উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি নিন্মে তুলে ধরা হলো। তথ্য গুলি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র তথ্য গুলি আমরা বিগত অধ্যায় গুলির মতোই ধারাবাহিক ভাবে বেশ কয়েকটি পার্টে ভাগ করে আলোচনা করবো।
উচ্চমাধ্যমিক পঞ্চম অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 1) |
(ক.) ঔপনিবেশিক আমলে বিভিন্ন ভারত শাসন আইন - মর্লে মিন্টো আইন, মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন, ১৯৩৫ এর ভারত শাসন আইন : সংক্ষিপ্ত তথ্য
- প্রথম ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৮৫৮ খ্রিঃ।
- ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৮ খ্রিঃ ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে।
- ১৮৫৮ খ্রিঃ ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটানো হয় এবং ভারত সরকারি ইংল্যান্ডের শসনাধীন হয়।
- ১৮৫৮ খ্রিঃ ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ভারতের গভর্নর জেনারেলকে "ভাইসরয়" উপাধি দেওয়া হয়।
- ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন - লর্ড ক্যানিং।
- দ্বিতীয় ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৮৬১ খ্রিঃ।
- ১৮৬১ খ্রিঃ দ্বিতীয় ভারত শাসন আইনকে "The Indian councils Act" বলা হয়।
- তৃতীয় ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৮৯২ খ্রিঃ ।
- মর্লে মিন্টো শাসন সংস্কার আইন বা চতুর্থ ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৯০৯ খ্রিঃ ।
- মর্লে মিন্টো শাসন সংস্কার আইন ১৯০৯ খ্রিঃ "কাউন্সিল আইন" নামেও পরিচিত।
- মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন প্রণয়নের সময় ভারত সচিব ছিলেন - জন মর্লে এবং বড়োলাট ছিলেন লর্ড মিন্টো।
- মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন অনুযায়ী ভারতে বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন - সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ, যিনি লর্ড সিনহা নামে পরিচিত ছিলেন।
- মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন অনুযায়ী ভারতে সর্বপ্রথম মুসলিমরা পৃথক নির্বাচনের অধিকার লাভ করে।
- মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন বা পঞ্চম ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৯১৯ খ্রিঃ।
- মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনকে মন্ট - ফোর্ড শাসন সংস্কার বা ১৯১৯ এর ভারত শাসন আইনও বলা হয়ে থাকে।
- মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের সময় ভারত সচিব ছিলেন - এডুইন স্যামুয়েল মন্টেগু এবং ভারতের বড়োলাট ছিলেন - লর্ড চেমসফোর্ড।
- ১৯১৯ খ্রিঃ মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন অনুযায়ী প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে "দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা" প্রবর্তন করা হয়।
- মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন অনুযায়ী ভারতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার সূচনা ঘটেছিলো।
- মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে সর্বপ্রথম প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো।
- ১৯৩৫ খ্রিঃ ভারতে ষষ্ঠ ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয়।
- ১৯৩৫ খ্রিঃ ভারত শাসন আইন অনুযায়ী কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রনয়ন করা হয়।
(খ.) রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড ও মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : সংক্ষিপ্ত তথ্য
- রাওলাট আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৯১৯ খ্রিঃ।
- রাওলাট আইনের প্রকৃত নাম ছিলো - Anarchical and Revolutionary Crimes Act (1919)
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে গন আন্দোলন ও বৈপ্লবিক আন্দোলন দমন করার জন্য ১৯১৯ খ্রিঃ ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে ৫ জন সদস্যকে নিয়ে রাওলাট কমিশন বা সিডিশন কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিঃ মার্চ মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা যে দমনমূলক আইন প্রণয়ন করে, তাই রাওলাট আইন নামে পরিচিত।
- রাওলাট আইনে বলা হয়েছিলো - (ক) সরকার বিরোধী যেকোন প্রচার দন্ডনীয় অপরাধ। (খ) সন্দেহভাজন যেকোন ব্যক্তিকে যেকোন সময় গ্রেপ্তার ও বন্দী করা যাবে। (গ) রাজনৈতিক মামলার নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হবে। (ঘ) ঐ আদালতে বিচারে জুরি ব্যবস্থা থাকবে না। (ঙ) ঐ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপিল করা যাবে না।
