দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি : সংক্ষিপ্ত তথ্য

 দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলিকে নীচে কয়েকটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। আশা করছি, এই ছক গুলি মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীদের তথ্য গুলিকে মনে রাখতে অনেকখানি সাহায্য করবে। 

দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি : সংক্ষিপ্ত তথ্য
দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি : সংক্ষিপ্ত তথ্য 


(ক.) স্বাধীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী :-

(১.) স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন - লর্ড মাউন্টব্যাটন।

(২.) স্বাধীন ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল ছিলেন /স্বাধীন ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেল ছিলেন - চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী। 

(৩.) স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন - বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ। 

(৪.) স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন - জওহরলাল নেহেরু। 

(৫.) স্বাধীন ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন - সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। 

(৬.) স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন - ভি পি মেনন।

(৭.) স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন - জওহরলাল নেহেরু। 

(৮.) স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন কমিশনার ছিলেন - সুকুমার সেন। 

(৯.) স্বাধীন ভারতের প্রথম উদ্বাস্তু কমিশনার ছিলেন - হিরনময় বন্দ্যোপাধ্যায়। 

(১০.) পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন - প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ।

(খ.) দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :- 

(১.) ভারতের স্বাধীনতা আইন পাশ হয় - ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৮ ই জুলাই।

(২.) স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতে দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিলো - ৬০১ টি / পাঁচশর অধিক। 

(৩.) দেশীয় রাজ্য গুলি ভারত ভুক্ত করার জন্য "দেশীয় রাজ্য দপ্তর" গঠন করা হয় - ১৯৪৭ খ্রিঃ ২৭ শে জুন। 

(৪.) দেশীয় রাজ্য দপ্তরের প্রধান ছিলেন - সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। 

(৫.) ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের যে সমস্ত রাজন্য শাসিত রাজ্য ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে স্ব শাসনের অধিকার লাভ করেছিলো, সেই রাজ্য গুলিকেই "দেশীয় রাজ্য" বলা হতো। 

(৬.) ভারতভুক্তি দলিলের নাম ছিলো - "ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকশেসন"। 

(৭.) স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ভারতের সবচেয়ে বড়ো দেশীয় রাজ্য গুলি ছিলো - হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, বরোদা ও কাশ্মীর। 

(৮.) ভারত ভুক্তি দলিলে প্রথম স্বাক্ষর করেছিলো -  দেশীয় রাজ্য বরোদা।

(৯.) ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্টের আগে ভারত ভুক্ত হয় নি - জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর। 

(১০.) "ভারতের লৌহমানব" ও "ভারতের বিসমার্ক" বলা হয় - সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে। 

(১১.) লর্ড মাউন্টব্যাটনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন - স্যার কনরাড কর্নফিল্ড। 

(১২.) কাশ্মীর রাজ্যকে ভারতে অন্তর্ভূক্ত করার প্রশ্নে নেহেরুর সঙ্গে বল্লভভাই প্যাটেলের মতান্তর সৃষ্টি হয়েছিলো।
 
(১৩.) কাশ্মীরের রাজা ছিলেন - হরি সিং। 

(১৪.) হরি সিং ভারত ভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করেন - ১৯৪৭ খ্রিঃ ২৬ শে অক্টোবর। 

(১৫.) "ন্যাশনাল কনফারেন্স" ছিল - কাশ্মীরের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। 

(১৬.) "ন্যাশনাল কনফারেন্সের" প্রধান নেতা ছিলেন - শেখ আবদুল্লা। 

(১৭.) "কাশ্মীর সিংহ" বলা হতো - শেখ আবদুল্লাকে। 

(১৮.) ১৯৪৭ খ্রিঃ পাকিস্তান কাশ্মীরের একাংশকে বলপূর্বক দখল করে নেয়। পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরের এই অংশকে পাকিস্তান "আজাদ কাশ্মীর" এবং ভারত "পাক অধিকৃত কাশ্মীর" নামে অভিহিত করে। 

(১৯.) কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ হয় - ১৯৪৭ খ্রিঃ, ১৯৬৫ খ্রিঃ, ১৯৭১ খ্রিঃ, ১৯৯৯ খ্রিঃ। 

(২০.) কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত - পাক প্রত্যেকটি যুদ্ধেই পরাজিত হয় - পাকিস্তান। 

(২১.) LOC হল -  Line of control. 

