হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত ভুক্তি

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে দেশীয় রাজ্যটিকে ভারতভুক্ত করতে সবথেকে বেশি জটিলতা ও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো, সেটি হলো হায়দ্রাবাদ রাজ্য

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি
হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি 


(১.) ভৌগলিক অবস্থান ও রাজ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :-

ভারতে অবস্থিত দেশীয় রাজ্য গুলির মধ্যে হায়দ্রাবাদ ছিলো সবচেয়ে বড়ো দেশীয় রাজ্য। এর আয়োতন ছিলো ৮২,০০০ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৬ কোটি। 

এই রাজ্যটি দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত ছিলো। হায়দ্রাবাদ রাজ্য চারদিক থেকেই ভারতীয় ভূখন্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলো। এই রাজ্যের উত্তরদিকে ছিলো ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্য, দক্ষিণ পূর্বে ছিলো মাদ্রাজ এবং পশ্চিম দিকে ছিলো বোম্বাই প্রদেশ। 

হায়দ্রাবাদের ৮৫ % জনগন হিন্দু হলেও, প্রধান শাসক ছিলেন মুসলমান, যাকে "নিজাম" নামে ডাকা হতো। হায়দ্রাবাদ রাজ্যের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৭১৩ খ্রিঃ, "মুঘল আশ্রিত রাজ্য" হিসাবে। পরবর্তীকালে লর্ড ওয়েলেসলি যখন ভারতে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন, তখন সেই নীতিতে সর্বপ্রথম স্বাক্ষর করেন হায়দ্রাবাদের নিজাম (১৭৯৮)। এইভাবে জন্মলগ্ন থেকেই হায়দ্রাবাদ রাজ্য কোন না কোন বৃহৎ শক্তির ছত্রছায়ায় থেকেছিলো। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হায়দ্রাবাদের ক্ষমতায় ছিলেন সপ্তম নিজাম, মীর ওসমান আলি। তিনি ১৯১১ খ্রিঃ হায়দ্রাবাদের সিংহাসনে বসেছিলেন। 

মীর ওসমান আলি ছিলেন তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ধনী ব্যক্তিদের একজন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, তিনি হায়দ্রাবাদেরও শেষ নিজাম ছিলেন। রাজ্যের প্রায় ১০ ভাগ জমি তার নামে ছিলো। এছাড়াও ছিলো অগাধ বিষয় সম্পত্তি। 

তবে এত বিপুল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও, মীর ওসমান আলি ছিলেন অত্যন্ত কৃপন। তিনি নতুন জামাকাপড় প্রায় পরতেনই না। ইস্তিরি না করা ম্যাড়ম্যাড়ে একখানি পাজামা আর কুর্তা এবং রঙ চটা একখানি ফেজ টুপি ছিলো তাঁর অত্যন্ত পছন্দসই পোশাক। মাঝে মধ্যেই তিনি একখানা আদ্যিকালের, ঝড়ঝড়ে, খেলনা মডেলের ১৯১৮ সালের গড়িতে করে ঘুরতে বেড়াতেন। টাকা পয়সা খরচের জন্য রাজ্যে অতিথিদের কোনরকম আতিথেয়তাও তিনি করতেন না। 

হায়দ্রাবাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অবশ্য অন্যান্য দেশীয় রাজ্য গুলির মতো ছিলো না। হায়দ্রাবাদ খাদ্যে, তুলোবীজে, তৈল্যবীজে, কয়লা এবং সিমেন্ট তৈরিতে স্বনির্ভর ছিলো। কেবলমাত্র পেট্রোল আর নুন ব্রিটিশ ভারত থেকে আমদানি করতে হতো।

হায়দ্রাবাদের জনগনের অবস্থা অবশ্য মোটেই ভালো ছিলো না। এই রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও, প্রশাসন ও সামরিক বিভাগে হিন্দুদের প্রায় কোন প্রতিনিধিত্বই ছিলো না। নিজাম শাসিত হায়দ্রাবাদ রাজ্যে মুসলিমরাই ছিলেন সবথেকে সুবিধাভোগী শ্রেনী। সৈন্য বাহিনী, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস এবং অন্যান্য নিন্মতর সরকারী পদ গুলিতে মুসলমানদেরই বেছে বেছে নিয়োগ করা হতো। রাজ্যের প্রায় সব জমিই মুসলিম অভিজাত শ্রেনী দখল করে রেখেছিলো।

