উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (part - 1)

 পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়টির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি নীচে তুলে ধরা হলো। উল্লেখিত এই তথ্য গুলি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, উল্লেখিত তথ্য গুলি আসন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও, কাজে লাগবে এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের প্রস্তুতিকে সহজ করে তুলবে।

উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায় - পার্ট - ১
উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায় - পার্ট - ১


সপ্তম অধ্যায়টি যেহেতু বেশ খানিকটা বড়ো, তাই বেশ কয়েকটি পর্বে ভাগ করে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলিকে তুলে ধরবো। আজকে প্রথম পর্বের আলোচ্য বিষয় হল - ঠান্ডা লড়াই। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গিয়েছিলো, তাকেই ঠান্ডা লড়াই বা যুদ্ধ বলা হয়। ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়া উভয় রাষ্ট্রই নানা সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট তৈরি করে। এর ফলে এই দুটি রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে প্রায় সারা বিশ্বের দেশ গুলি পরস্পর বিরোধী শিবিরে বিভাজিত হয়ে যায়। 

(১.) ঠান্ডা লড়াই : সংক্ষিপ্ত তথ্য একনজরে :-

  1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতি সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দুই শক্তিজোটের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই "দ্বি - পাক্ষিক রাজনীতি" বা "দ্বিমেরুকরন" বলা হয়।
  2. ঠান্ডা লড়াই শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন - মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান
  3. ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯৪৭ খ্রিঃ "The cold War" গ্রন্থে সর্বপ্রথম ঠান্ডা লড়াই কথাটি ব্যবহার করেন।
  4. ঠান্ডা লড়াইকে "ছায়াযুদ্ধ" বলা হয়।
  5. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রজোট ও সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না হলেও, দীর্ঘকাল উভয় শক্তিজোটের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ছায়াযুদ্ধ চলতে থাকে। একেই "ঠান্ডা লড়াই" বলা হয়
  6. ঠান্ডা লড়াইকে একটি আদর্শবাদী সংঘাত বলে অভিহিত করেছিলেন - অধ্যাপক এফ এইচ হার্টম্যান, জন স্পেনিয়ার, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম লিটভিনভ।
  7. ঠান্ডা লড়াইয়ের সংশোধনবাদী ব্যাখ্যার প্রবক্তা ছিলেন - ডি এফ ফ্লেমিং, ডেভিড হরোউইজ, উইলিয়াম এ উইলিয়াম, লয়েড গার্ডনার। 
  8. সংশোধনবাদী ব্যাখ্যার প্রবক্তারা ঠান্ডা লড়াইয়ের জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেন। 
  9. ঠান্ডা লড়াইয়ের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার প্রবক্তা ছিলেন - গ্যাব্রিয়েল কলকো, কর্ডেল হাল।
  10. ঠান্ডা লড়াইয়ের বাস্তববাদী ব্যাখ্যার প্রবক্তা ছিলেন - হ্যানস্ জে মরগ্যানথো, লুই জে হ্যালে।
  11. হিটলার ১৯৪১ খ্রিঃ রাশিয়া আক্রমণ করেন।
  12. হ্যারি এস ট্রুম্যান ছিলেন - মার্কিন রাষ্ট্রপতি। 
  13. কুর্দ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো - ইরানে। 
  14. ইরানে "তুদে দল" গঠন করেছিলো - কমিউনিস্টরা।
  15. ফালটন বক্তৃতা দিয়েছিলেন - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। 
  16. ১৯৪৬ খ্রিঃ ৫ ই মার্চ, আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের ফালটনের ওয়েস্ট মিনস্টার কলেজে এক বক্তৃতায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল পূর্ব ইওরোপে রুশ আগ্রাসন সম্পর্কে আমেরিকাকে সতর্ক করেন। চার্চিলের এই বক্তৃতা "ফালটন বক্তৃতা" নামে পরিচিত। 
  17. মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান "ট্রুম্যান নীতি" ঘোষনা করেন - ১৯৪৭ খ্রিঃ ১২ ই মার্চ। 
  18. মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৭ খ্রিঃ ১২ ই মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় বলেন, বিশ্ব এখন মুক্ত গনতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী এই দুই পরস্পরবিরোধী আদর্শ ও জীবনচর্যায় বিভক্ত। আমেরিকা সর্বদা মুক্ত গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র গুলিকে কোন সশস্ত্র সংখ্যা লঘু গোষ্ঠীর আক্রমন থেকে রক্ষা করবে। এই নীতিকেই "ট্রুম্যান নীতি" বলা হয়। 
  19. ট্রুম্যান নীতি দ্বারা আমেরিকা সোভিয়েত রাশিয়ার প্রসার ও প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে। এজন্য ট্রুম্যান নীতিকে "বেষ্টনী নীতি" বলা হয়। 
  20. মার্শাল পরিকল্পনা ঘোষনা করা হয় - ১৯৪৭ খ্রিঃ ৫ ই জুন। 
  21. ১৯৪৭ খ্রিঃ ৫ ই জুন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি মার্শাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইওরোপের দারিদ্র্য দূর করার জন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গুলিতে অর্থ সাহায্যের যে পরিকল্পনা ঘোষনা করেন, তাকেই "মার্শাল পরিকল্পনা" বলা হয়। 
  22. মার্শাল পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিম ইওরোপের ১৬ টি দেশকে নিয়ে গঠিত হয় - "European Economic Co - Operation" বা EEC। ১৯৪৮ খ্রিঃ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় - Organisation for European Economic Co - operation বা OEEC
  23. সোভিয়েত রাশিয়া মার্শাল পরিকল্পনার বিপরীতে কমিউনিস্ট দেশগুলিকে অর্থনৈতিক সাহায্য করার জন্য ১৯৪৯ খ্রিঃ "কমিউনিস্ট ইকনমিক ইউনিয়ন" বা "কমিকন" পরিকল্পনা ঘোষনা করেছিলো। 
  24. ইয়াল্টা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় - ১৯৪৫ খ্রিঃ। 