(২২.) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিঃ ৩১ শে ডিসেম্বর, কাশ্মীরে যুদ্ধ বিরতি ঘোষনা করে যুদ্ধ বিরোধী যে ভৌগলিক নিয়ন্ত্রন রেখা নির্দেশ করে, তাকেই L.O.C বা লাইন অফ কন্ট্রোল বলা হয়। 

(১৫.) জুনাগড়কে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার সময় জুনাগড়ের নবাব ও দেওয়ান ছিলেন যথাক্রমে - নবাব তৃতীয় মহম্মদ মহাবত খঞ্জী ও দেওয়ান শাহনওয়াজ ভুট্টো। 

(১৬.) জুনাগড়কে ভারত ভুক্ত করার জন্য গনভোট নেওয়া হয় - ১৯৪৮ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারি মাসে। 
 
(১৭.) গন ভোটের মাধ্যমে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় - ১৯৪৯ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে। 

(১৮.) জুনাগড় অবস্থিত ছিল - গুজরাটের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে। 

(১৯.) হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি অবস্থিত ছিল - দক্ষিণ ভারতে। 

(২০.) হায়দ্রাবাদের প্রধান শাসককে বলা হতো - নিজাম। 

(২১.) ভারত ভুক্তির সময়ে হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন - মির ওসমান আলি খাঁন আসফ ঝা।

(২২.) হায়দ্রাবাদের মৌলবাদী সশস্ত্র সেনাদল - "রাজাকার" নামে পরিচিত ছিলো। 

(২৩.) হায়দ্রাবাদে রাজাকার বাহিনী গড়ে উঠেছিলো - কাশিম রিজভির নেতৃত্বে।

(২৪.) হায়দ্রাবাদের ভারত ভুক্তি ঘটানো হয় - সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে। 

(২৫.) হায়দ্রাবাদ দখলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন - জেনারেল জয়ন্ত নারায়ন চৌধুরী। 

(২৬.) হায়দ্রাবাদ দখলের সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয় - "অপারেশন পোলো"। 

(২৭.) হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত ভুক্ত হয় - ১৯৫০ খ্রিঃ ২৬ শে জানুয়ারি। 

(২৮.) ১৯৫৬ খ্রিঃ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ পৃথক প্রদেশ হিসাবে বহাল ছিলো। 

(২৯.) ১৯৫৬ খ্রিঃ হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে ভেঙে অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বাই ও মহীশূরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। 

(৩০.) দেশীয় রাজাদের ভারতে যোগদানের বিনিময়ে রাজাদের যে বার্ষিক ভাতা দেওয়া হয় তাকে বলে - রাজন্য ভাতা। 

(৩১.) স্বাধীনতার পর দেশীয় রাজাদের রাজন্য ভাতার বিলোপ করেন - শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। 

(৩২.) ভারতে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশ গুলি হল - বাংলার চন্দননগর, মাদ্রাজের পন্ডিচেরি, পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত মাহে। 

(৩৩.) ভারতে অবস্থিত পর্তুগিজ উপনিবেশ গুলি হল - গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা, নগর হাভেলী।

(৩৪.) স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে সবথেকে বড়ো দেশীয় রাজ্য ছিল - হায়দ্রাবাদ।

(৩৫.) কাশ্মীরের জনসংখ্যার সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিলো - মুসলিম, কিন্তু রাজা ছিলেন হিন্দু। 

(৩৬.) হায়দ্রাবাদের জনসংখ্যার সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিলো - হিন্দু, কিন্তু নবাব ছিলেন মুসলিম। 

(৩৭.) জুনাগড়ের জনসংখ্যার সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিলো - হিন্দু, কিন্তু নবাব ছিলেন মুসলিম। 

(গ.) কোন রাজ্য কবে ভারত ভুক্ত হয়/ কবে কোন রাজ্য গঠিত হয়? 