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান
হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান 


(২.) নিজামের স্বাধীন থাকবার সিদ্ধান্ত ও ঘোষনা :-

১৯৪৭ খ্রিঃ ১৮ ই জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হবার পরেই নিজাম হায়দ্রাবাদকে স্বাধীন রাখার কথা ঘোষনা করেন। এই সময় তিনি ব্রিটেনের সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালান। যদিও হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রজা নিজামের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।

এই সময় ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য নিজাম গোপনে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তার লক্ষ্য ছিলো পাকিস্তানে যোগদানের জুজু দেখিয়ে ভারতকে নিয়ন্ত্রনে রাখা। এই সুযোগে পাকিস্তানও নিজামের স্বাধীন থাকবার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে এবং সর্বতোভাবে তাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

এই সময় নিজাম হায়দ্রাবাদের হয়ে কথা বলার জন্য নিয়োগ করেন ওয়াল্টার মঙ্কটনকে। ওয়াল্টার মঙ্কটন ছিলেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের সবথেকে সেরা ও সফল উকিল। নিজামের হয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যাবতীয় কথাবার্তা ওয়াল্টার মঙ্কটনই চালাতেন। 

ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ রাজ সরকারের সঙ্গে নিজামের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং স্বাধীন ভারত সরকারের সঙ্গে হায়দ্রাবাদের কথাবার্তা চালাবার জন্যই নিজাম ওয়াল্টার সাহেবকে নিয়োগ করেছিলেন। 

(৩.) ভারত কেন হায়দ্রাবাদকে ভারতভুক্ত করতে চেয়েছিলো?

ভারতের বুকে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের উপস্থিতিকে ভারতের পক্ষে কখনই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলো না। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল অত্যন্ত চাঁচাছোলা ভাষায় বলেছিলেন - "স্বাধীন হায়দ্রাবাদ থাকার অর্থ ভারতের পেটে ক্যানসার হওয়া।" 

বস্তুতপক্ষে বেশ কিছু কারনে ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া সম্ভব হয় নি। যেমন -

(ক.) মূল ভারতীয় ভূখন্ডের মাঝখানে স্বাধীন হায়দ্রাবাদের উপস্থিতি সব সময়ের জন্যই ভারতের জাতীয় সংহতি, ভৌগলিক ঐক্য ও জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে অন্তরায় ছিলো।

(খ.) দক্ষিণ ভারতে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ থাকলে যে কোন সময় উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারত বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারতো।

(গ.) স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদের সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দু জনসাধারন ভারত ভুক্ত হওয়ার জন্য যেভাবে আন্দোলন শুরু করেছিলো তাকে কোন মতেই অস্বীকার করার উপায় ছিলো না।

(ঘ.) তাছাড়া, দীর্ঘকাল ধরেই নিজাম এবং অভিজাত মুসলিম গোষ্ঠী হিন্দুদের ওপর যে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে তার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিলো। হায়দ্রাবাদ পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্য গুলিতে হিন্দু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদ সমস্যার সমাধান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর সমাধান কল্পেই ভারত বলপ্রয়োগ করে হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে ভারত ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

(৪.) নিজামের ওপর ভারতের কূটনৈতিক চাপ :-

নিজামের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর জন্য জাতীয় কংগ্রেস দ্বিমুখী রনকৌশল অবলম্বন করে।

 এক, হায়দ্রাবাদকে ভারতীয় সংঘে যোগদানের ব্যাপারে চাপ দেওয়ার জন্য কংগ্রেস লর্ড মাউন্টব্যাটনকে ব্যবহার করে। মাউন্টব্যাটন হায়দ্রাবাদের প্রতিনিধি ওয়াল্টার মঙ্কটনের সঙ্গে এক বৈঠকে নিজামকে গনপরিষদে এবং ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের ব্যাপারে অনুরোধ করেন। কিন্তু নিজামের উকিল সরাসরি এই অনুরোধের বিরোধিতা করে জানিয়ে দেন, "ভারত যদি বেশি জোরাজুরি করে, তাহলে তাঁর মক্কেল সত্যি সত্যিই পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার জন্য যে দ্বিতীয় বিকল্পটি রয়েছে, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন।" 

