উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায় : সংক্ষিপ্ত তথ্য (Part - 2)

উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায়টির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি নীচে তুলে ধরা হলো। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্বে আমরা ঠান্ডা লড়াই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি তুলে ধরেছি। আজকের দ্বিতীয় পর্বটিতে আমরা ঠান্ডা লড়াই চলাকালীন যে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংকট গুলি দেখা গিয়েছিলো, সে গুলির সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্য গুলিকে তুলে ধরবো।

উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায় :সংক্ষিপ্ত তথ্য - Part - 2
উচ্চমাধ্যমিক সপ্তম অধ্যায় :সংক্ষিপ্ত তথ্য - Part - 2


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনায় প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে নানা আন্তর্জাতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিলো। যেমন -

  • বার্লিন সংকট, 
  • সুয়েজ সংকট, 
  • কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকট,
  • কোরীয় সংকট, 
  • ভিয়েতনাম সংকট, 
  • প্যালেস্টাইন সংকট ইত্যাদি।
এই সংকট গুলিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত নানা জটিলতা ও উত্তেজনাকে অতিক্রম করে এই সংকট গুলির অধিকাংশই নিরসন হয়। তবে বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্ব মানচিত্রে এই সংকটের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়ে যায়।
 

(১.) আন্তর্জাতিক সংকট : গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সংক্ষিপ্ত ধারনা

(ক.) বার্লিন সংকট :- 

  1. বার্লিন ছিলো - জার্মানির রাজধানী। 
  2. ১৯৪৫ খ্রিঃ ইয়াল্টা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জার্মান ভূখন্ড ও রাজধানী শহর বার্লিন - আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে চার ভাগে বিভক্ত হয়। 
  3. প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই নিজ অধিকৃত অঞ্চলে পৃথক শাসন ব্যবস্থা চালু করে। 
  4. রাশিয়া তার প্রভাবাধীন অঞ্চলে একটি কমিউনিস্ট সরকার গঠন করে। অন্যদিকে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তিনটি এলাকাকে একটি সুগঠিত অঞ্চলে পরিনত করে, পরে যার নাম হয় "পশ্চিম জার্মানি"। 
  5. ১৯৪৮ খ্রিঃ ২৩ শে জুন পশ্চিম জার্মানির ৩ টি পশ্চিমী দেশ "ডয়েটস মার্ক" (Deutsche Mark) নামে নতুন মুদ্রা প্রচলন করে। 
  6. রাশিয়া এই মুদ্রা সংস্কারের বিরোধীতা করে এবং ২৪ শে জুন বার্লিন প্রবেশের সড়ক পথ গুলিতে অবরোধ শুরু করে। একেই বলে "বার্লিন অবরোধ"। 
  7. রাশিয়ার বার্লিন অবরোধকালে আমেরিকা আকাশপথে বার্লিনে খাদ্য, ঔষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগান দেয়। এই ঘটনাকে বলা হয় - "Berlin Airlift"
  8. ১৯৪৯ খ্রিঃ ১২ মে রাশিয়া বার্লিন অবরোধ প্রত্যাহার করে। 
  9. বার্লিন অবরোধের ফলে জার্মানি পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। 
  10. পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনী পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে ১৯৬১ খ্রিঃ কংক্রিটের প্রাচীর নির্মান করে। 

