ইংরেজি "Pre - History" কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো প্রাক্ ইতিহাস। প্রাচীন যুগকে ঐতিহাসিকরা লিখিত উপাদানের প্রাপ্তি ও তার পাঠোদ্ধারের ভিত্তিতে ৩টি পর্বে ভাগ করেছেন। যথা -
- (১.) প্রাক্ ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক)
- (২.) প্রায় ইতিহাস ও
- (৩.) ইতিহাস।
আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় প্রাক্ ইতিহাস যুগকে নিয়ে।
(১.) প্রাক্ ইতিহাস যুগের সংজ্ঞা ও ধারনা :-
"প্রাক্" শব্দটির অর্থ হলো আগে। "ইতিহাস" শব্দটির অর্থ হলো অতীত বৃত্তান্ত। একসঙ্গে "প্রাক্ - ইতিহাস" শব্দটির অর্থ হলো ইতিহাসের আগের বৃত্তান্ত। যে সময় থেকে মানুষ লিখতে শিখেছে, সেই সময় থেকেই ইতিহাসের সূচনা হয়েছে বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ প্রাক্ ইতিহাস বলতে ঐতিহাসিক যুগের আগের সময়কালের ইতিবৃত্তকে বোঝায়।
আরোও সহজ ভাষায় বলতে গেলে - "যে সময়কালে ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় নি, সেই সময়কালের ইতিবৃত্তকেই "প্রাক্ ইতিহাস" বলা হয়" ।
(২.) প্রাক্ ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য :-
প্রাক্ ইতিহাসের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আছে।
(ক.) প্রাক্ ইতিহাস হলো মানব সভ্যতার সূচনা লগ্নের ইতিহাস। এটি হলো সেই সময়ের ইতিহাস যখন মানুষ তার মনের ভাব লিখিত অক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে শেখে নি।
(খ.) এই সময়কালে ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় নি।
(গ.) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর ভিত্তি করেই এই সময়কালের ইতিহাস রচনা করা হয়।
(ঘ.) প্রত্নতাত্ত্বিক বা বস্তুগত উপাদানের সাহায্যে ইতিহাস রচনা করা হয় বলে প্রাক্ ইতিহাস চরিত্রের দিক থেকে অনেকটাই আবেগবর্জিত ও নিরপেক্ষ হয়ে থাকে।
(৩.) প্রাক্ ইতিহাসের উদাহরণ
মানব সভ্যতার সূচনা লগ্নে আদিম মানুষের উদ্ভব, বিবর্তন ও পরিযানের ইতিহাস "প্রাক্ ইতিহাসের" অন্তর্ভুক্ত। প্রাক্ ইতিহাসে আদিম মানুষের যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে রূপান্তরের পর্ব গুলি আলোচনা করা হয়। এককথায় কোন দেশের লিপি উদ্ভাবনের আগের সময়কালের ইতিহাসই "প্রাক্ ইতিহাসের" মধ্যে পড়ে।
ভারতের ইতিহাসের ক্ষেত্রে মেহরগড় সভ্যতা প্রাক্ ইতিহাস পর্বের মধ্যে পড়ে।
(৪.) প্রাক্ ইতিহাস শব্দের প্রথম প্রয়োগ ও ব্যবহার :-
প্রাক্ ইতিহাস শব্দটির প্রথম ধারনা দেন ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক পল তুর্নাল। ১৮৩০ দশকে দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি প্রাচীন গুহায় প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রীর সময়কালের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি প্রথম "অ্যান্টি হিস্টোরিক" (Anti Historique) শব্দটির প্রয়োগ করেন। লিখন কৌশল আবিষ্কারের আগের সময়কালকে বোঝাবার জন্য তিনি এই শব্দবন্ধের ব্যবহার করেন। এই সময় (১৮৩৩ খ্রিঃ) পৃথিবীর মানব সভ্যতার ইতিহাসকে লিপির প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির ভিত্তিতে তিনি "প্রাগৈতিহাসিক" (প্রাক্ ইতিহাস) এবং "ঐতিহাসিক" এই দুটি পর্বে ভাগ করেন।
এর কয়েকবছর পরে ১৮৫১ খ্রিঃ ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ড্যানিয়েল উইলসন তার একটি গ্রন্থে প্রথম ইংরেজিতে "Pre - Historic" বা "প্রাক্ ইতিহাস" শব্দটি প্রয়োগ করেন। এর পর থেকেই ইতিহাস চর্চায় "pre - History" শব্দটি প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
