উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 2)

 উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি নীচে তুলে ধরা হলো। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্বে আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ও ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি তুলে ধরেছি। 

আজকের দ্বিতীয় পর্বে আমরা "উনিশ শতকে ভারতে সমাজ সংস্কার আন্দোলন" সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি তুলে ধরবো। আশা করছি, আজকের পর্বের আলোচনাটি আসন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও পরীক্ষা প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে। 

উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 2)
উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 2)


উনিশ শতকে সংস্কার আন্দোলন :-

  1. পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতৃত্বে ভারতে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। 
  2. পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্দোলন সমাজের উচ্চশ্রেনির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সাধারন মানুষের সঙ্গে এর কোন যোগ ছিলো না। এজন্য ড. অনীল শীল একে "এলিটিস্ট আন্দোলন" বলে অভিহিত করেছিলেন।
  3. উনিশ শতকের দুটি সমাজ সংস্কার আন্দোলন হলো - সতীদাহ নিবারন আন্দোলন, বিধবা বিবাহ আন্দোলন। 

(ক.) রাজা রামমোহন রায় :-

  • জন্ম :- ১৭৭২ খ্রিঃ হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে। 
  • উপাধি :- ভারতীয় নবজাগরনের অগ্রদূত, ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ, আধুনিক ভারতের জনক, আধুনিক ভারতের ইরাসমাস, বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক, ভারতীয় সাংবাদিকতার জনক, ভারতের রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জনক, রাজা। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে রাজা উপাধি দান করেন।
  • রামমোহন প্রকাশিত পত্রিকা :- সম্বাদ কৌমুদি (১৮২১ - বাংলা ভাষায়), মিরাৎ উল আকবর (১৯২২ - ফারসি ভাষায়)
  • রামমোহন রচিত গ্রন্থ :- তুহাফৎ উল মুয়াহিদ্দিন (একেশ্বরবিদীদের প্রতি), বেদান্ত গ্রন্থ, গৌড়ীয় ব্যাকরন
  • ধর্মসংস্কার :- (১.) রামমোহন রায় একেশ্বরবাদী ধর্ম প্রচারের জন্য ১৮১৫ খ্রিঃ আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন এবং (২.) ১৮২৮ খ্রিঃ ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন, যা ১৯৩০ খ্রিঃ ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়।
  • সমাজসংস্কার :- (১.) রামমোহন সতীদাহ প্রথা বিলোপের জন্য আন্দোলন সংগঠিত করেন। (২.) তাঁর আন্দোলনের ফলে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিঃ ১৭ নং রেগুলেশন আইন দ্বারা ভারতে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।
  • শিক্ষা সংস্কার :- (১.) রাজা রামমোহন রায় ভারতে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের স্বপক্ষে জোরালো জনমত গঠন করেন। (২.) হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেন। (৩.) নিজ উদ্যোগে ১৮২২ খ্রিঃ কলকাতায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।(৪.) আলেকজান্ডার ডাফকে ও ডেভিড হেয়ারকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কাজে নানা ভাবে সহায়তা করেন। (৫.) ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের স্বপক্ষে ১৮২৩ খ্রিঃ লর্ড আমহাস্টকে চিঠি লেখেন।

(খ.) ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলন :-

  1. রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিঃ কলকাতায় "ব্রাহ্মসভা" প্রতিষ্ঠা করেন।
  2. ১৮৩০ খ্রিঃ ব্রাহ্মসভার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "ব্রাহ্মসমাজ"
  3. ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো - একেশ্বরবাদের চর্চা করা।
  4. ১৮৪৩ খ্রিঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেন।
  5. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজকে একটি ধর্ম আন্দোলনের রূপদান করেন এবং ব্রাহ্মসমাজে দীক্ষাদান প্রথা চালু করেন।
  6. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৩৯ খ্রিঃ "তত্ত্ববোধিনী সভা" প্রতিষ্ঠা করেন।
  7. তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র ছিলো -  "তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা"। 
  8. তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন - অক্ষয় কুমার দত্ত।
  9. ১৮৫৮ খ্রিঃ /মতান্তরে ১৮৫৭ খ্রিঃ কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেন
  10. কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনকে একটি সর্বভারতীয় আন্দোলন ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনের রূপদান করেছিলেন।
  11. ১৮৬২ খ্রিঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনকে "ব্রহ্মানন্দ" উপাধি দেন।
  12. সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রশ্নে কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধ ঘটে। এর পরিনামে ব্রাহ্মসমাজ দ্বিধা বিভক্ত হয়। যথা - ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ও আদি ব্রাহ্মসমাজ। 
  13. ১৮৬৬ খ্রিঃ কেশবচন্দ্র সেন ও তার অনুগামীরা প্রতিষ্ঠা করেন - "ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ।" 
  14. অন্যদিকে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্মসমাজ "আদি ব্রাহ্মসমাজ" নামে পরিচিত হয়।
  15. সমাজ সংস্কারের প্রশ্নে কিছুদিনের মধ্যেই কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের বিরোধ বাঁধে। এর পরিনামে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ আবার দ্বিধাবিভক্ত হয়। যথা - সাধারন ব্রাহ্মসমাজ ও নববিধান ব্রাহ্মসমাজ।
  16. ১৮৭৮ খ্রিঃ শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু "সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ" প্রতিষ্ঠা করেন।
  17. অন্যদিকে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বাধীন অবশিষ্ট ব্রাহ্মসমাজ ১৮৮০ খ্রিঃ "নববিধান ব্রাহ্মসমাজ" নামে পরিচিত হয়।
  18. ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে ১৮৭২ খ্রিঃ "তিন আইন" পাস হয়। এর দ্বারা বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং বিধবা বিবাহ ও অববর্ন বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়।

