অগ্নিগর্ভ চট্টগ্রাম
(১.) পূর্ব কথা :-
আগের পর্ব "বিপ্লবের পথে চট্টগ্রাম" এ আমরা আলোচনা করেছি, কিভাবে এবং কোন ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিপ্লবীদের অন্যতম একটি ঘাঁটিতে পরিনত হয়েছিলো।
আগের পর্বের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি, ১৯৩০ এর দশকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন নিছক বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা ছিলো না। সর্বভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনেরই একটি পরিকল্পিত অভ্যুত্থান ছিলো চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন। ১৯২৯ খ্রিঃ রংপুর অধিবেশনে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও বরিশালে অস্ত্রাগার লুন্ঠন করা হবে এবং সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেখান থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানো হবে।
আসলে ১৯২৮ খ্রিঃ কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের বাৎসরিক অধিবেশনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সারা দেশব্যাপী গুপ্ত হত্যার পাশাপাশি একই সঙ্গে সামরিক অভ্যুত্থানও ঘটানো হবে। রংপুর অধিবেশন এই সিদ্ধান্তেরই ফলশ্রুতি ছিলো বলা যায়।
যাইহোক, আমরা আগের পর্বের আলোচনাতেই দেখেছি, রংপুরে সারা বাংলা ব্যাপী সামরিক অভিযানের যে গোপন পরিকল্পনা করা হয়েছিলো, তা ফাঁস হয়ে যায়। তবে অন্যান্য পরিকল্পনা গুলি ফাঁস হয়ে গেলেও, চট্টগ্রামের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ফাঁস হতে পারে নি। সেখানকার বিপ্লবীরা কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে গিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করেন।
কংগ্রেসের ভিতরে থেকে শরীর চর্চার নানা আখড়া, ব্যামামাগার ও সমিতি খুলে তারা যুবকদের সংঘবদ্ধ করেন। প্রায় একবছর ধরে অতি সন্তর্পনে সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ করার পর অবশেষে ১৯৩০ খ্রিঃ ১৮ ই এপ্রিল, রাত্রি দশটার পর আসে সেই ঐতিহাসিক মুহুর্ত...। আজকের পর্বে চট্টগ্রামের সেই রোমাঞ্চকর সামরিক অভ্যুত্থানের কাহিনীটিই আমরা তুলে ধরবো।
(২.) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের মূল পরিকল্পনা :-
চট্টগ্রামে বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য মাস্টারদা সূর্য সেন ১৮ ই এপ্রিল দিনটি স্থির করেন। দিনটির একটি বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিলো। এই বিশেষ দিনটিতেই আইরিশ প্রজাতন্ত্র বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিলো। এছাড়া এই দিনটি ছিলো পবিত্র গুডফ্রাইডে,যা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ব্রিটিশদের কাছে ছিলো এক বিশেষ পবিত্র দিন।
ভারতের ইতিহাসে বিপ্লবীরা এ পর্যন্ত অনেক বড়ো পরিকল্পনা করেছিলো। এমনকি চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের পরিকল্পনার থেকেও অনেক বড়ো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো। কিন্তু তার একটিও কার্যকর করা সম্ভব হয় নি। সব পরিকল্পনা গুলি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছিলো। একমাত্র সফল হতে পেরেছিলো চট্টগ্রাম অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা। এই সাফল্যের পিছনে অবশ্যই ছিলো মাস্টারদা সূর্য সেনের অভূতপূর্ব দক্ষতা ও কৃতিত্ব। চট্টগ্রাম অভ্যুত্থানের সাফল্যই প্রমান করে, মাস্টারদা সূর্য সেন ঠিক কতো বড়ো মাপের একজন নেতা ও বিপ্লবী ছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণের মূল পরিকল্পনায় ঠিক হয়েছিলো -