(১.) ১৯৪৭ খ্রিঃ ২৬ শে অক্টোবর - কাশ্মীরের ভারতভুক্তি। 
(২.) ১৯৪৯ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে - জুনাগড়ের ভারত ভুক্তি / ত্রিপুরার ভারতভুক্তি (১৯৪৯ খ্রিঃ ৯ ই সেপ্টেম্বর)।
(৩.) ১৯৫০ খ্রিঃ ২৬ শে জানুয়ারি - হায়দ্রাবাদের ভারত ভুক্তি।
(৪.) ১৯৫০ খ্রিঃ ২ রা মে - ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরের ভারতভুক্তি। 
(৫.) ১৯৫৩ খ্রিঃ - ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য "অন্ধ্রপ্রদেশ" গঠন। 
(৬.) ১৯৫৪ খ্রিঃ - পন্ডিচেরি, মাহে, কারিকল, দাদরা, নগর হাভেলি ভারতভুক্ত হয়। 
(৭.) ১৯৫৫ খ্রিঃ - চন্দননগর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। 
(৮.) ১৯৫৬ খ্রিঃ - পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। / ভাষার ভিত্তিতে কর্নাটক, কেরালা, ঊড়িষ্যা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, জন্মু - কাশ্মীর রাজ্য গঠন। / পুরাতন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের বিলুপ্তি। 
(৯.) ১৯৬০ খ্রিঃ - পুরাতন বোম্বাই প্রদেশের বিলুপ্তি। / বোম্বাই প্রদেশকে দু ভাগে ভাগ করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠন। 
(১০.) ১৯৬১ খ্রিঃ - পর্তুগিজ উপনিবেশ গোয়া, দমন ও দিউ - এর ভারত ভুক্তি। 
(১১.) ১৯৬৩ খ্রিঃ ১ লা ডিসেম্বর - নাগাল্যান্ড রাজ্যের জন্ম।
(১২.) ১৯৬৬ খ্রিঃ - পাঞ্জাব রাজ্য ভেঙ্গে স্বাধীন হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ রাজ্য গঠন। 
(১৩.) ১৯৭২ খ্রিঃ - মনিপুর, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্য গঠন।
(১৪.) ১৯৭৫ খ্রিঃ - সিকিম ভারত ভুক্ত হয়। 
(১৫.) ১৯৮৭ খ্রিঃ - অরুনাচল প্রদেশ ও মিজোরাম রাজ্য গঠন। 
(১৬.) ১৯৯৩ খ্রিঃ - দিল্লি রাজ্য গঠন। 
(১৭.) ২০০০ খ্রিঃ - মধ্য প্রদেশ ভেঙে ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ ভেঙে উত্তারাখন্ড ও বিহার ভেঙ্গে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন। 
(১৮.) ২০১৪ খ্রিঃ - অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙ্গে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন। 

(ঘ.) উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ও তাদের পরিচিতি :- 

(১.) "Iron man of India" নামে পরিচিত ছিলেন - সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। 
(২.) "ভারতের বিসমার্ক" নামে পরিচিত ছিলেন - সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। 
(৩.) তৃতীয় মহম্মদ মহবত খঞ্জী ছিলেন - জুনাগড়ের নবাব। 
(৪.) শহনওয়াজ ভুট্রো ছিলেন - জুনাগড়ের দেওয়ান। 
(৫.) হরি সিং ছিলেন - কাশ্মীরের রাজা।
(৬.) মেহেরচাঁদ মহাজন ছিলেন - হরি সিং এর প্রধানমন্ত্রী। 
(৭.) শেখ আবদুল্লা ছিলেন - কাশ্মীরের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান নেতা। 
(৮.) ভি পি মেনন ছিলেন - স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব। 
(৯.) জওহরলাল নেহেরু ছিলেন - ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। 
(১০.) সপ্তম মির ওসমান আলি খান আসফ ঝা ছিলেন - হায়দ্রাবাদের নিজাম। 
(১১.) "ইত্তেহাদ - উল - মুসলিমিন" ও "রাজাকার" ছিলো - হায়দ্রাবাদের মৌলবাদী গোষ্ঠী ও সংগঠন।
(১২.) কাশিম রিজভি ছিলেন - হায়দ্রাবাদে রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক। 
(১৩.) জয়ন্ত নারায়ন চৌধুরী ছিলেন - ভারতের সেনাপ্রধান, যিনি "অপারেশন পোলো" র মাধ্যমে হায়দ্রাবাদকে ভারতভুক্ত করেন। 
(১৪.) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন - স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 
  
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post