(গ.) ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন :-

  1. হিন্দু কলেজের তরুন শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে একদল তরুন ছাত্র উনিশ শতকে পুরাতন সব কিছুর সমালোচনা করে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। এদের আন্দোলনকেই "ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন" বা "নব্যবঙ্গ আন্দোলন" বলে।
  2. নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রানপুরুষ ছিলেন - হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও
  3. ডিরোজিওর ছাত্রদেরই ইয়ংবেঙ্গল বা ডিরোজিয়ান বলা হতো।
  4. ইয়ংবেঙ্গলদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন - কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, প্যারীচাঁদ মিত্র, রসিককৃষ্ণ মল্লিক।
  5. ইয়ংবেঙ্গলরা যাতে নিজেদের স্বাধীন মতামত তুলে ধরতে পারে সেইজন্য ডিরোজিও ১৮২৮ খ্রিঃ কলকাতার মানিকতলায় প্রতিষ্ঠা করেন - "একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন"। 
  6. ইয়ংবেঙ্গলদের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা :- পার্থেনন, এথেনিয়াম, হেসপেরাস, ক্যালকাটা লিটারারি গেজেট, জ্ঞানান্বেষন, এনকোয়ারার, বেঙ্গল স্পেকটেটর, হিন্দু পাইওনিয়ার।
  7. ইয়ংবেঙ্গলদের প্রতিষ্ঠিত সভা সমিতি :- একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন, সাধারন জ্ঞানোপার্জনী সভা, বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি।
  8. ডিরোজিওর লেখা কবিতা :- "ফকির অব জঙ্গিরা", "To India - My Native Land.
  9. ডিরোজিওকে বলা হয় উনিশ শতকে বঙ্গীয় নবজাগরনের ঝড়ের পাখি। 
  10. নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রধান কারন গুলি ছিলো :- (ক) এই আন্দোলন কলকাতা শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। (খ) দেশের সাধারণ মানুষ ও মুসলিম সমাজের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোন যোগ ছিলো না। (গ) তাদের চিন্তাধারা ছিলো নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক।

(ঘ.) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর :-

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫১ খ্রিঃ সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।
  2. স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা :- (১.) বিদ্যাসাগর বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০ টি মডেল স্কুল ও ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। (২.) ১৮৪৯ খ্রিঃ ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন কে হিন্দু ফিমেল স্কুল ( পরবর্তীকালে বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। (৩.) ১৮৭২ খ্রিঃ মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন (বিদ্যাসাগর কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন।
  3. বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থ :- বর্নমালা, কথামালা, বোধোদয়, নীতিবোধ, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, বর্নপরিচয়।
  4. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সর্বশুভকরী পত্রিকাতেই প্রথম তুলে ধরেন - বিধবা বিবাহ শাস্ত্রসম্মত।
  5. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫০ খ্রিঃ সর্বশুভকরী সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
  6. সর্বশুভকরী সভার মুখপত্র ছিলো - সর্বশুভকরী পত্রিকা
  7. বিদ্যাসাগর হিন্দু পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমান করেন - বিধবা বিবাহ শাস্ত্রসম্মত।
  8. ১৮৬৬ খ্রিঃ ২৬ শে জুলাই লর্ড ডালহৌসি ১৫ নং রেগুলেশন আইন দ্বারা বিধবা বিবাহ আইন পাশ করেন।
  9. ১৮৫৬ খ্রিঃ বাংলায় প্রথম বিধবা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।
  10. প্রথম বিধবা বিবাহ হয়েছিলো - সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে কালীমতি দেবীর।
  11. দরিদ্র বিধবাদের সাহায্যের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৭২ খ্রিঃ "হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
  12. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরকে "পুরুষ সিংহ" এবং অমলেশ ত্রিপাঠি "একজন ঐতিহ্যবাহী আধুকতার প্রবক্তা" বলে অভিহিত করেন।

(ঙ.) শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দ :-

  1. যতমত ততপথ ও শিব জ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেছিলেন - শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
  2. রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রকৃত নাম ছিলো - গদাধর চট্টোপাধ্যায়। 
  3. শ্রীরামকৃষ্ণ সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা ও আদর্শ প্রচার করেন। 
  4. শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শিষ্য ছিলেন - স্বামী বিবেকানন্দ।
  5. স্বামী বিবেকানন্দের প্রকৃত নাম ছিলো - নরেন্দ্রনাথ দত্ত।
  6. Man making Religion বা মানুষ তৈরির ধর্মের কথা বলেছিলেন - স্বামী বিবেকানন্দ।
  7. ১৮৯৩ খ্রিঃ স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগ দিয়ে হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরেন। 
  8. স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭ খ্রিঃ ১ লা মে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।
  9. স্বামী বিবেকানন্দের লেখা গ্রন্থ :- জ্ঞানযোগ, রাজযোগ, পরিব্রাজক, বর্তমান ভারত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post