উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়টির সংক্ষিপ্ত তথ্য গুলিকে নীচে তুলে ধরা হলো। আশা করছি, বিগত পর্ব গুলির মতো আজকের পর্বটিও ছাত্রছাত্রীদের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের প্রস্তুতির জন্য কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো - ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে প্রবর্তিত বিভিন্ন আইন, আমলাতন্ত্র ও প্রশাসন।
উচ্চমাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় :সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 2) |
(ক.) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে প্রবর্তিত বিভিন্ন আইন :-
- রেগুলেটিং অ্যাক্ট প্রবর্তিত হয় - ১৭৭৩ খ্রিঃ।
- রেগুলেটিং অ্যাক্টের সম্পূর্ন নাম হলো - "ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আইন ১৭৭৩"।
- ১৭৭৩ খ্রিঃ রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী বাংলা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি নিয়ে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হয়।
- বাংলা প্রেসিডেন্সির গর্ভনরকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান নিযুক্ত করে তাকে "গভর্নর জেনারেল" উপাধি দেওয়া হয়।
- ১৭৭৩ খ্রিঃ রেগুলেটিং আইন দ্বারা ভারতে গভর্নর জেনারেল পদ সৃষ্টি করা হয়।
- বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন - ওয়ারেন হেস্টিংস।
- ১৭৭৩ খ্রিঃ রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী ১৭৭৪ খ্রিঃ কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়।
- কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন - স্যার এলিজা ইম্পে।
- পিটের ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৭৮৪ খ্রিঃ।
- ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিটের উদ্যোগে "পিটের ভারত শাসন আইন" প্রণয়ন করা হয়।
- পিটের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইংল্যান্ডে "বোর্ড অব কন্ট্রোল" গঠিত হয়।
- ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বানিজ্যের মেয়াদ ও কাজকর্মের ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ২০ বছর অন্তর যে আইন গুলি প্রবর্তন করা হয়েছিলো, সেগুলিকেই "চার্টার বা সনদ আইন" বলা হয়।
- মোট ৪ টি চার্টার আইন প্রণয়ন করা হয়। যথা - ১৭৯৩ খ্রিঃ চার্টার আইন, ১৮১৩ খ্রিঃ চার্টার আইন, ১৮৩৩ খ্রিঃ চার্টার আইন, ১৮৫৩ খ্রিঃ চার্টার আইন।
- প্রথম চার্টার আইন প্রণয়ন করা হয় - ১৭৯৩ খ্রিঃ।
- ১৮১৩ খ্রিঃ চার্টার আইনে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্যের অবসান ঘটানো হয় এবং ভারতে শিক্ষা খাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা খরচ করতে বলা হয়।
- ১৮৩৩ খ্রিঃ চার্টার আইনে বাংলার গভর্নর জেনারেলকে ভারতের গভর্নর জেনারেল উপাধি দেওয়া হয়।
- ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন - লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক।
- ভারতে সর্বশেষ চার্টার আইন ছিলো - ১৮৫৩ খ্রিঃ চার্টার আইন।
- ১৮৫৭ খ্রিঃ সিপাহী বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিঃ ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয়।
- ১৮৫৮ খ্রিঃ ভারত শাসন আইন অনুযায়ী - ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত সরাসরি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের শসনাধীন হয়।
- ১৮৫৮ খ্রিঃ ভারত শাসন আইনে গভর্নর জেনারেলকে "ভাইসরয়" উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
- ভারতের প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন - লর্ড ক্যানিং।
(খ.) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসন ব্যবস্থা :-
- ভারতে আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিসের জনক ছিলেন - লর্ড কর্নওয়ালিস।
- ১৭৯৩ খ্রিঃ লর্ড কর্নওয়ালিস "কর্নওয়ালিস কোড" প্রবর্তন করেন।
- লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিঃ এক আইন বিধি রচনা করে সাধারণ প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ ও বানিজ্য প্রশাসনকে পৃথক করেন। তার রচিত এই আইন বিধিকেই "কর্নওয়ালিস কোড" বলা হয়।
- ভারতে নিযুক্ত ইংরেজ সিভিলিয়ানদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রথমে ১৮০০ খ্রিঃ কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮০৫ খ্রিঃ লন্ডনের কাছে হার্টফোর্ডে ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরে হেইলেবেরিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
- ১৮৩৩ খ্রিঃ চার্টার আইনে সর্বপ্রথম ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় পাস করা বাধ্যতামূলক করা হয়।
- ১৮৫৩ খ্রিঃ চার্টার আইনে অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে কর্মচারী নিয়োগের কথা বলা হয়।
- সিভিল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে সিভিল সার্ভিস নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হতো।
- ১৮৫৫ খ্রিঃ প্রথম সিভিলিয়ান নিয়োগের জন্য লন্ডনে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
- ১৮৯২ খ্রিঃ প্রশাসনিক সংস্কার দ্বারা "ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের" সূচনা করা হয়।
- ১৯২২ খ্রিঃ একই সঙ্গে লন্ডনে ও ভারতের এলাহাবাদে ICS পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়। ওই সময় থেকে ক্রমে ICS পরীক্ষার সর্বোচ্চ পদে ইংরেজদের পেছনে ফেলে ভারতীয়রা এগিয়ে আসতে শুরু করেছিলো।
- সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করা প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি ছিলেন - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৩)।
- ভারতীয় আমলাতন্ত্রকে ব্রিটিশ শাসনের "ইস্পাত কাঠামো" বলা হতো।
- ভারতে আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার জনক বলা হয় - লর্ড কর্নওয়ালিসকে।
- সিন্ধু প্রদেশে আইরিশ পুলিশ বাহিনীর আদলে আধুনিক ধাঁচের পুলিশি ব্যবস্থা গঠন করেছিলেন - স্যার চার্লস নাপিয়ের।
- পুলিশি ব্যবস্থা সংগঠনের ক্ষেত্রে "সিন্ধু মডেল" পরবর্তীকালে অন্যান্য প্রদেশে চালু করা হয়।
- ভারতের সামরিক বিষয় তদারকির উদ্দেশ্যে "পিল কমিশন" গঠন করা হয়েছিলো।