ঠিক এই সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান মহম্মদ আলি জিন্না হুংকার দিয়ে বলে ওঠেন, ভারত যদি হায়দ্রাবাদকে জোর করে দখল করার চেষ্টা করে, তাহলে ভারতের দশ কোটি মুসলিমই শুধু নয়, তামাম বিশ্বের যত মুসলমান আছে, সবাই নিজামের পাশে এসে দাঁড়াবে। 

ভারত সরকারের কাছে অবশ্য আগেই খবর ছিলো, নিজামের সঙ্গে জিন্নার এক গোপন সমঝোতা হয়ে ছিলো। ভারত যদি নিজামকে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য বেশি চাপ দেয়, তাহলে নিজাম যোগদানের প্রশ্নে দ্বিতীয় বিকল্পটিকেই বেছে নেবেন।

ভারত সরকার তাই হায়দ্রাবাদের বিষয়ে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করে। এই সময় নিজামের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কংগ্রেস হায়দ্রাবাদের সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুদের ভারতে যোগদানের স্বপক্ষে বিভিন্ন উস্কানি ও জনমত গঠনের কাজটি করে যেতে থাকে।

(৫.) নিজামের পাল্টা প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য :-

কংগ্রেস যখন নিজামকে ভারত ভুক্ত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলো, ঠিক তখুনিই নিজাম নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পাল্টা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।

(ক.) তিনি ব্রিটিশ রাজ সরকারের সঙ্গে হায়দ্রাবাদের নতুন সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হন। এই সময় নিজামের উকিল ওয়াল্টার মঙ্কটন ইংল্যান্ডে নিজামের হয়ে জনসমর্থনের পুরো কাজটি চালিয়ে যান। মঙ্কটন ছিলেন ব্রিটেনের কনজার্ভেটিভ পার্টির একজন অন্যতম সদস্য। ভারতের ওপর পাল্টা চাপ দেওয়ার জন্য মঙ্কটন তাঁর পার্টিকে ব্যবহার করেন। এই সময় কনজার্ভেটিভ পার্টি কংগ্রেসের রাজনীতিকে "ক্ষমতার রাজনীতি" এবং ক্ষমতার রাজনীতিকে "হিটলারের রাজনীতির" সঙ্গে তুলনা করে।

(খ.) ইংল্যান্ডের সমর্থনের পাশাপাশি এই সময় নিজাম বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভেরও চেষ্টা চালান।

(গ.) এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য জেনে তিনি গোপনে পাকিস্তানে সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পাকিস্তান থেকে বিমানে অস্ত্র আমদানি করতে থাকে।

(ঘ.) এই সব প্রচেষ্টার পাশাপাশি নিজাম সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে হায়দ্রাবাদ সমস্যাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গিয়ে ভারতের ওপর পাল্টা কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা।

(৬.) হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি :-

১৯৪৭ খ্রিঃ ৩ টি সংগঠনের পরস্পর বিরোধী কার্যকলাপে হায়দ্রাবাদের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করে। এই ৩ টি সংগঠনের একটি ছিলো "হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস", অপর দুটি ছিলো যথাক্রমে "ইত্তিহাদ - উল - মুসলিমীন" ও "কমিউনিস্ট পার্টি"।

১৯৩৮ খ্রিঃ হায়দ্রাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস। রাজ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগঠনটি ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালিয়ে আসছিলো। ১৯৪৭ খ্রিঃ ভারতের  আসকারা পেয়ে এর গলার জোর খুব বেড়ে যায়। স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত ভুক্তি ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্ট তারা হায়দ্রাবাদের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দেন। 