(i.) ১৮ ই এপ্রিল, ১৯৩০ খ্রিঃ রাত ১০ টায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হবে।
(ii.) মূল পরিকল্পনাকে সফল করে তোলার জন্য ৪ টি কাজ করা হবে। এগুলি হলো -
- (ক.) চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার গুলি লুন্ঠন করা,
- (খ.) চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে চট্টগ্রামকে ঢাকা ও কলকাতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা,
- (গ.) চট্টগ্রামে একটি অস্থায়ী স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা, এবং
- (ঘ.) চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা। এই আক্রমণটি করা হবে, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।
(iii.) সমস্ত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করার জন্য বিপ্লবীরা ৫ টি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।
- (ক.) একটি দল পুলিশ ঘাঁটি আক্রমণ করবে এবং সেখানকার অস্ত্রাগার লুন্ঠন করবে। যার নেতৃত্বে থাকবে অনন্ত সিংহ ও গনেশ ঘোষ।
- (খ.) অপর দলটি চট্টগ্রামের সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্রাগার আক্রমণ এবং লুন্ঠন করবে।
- (গ.) তৃতীয় দলটি চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জে আক্রমণ চালিয়ে তা ধ্বংস করবে। এর নেতৃত্বে থাকবেন অম্বিকা চক্রবর্তী।
- (ঘ.) চতুর্থ দলটি নরেশ রায় ও ত্রিগুনা সেনের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সাহেবদের হত্যা করবে।
- (ঙ.) এই চারটি দল ছাড়াও, ৩০ জনের আরো একটি দল পুলিশ ঘাঁটির কাছে গোপন স্থানে অপেক্ষা করবে অন্য তিনটি দলকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার জন্য।
- (চ.) এর কাছেই কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি মোটরে সূর্য সেন অপেক্ষা করবেন। তিন দল কাজ শেষ করে সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের সঙ্গে মিলিত হবে।
(iv.) চট্টগ্রামের এই মূল পরিকল্পনা রূপায়িত করার জন্য ঠিক হয়, সফল বিপ্লবী অভ্যুত্থানের পরেই শহরের বন্দুকের দোকান গুলি দখল করে নেওয়া হবে এবং চট্টগ্রাম শহরে একটি সামরিক বিপ্লবী সরকার গঠন করা হবে।
(৩.) পরিকল্পনার রূপায়ন ও অভ্যুত্থান :-
১৯৩০ খ্রিঃ ১৮ ই এপ্রিল, রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবীরা তাদের অভিযান পরিচালনা করেন। বিপক্ষ যাতে প্রতিরোধের সুযোগ না পায়, সেইজন্য প্রায় একই সময়ে পরিকল্পনা গুলি পরপর সংঘটিত হয়।
১৮ ই এপ্রিল, সন্ধ্যায় "ভারতের রিপাবলিকান আর্মি" একটি ঘোষনাপত্র বা ইস্তেয়ার চট্টগ্রাম শহরে বিলি করে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয়। ঐ দিন রাত্রি ৯ টা ৪৫ মিনিটে বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের কংগ্রেস কার্যালয় এবং গনেশ ঘোষের দোকান থেকে চারটি দলে ভাগ হয়ে নিজের নিজের গন্তব্যের পথে অগ্রসর হয়।
যে দলটির ওপর ইওরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের ভার ছিলো, সেই দলটি ক্লাবে গিয়ে দেখতে পান ক্লাবটি প্রায় শূন্য। ঐ দিন গুডফ্রাইডে থাকায় সাহেবরা সন্ধ্যেবেলাতেই সকলে বাড়ি চলে গিয়েছিলো। এর ফলে ক্লাবটি আক্রমণ করা গেলো না। তখন এর দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটি দুভাগে ভাগ হয়ে একটি ভাগ পুলিশি অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ভারপ্রাপ্ত দলটির সঙ্গে এবং অন্যটি সৈন্য বাহিনীর অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ভারপ্রাপ্ত দলটির সঙ্গে যোগদান করে।