(২.) ঠান্ডা লড়াইকালীন পরস্পর বিরোধী সামরিক জোট :- 

(ক.) আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোট :- 


(i.) NATO - 

সম্পূর্ণ নাম :- North Atlantic Treaty Organisation. 
সময়কাল :- ১৯৪৯ খ্রিঃ। 
সদস্য দেশ :- (১২ টি) বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোর্তুগাল, ব্রিটেন, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

(ii.) SEATO - 

সম্পূর্ণ নাম :- South East Asia Treaty Organisation. 
সময়কাল :- ১৯৫৪ খ্রিঃ। 
সদস্য রাষ্ট্র :- (৮ টি) আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপিনস। 

(iii.) CENTO - 

সম্পূর্ণ নাম :- Central Treaty Organisation. 
সময়কাল :- ১৯৫৫ খ্রিঃ। 
সদস্য রাষ্ট্র :- (৩ টি) ব্রিটেন, পাকিস্তান ও ইরান। 

(iv.) অন্যান্য চুক্তি /জোট :- 

  • ১৯৪৭ খ্রিঃ আমেরিকা লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে স্বাক্ষর করে RIO Treaty
  • আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে স্বাক্ষর করে ANZUS.

(খ.) রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট :- 

(i.) Warsaw :- 

সম্পূর্ণ নাম :- Warsaw Treaty Organization বা WTO. 
সময়কাল :- ১৯৫৫ খ্রিঃ। 
সদস্য রাষ্ট্র :- সোভিয়েত রাশিয়া, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, চিন। 

(ii.) COMECON :- 

সম্পূর্ণ নাম :- Council for Mutual Economic Assistance. 
সময়কাল :- ১৯৪৯ খ্রিঃ। 
সদস্য রাষ্ট্র :- এটি সামরিক জোট না হলেও, সামরিক জোটের সহায়ক হিসাবে কাজ করতো। রাশিয়ার প্রভাবাধীন কমিউনিস্ট দেশ গুলি এর সদস্য ছিলো। 

(৩.) কয়েকটি শব্দের সম্পূর্ণ নাম ও ধারনা :- 

  1. ERP - European Recovery Programme. (মার্শাল পরিকল্পনার নাম) 
  2. Containment policy - বেষ্টনী নীতির নাম। 
  3. EEC - European Economic Co - operation (মার্শাল পরিকল্পনায় সাহায্যকারী দেশ গুলিকে নিয়ে গঠিত জোট) 
  4.  OEEC - Organisation for European Economic Co - OPERATION. (মার্শাল পরিকল্পনায় সাহায্যকারী দেশ গুলিকে নিয়ে গঠিত জোট) 
  5. COMECON - Council for Mutual Economic Assistance. (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট) 
  6. NATO - North Atlantic Treaty Organisation (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট) 
  7. SEATO - South East Asia Treaty Organisation (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট) 
  8. CENTO - Central Treaty Organisation. (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট) 
  9. WTO - Warsaw Treaty Organization.( সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট)। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post