গান্ধীজির ডাকে ১৯২১ খ্রিঃ ভারতে শুরু হয়েছিলো অহিংস অসহযোগ আন্দোলন।
এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো দুটি - এক,জনগনকে একত্রিত করে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সার্বিক ভাবে অসহযোগীতা করা এবং এই সম্মিলিত অসহযোগীতাকে একটি গন - আন্দোলনের রূপ দেওয়া।
দুই, জনগনের চূড়ান্ত অসহযোগীতার মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনকে অচল ও অকার্যকর করে দিয়ে ইংরেজদের ভারত ত্যাগে বাধ্য করা। গান্ধীজি ঠিক করে দিয়েছিলেন, সম্পূর্ণ অহিংস নীতিতে জনগন সরকারের সঙ্গে অসহযোগীতার কর্মসূচি গুলো পালন করে যাবে।
১৯২০ থেকে ১৯২২ খ্রিঃ পর্যন্ত ভারতে চলেছিলো অসহযোগ আন্দোলন পর্ব। এর একবছর আগে শুরু হওয়া খিলাফৎ আন্দোলনকে (১৯১৯) গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ফলে অসহযোগ আন্দোলনে এক অদ্ভুত গন উদ্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। মোটকথা, ভারতের সকল শ্রেণীর অংশগ্রহণের ফলে এই আন্দোলন অতি অল্প সময়েই একটি সর্বভারতীয় গন আন্দোলনের চরিত্র লাভ করে।
ভারতের অন্যান্য শ্রেনি গুলির মতো নারীরাও এই গন আন্দোলনে সামিল হন এবং আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা |
(ক.) নারী সমাজের প্রতি গান্ধীজির আহ্বান :-
ভারতের রাজনীতিতে গান্ধীজির উত্থানের পর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো। গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তিশালী ও কার্যকরী করে তোলার জন্য একে প্রকৃত অর্থে গন আন্দোলনে পরিনত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে জাতীয় আন্দোলনে সামিল করার সংকল্প নেন। প্রকৃতপক্ষে তার অবদানের ফলেই জাতীয় কংগ্রেস শিক্ষিত এলিট গোষ্ঠীর বাইরে সকল ভারতবাসীর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
গান্ধীর আন্দোলনে কোন গোপনীয়তার স্থান ছিলো না। আবার চরম আত্মত্যাগেরও তেমন প্রয়োজন ছিলো না। হিংসাও অপ্রয়োজনীয় ছিলো। বিপ্লবী আন্দোলনের মতো কঠিন, ঝুঁকিপূর্ণ, বিপদজনকও ছিলো না গান্ধী নির্দেশিত পথ ও মত। ফলে জাতীয় আন্দোলনে সরল ও নিরাপদ পথের সন্ধান পেয়ে দলে দলে বহু লোক দেশসেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
বলা বাহুল্য, জাতীয় আন্দোলনে গান্ধীর সরল পথ নারী সমাজকেও বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে। তার অহিংসা নীতি ও নিরাপদ পথ "নারী প্রকৃতির" সঙ্গে বিশেষ ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ন ছিলো বলে অনেক নারীই জাতীয় আন্দোলনে এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ ভাবে উৎসাহী হয়ে উঠে। গান্ধীর অহিংস নীতি, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পথের জন্য জাতীয় আন্দোলনে নারীদের যোগদানের প্রশ্নে তাদের পরিবার গুলি থেকেও সেভাবে কোন আপত্তি ওঠে নি।
মনে রাখতে হবে, ভারতের সমাজ ও রাজনীতিতে গান্ধীজির প্রভাব ছিলো ব্যাপক ও গভীর। গান্ধী নিজেও মনে প্রানে চাইতেন, ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো নারীরাও দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সামিল হোক। স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো আত্মত্যাগ। গান্ধী বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতিগত দিক থেকে পুরুষের চাইতে নারীর আত্মত্যাগের ক্ষমতা অনেক বেশি। ১৯১৩ খ্রিঃ দক্ষিন আফ্রিকাতে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় এবং ১৯১৯ খ্রিঃ ভারতে রাওলাট সত্যাগ্রহের সময় গান্ধীজি নারী জাতির নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের এই শক্তিকে উপলব্ধি করেছিলেন।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধীজি নারী সমাজের কাছে আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য আবেদন রাখেন। ১৯২১ খ্রিঃ এক প্রবন্ধে তিনি লেখেন - অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ জরুরি। গান্ধীজির আহ্বানের প্রচন্ড শক্তিকে উপেক্ষা করার সাহস পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরও ছিলো না। ফলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবরুদ্ধ দরজা খুব সহজেই নারীর কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়।
গান্ধীজির আবেদনের প্রচন্ড শক্তি সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের সীমা অতিক্রম করে সমাজের প্রান্তিক স্তরে অবস্থিত নারীমহলেও তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করে। এর ফলে সমাজের একেবারে প্রান্তিক স্তরে অবস্থিত যৌনকর্মী মহিলা ও দেবদাসীরাও উজ্জিবিত হয় এবং অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। অসহযোগ আন্দোলনের গঠনমূলক স্বদেশী কর্মসূচিতে তারা অংশগ্রহণ করে এবং নিজেদের পূর্ব পেশা ত্যাগ করে চরকা ও খাদির কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
ফলে গান্ধী এবং অসহযোগ আন্দোলন নারী সমাজের একটা বড়ো অংশের কাছে মুক্তির আস্বাদ নিয়ে আসে। অসহযোগ আন্দোলনে দলে দলে নারী সমাজ মূলত গান্ধীজির ডাকেই সামিল হন।
(খ.) নারীদের অংশগ্রহণের ধরন ও প্রকৃতি :-
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের ধরন ও প্রকৃতির মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় -
(১.) অসহযোগ আন্দোলনে ভারতীয় নারী সমাজ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে, তা ইতিপূর্বে কংগ্রেস পরিচালিত কোন গন আন্দোলন গুলিতেই লক্ষ্য করা যায় নি। মূলত গান্ধীর ডাকে এইসময় সমাজের সর্বস্তরের নারীরা জাতীয় আন্দোলনে সামিল হবার জন্য এগিয়ে আসে।
(২.) স্বদেশী আন্দোলনের মতো নারীরা পারিবারিক পরিমন্ডলের মধ্যে আবৃত থেকে আন্দোলনে অংশ নেন নি। তারা বাড়ির বাইরে এসে সক্রিয় ভাবে আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন।
(২.) গান্ধীজি প্রথমদিকে অবশ্য নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিরোধী ছিলেন। তিনি নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি স্থির করে দেন। ঠিক হয়, অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা নির্দিষ্ট কর্মসূচি পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বদেশী আন্দোলনের মতো অসহযোগ আন্দোলনেরও দুটি কর্মসূচি ছিলো - (ক.) নেতিবাচক কর্মসূচি, যেখানে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সার্বিক বয়কটের কথা বলা হয়। ঠিক হয় এই কর্মসূচির ডাকে আপামোর ভারতবাসী ব্রিটিশ সরকারের স্কুল, কলেজ, চাকুরি, বিদেশী খেতাব ও পন্য ত্যাগ করবে। অন্যটি হলো - (খ.) গঠনমূলক স্বদেশী, যেখানে দেশীয় শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়। ঠিক হয়, নারী সমাজ এই দুই কর্মসূচি পালন করবে।
(৩.) জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস পরিবারের সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত নারীরা এইসময় নারীদের আন্দোলনে সংগঠিত করার কাজটিতে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন।
(৪.) আরেকটি লক্ষ্যনীয় দিক হলো, অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে খিলাফৎ আন্দোলন যুক্ত থাকায় অনেক মুসলিম নারী অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হন।
(গ.) নারীদের ভূমিকার বিভিন্ন দিক :-
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকার দিক গুলি ছিলো বহুবিধ। যেমন -
(১.) বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ :-
অসহযোগ আন্দোলনে গান্ধীজি নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি স্থির করে দিলেও, নারী সমাজ সীমিত কর্মসূচিতে সন্তুষ্ট থাকতে চায় নি। তারা সীমিত কর্মসূচির বাইরে পুরুষদের মতোই আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণের দাবি তোলে।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় -
(i.)দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা পিকেটিং এ অংশ নেয় এবং বিক্ষোভ সমাবেশে সামিল হয়।
(ii.) ১৯২১ খ্রিঃ নভেম্বর মাসে প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত ভ্রমণের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মহিলা বোম্বাই শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
(iii.) ঐ বছরেই ডিসেম্বর মাসে কলকাতা শহরে বাংলার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী, বোন ঊর্মিলা দেবী এবং ভাইঝি সুনীতি দেবী প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে কারাবরন করেন। অহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনে এটিই ছিলো প্রথম নারী গ্রেপ্তারের ঘটনা। এর বিরুদ্ধে সারা বাংলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এর ফলে সরকার রাত্রি ১১ টায় মুক্তি দান করে।
(২.) তিলক স্বরাজ ফান্ডে সাহায্য :-
দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তীদেবী বাংলার বিভিন্ন জেলা পরিভ্রমন করে অসহযোগ আন্দোলনের আদর্শ প্রচার করেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মহিলারা দলে দলে "তিলক স্বরাজ ফান্ডে" গয়না ও টাকাকড়ি দান করেন।
তবে শুধু জাতীয় তহবিলে অর্থ সাহায্য নয়, ১০ ই ডিসেম্বর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলায় অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী। দেশবন্ধু গ্রেপ্তার হবার পর তার সম্পাদিত" বাংলার কথা" র সম্পাদনার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেন বাসন্তীদেবী। এছাড়া, ১৯২২ খ্রিঃ চট্টগ্রাম বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস অধিবেশনে সভানেত্রীত্ব করে তিনি দেশবন্ধুর আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির কথা প্রচার করেন।
বলা বাহুল্য, অসহযোগ আন্দোলনে বাসন্তীদেবীর সক্রিয় ও অগ্রনী ভূমিকায় দলে দলে বাংলার নারী সমাজ অনুপ্রাণিত হয় এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসে।
(৩.) নারী কর্মমন্দির প্রতিষ্ঠা :-
দেশবন্ধুর বোন ঊর্মিলাদেবীও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহিলাদের মধ্যে স্বরাজের আদর্শ প্রচার এবং চরকা খাদিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তিনি ১৯২১ খ্রিঃ "নারী কর্মমন্দির" প্রতিষ্ঠা করেন।
এখানে তাঁত,চরকা প্রভৃতি শিল্প শিক্ষা ছাড়াও মেয়েদের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কলকাতায় সভা সমিতি বেআইনি ঘোষিত হলে নারী কর্মমন্দিরের সদস্যগনই অসহযোগ আন্দোলনকে সংগঠিত করতে থাকে। হেমপ্রভা মজুমদার নারী কর্ম মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ঊর্মিলা দেবী অসুস্থ হয়ে পড়লে পরবর্তীকালে হেমপ্রভা মজুমদারই নারী কর্ম মন্দির এবং কলকাতার নানা সভা সমিতি পরিচালনার দায়িত্ব নেন।
(৪.) মফস্বলে নারী সমাজের অংশগ্রহণ :-
অসহযোগ আন্দোলন বাংলার মফস্বল অঞ্চলের নারীদের মধ্যেও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
(i.) ঢাকার গেন্ডারিয়ার আশালতা সেন "শিল্পাশ্রম" নামে মেয়েদের একটি বয়নকেন্দ্র গড়ে তুলে গান্ধীর স্বদেশী কর্মসূচিতে অংশ নেন।
(ii.) মেদিনীপুরের কাঁথিতে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বোর্ড বর্জনের উদ্দেশ্যে কর বন্ধের আন্দোলন শুরু হলে নারী সমাজ তাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
(iii.) বাংলার বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু মহিলা নেত্রী নারীদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচির সঙ্গে তাদের যুক্ত করেন। যেমন - সিলেটের সরলাবালা দেব, বালুরঘাটের প্রভা চট্টোপাধ্যায়, ময়মনসিংহের ঊষা গুহ, বর্ধমানের সুরমা মুখোপাধ্যায়।
(৫.) বাংলার বাইরে নারী সমাজের অংশগ্রহণ :-
বাংলার বাইরে বহু নারী অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন - সরোজিনী নাইড়ু (হায়দ্রাবাদ), কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় (কর্নাটক), মতিলাল নেহেরুর স্ত্রী স্বরূপ রানি, জওহরলাল নেহেরুর স্ত্রী কমলা নেহরু। এছাড়া জওহরলালের বোন বিজয়লক্ষ্মী ও কৃষ্ণা এবং নেহরু পরিবারের আরও দুই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া রামেশ্বরী নেহরু ও উমা নেহরু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
এদের মধ্যে সরোজিনী নাইডু, কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় এবং বিজয়লক্ষ্মী নেহেরু গান্ধীজির বহু কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন।
(৬.) মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ :-
জাতীয় আন্দোলনে গান্ধীজির আহ্বান মুসলিম নারী সমাজের অভ্যন্তরেও পৌঁছেছিলো। গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে খিলাফৎ আন্দোলনকে সংযুক্ত করায় মুসলিম নারীদের জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণের পথ অনেকটাই সুগম করেছিলো। তবে নারীরা যে দলে দলে যোগ দিয়েছিলো, এমনটা কিন্তু নয়।
মুসলিম নারী সমাজের পক্ষ থেকে "খিলাফৎ" আন্দোলনের আলি ভ্রাতৃদ্বয়ের মা আবিদা বানুবেগম এই আন্দোলনে যোগ দেন।
(ঘ.) নারীদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব :-
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ শুধু জাতীয় আন্দোলনকে বলিষ্ঠতা প্রদান করে নি, নারী প্রগতির দিকটিকেও ত্বরান্বিত করেছিলো। যেমন -
(১.) অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের ফলে নারীদের রাজনৈতিক চেতনার জাগরন ঘটে।
(২.) ১৯২২ খ্রিঃ অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলেও, নারী আন্দোলনের ধারাটি সচল থাকে। ১৯২৩ খ্রিঃ ঢাকাতে "দীপালি সংঘ" প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কাছুকাল পরে লতিকা ঘোষের নেতৃত্বে ও প্রভাবতী বসুর সভাপতিত্বে "মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ" প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৮ খ্রিঃ কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে একটি স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠিত হয়।
(৩.) অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কংগ্রেসকে শক্তিশালী করে তুলেছিলো।
(৪.) রাজনৈতিক আঙিনায় ও সমাজে নারীদের সম্মান, মর্যাদা ও গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।