ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন : সংক্ষিপ্ত তথ্য

ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ঘটনা গুলিকে নিন্মলিখিত ছকের সাহায্যে তুলে ধরা হলো। আশা করছি, নিন্মলিখিত আলোচনাটি কিছুটা হলেও ছাত্রছাত্রীদের উপকৃত করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলিকে মনে রাখতে সাহায্য করবে। 

ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন : সংক্ষিপ্ত তথ্য
ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন : সংক্ষিপ্ত তথ্য 


(ক.) একঝলকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :- 

  1. দার কমিশন ও জেভিপি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো - ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দিকটি অনুসন্ধান করবার জন্য। 
  2. দার কমিশন ও জেভিপি কমিটি গঠন করা হয় - ১৯৪৮ খ্রিঃ। 
  3. দার কমিশন গঠিত হয়েছিলো - বিচারপতি এস কে দারের নেতৃত্বে। 
  4. জেভিপি কমিটির ৩ জন সদস্য ছিলেন - জওহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়া। 
  5. দার কমিশন ও জেভিপি কমিটি - ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছিলো। 
  6. প্রথম ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবি তোলে - তেলেগুভাষীরা। 
  7. ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য হলো - অন্ধ্রপ্রদেশ। 
  8. অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠনের জন্য - পত্তি শ্রীরামালু ৫৮ দিন অনশন করে প্রানত্যাগ করেন। 
  9. অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয় - ১৯৫৩ খ্রিঃ ।
  10. মাদ্রাজ রাজ্য ভেঙ্গে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্য গঠিত হয় - ১৯৫৩ খ্রিঃ ।
  11. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করা হয় - ১৯৫৩ খ্রিঃ ।
  12. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সদস্য ছিলেন - ফজল আলি, হৃদয়নাথ কঞ্জুরু ও কে এম পানিক্কর। 
  13. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সভাপতি ছিলেন - সৈয়দ ফজল আলি। 
  14. রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাশ হয় - ১৯৫৬ খ্রিঃ ১ নভেম্বর। 
  15. ১৯৫৬ খ্রিঃ রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী - ভারতকে ১৪ টি রাজ্য ও ৬ টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। 
  16. রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী ১৯৫৬ খ্রিঃ গঠিত ভাষাভিত্তিক রাজ্য গুলি হল - কর্নাটক, কেরালা, ঊড়িষ্যা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, আসাম, জন্মু ও কাশ্মীর। 
  17. পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পুরুলিয়া জেলাকে যুক্ত করা হয় - ১৯৫৬ খ্রিঃ। 
  18. রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী - (ক.) হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানাকে অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে এবং (খ.) বিহারের পুরুলিয়া ও পুর্নিয়া জেলার একাংশকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। 
  19. সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি ও মহাগুজরাট জনতা পরিষদ যথাক্রমে - মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের জন্য আন্দোলন সংগঠিত করে। 
  20. বোম্বাই প্রদেশ ভেঙ্গে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠন করা হয় - ১৯৬০ খ্রিঃ। 
  21. পাঞ্জাব রাজ্য ভেঙ্গে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচলপ্রদেশ রাজ্য গঠন করা হয় - ১৯৬৬ খ্রিঃ।
  22. পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাষ্ট্রসংঘকে নিয়ে - পেপসু গড়ে উঠেছিলো। 
  23.  ১৯৬৩ খ্রিঃ ১ ডিসেম্বর - পৃথক নাগল্যান্ড রাজ্য গঠিত হয়। 
  24. ১৯৭১ খ্রিঃ - হিমাচল প্রদেশ পূর্ন রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। 
  25. ১৯৭২ খ্রিঃ - মনিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য গঠিত হয়। 
  26. ১৯৭৫ খ্রিঃ - সিকিম রাজ্য গঠিত হয়। 
  27. ১৯৮৭ খ্রিঃ - অরুনাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও গোয়াকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। 
  28. ১৯৯৩ খ্রিঃ - রাজধানী দিল্লি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল রূপে পূর্নাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। 
  29. ২০০০ খ্রিঃ - বিহার ভেঙ্গে ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ ভেঙ্গে ছত্তিশগড় এবং উত্তরপ্রদেশ ভেঙ্গে উত্তরাখন্ড রাজ্য গঠিত হয়। 
  30. ২০১৪ খ্রিঃ - অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙ্গে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়। 
  31. বর্তমানে ভারতের রাজ্য হল - ২৮ টি এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হলো - ৮ টি। 

