ইতিহাসের উপাদান : জীবাশ্ম


ইতিহাসের উপাদান : জীবাশ্ম
ইতিহাসের উপাদান : জীবাশ্ম 


(ক.) জীবাশ্মের সংজ্ঞা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় : - 

 (১.) প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস রচনার প্রাথমিক উপাদান হলো জীবাশ্ম বা ফসিল

(২.) লাতিন শব্দ ফসাস (Fossus) থেকে ফসিল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে, যার বাংলা অর্থ হল - জীবাশ্ম (জীব +অশ্ব বা পাথর)। 

(৩.) নরম পাললিক শিলার ভাঁজে দীর্ঘকাল তাপে ও চাপে উদ্ভিদ বা প্রানীর দেহাবশেষের প্রস্তরীভূত অংশকেই জীবাশ্ম বা ফসিল বলা হয়।

(৪.) সাধারনত নদী উপত্যকায় পার্বত্য অঞ্চলের পাললিক শিলাস্তরে সবথেকে বেশি জীবাশ্ম পাওয়া যায়। 

(৫.) প্লাবন, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভূপৃষ্ঠ ওলট পালট হবার সময় অনেক জীবজন্তু ও গাছপালা চাপা পড়ে তাপে ও চাপে শিলায় পরিনত হয়। এই ভাবেই জীবাশ্ম তৈরি হয়। প্লেইস্টোসিন বা তুষার যুগে এইভাবে প্রচুর জীবাশ্ম তৈরি হয়। 

(৬.) পৃথিবীতে পর পর চারবার হিমযুগ বা তুষার যুগ এসেছিলো। ঐ সময় আদিম মানুষ সহ অনেক জীবজন্তু চাপা পড়ে জীবাশ্মে পরিনত হয়েছিলো। 

(৭.) জীবাশ্ম থেকে প্রাগৈতিহাসিক কালের পরিবেশ, প্রানী জগতের বিবর্তন, জলবায়ুর পরিবর্তন, বিভিন্ন জীবজন্তু ও উদ্ভিদের পরিচয় পাওয়া যায়।

(৮.) প্রাগৈতিহাসিক যুগে আদিম মানুষের দৈহিক বিবর্তনের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে জীবাশ্মই হলো একমাত্র উপাদান।

(৯.) বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি মেনে ফসিল বা জীবাশ্মের তথ্য সংরক্ষনকে "ফসিল রেকর্ড" বলা হয়। 

(১০.) আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ার ওল্ডুভাই গিরিখাতে জীবাশ্মের নিদর্শন থেকে জানা যায়, আফ্রিকার মাটিতেই প্রথম মানুষের উদ্ভব হয়েছিলো।

(১১.) প্রাচীন মানুষের অনেক জীবাশ্মই বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল - 

  • আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস
  • চিনের পিকিং মানব
  • ইন্দোনেশিয়ার জাভা মানব
  • জার্মানির নিয়ান্ডারথাল মানব
  • ভারতের রামাপিথেকাস। 

(খ.) জীবাশ্মের প্রাচীনত্ব নির্নয় পদ্ধতি :- 

(১.) চার্লস লয়েল জীবাশ্মের কালনির্নয়ের জন্য বিখ্যাত।

(২.) জীবাশ্মের কাল নির্নয়ের জন্য রেডিও কার্বন - ১৪ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। 

(গ.) আদিম মানুষের বিভিন্ন জীবাশ্মের নাম ও পরিচয় :-

  • ইজিপ্টোপিথেকাস :- ইজিপ্টোপিথেকাসের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে আফ্রিকা ও মিশরে। এরা ছিলো নরবানরের পূর্বপুরুষ। এদের কেবলমাত্র দাঁত ও মুখের চোয়ালের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।
  • ড্রায়োপিথেকাস :- ড্রায়োপিথেকাসের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ফ্রান্সে। এরা ছিলো বৃক্ষবাসী বানর। এটি ছিলো আদিম মানুষের চোয়ালের জীবাশ্ম। 
  • রামাপিথেকাস :- রামাপিথেকাসের জীবাশ্মের নিদর্শন পাওয়া গেছে ভারতের হিমালয় পর্বতে, পাকিস্তান, পূর্ব আফ্রিকা ও হাঙ্গেরিতে
  • অস্ট্রালোপিথেকাস :- এটি ছিলো আদিম মানুষের সম্পূর্ণ মাথার খুলির জীবাশ্ম। পূর্ব ও দক্ষিণ অফ্রিকায় এই ধরনের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।
  • লুসি :- দক্ষিণ আফ্রিকার ইথিওপিয়ার হাদার নামক স্থানে একটি শিশু কন্যার পূর্নাঙ্গ জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এই জীবাশ্মটির নামকরন করা হয় লুসি। 

(ঘ.) জীবাশ্ম কোথায় বেশি পাওয়া গেছে? 

প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ নদীর নিকটবর্তী অঞ্চলে বাস করতো এবং পশু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই কারনে নদী উপত্যকা থেকে সবথেকে বেশি জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। 

(ঙ.) ইতিহাসের উপাদান হিসাবে জীবাশ্ম কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? 

(১.) প্রাগৈতিহাসিক কালে আদিম মানুষের দৈহিক বিবর্তন ও রূপান্তরের ইতিহাস একমাত্র জীবাশ্ম থেকেই জানতে পারা যায়। 

(২.) প্রাগৈতিহাসিক কালের পরিবেশে কি ধরনের প্রানী বা উদ্ভিদের অস্তিত্ব ছিলো, তা একমাত্র জীবাশ্ম থেকেই জানা সম্ভব হয়। সর্বোপরি, 

(৩.) জীবাশ্ম অবিকৃত ভাবে ঐতিহাসিক তথ্য ও সত্যকে তুলে ধরে। জীবাশ্ম হলো লক্ষ কোটি বছরের দেহাবশেষের জীবন্ত ছাপ বা অবশেষ। তাই ইতিহাসের অন্যান্য উপাদান থেকে জীবাশ্মের গুরুত্ব ছিলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য। জীবাশ্ম হলো জীবের জীবন্ত উপস্থিতির সাক্ষ্য তথ্য প্রমাণ। 


মক টেস্ট 

মক টেস্ট দেওয়ার জন্য নিন্মলিখিত প্রশ্ন গুলির উত্তর দাও :-

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post