চট্টগ্রামের অভ্যুত্থানকে সফল করে তুলতে গেলে অবশ্য প্রয়োজনীয় একটি দিক ছিলো বাইরের যোগাযোগ থেকে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। যাতে প্রতিপক্ষ কোন সরকারি সাহায্যের সুযোগ না পায়। এজন্য মূল পরিকল্পনায় ঠিক হয়েছিলো, অভ্যুত্থানের কিছু আগেই চট্টগ্রামকে রেল ও টেলি যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা মাফিক, ধুম ও লাঙ্গলকোটের কাছে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়। এর ফলে ১৮ ই এপ্রিল রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটের সময় ধুমের কাছে একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে যায়। অতঃপর যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসকারী দলটি চট্টগ্রামের টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিসে প্রবেশ করে। এরা সংখ্যায় ছিলো ৬ জন।
প্রথমেই বিপ্লবীরা টেলিফোন অপারেটরকে ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর তারা টেলিফোন বোর্ডটিকে ভেঙ্গে চুরমার করে, তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে টেলিগ্রাফ মাস্টার বন্দুক নিয়ে ছুটে এলে বিপ্লবীরা তাকে গুলি করে। সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করার পর দলটি পুলিশ লাইনের দিকে মিলিত হবার জন্য অগ্রসর হয়।
পুলিশ অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ভারপ্রাপ্ত দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০ জন। এদের সকলেই সামরিক পোশাক পরে একজন কম্যান্ডারের নেতৃত্বে মার্চ করতে করতে পুলিশ অস্ত্রাগারের দিকে যাত্রা করে। শুরুতেই তারা অস্ত্রাগার রক্ষীকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর দরজা ভেঙে অস্ত্রাগারের মধ্যে প্রবেশ করে। অস্ত্রাগার থেকে প্রচুর রিভলভার, মাস্কেট বন্দুক এবং গুলি সংগ্রহ করে তারা পুলিশ লাইনের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে নিরস্ত্র পুলিশদের বিতাড়িত করে।
অন্যদিকে সামরিক অস্ত্রাগারের ভারপ্রাপ্ত দলটি পুলিশ ঘাঁটি আক্রমণের মতোই সেনার পোশাক পরে মার্চ করতে করতে অস্ত্রাগারের কাছে পৌঁছান। অস্ত্রাগার রক্ষী বিপ্লবী দলের কম্যান্ডারকে চ্যালেঞ্জ জানালে, কম্যান্ডার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষীকে গুলি করেন। এই সময় অন্য একজন রক্ষী ছুটে এলে, বিপ্লবীরা তাকেও গুলি করে হত্যা করে। সবশেষে গুলির শব্দে সার্জেন্ট মেজর ফ্যারেল সাহেব তার কোয়ার্টার থেকে ছুটে এলে বিপ্লবীরা তাকেও গুলি করে হত্যা করেন।
যাইহোক, এরপর বিপ্লবীরা অস্ত্রাগারের দরজা ভেঙ্গে অতি সন্তর্পনে ভিতরে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে বহু রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল এবং একটি লুইসগান লুন্ঠন করেন। কিন্তু এই সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপ্লবীরা একটি মারাত্মক ভুল করে বসেন। তারা অস্ত্র লুন্ঠন করলেন ঠিকই, কিন্তু সেগুলি চালানোর জন্য যে গুলি বারুদের প্রয়োজন, সেটি তারা বেমালুম ভুলে গেলেন। অস্ত্র লুন্ঠনের সময় তারাহুড়ো করে তারা গোলাবারুদের ঘরটির সন্ধান পেলেন না অথবা করলেন না। এই ভুলের জন্য লুন্ঠিত অস্ত্র গুলি বিশেষত রাইফেল ও মেসিনগান গুলো সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে থাকে।
বলা বাহুল্য, এই মারাত্মক ভুলটিই পরবর্তীকালে বিপ্লবীদের পরাজয়ের একটি বড়ো কারন হয়ে দাড়িয়েছিলো। যাইহোক, বিপ্লবীরা যখন অস্ত্র লুন্ঠন করছিলো তখন ঐ পথ দিয়ে একটি সরকারি কর্মচারীদের গাড়ি যাচ্ছিলো। বিপ্লবীরা বেপরোয়া ভাবে গাড়িটির ওপর গুলিবর্ষন করতে থাকে। এর ফলে একজন রেলের গার্ড, দুজন ট্যাক্সি ড্রাইভার ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির একজন কনস্টেবল নিহত হয়।