বলা বাহুল্য, রাজ্য কংগ্রেসের এইসব কাজকর্ম নিজামের স্বাধীনতার পরিপন্থী ছিলো। হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস যেভাবে হায়দ্রাবাদের সংখ্যা গুরু হিন্দুদের মধ্যে ভারতের স্বপক্ষে জনমত গঠন করছিলো ও সংগঠিত করছিলো, তাকে লাগাম টানার জন্য নিজাম দুটি কাজ করেন। প্রথমেই তিনি হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেসের প্রায় ২০,০০০ সত্যাগ্রহীকে কারারুদ্ধ করেন, তারপর খোলা ময়দানে "ইত্তিহাদ - উল - মুসলিমীন" কে নামিয়ে দেন। 

"ইত্তিহাদ - উল - মুসলিমীন" ছিলো হায়দ্রাবাদের একটি উগ্র, ভারত বিরোধী মৌলবাদী সংগঠন। ১৯৪৭ খ্রিঃ এই সাম্প্রদায়িক সংগঠনটির দায়িত্বভার ন্যাস্ত হয় কাসিম রিজভির হাতে। প্রচন্ড হিন্দু ও ভারত বিদ্বেষী ইত্তিহাদ উল মুসলিমীনের প্রধান লক্ষ্যই ছিলো হায়দ্রাবাদের প্রশাসন ও রাজনীতিতে মুসলমানদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইত্তিহাদের ও নিজামের লক্ষ্য এবং ইত্তিহাদের হিন্দু ও ভারত বিরোধীতার সাথে নিজামের ভারত বিরোধিতার রাষ্ট্রীয় ঐক্য স্থাপিত হতে বেশি দেরি লাগে নি। নিজাম নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সময় "ইত্তিহাদ - উল - মুসলিমীন" কে ব্যবহার করেন। 

ইত্তিহাদ উল মুসলিমীনের ছত্রছায়ায় এইসময় "রাজাকার" নামে এক সশস্ত্র মৌলবাদী সেনাদল গঠিত হয়। হায়দ্রাবাদের সর্বত্র রাজাকার বাহিনী বন্দুক, তলোয়ার নিয়ে সশস্ত্র কুচকাওয়াজ করে ভারত বিরোধী শ্লোগান দেয় এবং হিন্দুদের ওপরে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। 

হায়দ্রাবাদের তৃতীয় সংগঠনটি ছিলো কমিউনিস্ট পার্টি। হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে এদের শক্ত ঘাঁটি ছিলো। ১৯৪৬ - ৪৭ খ্রিঃ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেলেঙ্গানায় ভয়াবহ কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় কমিউনিস্টরা তেলেঙ্গানার বড়ো বড়ো জমিদারি গুলি দখল করে তাদের অধীনে থাকা জমি গুলি কৃষকদের মধ্যে বিলি করে দেয়। কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে প্রায় এক হাজারের ওপর বেশি গ্রাম নিজামের অপশাসন থেকে মুক্তি পায়। 

হায়দ্রাবাদে কমিউনিস্টদের উত্থান একদিকে ভারত সরকারের কাজকে যেমন অনেক সহজ করে দিয়েছিলো, তেমনি নিজামের শক্তি ও আত্মবিশ্বাসকে অনেকটাই নামিয়ে দিয়েছিলো। নিজাম ভয় পেয়েছিলেন, কমিউনিস্ট শক্তির সম্প্রসারন একদিন গোটা হায়দ্রাবাদকেই গ্রাস করে ফেলবে। কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে রাজ্যের একাংশের কার্যত শাসনমুক্তি ও সমান্তরাল সরকার গঠনও নিজামকে বিশেষ চিন্তায় ফেলে। 

ভারত সরকার ও কমিউনিস্টদের ষাঁড়াশি আক্রমনে নিজাম ভারতের সঙ্গে আপাত যুদ্ধ বিরতিকেই বুদ্ধিমানের কাজ বলে গন্য করলেন। 

(৭.) ভারত - হায়দ্রাবাদ অচলাবস্তা চুক্তি :- 

১৯৪৭ খ্রিঃ নভেম্বর মাসে ভারত সরকার ও নিজামের মধ্যে এক "অচলাবস্তা চুক্তি" স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে স্থির হয়, হায়দরাবাদের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের যেসব চুক্তি ও বন্দোবস্ত হয়েছিলো, তা পরবর্তী ভারত সরকারের আমলেও বজায় থাকবে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও হায়দ্রাবাদ দুজনেই অন্য পক্ষের এলাকায় প্রতিনিধি নিয়োগ করে। 

