উচ্চমাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 3)

উচ্চমাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায়ের আজকের তৃতীয় ও অন্তীম পর্বে আমরা অধ্যায়টির অবশিষ্ট তথ্য গুলি তুলে ধরছি। আশা করছি, অন্যান্য পর্ব গুলির মতো আজকের পর্বটিও আসন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের প্রস্তুতির ক্ষেত্রটি কে অনেকখানি সাহায্য করবে। 

উচ্চমাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 3)
উচ্চমাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 3)


(ক.) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জাপান, জাপান ও চিন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অগ্রসরতা, আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে জাপানের যোগসূত্র: সংক্ষিপ্ত তথ্য

  1. প্রথম চিন - জাপান যুদ্ধ হয়েছিলো - ১৮৯৪ - ৯৫ খ্রিঃ। 
  2. প্রথম চিন জাপান যুদ্ধে জাপানের কাছে চিন পরাজিত হয়েছিলো। 
  3. প্রথম চিন - জাপান যুদ্ধের পর ১৮৯৫ খ্রিঃ চিনের সঙ্গে জাপানের "শিমনোশেকির সন্ধি" স্বাক্ষরিত হয়। 
  4. দ্বিতীয় চিন - জাপান যুদ্ধ হয়েছিলো - ১৯৩৭ খ্রিঃ।
  5. রুশ জাপান যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো - ১৯০৪ খ্রিঃ। 
  6. রুশ জাপান যুদ্ধে রাশিয়া জাপানের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছিলো। 
  7. দ্বিতীয় চিন - জাপান যুদ্ধের পর জাপানে সামরিক শক্তি নির্ভর এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটে। একে " নিউ জাপানিজম" বলা হয়।
  8. ১৯১৫ খ্রিঃ জাপান চিনের কাছে একুশ দফা দাবি পেশ করেছিলো। 
  9. একুশ দফা দাবিকে "এশিয়ার মনরো নীতি" অর্থাৎ "এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া" বলে অভিহিত করা হয়।
  10. ওয়াশিংটন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো - ১৯২২ খ্রিঃ জাপান ও আমেরিকার মধ্যে। 
  11. জাপানের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী প্রধানমন্ত্রী টানাকা ১৯২৭ খ্রিঃ জাপানের সম্রাটের কাছে এক প্রতিবেদনে পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য জাপানের যুদ্ধনীতি গ্রহনের যে প্রস্তাব দেন, তা "টানাকা মেমোরিয়াল" নামে পরিচিত ।
  12. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন - হিদেকি তোজো (১৯৪১)।
  13. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের স্লোগান ছিলো - "এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া।" 
  14. জাপানের "এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া" - স্লোগানের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এশিয়া মহাদেশে জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তার করা। 
  15. ১৯৩১ খ্রিঃ জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমন করে দখল করে নেয়। 
  16. জাপান মাঞ্চুরিয়ার নতুন নামকরন করে - মাঞ্চুকুয়ো। 
  17. পূর্ব এশিয়ায় জাপান নিজ প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যে নীতি গ্রহণ করেছিলো, তাকে পূর্ব এশিয়ায় জাপানি মনরো নীতি বলা হয়। 
  18. জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিমারো কোনোয়ে ১৯৩৮ খ্রিঃ "পূর্ব এশিয়ার নতুন বিধান" ঘোষনা করেন। এই নীতির মূল কথা ছিলো এশিয়ায় পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটানো। 
  19. ১৯৪০ খ্রিঃ জাপান, ইতালি ও জার্মানির মধ্যে ত্রিপাক্ষিক অক্ষ চুক্তি বা রোম বার্লিন টোকিও অক্ষচুক্তি বা অ্যান্টি কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 
  20. ১৯৪১ খ্রিঃ জাপান ইন্দো চিন ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটি পার্ল হারবার আক্রমণ করে। 
  21. জাপান ১৯৪১ খ্রিঃ মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমা বর্ষন করলে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগদান করে। 
  22. আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিঃ ৬ ই আগস্ট জাপানের হিরোসিমায় এবং ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকিতে আনবিক বোমা বিস্ফোরণ করলে ১৯৪৫ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্ট জাপান মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। 
  23. হিরসিমা ও নাগাসাকিতে যে পারমাণবিক বোমা দুটি নিক্ষেপ করা হয়েছিলো তাদের নাম ছিলো - লিটিল বয় ও ফ্যাট ম্যান। 
  24. জাপানের সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় ১৯৪২ খ্রিঃ গঠিত হয়েছিলো - "ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি" বা আজাদ হিন্দ ফৌজ।
  25. আজাদ হিন্দ ফৌজের গঠন করেছিলেন - ক্যাপ্টেন মোহন সিং, প্রিতম সিং। 
  26. দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী স্বাধীনতাকামী ভারতীয়দের নিয়ে ১৯৪২ খ্রিঃ "ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স লিগ" গঠন করেছিলেন রাসবিহারী বসু। 
  27. সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ খ্রিঃ জার্মানি থেকে জাপানে আসেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহন করেন। 
  28. জাপান আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দুটি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র স্বাধীন দ্বীপ দুটির নামকরন করেন যথাক্রমে "শহীদ" ও "স্বরাজ"। 

