়েছিলো, এইসব বিষয় সম্পর্কে জানার এক আকর তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ ছিলো হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "উদ্বাস্তু" গ্রন্থ

(ঙ.) দাঙ্গার ছবি :- 

দেশভাগের আগে এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নানা গ্রাম ও শহরে ভয়ঙ্কর দাঙ্গা ঘটেছিলো। দাঙ্গার ইতিহাস একমাত্র স্মৃতিকথা থেকেই জানা যায়মনোরঞ্জন চৌধুরীর লেখা "নোয়াখালিতে গান্ধীজি" গ্রন্থ থেকে জানা যায়, দাঙ্গায় ওখানকার জনসংখ্যার মাত্র ১৮ % হিন্দুর কি করুন পরিনতি হয়। 

সন্দীপ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "দেশভাগ দেশত্যাগ" গ্রন্থ থেকে জানা যায়, দেশভাগের পর মুসলিম আক্রমনকারীদের হাত থেকে নিজেদের সম্মান বাঁচানোর জন্য এক শিখ রমনীর নেতৃত্বে ৯০ জন শিখ নারী ইদারায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মনে রাখতে হবে, দাঙ্গার সময় আক্রমণকারীদের ধরন, চরিত্র ও অত্যাচারের প্রতিচ্ছবি একমাত্র স্মৃতিকথা থেকে জানতে পারা যায়। 

(চ.) বঞ্চনা ও সংগ্রামের ছবি :- 

দেশভাগের পর অগনিত ছিন্নমূল মানুষদের বঞ্চনা আর সংগ্রামের ইতিহাস আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুলিতে উঠে এসেছে। দেশভাগের ফলে পাকিস্তানের ভূখন্ডের মধ্যে থাকা লক্ষ লক্ষ অমুসলিমরা ধর্মীয় ও জাতিগত শোষন, বঞ্চনা এবং অত্যাচারের শিকার হন। 

দেশভাগের ফলে পাকিস্তানে যেমন তারা বঞ্চনার শিকার হন, একইভাবে ভারতে এসেও তারা বঞ্চনার শিকার হন। তাদের এই দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস একমাত্র দেশভাগ সম্পর্কিত স্মৃতিকথা গুলি থেকেই জানতে পারা যায়। 

দেশভাগের ফল, যন্ত্রণা ও ক্ষত কিভাবে একাই দেশত্যাগী অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষদের ভোগ করতে হয়, সেই ইতিহাসের পরিপূর্ন বিবরন ও তথ্য একমাত্র আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকেই পাওয়া যায়। 

(ছ.) দেশভাগের কারন অন্বেষন :- 

দেশভাগ সম্পর্কে যারা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা লিখেছিলেন, তাদের অনেকেই তৎকালীন সময়ের স্মরনীয় বিবরন লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি, কেন দেশভাগ হলো, সেই কারনেরও অন্বেষন করেছেন। 

সুনন্দ শিকদার এমনই একজন লেখক ছিলেন, যিনি তাঁর "দয়াময়ীর কথা" তে দেশভাগ পূর্ববর্তী বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ করে লিখেছিলেন - দেশভাগের পরও পূর্ব বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন দাঙ্গা হয় নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অজানা এক আতঙ্কে দলে দলে বহু হিন্দু ওদেশ ছেড়ে এদেশে চলে এসেছিলো। 

দেশভাগের কারন খুঁজতে গিয়ে তিনি এর জন্য হিন্দুদেরই দায়ী করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকা সত্ত্বেও, মুসলমানদের সহজ মনে হিন্দুরা মেনে নিতে পারে নি। এর সবথেকে বড়ো প্রমান ছিলো ছোঁয়াছুঁয়ির সমস্যা। মুসলমানের শরীর ছুঁলে জাত চলে যায়, এরকম ধারনা বহুদিন ধরেই হিন্দুদের মধ্যে ছিলো। সুতরাং ছোঁয়াছুঁয়ির বিষয়টি থেকেই বোঝা যায়, হিন্দুরা মুসলমানদের আলাদা জাতি বলে মনে করতো। এথেকেই এসেছিলো জাতি বিরোধ। 