(খ.) গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরিচয় :- 

(১.) জওহরলাল নেহেরু - ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। 

(২.) বল্লভভাই প্যাটেল - ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। 

(৩.) স্বামী সীতারাম - অন্ধ্রপ্রদেশের একজন কংগ্রেস কর্মী ছিলেন, যিনি পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের জন্য তেলেগুভাষী জেলাগুলিতে পদযাত্রা করেছিলেন। 

(৪.) পত্তি শ্রীরামালু - অন্ধ্রপ্রদেশের একজন কংগ্রেসকর্মী, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসংস্কারক ছিলেন। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীতে সকল মন্দির গুলিতে অস্পৃশ্যদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের দাবিতে তিনি ৫৮ দিন আমরন অনশন করেছিলেন। পরে অনশনেই তার মৃত্যু হয়। 

(৫.) চক্রবর্তীরাজা গোপালাচারী - কংগ্রেসের একজন প্রথম সারির নেতা ছিলেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেল ও মাদ্রাজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। 

(৬.) সৈয়দ ফজল আলি - সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সভাপতি ছিলেন। 

(৭.) মোরারজি দেশাই - বোম্বাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। 

(৮.) মাস্টার তারা সিং - পাঞ্জাবে অকালি দলের নেতা ছিলেন। পৃথক শিখ রাজ্যের জন্য আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। 

(গ.) কোন রাজ্য কবে গঠিত হয়? 

(১.) ১৯৫৩ খ্রিঃ - অন্ধ্রপ্রদেশ ও মাদ্রাজ (তামিলনাড়ু) রাজ্য গঠিত হয়। 

(২.) ১৯৫৬ খ্রিঃ - কর্নাটক, কেরালা, ঊড়িষ্যা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, আসাম, জন্মু ও কাশ্মীর। 

(৩.) ১৯৬০ খ্রিঃ - বোম্বাই প্রদেশ ভেঙ্গে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠিত হয়। 

(৪.) ১৯৬৩ খ্রিঃ - পৃথক নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠিত হয়। 

(৫.) ১৯৬৬ খ্রিঃ - পাঞ্জাব রাজ্য ভেঙ্গে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচলপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়। 

(৬.) ১৯৭১ খ্রিঃ - হিমাচল প্রদেশ পূর্ন রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। 

(৭.) ১৯৭২ খ্রিঃ - মনিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য গঠিত হয়। 

(৮.) ১৯৭৫ খ্রিঃ - সিকিম রাজ্য গঠিত হয়। 

(৯.) ১৯৮৭ খ্রিঃ - অরুনাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও গোয়াকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়।

(১০.) ১৯৯৩ খ্রিঃ - রাজধানী দিল্লি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল রূপে পূর্নাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। 

(১১.) ২০০০ খ্রিঃ - বিহার ভেঙ্গে ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ ভেঙ্গে ছত্তিশগড় এবং উত্তরপ্রদেশ ভেঙ্গে উত্তরাখন্ড রাজ্য গঠিত হয়। 
(১২.) ২০১৪ খ্রিঃ - অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙ্গে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়। 

(১৩.) পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পুরুলিয়া যুক্ত হয় - ১৯৫৬ খ্রিঃ। 

(ঘ.) বিভিন্ন রাজ্য ও তাদের ভাষা :- 

  1. তেলেগুভাষী রাজ্য - অন্ধ্রপ্রদেশ। 
  2. তামিলভাষী রাজ্য - মাদ্রাজ / তামিলনাড়ু।
  3. কন্নড়ভাষী রাজ্য - মহীশূর /কর্নাটক।
  4. মালায়ালামভাষী রাজ্য - কেরালা। 
  5. গুরুমুখী ভাষী রাজ্য - পাঞ্জাব। 
  6. হিন্দিভাষী রাজ্য - হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি। 
  7. উড়িয়াভাষী রাজ্য - ঊড়িষ্যা। 
  8. বাংলাভাষী রাজ্য - পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা। 
  9. অসমিয়াভাষী রাজ্য - আসাম। 