(খ.) সুয়েজ সংকট :- 

  1. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে কম সময়ে যোগাযোগ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে "ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি" ১৮৫৯ খ্রিঃ সুয়েজ খাল খনন করে। 
  2. মিশরের মধ্য দিয়ে সুয়েজ খাল খনন করা হয় এবং সুয়েজ খালের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে ভূমধ্য সাগরকে যুক্ত করা হয়। 
  3. ১৮৬৯ খ্রিঃ সুয়েজ খাল দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়।
  4. সুয়েজ খাল কোম্পানির মালিকানা ছিলো ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হাতে। তবে মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য সুয়েজ খাল থেকে আদায়কৃত অর্থের খুব সামান্য অর্থ মিশর পেতো। 
  5. গামাল আবদেল নাসের ১৯৫৪ খ্রিঃ মিশরের ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৫৬ খ্রিঃ মিশরের রাষ্ট্রপতি হন। 
  6. ক্ষমতায় আসার পর নাসের মিশরের নীলনদের ওপর আসওয়ান বাঁধ নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ করেন। এজন্য বিশ্বব্যাঙ্ক মিশরকে ঋন দিতে রাজী হলেও, নাসের ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আরব জাতীয়তাবাদীদের উস্কানি দিলে বিশ্বব্যাঙ্ক মিশরকে ঋন দিতে অস্বীকার করে। 
  7. এজন্য নাসের ১৯৫৬ খ্রিঃ সুয়েজ খাল জাতীয়করন করেন। 
  8. সুয়েজ খাল জাতীয়করনে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েল খুবই অসন্তুষ্ট হয়। তারা গোপনে মিশর আক্রমনের পরিকল্পনা করে। কিন্তু আমেরিকার উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন, ফ্রান্স সৈন্য অপসারন করে ও যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়। 
  9. সুয়েজ সংকটে নাসেরের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাশিয়া মিশরকে সমর্থন করায় আরব জগতে রাশিয়ারও মর্যাদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। 
  10. মধ্য প্রাচ্যে রুশ আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার ১৯৫৭ খ্রিঃ "আইজেনহাওয়ার নীতি" ঘোষনা করেন। এতে সাম্যবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত মধ্য প্রাচ্যের যেকোন দেশকে মার্কিন সহায়তা দানের ঘোষনা করা হয়। 

(গ.) কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকট :- 

  1. কিউবা ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবথেকে বড়ো দ্বীপ ছিলো। 
  2. ১৮৯৮ খ্রিঃ কিউবা স্পেনের অধীনতা থেকে মুক্ত হলেও, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিউবাতে আমেরিকার একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। আর্থিক বিচারে কিউবা ছিলো একটি মার্কিন উপনিবেশ। 
  3. কিউবা ছিলো বিশ্বের সর্বাধিক চিনি উৎপাদনকারী দেশ। 
  4. আমেরিকার মদতে ১৯৫২ খ্রিঃ ফ্যালজেনিকো বাতিস্তা কিউবার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিলেন। পরে তাকে উৎখাত করে ফিদোল কাস্ত্রো ১৯৫৯ খ্রিঃ কিউবার ক্ষমতা দখল করেন। 
  5. ফিদেল কাস্ত্রো কিউবা থেকে মার্কিন প্রভাব দূর করার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো। তিনি কিউবাতে সব মার্কিন কল কারখানা গুলি জাতীয়করন করেন। 
  6. কিউবাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন কেনেডি আমেরিকার গুপ্তচর বাহিনী CIA মদতে বে অব পিগস উপসাগরের মধ্য দিয়ে কিউবার ওপর আক্রমণ চালায়। 
  7. এই সময় আমেরিকা কাস্ত্রো বিরোধীদের উস্কানি ও মদত দিলে কাস্ত্রো পুরোপুরি ভাবে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েন। 
  8. ১৯৬২ খ্রিঃ কাস্ত্রো রাশিয়া থেকে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র কিউবাতে মজুত করতে থাকেন। আমেরিকা এই খবর জানতে পেরে ১৯৬২ খ্রিঃ ২২ অক্টোবর, কিউবা দ্বীপ অবরোধ করে। 
  9. শেষপর্যন্ত তুরস্ক থেকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র তুলে নেবার শর্তে রাশিয়াও কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে রাজী হয়েছিলো। 
  10. কিউবা সংকটের উত্তেজনার পরই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সহজ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে টেলিফোনে "হটলাইন যোগাযোগ" স্থাপিত হয়। 

