কৌটিল্য কে ছিলেন?

কৌটিল্য ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন শ্রেষ্ঠ কূটনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রদার্শনিক। তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো বিষ্ণুগুপ্ত। তবে ইতিহাসে তিনি "চানক্য" নামেই অধিক সুপরিচিত।

কৌটিল্য সম্পর্কে সমকালীন বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য, হিন্দু পুরান এবং মুদ্রারাক্ষস নাটক থেকে নানা ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। 

কৌটিল্য কে ছিলেন?
কৌটিল্য কে ছিলেন? 


(১.) কৌটিল্যের জীবনকথা :-

কৌটিল্য বা চানক্যের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তাঁর জন্মস্থান ও সময় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা বিতর্ক আছে। আনুমানিক ৩৭০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে/ মতান্তরে ৩৭৫ খ্রিঃ পূর্বাব্দে কৌটিল্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

কৌটিল্যের জন্মস্থান নিয়ে দুটি মত প্রচলিত আছে। 

(১.) বৌদ্ধ গ্রন্থ "মহাবংশ টীকা" অনুসারে তাঁর জন্ম হয়েছিলো তক্ষশীলায়, যা বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত ছিলো।

(২.) অন্যদিকে জৈন কবি হেমচন্দ্র রচিত "পরিশিষ্টপার্বন" গ্রন্থানুসারে কৌটিল্য দক্ষিণ ভারতে চনক নামে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিলো চণক ও মাতার নাম ছিলো চণেশ্বরী। খুব সম্ভবত জন্মস্থান ও পিতার নামানুসারেই পরবর্তীকালে কৌটিল্য "চানক্য" নামে পরিচিত হয়েছিলেন।

কৌটিল্য তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন সম্পূর্ণ করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন।

(২.) কৌটিল্যের কর্মজীবন :-

কৌটিল্যের সামগ্রিক কর্মজীবনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো ৩ টি ঐতিহাসিক ঘটনা। এগুলি হল - 

(১.) তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, 

(২.) মগধে নন্দবংশকে উচ্ছেদ করে মৌর্য রাজবংশ প্রতিষ্ঠা এবং 

(৩.) অর্থশাস্ত্র রচনা।

কৌটিল্য প্রথম জীবনে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত ছিলেন। হিন্দু পুরান ও বিশাখ দত্তের "মুদ্রারাক্ষস" নাটক অনুসারে কৌটিল্য একদা মগধে নন্দ বংশের শেষ রাজা ধননন্দের রাজদরবারে গিয়ে প্রচন্ড অপমানের সম্মুখীন হন। এই অপমানের যোগ্য প্রত্যুত্তর দেওয়ার জন্য তিনি নন্দ বংশ ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প করেন। 

এর  মগধ রাজদরবার থেকে ফিরে আসার সময়ে বালক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সঙ্গে কৌটিল্যের সাক্ষাৎ হয়। চন্দ্রগুপ্তের মধ্যে রাজকীয় প্রতিভা ও গুনাবলীর বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে কৌটিল্য চন্দ্রগুপ্তকে তক্ষশীলাতে নিয়ে আসেন। 

 তক্ষশীলায় নিয়ে আসবার পর কৌটিল্য চন্দ্রগুপ্তকে যুদ্ধবিদ্যা, কূটনীতিবিদ্যা ও রাজনীতি বিদ্যার নানা শাখায় শিক্ষাদান করেন। অবশেষে ৩২৪ খ্রিঃ পূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের দ্বারা মগধে নন্দবংশকে উচ্ছেদ করে মৌর্য বংশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সহায়তা করেন কৌটিল্য বা চানক্য।

এরই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কৌটিল্যকে তাঁর প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান রাজনৈতিক উপদেষ্টার পদে নিযুক্ত করেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং তাঁর পুত্র বিন্দুসার দুজনের আমলেই কৌটিল্য মৌর্য সাম্রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং মৌর্য রাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন।

কৌটিল্য নিজ রাজনৈতিক দর্শন ও রাষ্ট্রনীতিকে তুলে ধরবার জন্য "অর্থশাস্ত্র" রচনা করেন। অর্থশাস্ত্র ছিলো রাষ্ট্রনীতির ওপর লেখা প্রাচীন ভারতবর্ষের প্রথম ও একমাত্র পূর্নাঙ্গ রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক তাত্ত্বিক গ্রন্থ

অর্থশাস্ত্র ছাড়াও মানুষের কর্তব্যকর্ম, ধর্মবোধ এবং সমাজ কল্যাণ ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে কৌটিল্য একাধিক সংস্কৃত শ্লোক রচনা করেন, যা "চানক্য নীতি" বা "চানক্য শ্লোক" নামে পরিচিত ছিলো।

(৩.) কৌটিল্যের শেষ জীবন :-

আনুমানিক ২৭৫ খ্রিঃ পূর্বাব্দে চানক্যের মৃত্যু হয়। জন্মের মতোই তাঁর মৃত্যু নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একটি মত হলো, বিন্দুসারের আমলে তাঁর সঙ্গে কৌটিল্যের প্রচন্ড মতান্তর হয়। এরপর কৌটিল্য মগধ রাজদরবার ছেড়ে বনে আশ্রয় নেয়। পরে অনাহারে তাঁর মৃত্যু হয়।

আরেকটি মত হলো, মগধে সুবন্ধুর ষড়যন্ত্রের ফলে কৌটিল্য মগধ রাজদরবার থেকে তীরস্কৃত হন। পরে তিনি অরন্যে একটি কুড়েঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে সেই কুড়েঘরটিতে অগ্নিসংযোগ করে সুবন্ধু কৌটিল্যকে হত্যা করেছিলেন

ঘটনা যাই হোক না কেন, একটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার, চানক্যের শেষ জীবন মোটেই সুখকর ছিলো না।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post