উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি নীচে তুলে ধরা হলো। কয়েকটি পর্বে ধারাবাহিক ভাবে তথ্য গুলি আমরা তুলে ধরবো। আজকের প্রথম পর্বে আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ও পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি তুলে ধরছি। আশা করছি, আজকের আলোচনাটি আসন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও পরীক্ষা প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে।
উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 1) |
(ক.) মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব :-
- ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছিলো।
- ১৮২৯ খ্রিঃ "বঙ্গদূত" পত্রিকায় সর্বপ্রথম বাঙালি মধ্যবিত্তদের কথা বলা হয়।
- এ আর দেশাই ভারতের মধ্যবিত্তদের "আধুনিক ভারতের স্রষ্টা " বলে অভিহিত করেছিলেন।
- ঔপনিবেশিক আমলে - (ক) পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে সরকারি চাকুরি লাভ করে, (খ) ঔপনিবেশিক ভূমি ব্যবস্থায় জমি লাভ করে এবং (গ) ইংরেজ বনিকদের সহিত বানিজ্যিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল ও সংস্কৃতি মনস্ব নতুন শ্রেনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে, যাদেরকে "মধ্যবিত্ত শ্রেনী" নামে অভিহিত করা হয়।
- ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য গুলি ছিলো -(ক) মধ্যবিত্তদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিলো উচ্চবর্নের হিন্দু। (খ) মধ্যবিত্তরা ছিলো পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, (গ) এরা সংখ্যার দিক থেকে ছিলো কম এবং আর্থিক দিক থেকে ছিলো স্বচ্ছল। (ঘ) মধ্যবিত্ত শ্রেণী রাজনৈতিক দিক থেকে সচেতন ছিলো এবং বেশিরভাগ শহরাঞ্চলেই বসবাস করতেন।
(খ.) ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার :-
- ভারতে আরবি ও ফার্সি ভাষাচর্চা ও মুসলিম আইন চর্চার জন্য বড়োলাট ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮১ খ্রিঃ "কলকাতা মাদ্রাসা" প্রতিষ্ঠা করেন।
- ভারতে প্রাচ্য বিদ্যা চর্চার উদ্দেশ্যে স্যার উইলিয়াম জোন্স ১৭৮৪ খ্রিঃ "কলিকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি" প্রতিষ্ঠা করেন।
- সংস্কৃত ভাষা চর্চার উদ্দেশ্যে জোনাথন ডানকান ১৭৯১/৯২ খ্রিঃ বারানসীতে "সংস্কৃত কলেজ" প্রতিষ্ঠা করেন।
- ভারতে নিযুক্ত ইংরেজ অফিসার ও কর্মচারীদের ভারতীয় ভাষা ও রীতি নীতি সম্পর্কে শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ খ্রিঃ কলকাতায় "ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ" প্রতিষ্ঠা করেন।
- খ্রিষ্টান মিশনারি মার্শম্যান, ওয়ার্ড ও উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিঃ শ্রীরামপুরে "ব্যপটিস্ট মিশন" প্রতিষ্ঠা করেন।
- স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ ১৮৩০ খ্রিঃ কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন "জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন", যার বর্তমান নাম হলো স্কটিশ চার্চ কলেজ।
- রাজা রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিঃ কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন - "অ্যাংলো হিন্দু স্কুল"।
- ডেভিড হেয়ার, রাধাকান্ত দেব, বৈদনাথ মুখোপাধ্যায়, স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্টের উদ্যোগে ১৮১৭ খ্রিঃ কলকাতায় "হিন্দু কলেজ" প্রতিষ্ঠিত হয়।
- হিন্দু কলেজ ১৮৫৫ খ্রিঃ "প্রেসিডেন্সি কলেজ", এবং বর্তমানে "প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়" নামে পরিচিত।
- হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন না - রাজা রামমোহন রায়।
- ডেভিড হেয়ার ১৮১৮ খ্রিঃ "পটলডাঙ্গা একাডেমি প্রতিষ্ঠা" করেন, যা বর্তমানে হেয়ার স্কুল নামে পরিচিত।
- ডেভিড হেয়ার ১৮১৭ খ্রিঃ "কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি" এবং ১৮১৮ খ্রিঃ "কলকাতা স্কুল সোসাইটি" প্রতিষ্ঠা করেন।
- কলকাতা স্কুল সোসাইটি (১৮১৮) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো - কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
- কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির (১৮১৭) উদ্দেশ্য ছিলো - কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার স্কুল গুলিতে ইংরেজি ভাষায় পুস্তক রচনা ও বিতরন করা।
- গৌরমোহন আঢ্য ১৮২৮ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠা করেন - "ওরিয়েন্টাল সেমিনার"।
- ১৮১৩ খ্রিঃ চার্টার বা সনদ আইনে ভারতে শিক্ষা খাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারকে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
- ১৮১৩ খ্রিঃ চার্টার বা সনদ আইনে ভারতে শিক্ষা খাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারকে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হলে তা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন শিক্ষা খাতে ব্যায় করা হবে, তা নিয়ে যে বিতর্ক দেখা গিয়েছিলো, তাকে "প্রাচ্য - পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব" বা বিতর্ক বলে।
- প্রাচ্যবাদীদেরকে বলা হতো - ওরিয়েন্টালিস্ট।
- পাশ্চাত্যবাদীদেরকে বলা হতো - অ্যাংলিসিস্ট।
- প্রাচ্যবাদী প্রবক্তাদের মধ্যে ছিলেন - এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন।
- পাশ্চাত্যবাদী প্রবক্তাদের মধ্যে ছিলেন - আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন, মেকলে, রাজা রামমোহন রায়।
- ১৯২৩ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয় "কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন" বা "জনশিক্ষা কমিটি" গঠিত হয়।
- মেকলে মিনিট পেশ হয় - ১৮৩৫ খ্রিঃ।
- লর্ড বেন্টিঙ্কের আইন সচিব টমাস ব্যবিংটন মেকলে ভারতে প্রাচ্য ও দেশীয় শিক্ষাকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের স্বপক্ষে যে সরকারি প্রতিবেদন ১৮৩৫ খ্রিঃ পেশ করেন, তাকেই "মেকলে মিনিট" বা "মেকলের প্রতিবেদন" বলে।
- মেকলে মিনিটে বলা হয় ভারতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষা দেওয়া হলে প্রাকৃতিক নিয়মেই তা নীচের স্তরে থাকা নিন্মবিত্ত শ্রেনী গুলির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। মেকলে নির্দেশিত পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের এই নীতিকেই "চুঁইয়ে পড়া নীতি" বা "ক্রমনিন্ম প্ররিশ্রুত নীতি" বলে।
- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমলে ১৮৩৫ খ্রিঃ "কলকাতা মেডিকেল কলেজ" প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৮৩৯ খ্রিঃ লর্ড অকল্যান্ডের "অকল্যান্ড মিনিটে" প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অর্থ বরাদ্দের ঘোষনা করা হয়। অকল্যান্ড মিনিটের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রাচ্য - পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছিলো।
- বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিঃ যে শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনামা পেশ করেন, তাকে "উডের ডেসপ্যাচ" বলা হয়।
- উডের নির্দেশনামার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা কাঠামো গড়ে উঠেছিলো বলে উডের ডেসপ্যাচকে "ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে ম্যাগনা কার্টা বা মহাসনদ" বলা হয়।
- উডের নির্দেশনামার ভিত্তিতে ১৮৫৭ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন - স্যার জেমস উইলিয়াম কোলভিল।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য ছিলেন - স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
- ১৮৮২ খ্রিঃ হান্টার কমিশন গঠিত হয়।
- ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন ছিলো - হান্টার কমিশন।
- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আগ্রহের প্রধান কারন গুলি ছিলো - (ক) প্রচলিত দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও শিক্ষা লাভের পর কাজের অনিশ্চয়তা, (খ) ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় সরকারি চাকুরি লাভের সুযোগ। (গ) পাশ্চাত্যের জ্ঞান - বিজ্ঞান ও দর্শনকে জানার অনুসন্ধিৎসা।