(ঘ.) কোরিয়া সংকট :- 

  1. কোরিয়া এশিয়া মহাদেশের পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিলো এবং জাপানের অধীন ছিলো। 
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯৪৫ খ্রিঃ ৩৮ ডিগ্রি সমাক্ষরেখা বরাবর উত্তর দিকে রাশিয়ার কাছে এবং দক্ষিণ দিকে আমেরিকার কাছে জাপান আত্মসমর্পণ করেছিলো। 
  3. পরে ৩৮ ডিগ্রি সমাক্ষরেখা বরাবর কোরিয়া উত্তর কোরিয়াদক্ষিন কোরিয়া - এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। 
  4. দক্ষিণ কোরিয়াতে মার্কিন অনুগত ড. সিং ম্যান রি একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হয় সিওল। 
  5. উত্তর কোরিয়াতে কমিউনিস্ট নেতা নেতা কিম ইল সুঙের নেতৃত্বে একটি কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়। এর রাজধানী হয় পানমুনজম। 
  6. ১৯৫০ খ্রিঃ ২৫ শে জুন রাশিয়ার মদতে উত্তর কোরিয়া ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করলে কোরিয়া যুদ্ধের সূচনা ঘটে। 
  7. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কোরিয়া যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করে। 
  8. কোরিয়া যুদ্ধে মার্কিন সেনাপতি ছিলেন ম্যাকআর্থার। তার নেতৃত্বে মার্কিন বাহিনী উত্তর কোরিয়া দখল করে চিন সীমান্তে উপনীত হলে চিন কোরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। 
  9. শেষপর্যন্ত ১৯৫৩  খ্রিঃ পানমুনজমে কোরিয়া যুদ্ধের যুদ্ধবিরতি এবং ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখাকে দুই কোরিয়ার সীমারেখা বলে রাশিয়া ও আমেরিকা মেনে নেয়। 

(ঙ.) ভিয়েতনাম সংকট :- 

  1. দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কাম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম কে নিয়ে "ইন্দো চিন" গঠিত হয়েছিলো। পুরো ইন্দোচিনেই ফরাসিদের অধীন ছিলো। 
  2. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই ইন্দোচিনে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়। 
  3. ভিয়েতনামের জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন হো চি মিন। 
  4. হো চি মিন ১৯৩০ খ্রিঃ ভিয়েতনামের শ্রমিক ও কৃষকদের নিয়ে "ভিয়েতনাম ওয়ার্কাস পার্টি" গঠন করেন, যা পরে ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টি নামে পরিচিত হয়। 
  5. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ফরাসিদের হটিয়ে দিয়ে ভিয়েতনাম দখল করে নেয়। এই সময় জাপানিদের হাত থেকে ভিয়েতনামকে মুক্ত করার জন্য হো চি মিন ১৯৪১ খ্রিঃ "লিগ ফর দি ইন্ডিপেন্ডেন্স ইন ভিয়েতনাম" বা "ভিয়েত মন "নামে এক সেনাদল গঠন করেন। 
  6. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পতনের পর ভিয়েতনামে হো চি মিনের নেতৃত্বে একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। 
  7. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স বলপূর্বক ভাবে ভিয়েতনামে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে বায়ো দাই এর নেতৃত্বে একটি পুতুল সরকার গঠন করে। 
  8. এর ফলে ভিয়েতনাম হো চি মিনের নেতৃত্বাধীন উত্তর ভিয়েতনাম ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন দক্ষিন ভিয়েতনাম এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো। 
  9. ফরাসি বাহিনী দীর্ঘ আট বছর ভিয়েতমিন বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায় ও শেষপর্যন্ত দিয়েন বিয়েন ফু তে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয়। 
  10. দিয়েন বিয়েন ফু ছিলো উত্তর ভিয়েতনামের একটি ছোট্ট গ্রাম। এখানে ফরাসি সেনাদের বেকায়দায় পেয়ে সেনাপতি গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতমিন সেনারা ফরাসিদের চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত করে। 
  11. শেষপর্যন্ত ইন্দোচিন সহ ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধানের জন্য ১৯৫৪ খ্রিঃ জেনেভা সম্মেলন আহ্বান করা হয়। এখানে কাম্বোডিয়া ও লাওসকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ভিয়েতনামকে ১৭ ডিগ্রি সমাক্ষরেখা ধরে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ভাগ করা হয়। 
  12. জেনেভা সম্মেলনে ঠিক হয়, গন ভোটের মাধ্যমে দুই ভিয়েতনামের একীকরন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
  13. হো চি মিনের নেতৃত্বে উত্তর ভিয়েতনাম গনভোটে রাজী হলেও, আমেরিকার মতদে দক্ষিণ ভিয়েতনাম গনভোটে রাজী ছিলো না। 
  14. আমেরিকার মদতে বায়ো দায়ের পর দক্ষিণ ভিয়েতনামে প্রেসিডেন্ট হন নেগো দিন দিয়েম। আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামকে কমিউনিস্ট প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখবার আপ্রান চেষ্টা চালায় ও দুই ভিয়েতনাম যুদ্ধে দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষ অবলম্বন করে। 
  15. ইতিমধ্যে স্বৈরাচারী দক্ষিণ ভিয়েতনামে দিয়েম সরকারের বিরুদ্ধে গন আন্দোলন শুরু হয়। সেখানে "ভিয়েত কং" নামে কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। 
  16. ভিয়েত কং বাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামের শহর গুলি দখল করে নেয়। উত্তর ভিয়েতনাম তাদের সাহায্য করে। জনরোষে দিয়েম সরকারের পতন ঘটে। আমেরিকা ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে সরে আসে। 
  17. ১৯৭৬ খ্রিঃ উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম রাষ্ট্রপতি হন - ফাম ভান দং। 

(চ.) প্যালেস্টাইন সমস্যা :- 

  1. পশ্চিম এশিয়ার ভূমধ্য সাগরের তীরে অবস্থিত ছিলো প্যালেস্টাইন বা ইজরায়েল। 
  2. যীশুখ্রীষ্ট্রের জন্মের আগে থেকেই প্যালেস্টাইন প্রথমে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ও পরে তুরস্ক সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলো। 
  3. যীশুখ্রীষ্ট্রের জন্মের আগে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের বসবাস ছিলো। কিন্তু পরে নানা কারনে তারা প্যালেস্টাইন ত্যাগ করে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য ইওরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এর ফলে প্যালেস্টাইনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্ষীন হয়ে পড়েছিলো। 
  4. ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে প্যালেস্টাইনে স্বাধীন ইহুদি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, তাকে বলে "জাইওনিস্ট আন্দোলন"।
  5. জাইওনিস্ট আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিনত করেন অস্ট্রিয়ার ইহুদি সাংবাদিক থিওডোর হারজল। 
  6. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আর্থার ব্যালফুর ১৯১৭ খ্রিঃ "ব্যালফুর ঘোষনা" করেন। এই ঘোষনায় প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। 
  7. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসের শান্তি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্যালেস্টাইন ব্রিটেনের "Mandated Teritory" বা বিশেষ আদেশপ্রাপ্ত অঞ্চলে পরিনত করা হয়। 
  8. ব্যালফুর ঘোষনা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের ইহুদি নিধন ও বিদ্বেষের ফলে হাজার হাজার ইহুদি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করে এবং গরিব আরবদের জমি ও বাড়িঘর কিনে নিতে থাকে। 
  9. এর ফলে প্যালেস্টাইনে আরবরা সংখ্যালঘুতে পরিনত হয় ও প্যালেস্টাইন ইহুদি অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিনত হয়।প্যালেস্টাইনে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। 
  10. এই পরিস্থিতিতে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ট্রান্স জর্ডন, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিশন - এই সাতটি রাষ্ট্র ১৯৪৫ খ্রিঃ "আরব লিগ" গঠন করে। 
  11. ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ খ্রিঃ প্যালেস্টাইন থেকে হাত গুটিয়ে নেয় এবং প্যালেস্টাইন সমস্যাটি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে তোলে। 
  12. জাতিপুঞ্জের বিশেষ কমিটি প্যালেস্টাইনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আরবরা তার বিরোধীতা করে। 
  13. ব্রিটেন প্যালেস্টাইন থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরদিনই ১৯৪৮ খ্রিঃ ১৪ ই মে তেল আভিভে স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। 
  14. ড. ওয়াইজম্যান ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং বেন গুরিয়ান প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। 
  15. স্বাধীন ইজরায়েলে রাষ্ট্র ঘোষনার পরেই আরব লিগের দেশ গুলির সঙ্গে ইজরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। 
  16. ১৯৪৮ - ৪৯ খ্রিঃ হয় প্রথম আরব - ইজরায়েল যুদ্ধ, ১৯৫৬ খ্রিঃ হয় দ্বিতীয় আরব - ইজরায়েল যুদ্ধ, ১৯৬৭ খ্রিঃ হয় তৃতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধ, ১৯৭৩ খ্রিঃহয় চতুর্থ আরব - ইজরায়েল যুদ্ধ। 
  17. আজও প্যালেস্টাইন সমস্যাকে কেন্দ্র করে আরব - ইজরায়েল সংঘর্ষের অবসান ঘটে নি। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post