(ঙ.) বর্তমান ভারতের রাজ্য গুলির নাম ও তাদের রাজধানী :-

  • অন্ধ্রপ্রদেশ (রাজধানী - অমরাবতী), 
  • অরুনাচল প্রদেশ (রাজধানী - ইটানগর) 
  • আসাম (রাজধানী - দিসপুর) 
  • বিহার (রাজধানী - পাটনা) 
  • ছত্তিশগড় (রাজধানী - রায়পুর) 
  • গোয়া (রাজধানী - পানাজি) 
  • গুজরাট (রাজধানী - গান্ধীনগর) 
  • হরিয়ানা (রাজধানী - চন্ডীগড়) 
  • হিমাচলপ্রদেশ (রাজধানী - সিমলা) 
  • ঝাড়খণ্ড (রাজধানী - রাঁচি) 
  • কর্নাটক (রাজধানী - বেঙ্গালুরু) 
  • কেরালা (রাজধানী - তিরুবন্তপুরম) 
  • মধ্যপ্রদেশ (রাজধানী - ভোপাল) 
  • মহারাষ্ট্র (রাজধানী - মুম্বাই) 
  • মনিপুর (রাজধানী - ইম্ফল) 
  • মেঘালয় (রাজধানী - শিলং) 
  • মিজোরাম (রাজধানী - আইজল) 
  • নাগাল্যান্ড (রাজধানী - কোহিমা) 
  • ওড়িশা (রাজধানী - ভুবনেশ্বর) 
  • পাঞ্জাব (রাজধানী - চন্ডীগড়) 
  • রাজস্থান (রাজধানী - জয়পুর) 
  • সিকিম (রাজধানী - গ্যাংটক) 
  • তামিলনাড়ু (রাজধানী - চেন্নাই) 
  • তেলেঙ্গানা (রাজধানী - হায়দ্রাবাদ) 
  • ত্রিপুরা (রাজধানী - আগরতলা) 
  • উত্তরপ্রদেশ (রাজধানী - লখনউ) 
  • উত্তরাখন্ড (রাজধানী - দেরাদুন) 
  • পশ্চিমবঙ্গ (রাজধানী - কলকাতা) 

 (চ.) বর্তমান ভারতের ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম :-

  • আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, 
  • চন্ডীগড়, 
  • দাদরা, নগর হাভেলি, দমন ও দিউ, 
  • দিল্লি, 
  • লাদাখ, 
  • লাক্ষাদ্বীপ, 
  • জন্মু ও কাশ্মীর, 
  • পুদুচেরি। 

(ছ.) কংগ্রেস কেন ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনকে সমর্থন করে নি? অথবা পৃথক ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলো? 

  • (ক.) কংগ্রেস ভেবেছিলো, ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠিত হলে ভারতে ভাষাকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্নতাবাদ দেখা দেবে, যা ভারতের ঐক্যকে বিনষ্ট করবে। 
  • (খ.) তাছাড়া, ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের থেকেও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সাম্প্রতিক সমস্যার সমাধানের ওপর কংগ্রেস সবথেকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলো। যেমন - উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করা, দাঙ্গা প্রতিরোধ করা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহন করা ইত্যাদি। 
  • (গ.) প্রচলিত সমস্যার থেকে ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলো। 

(জ.) ভাষা ভিত্তিক বিভিন্ন কমিশন, কমিটি ও আইন :- 

  • ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের যথার্থতার দিক অনুসন্ধানের জন্য ১৯৪৮ খ্রিঃ গনপরিষদের উদ্যোগে "দার কমিশন" ও জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে "জেভিপি কমিটি" গঠিত হয়েছিলো। এরা ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছিলো। 
  • ১৯৫৩ খ্রিঃ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করে। রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সভাপতি ছিলেন - সৈয়দ ফজল আলি। 
  • রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৫৬ খ্রিঃ রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাশ হয়। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post