এদিকে অস্ত্র লুন্ঠন সম্পূর্ণ করে বিপ্লবীরা সেগুলিকে আলাদা একটি গাড়িতে তুলে মূল অস্ত্রাগারটিকে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সামরিক অস্ত্রাগার লুন্ঠন করার পর বিপ্লবীরা পূর্ব পরিকল্পনা মতো পুলিশ ঘাঁটির দিকে রওনা হবার জন্য অগ্রসর হয়। এই সময় ব্যারাক থেকে বারবার বিপ্লবীদের দিকে আক্রমণ ও গুলি করা হতে থাকে। কিন্তু সব আক্রমণ প্রতিহত করে বিপ্লবীরা শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঘাঁটিতে চলে আসতে সক্ষম হয়।
(৪.) অস্থায়ী স্বাধীন সরকার
ইতিমধ্যে পুলিশ ঘাঁটিতে অভিযান সম্পূর্ন হয়ে গেছে। অন্যান্য বিপ্লবীরাও সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এদিকে সামরিক ঘাঁটির দলটি সবার শেষে পুলিশ ঘাঁটিতে এসে উপস্থিত হয়। মাস্টারদা পুলিশ লাইনের টিলায় উঠে সবার কুশল জানতে চাইলেন। জানা গেলো সবাই নিরাপদেই আছে। এরই মধ্যে একটি দুঃসংবাদ পাওয়া গেলো যে সামরিক ঘাঁটিতে অস্ত্র শস্ত্র পাওয়া গেলেও, কোন কার্তুজ পাওয়া যায় নি।
তবে বিপ্লব যে মোটের ওপর সফল তা নিয়ে কোন সন্দেহ রইলো না। বিপ্লবের সাফল্যকে তুলে ধরার জন্য বিপ্লবীরা শূন্যে গুলি ছুড়ে "বিজয় মুহূর্ত" উদযাপন করলেন। এরপর মাস্টারদা সূর্যসেন বিপ্লবীদের সামনে এক বক্তৃতায় সামরিক বিপ্লবী গনতন্ত্রী সরকার গঠনের নির্দেশ দিলেন। বিপ্লবীরা সামরিক কায়দায় সারিবদ্ধ হয়ে এই অভ্যুত্থানের প্রধান নায়ক সূর্য সেনকে এই অস্থায়ী স্বাধীন সরকারের প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করলেন। সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান বিপ্লবীরা সামরিক কায়দায় অস্থায়ী স্বাধীন সরকারের প্রেসিডেন্টকে অভিবাদন জানান।
অস্থায়ী সরকারের প্রধান হিসাবে এরপর মাস্টারদা সূর্য সেন বিপ্লবীদের ভবিষ্যত কর্মপদ্ধতির একটি ঘোষনাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন -
(i.) চট্টগ্রাম বিপ্লবী সরকারের বাহিনী যে লড়াই শুরু করেছে, তা আরোও ব্যাপক ও তীব্র করে তুলতে হবে। অবশিষ্ট ভারতের স্বাধীনতার জন্য বাহিনীকে আরোও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
(ii.) আজকের জয়কে ধরে রাখবার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
(iii.) অভ্যন্তরীণ শত্রুদের দমন করতে হবে। সর্বোপরি, সমাজবিরোধী ও লুন্ঠনকারীদের শাসনে রাখতে হবে।
যাইহোক, দুটি অস্ত্রাগার দখল, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ ও রেলপথ ধ্বংস হওয়ার ফলে চট্টগ্রামের ইংরেজ সাহেবরা স্ত্রীপুত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর প্রায় ৩ দিন চট্টগ্রাম শহরটি বিপ্লবীদের অধিকারেই থাকে। সেখানে ব্রিটিশ শাসনের প্রায় অবলুপ্তি ঘটেছিলো।
কিন্তু এই সাফল্য বেশিদিনের জন্য ছিলো না। বিপ্লবীরা চট্টগ্রামকে বর্হিজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখবার জন্য রেল ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনায় একটি ভুল থেকে গিয়েছিলো। তারা চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধ করার কথা ভুলে গিয়েছিলেন। এর ফলে ইংরেজ সাহেবরা চট্টগ্রাম বন্দরে আশ্রয় নিয়েছিল, পরে সেখান থেকেই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলো।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের চতুর্থ তথা অন্তিম পর্বটিতে বিপ্লবীদের বিপর্যয় এবং বিপ্লবীদের প্রতি পাল্টা প্রতিরোধের ইতিহাসটি আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।
চলবে...
চতুর্থ ও অন্তীম পর্ব - বিপ্লবের শেষ পরিনতি।