মিহির সেনগুপ্ত তার "বিষাদ বৃক্ষ" নামক গ্রন্থে দেখিয়েছেন, দেশভাগের সবথেকে বড়ো কারন ছিলো, জমির প্রতি সর্বহারা মুসলমানদের লোভ ও  তাতে লীগের উস্কানি। মাথায় রাখতে হবে, ভারতে মুসলিম আক্রমণের পর শাসকের উপরতলায় হিন্দুদের সরিয়ে মুসলমানরা ক্ষমতায় এসেছিলো ঠিকই, কিন্তু নীচের তলায় কোন পরিবর্তন ঘটে নি। মুসলিম যুগে হিন্দু জমিদাররা যেমন অক্ষত ছিলেন, তেমনই অক্ষত ছিলেন হিন্দু ছোটো কৃষকরা। জমির হাতবদল, হস্তান্তর বা বন্টন না হওয়ার কারনে নীচু তলার মুসলিমরা জমি লাভ করেন নি। 

তারা দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন বঞ্চিত, শোষিত ও বিক্ষুদ্ধ। দেশভাগের আগে জমির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আরোও তাতিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন মুসলিম মৌলবাদী রাজনৈতিক নেতারা। ধর্মীয় মৌলবাদের ধুঁয়ায় দরিদ্র মুসলিমদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার কাজটি রাজনৈতিক মুসলিম নেতারা সুকৌশলে সম্পন্ন করেন। এর ফলেই দেশভাগ হয়। 

মাথায় রাখতে হবে, দেশভাগের অনেক কারন ছিলো। অনেকেই এর জন্য দায়ী ছিলেন। কিন্তু আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় রচয়িতারা সম্পূর্ণ মৌলিক ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশভাগের কারণকে অন্বেষন করার চেষ্টা করেছিলেন। এই সমস্ত কারনে তাদের লিপিবদ্ধ করা সাক্ষ্য গুলি দেশভাগ পরবর্তী সময়কালের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। 


মডেল প্রশ্নপত্র :- 

(১.) বিভিন্ন মানুষের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগের প্রসঙ্গটি কিভাবে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো। 

(২.) দেশভাগ ও দেশত্যাগের স্মৃতির কোন দিক গুলি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় তুলে ধরা হয়েছে? 


আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ :- 

  1. ছেড়ে আসা গ্রাম - দক্ষিনারঞ্জন বসু।
  2. উদ্বাস্তু - হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায়। 
  3. পাথওয়ে টু পাকিস্তান - খালিজুজামান চৌধুরী। 
  4. এ ট্রেন টু পাকিস্তান - খুশবন্ত সিং।
  5. দ্য মার্জিনাল ম্যান /প্রান্তিক মানব - প্রফুল্ল চক্রবর্তী। 
  6. যুক্তবঙ্গের স্মৃতি - অন্নদাশঙ্কর রায়। 
  7. সূর্যদীঘল বাড়ি - আবু ইসহাক। 
  8. এপাড় গঙ্গা, ওপাড় গঙ্গা - জ্যোর্তিময়ী দেবী। 
  9. সেদিনের কথা - মনিকুন্তলা সেন। 
  10. তমস - ভীষ্ম সাহানি।
  11. বিষাদ বৃক্ষ - মিহির সেনগুপ্ত। 
  12. দেশভাগ, স্মৃতি ও স্তব্ধতা - সেমন্তী ঘোষ।
  13. দয়াময়ীর কথা - সুনন্দা শিকদার। 
  14. শিকড়ের সন্ধানে - কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। 
  15. সূপুরিবনের সারি - শঙ্খ ঘোষ। 
  16. দেশভাগ দেশত্যাগ - সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। 
  17. স্বাধীনতার স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। 
  18. পূর্ব - পশ্চিম - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। 
  19. নোয়াখালিতে গান্ধীজি - মনোরঞ্জন চৌধুরী। 
  20. কেয়াপাতার নৌকা - প্রফুল্ল রায়। 
  21. ঝুটা সাচ - যশপাল।
  22. আগ কি দরিয়া - কে হায়দার। 
  23. অর্ধেক জীবন - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। 
  24. একটি জীবন - বুদ্ধদেব বসু। 
  25. নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে - অতীত বন্দ্যোপাধ্যায়। 
  26. আঁধার মানিক - মহাশ্বেতা দেবী। 
  27. "A Train to Karachi - অমর জলিল। 
  28. " path to Pakistan" - এ জি নুরানি। 
  29. "Lahore to Delhi" - প্রান শেঠ। 
  30. "Rasidi Ticket" - অমৃতা প্রীতম।
  31. "Memories of a Broken" - সুতপা পাল।
  32. "India wins Freedom" - আবুল কালাম আজাদ।
  33. "The Autobiography of an unknown Indian" - নীরদচন্দ্র চৌধুরী। 
  34. "Midnight Children" - সলমন রুশদি।
  35. "Pakistan or partition of India - বি আর আম্বেদকর। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post