(খ.) ইন্দোচিন : সংক্ষিপ্ত তথ্য 

  1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বর্তমান তিনটি স্বাধীন দেশ - ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া ও লাওসকে একত্রে ইন্দোচিন বলা হতো। 
  2. ইন্দোচিনে ফরাসি উপনিবেশ ছিলো বলে একে ফরাসি ইন্দোচিনও বলা হতো। 
  3. ইন্দোচিন প্রথমে ফরাসিদের অধীনে ছিলো। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ফরাসিদের পরাজিত করে ১৯৪১ খ্রিঃ ইন্দোচিন দখল করে নিয়েছিলো। 
  4. কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হবার পর ফ্রান্স পুনরায় ইন্দোচিন দখল করে নিয়েছিলো। 
  5. ভিয়েতনাম :- ভিয়েতনামের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন - হো চি মিন। 
  6. ১৯৪১ খ্রিঃ হো চি মিন ভিয়েতনামে "ভিয়েতমিন" দল প্রতিষ্ঠা করেন। 
  7. ভিয়েতমিন প্রথমে জাপানের বিরুদ্ধে, পরে ফান্সের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে ভিয়েতনামকে স্বাধীন করে। 
  8. ১৯৫৪ খ্রিঃ ১৩ মার্চ দিয়েন বিয়েন ফুর যুদ্ধে ফ্রান্সকে পরাজিত করে ভিয়েতনাম স্বাধীনতা লাভ করে। 
  9. ১৯৫৪ খ্রিঃ জেনেভা সম্মেলনে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। 
  10. জেনেভা সম্মেলনে স্বাধীনতা লাভের সময় ভিয়েতনাম উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিভক্ত হয়। পরে উত্তর ভিয়েতনামে হো চি মিনের নেতৃত্বে একটি কমিউনিস্ট সরকার এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে বাও দাই এর নেতৃত্বে একটি কমিউনিস্ট বিরোধী সরকার গঠিত হয়। 
  11. ভিয়েতনাম থেকে কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করার জন্য আমেরিকা সর্বত ভাবে চেষ্টা চালায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। 
  12. ১৯৭৬ খ্রিঃ উভয় ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে "সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অফ ভিয়েতনাম" নামে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। এর রাজধানী হয় - হ্যানয়। 
  13. কাম্বোডিয়া ও লাওস :-  জাপানের অধীনে থাকার সময় থেকেই কাম্বোডিয়ার রাজপরিবারের নেতৃত্বে সেখানে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। 
  14. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পনের পরে রাজা নরোদম সিহানুকের নেতৃত্বে ফরাসি অধিকারের বিরুদ্ধে তীব্র গন আন্দোলন শুরু হয়। 
  15. ফ্রান্সের অধীনে লাওসে সুফানুভঙ্গের নেতৃত্বে তীব্র জাতীয়তাবাদী গন আন্দোলন শুরু হয়েছিলো। 
  16. ১৯৫৪ খ্রিঃ জেনেভা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৫৪ খ্রিঃ কাম্বোডিয়া ও লাওসকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। 

(গ.) ইন্দোনেশিয়া : সংক্ষিপ্ত তথ্য 

  1. প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপরাষ্ট্র ছিলো - ইন্দোনেশিয়া।
  2. ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপসমূহের মধ্যে ছিলো - সুমাত্রা, জাভা, বালি, বোর্নিও। 
  3. ইন্দোনেশিয়াতে প্রথমে পর্তুগিজ ও পরে ইংরেজরা এসেছিলো। কিন্তু সপ্তদশ শতকের শেষদিকে ১৭৯৯ খ্রিঃ ইন্দোনেশিয়া থেকে পর্তুগিজ ও ইংরেজদের বিতাড়িত করে হল্যান্ডের ডাচ বা ওলন্দাজরা ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। 
  4. ওলন্দাজরা প্রায় ৩০০ বছর ধরে ইন্দোনেশিয়াতে ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়েছিলো। 
  5. অষ্টাদশ শতকের শেষদিক থেকে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ ওলন্দাজদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে। 
  6. ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী নেতা ড. সুকর্ন ১৯২৭ খ্রিঃ ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। 
  7. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি হল্যান্ড আক্রমণ করলে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ওলন্দাজের সম্পর্ক ক্ষীন হয়ে যায়। এই সুযোগে জাপান ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেয়। 
  8. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে জাপান পরাজিত হয়ে ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে। পরে পুনরায় ইন্দোনেশিয়াতে ওলন্দাজরা ফিরে আসে এবং ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন করে। 
  9. শেষপর্যন্ত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ খ্রিঃ ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। 
  10. ড. সুকর্ন স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং ড. মুহম্মদ হাত্তা প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। 
  11. স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী হয় - জাকার্তা। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post