এই চুক্তির ফলে ভারত ও নিজাম দুজনেই কিছুটা দম ফেলবার সুযোগ লাভ করে। নভেম্বর মাসেই নিজাম মীর লায়েক নামে একজন নতুন দেওয়ানকে নিযুক্ত করেন। মীর লায়েক পাকিস্তানপন্থী হলেও, এই সময় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য তাঁর সরকারের কিছু আসন হিন্দুদের ছেড়ে দেবার প্রস্তাব দেন। হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস তখন হিন্দুদের জন্য আরোও বেশি আসন দাবি করলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে পড়ে। 

(৮.) রাজাকারদের অত্যাচার :- 

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন অনেকটা দেশলাই বাক্সের আগুনের মতো। দেশলাই বাক্সের আগুন ততক্ষনই নিয়ন্ত্রণে থাকে, যতক্ষন তা পাজামার পকেটে থাকে। দেশলাই বাক্সের আগুন জঞ্জালে নিক্ষেপ করা হলে সেই আগুনকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা আর কারো কাছেই থাকে না। 

হায়দ্রাবাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ব্যাপারটা সেইরকমই দাড়ালো। পুরো রাজ্যের রাশ এই সময় কাশিম রিজভি ও তার রাজাকার বাহিনীর হাতে চলে যায়। হায়দ্রাবাদ প্রশাসনে হিন্দুদের আসন ছাড়ার ব্যাপারটিকে ইত্তিহাদ - উল - মুসলিমীন বা রাজাকাররা কেউই মানতে পারলো না। এইসময় রাজাকার বাহিনী ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে মুসলিমদের হায়দ্রাবাদে ডেকে সংগঠিত করতে থাকে। ১৯৪৮ খ্রিঃ মার্চ মাসের মধ্যে ইত্তিহাদ উল মুসলিমীনদের সদস্য সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ লক্ষ। এদের মধ্যে প্রায় এক লক্ষ সদস্যকে সশস্ত্র তালিম দিয়ে "রাজাকার" বানানো হয়। 

রাজাকাররা হিন্দুদের উদ্দেশ্যে জেহাদ ঘোষনা করে। এই জেহাদে অংশগ্রহণের জন্য মধ্য প্রদেশ ও ভারতের অন্যান্য স্থান থেকে মুসলমানরা দলে দলে হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে এবং হায়দ্রাবাদ থেকে হিন্দুদের বিতাড়ন, নির্যাতন ও অত্যাচার শুরু করে। 

নিজামের প্রত্যক্ষ মদত ও সাহায্যের ফলেই সংখ্যা গুরু হিন্দুদের ওপর সংখ্যা লঘু মুসলমাদের এই একতরফা নিধন যজ্ঞ সম্পন্ন হতে পেরেছিলো। এর ফলে হায়দ্রাবাদ সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় রাজ্য গুলিতে হিন্দু শরনার্থীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। 

(৯.) ভারতের হস্তক্ষেপ ও ভারত ভুক্তির অনুরোধ :- 

হায়দ্রাবাদ সীমান্তে ভারতীয় রাজ্য গুলিতে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ঐ সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা জওহরলাল নেহেরুর কাছে অনুযোগ জানান, হায়দ্রাবাদ থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের স্রোত সামলাতে তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। সরকার যেন এই সমস্যার দ্রুত একটি সমাধান করে। 

রাজাকাররা দিল্লি ও হায়দ্রাবাদের দ্বন্দ্বকে হিন্দু - মুসলমান দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখতো। অন্যদিকে কংগ্রেস এটিকে গনতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের দ্বন্দ্ব হিসাবেই দেখতো। দুটো দ্বন্দ্বের ভিতরেই সত্যতা ছিলো। কোন একটিকে গ্রহন করে কখনই অপরটিকে উপেক্ষা করা যায় না। কিন্তু এর থেকেও নির্মম পরিস্থিতি ঘটলো হায়দ্রাবাদের জনগনের। এই দুই দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে তাদের অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হয়ে উঠলো। 