- (ক) রাওলাট আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের কোন উপায় বা ব্যবস্থা ছিলো না। (খ) এই আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি উচ্চতর আদালতে আপিল করতে পারতেন না।(গ) তাছাড়া নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য কোন জুরি ব্যবস্থাও স্বীকৃত ছিলো না। (ঘ) খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাওলাট আইন অনুযায়ী যেকোন অভিযুক্ত ভারতবাসী মাত্রই অপরাধী হয়ে গিয়েছিলো। তাছাড়া, (ঙ) রাওলাট আইন ভারতীয়দের সমস্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের অধিকারকেও কেড়ে নিতে চেয়েছিলো। (চ) এই আইন ভারতীয়দের সমস্ত মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের অপরাধি হিসাবে তুলে ধরেছিলো। - এইসব কারনে গান্ধীজি রাওলাট আইনের বিরোধিতা করেন।
- রাওলাট আইনের প্রতিবাদে গান্ধীজি ১৯১৯ খ্রিঃ রাওলাট সত্যাগ্রহের ডাক দেন।
- জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড হয় - ১৯১৯ খ্রিঃ ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে।
- জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সময় পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক ও সামরিক শাসনকর্তা ছিলেন - মাইকেল ও' ডায়ার।
- রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে যে জনসভা হয়, সেখানেই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
- জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করে প্রতিবাদ জানান।
- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিলো - ১৯২৯ খ্রিঃ ।
- ভারতে শ্রমিক অসন্তোষের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ খ্রিঃ হুইটলি কমিশন গঠন করেছিলো।
- ১৯২৯ খ্রিঃ ব্রিটিশ সরকার "শিল্প বিরোধ বিল" ও "জননিরাপত্তা বিল" প্রনয়ন করে।
- শিল্প বিরোধ বিলের দ্বারা ভারতে শ্রমিকদের ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষনা করা হয় এবং সালিশি কমিটির মাধ্যমে শ্রমিক - মালিক বিরোধের মিমাংসার কথা বলা হয়।
- জননিরাপত্তা বিলের দ্বারা ভারতে কমিউনিস্টদের দমনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত বিদেশীদের মধ্যে ছিলেন ৩ জন । এরা হলেন - ফিলিপ স্প্র্যাট, বেঞ্জামিন ফ্রান্সিস ব্রাডলি, লেস্টার হাচিনসন।
- ১৯২৯ - ১৯৩৩ খ্রিঃ পর্যন্ত মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা চলেছিলো।
- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন - মুজাফফর আহমেদ, শওকত উসমানি, শিবনাথ বন্দোপাধ্যায়, পি সি যোশি, এস এ ডাঙ্গে, ফিলিপ স্প্র্যাট, বেঞ্জামিন ফ্রান্সিস ব্রাডলি, লেস্টার হাচিনসন।
- ১৯৩৪ খ্রিঃ ভারতে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।
(গ.) জাতীয় রাজনীতির কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :-
- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা ঘটে - ১৯০৫ খ্রিঃ।
- বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন - লর্ড কার্জন ।
- মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয় - ১৯০৬ খ্রিঃ।
- ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় - ১৯১৬ খ্রিঃ।
- আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা ঘটে - ১৯৩০ খ্রিঃ ।
- প্রথম গোলটেবিল বৈঠক হয় - ১৯৩০ খ্রিঃ, দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক হয় - ১৯৩১ খ্রিঃ, তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক হয় - ১৯৩২ খ্রিঃ ।
- পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় - ১৯৩২ খ্রিঃ ।
- পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় - বি আর আম্বেদকরের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর।
- ইন্ডিয়া টুডে গ্রন্থটির লেখক হলেন - রজনীপাম দত্ত।
- নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস /AITUC গঠিত হয় - ১৯২০ খ্রিঃ।
- ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হয় - ১৯২৫ খ্রিঃ ।
- পিপলস কমিটি গঠিত হয়েছিলো - পাঞ্জাবে, রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য।
- সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপাল ছিলেন - পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের দুজন কংগ্রেস নেতা ছিলেন।
- রাওলাট আইনের প্রতিবাদে গান্ধীজি ৬ ই এপ্রিল সারা দেশব্যাপী রাওলাট ধর্মঘটের ডাক দেন।
- রাওলাট ধর্মঘট ছিলো প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট।