প্রাক্ ঐতিহাসিক যুগ : সংক্ষিপ্ত তথ্য
(ক.) প্রাক্ ইতিহাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :-
(১.) যে সময়কালে ইতিহাসের কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় নি সেই সময়কালকেই বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
(২.) প্রাগৈতিহাসিক শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন - ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ পল তুর্নাল।
(৩.) Pre - History বা প্রাগৈতিহাসিক শব্দটি প্রথম ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করেন - কানাডীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ড্যানিয়েল উইলসন।
(৪.) রবার্ট ব্রুস ফুটে কে ভারতের "প্রাক্ ঐতিহাসিক যুগের পিতা" বলা হয়। তিনি দক্ষিণ ভারতে অনেক গুলি প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রত্নকেন্দ্র আবিষ্কার করেন। ১৮৬৩ খ্রিঃ তিনিই সর্বপ্রথম প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ার "পল্ল ভারম হাতের কুঠার" আবিষ্কার করেন।
(৫.) প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস রচনার প্রধান ও একমাত্র উপাদান হলো - প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, যার মধ্যে অন্যতম হলো আদিম মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার, জীবাশ্ম, গুহাচিত্র ইত্যাদি।
(৬.) প্রাগৈতিহাসিক যুগে আদিম মানুষের আবিষ্কৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ছিলো - হাত কুঠার।
(৭.) হাত কুঠার ছিলো - আদিম মানুষের তৈরি প্রথম প্রকৃত হাতিয়ার। এটি দুদিকেই ধরা যেতো। হাত কুঠার মাংস কাটার কাজে ব্যবহার করা হতো।
(৮.) প্রাগৈতিহাসিক যুগে আদিম মানুষের প্রথম পোষ্য বা গৃহপালিত পশু ছিলো - কুকুর।
(৯.) প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদাহরন হলো - ভারতের মেহরগড় সভ্যতা, কোটদিজি সংস্কৃতি, ফ্রান্সের অ্যাবেভিলীয় সংস্কৃতি।
(১০.) প্রাগৈতিহাসিক যুগকে পাথরের হাতিয়ারের বিবর্তন অনুযায়ী ঐতিহাসিকরা ৩ টি ভাগে ভাগ করেন। যথা - প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগ।
(খ.) প্রাচীন প্রস্তর যুগ :-
(১.) প্রাচীন প্রস্তর যুগ প্লেইস্টোসিন যুগের অন্তর্গত ছিলো।
(২.) আজ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে প্লেইস্টোসিন যুগ শুরু হয়েছিলো। এই সময় পৃথিবীর প্রায় ৩০% জায়গা বরফে ঢাকা ছিলো।
(৩.) প্রাচীন প্রস্তর যুগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিলো -
- এই সময় মানুষ ছিলো যাযাবর
- তারা দলবদ্ধ ভাবে থাকতো ও ঘুরে বেড়াতো।
- এই সময়ে তারা বড়ো বড়ো পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতো।
- পাথরের অস্ত্র গুলি ছিলো ভোঁতা, ভারী ও অমসৃন।
- এই সময় প্রচন্ড ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে আদিম মানুষ গাছের ছাল ও পশুর চামড়া পরিধান করতো,
- এছাড়া ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য তারা গুহাতে আশ্রয় নিতো।
- এই সময় মানুষ ছিলো খাদ্য সংগ্রহকারী।
- উত্তর ফ্রান্সের সোন নদী উপত্যকার অ্যাবেভিল নামক স্থানে, যা "অ্যাবেভিলীয় সংস্কৃতি" নামে পরিচিত,
- ভারতের পাঞ্জাবের সোয়ান নদীর অববাহিকায়, যা "সোয়ান সংস্কৃতি" নামে পরিচিত,
- মাদ্রাজের নীলগিরি অঞ্চলের "মাদ্রাজ সংস্কৃতি"।
- এছাড়া, কর্নাটকের কৃষ্ণা নদীর উপত্যকায় বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে।
যা জানতো না :-
- আগুন জ্বালতে জানতো না।
- খাদ্য উৎপাদন করতে জানতো না।
- আগুনের ব্যবহার জানতো না।
- ধাতুর ব্যবহার জানতো না।
(গ.) মধ্য প্রস্তর যুগ :-
- এই সময় আদিম মানুষ পাথরের হাতিয়ার গুলিকে হালকা, ছোটো ও ধারালো করতে শেখে। হাতিয়ারের ক্ষুদ্র আকারের জন্য মধ্য প্রস্তর যুগকে মাইক্রোলিথিক বা "ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ" বলা হয়।
- এই সময়ে গরম পড়ার কারনে আদিম মানুষ নদীর কাছাকাছি এলাকায় বসতি স্থাপন শুরু করে।
- এই সময় আদিম মানুষ পাথর ছাড়াও হাড়গোড় দিয়ে হাতিয়ার বানাতে শেখে।
- মধ্য প্রস্তর যুগের হাড়ের তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ছিলো - হারপুন, যা নদীতে মাছ শিকারের জন্য তারা ব্যবহার করতো।
- এই সময় মানুষ মাটির পাত্র তৈরি করতে শিখেছিলো এবং খাবার রান্না করতেও শিখেছিলো।
- ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্য প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ঊড়িষ্যা, রাজস্থান, গুজরাট, কর্নাটক, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্য গুলিতে।
- ব্রিটেন ও ডেনমার্কের মেগলিমস সংস্কৃতি,
- বাল্টিক সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা কঙ্গেমস সংস্কৃতি,
- স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের এরতেবোলে সংস্কৃতি, ইজরায়েলের নাতুফিয়ান সংস্কৃতি হলো মধ্য প্রস্তর যুগের উদাহরন ।
(ঘ.) নব্য প্রস্তর যুগ :-
- এযুগে মানুষ প্রথম ফসল ফলাতে অর্থাৎ কৃষিকাজ করতে শেখে।
- কৃষি আদিম মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটায়।
- ফলে মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদকে পরিনত হয়।
- কৃষি মানুষের খাবারের চিন্তা দূর করেছিলো। মানুষকে দিয়েছিলো পর্যাপ্ত অবসর। অবসর সময়ে মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়। এর ফলে তারা -
- চাকার আবিষ্কার করে।
- আগুনের আবিষ্কার করে।
- তুলো,শন ও ভেড়ার লোম থেকে কাপড় বুনতে শেখে।
- মৃৎশিল্পের অভাবনীয় উন্নতি করে।
- পাথরের অস্ত্র গুলিকে আরোও তীক্ষ্ণ, ছুঁচালো ও হালকা করে।
- ভাষার বিকাশ ঘটায়।
- বাড়িঘর তৈরি করে।
- পশ্চিম এশিয়ার ইজরায়েল ও উত্তর ইরাকে।
- দক্ষিণ পূর্ব ইওরোপে।
- ভারতের মেহরগড় সভ্যতায়।