এমতাবস্থায় হায়দ্রাবাদ সমস্যার সমাধানের জন্য ১৯৪৮ খ্রিঃ জুন মাসে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেননের সঙ্গে হায়দ্রাবাদের দেওয়ান লায়েক আলির এক বৈঠক হয়। এই বৈঠকে মেনন হায়দ্রাবাদে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং গনভোটের মধ্য দিয়ে হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির প্রস্তাব দেন। হায়দ্রাবাদ ভারত ভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করলে নিজামের মর্যাদা এবং সম্পত্তি রক্ষার যাবতীয় প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। কিন্তু সকল প্রস্তাবই নিজাম প্রত্যাখ্যান করেন। 

(১০.) ভারতের হায়দ্রাবাদ দখল :- 

ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ভারতের অনুকূলে আসে। ১৯৪৮ খ্রিঃ ২১ শে জুন লর্ড মাউন্টব্যাটন ভারতে বড়োলাটের পদ ত্যাগ করেন। এর অল্প কিছুদিন পরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ জিন্নার মৃত্যু ঘটে। এই দুইয়ের ফলে ভারতের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।

১৯৪৮ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সরকার নিজামকে এক চরমপত্র দিয়ে অন্যান্য বেশ কিছু দাবি দাওয়ার পাশাপাশি রাজাকার বাহিনী ভেঙ্গে দেওয়ার দাবি জানায়। নিজাম ভারতের দাবি উপেক্ষা করলে ভারত হায়দ্রাবাদ রাজ্য আক্রমণ করে। 

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্নার মৃত্যুর ঠিক দুদিন পর ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রিঃ জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদ রাজ্যে প্রবেশ করে এবং ১৮ ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমগ্র রাজ্যটি দখল করে নেয়। 

ভারতের নেতৃত্বে হায়দরাবাদ রাজ্যে যে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিলো তার নাম দেওয়া হয়েছিলো "অপারেশন পোলো।" মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই এই অভিযান সফল হয়েছিলো। রাজাকার ও ভারতীয় সেনার এই যুদ্ধে ৪২ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়, অন্যদিকে দুই হাজারের কিছু বেশি মৌলবাদী রাজাকার নিহত হয়। 

জিন্না একসময়ে হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, ভারত যদি হায়দরাবাদকে জোর করে দখল করার চেষ্টা চালায় তাহলে তামাম বিশ্বের মুসলমানরা হায়দ্রাবাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। বাস্তবে তেমন কোন কিছুই ঘটলো না। হায়দ্রাবাদের সমর্থনে অবশ্য পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে একদল পাকিস্তানী বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেছিলো, "যখন আমরা পিতৃহারা হলাম তখনই তোমরা কাপুরুষের মতো আমাদের আক্রমণ করলে"। যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিয়ে পাকিস্তান অবশ্য শান্তই থেকে গেলো। 

(১১.) ভারত ভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর :- 

১৯৪৮ খ্রিঃ ১৭ ই সেপ্টেম্বর, এক রেডিও ভাষনে নিজাম রাজাকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা ভেঙে দেওয়ার কথা জানালেন। এও বললেন, তাকে ভুল বুঝিয়ে ক্ষমতার পুরো রাশটাই রিজভি ও তার দলবলের লোক গুলো নিয়ে নিয়েছিলো। হায়দ্রাবাদের মুসলিমদের তিনি রাজ্যের অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করার নির্দেশ দেন। 

এর কয়েকদিনের মধ্যেই রেজভি গ্রেপ্তার হন এবং রাজাকার বাহিনীকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। হায়দ্রাবাদে লায়েক আলি মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করে। নিজাম সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর করা সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। অবশেষে ১৯৪৯ খ্রিঃ সূচনায় এক চুক্তির মাধ্যমে নিজাম "Instrument of Accession" এ স্বাক্ষর করে ভারত ভুক্তির প্রস্তাব মেনে নেন। 

ভারত সরকার নিজামের এই বিলম্বিত বোধদয়ের জন্য তাঁর প্রতি কোন প্রতিশোধপরায়ন নীতি না নিয়ে উদারতার নীতি গ্রহণ করে। নিজামকে হায়দ্রাবাদ রাজ্যেরই রাজ্য প্রমুখ বা রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত করা হয়। নিজামকে তার অতুল ঐশ্বর্য ভান্ডার ও সম্পত্তি রেখে দেওয়ারও বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয় এবং বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা রাজন্য ভাতা দেওয়া হয়। 

১৯৫০ খ্রিঃ ২৬ শে জানুয়ারি, হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়১৯৫৬ খ্রিঃ পর্যন্ত ভারতে পৃথক হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু ১৯৫৬ খ্রিঃ রাজ্য পুনর্গঠনের সময় হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে ৩ টি ভাগে বিভক্ত করে মহীশূর, অন্ধ্রপ্রদেশ ও বোম্বাই প্রদেশের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত ভুক্তিতে প্রমাণিত হয়, সাম্প্রদায়িক শক্তির চাইতেও, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মূল্য অনেক বেশি। 

একঝলকে সংক্ষিপ্ত তথ্য :- 

  1. দেশীয় রাজ্য গুলির মধ্যে আয়তনে অন্যতম বড়ো রাজ্য ছিলো - হায়দ্রাবাদ।
  2. হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত ছিলো। 
  3. হায়দ্রাবাদের নবাবকে বলা হতো - নিজাম। 
  4. ভারত ভুক্তির সময়ে হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন - মীর ওসমান আলি। 
  5. ইত্তিহাদ উল মুসলিমীন ছিলো - হায়দ্রাবাদের একটি মৌলবাদী সংগঠন। 
  6. হায়দ্রাবাদে নিজামের পৃষ্ঠপোষকতায় যে সশস্ত্র মৌলবাদী সামরিক বাহিনী গড়ে উঠেছিলো তাকে বলা হতো - রাজাকার। 
  7. কাশিম রেজভির নেতৃত্বে হায়দ্রাবাদে রাজাকার বাহিনী গড়ে উঠেছিলো। 
  8. লায়েক আলি ছিলেন হায়দ্রাবাদের দেওয়ান। 
  9. হায়দ্রাবাদ রাজ্য দখলে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন - জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরী। 
  10. হায়দ্রাবাদ দখলের জন্য যে সামরিক অভিযান চালানো হয় তার নামকরন করা হয়েছিলো - অপারেশন পোলো। 
  11. ১৯৪৮ খ্রিঃ ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদ রাজ্য আক্রমণ করে। 
  12. নিজাম ভারত ভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করেন - ১৯৪৯ খ্রিঃ।
  13. হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতের অঙ্গীভূত হয় - ১৯৫০ খ্রিঃ ২৬ শে জানুয়ারি। 
  14. ১৯৫৬ খ্রিঃ পর্যন্ত ভারতে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পৃথক অস্তিত্ব ছিলো। 
  15. ১৯৫৬ খ্রিঃ রাজ্য পুনর্গঠনের সময় হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে ৩ টি ভাগে ভাগ করে মহীশূর, অন্ধ্রপ্রদেশ ও বোম্বাই প্রদেশের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। 

গ্রন্থঋন :- 

১. গাঁধী - উত্তর ভারতবর্ষ - রামচন্দ্র গুহ।
২. ভারত ইতিহাস পরিক্রমা - প্রভাতাংশু মাইতি ও অসিত কুমার মন্ডল। 
৩. আধুনিক ভারতের ইতিহাস - ড. রতন কুমার বিশ্বাস। 
৪. ভারতের ইতিহাস (আধুনিক যুগ ১৭০৭ - ১৯৬৪) - তেসলিম চৌধুরী। 
৫. আধুনিক ভারত (পলাশি থেকে নেহরু) - সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়। 
৬. আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাস (১৭০৭ - ১৯৬৪) - সিদ্ধার্থ গুহ রায় ও সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। 
৭. আধুনিক ভারতের রূপান্তর - সমর কুমার মল্লিক। 
৮. ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ দশক - দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়। 
৯. ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান, প্রস্তুতি ও পরিনতি - সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। 
১০. জওহরলাল নেহেরু, স্বাধীনতার আগে এবং পরে - শ্যামাপ্রসাদ বসু। 


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post