(৫.) প্রাক্ ইতিহাস শব্দে আপত্তি ও বিতর্ক :-
প্রাক্ ইতিহাস শব্দটি নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক আপত্তি জানান। ঐতিহাসিক এম. সি বার্কিট তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, প্রাক্ ইতিহাস শব্দটি একটি ভুল এবং অর্থহীন শব্দ। এর ধারনাটিও গোলমেলে।
কারন "প্রাক্ ইতিহাস" বলতে সাধারন ভাবে বোঝায় ইতিহাসের আগের সময়কালের ইতিবৃত্ত। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, মানব সভ্যতার সূচনা থেকে মানুষের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত সবকিছুই ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। ইতিহাসের বাইরে কিছু নেই, ইতিহাসের আগেও কিছু নেই। সেই হিসাবে "প্রাক্ ইতিহাস" কথাটি সম্পূর্নই অর্থহীন একটি শব্দ।
তবে এই সমালোচনা সত্ত্বেও, প্রত্নতত্ত্বের পরিভাষায় "প্রাক্ ইতিহাস" একটি অর্থপূর্ন শব্দ। সম্ভবত এই কারনেই লিপি উদ্ভাবনের আগের সময়কালকে তুলে ধরার জন্য পৃথিবীর সব দেশের ইতিহাস চর্চায় "প্রাক্ ইতিহাস" শব্দটির প্রয়োগ হয়ে আসছে।
(৬.) প্রাক্ ইতিহাসের সময়কাল :-
প্রাক্ ইতিহাস পর্বের সূচনা এবং অবসানের সময়কাল সম্পর্কে কোন সর্বজনগ্রাহ্য মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। কারন প্রাক্ ইতিহাস পর্বের সূচনার সময়কাল প্রাপ্ত প্রত্ন বস্তুর প্রাচীনত্বের উপর নির্ভর করে এবং অবসানের সময়কাল লিপির উদ্ভাবনের সময়কালের উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর সব দেশে বা স্থানে একই সময় কালের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় নি। আবার লিপির উদ্ভাবনও সব দেশে একই সময় হয় নি।
সুতরাং প্রাক্ ইতিহাস পর্বের সময়কাল সব দেশে একই হয় না। যেমন মিশরে প্রাক্ ইতিহাস যুগের অবসান ঘটে ৩,২০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে। আবার ভারতে খ্রিঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রাক্ ইতিহাস যুগের অবসান ঘটে।
তবে সাধারণ ভাবে বলা যায়, বিশ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে প্রাক্ ইতিহাস যুগের সূচনা হয় এবং এর অবসান হয় আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। যদিও প্রাক্ ইতিহাস যুগের অবসানের সময়সীমা নির্দিষ্ট অঞ্চল ভেদে লিপির উদ্ভাবনের সময়কালের বিভিন্নতার ওপরে নির্ভর করে।
(৭.) প্রাক্ ইতিহাস রচনার উপাদান :-
প্রাক্ ইতিহাস যেহেতু লিপির উদ্ভাবনের আগের সময়কালের ইতিহাস। তাই প্রাক্ ইতিহাস রচনার একমাত্র উপাদান হলো বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিভিন্ন ধরনের জীবাস্ম, নরকঙ্কাল, মানুষের মাথার খুলি, প্রাচীন গুহা, গুহাতে সংরক্ষিত পাথর ও হাতিয়ার এবং গুহাচিত্র, মাটির বিভিন্ন পাত্র, সমাধিস্থল, বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ, এছাড়া মানুষের ব্যবহার্য নানা বস্তুগত সামগ্রী প্রাক্ ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
(৮.) প্রাক্ ইতিহাস পর্বের শ্রেনী বিভাগ :-
প্রাক্ ইতিহাসকে ৩ টি যুগে ভাগ করা হয়। যথা -
(১.) প্রস্তর যুগ
(২.) তাম্র - ব্রোঞ্জ যুগ, এবং
(৩.) লৌহ যুগ।
(১.) প্রস্তর যুগ :-
(ক.) প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি :-
আনুমানিক ২৫ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে প্রস্তর যুগ শুরু হয়েছিলো। এই সময়কালে প্রস্তর বা পাথর আদিম মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত ছিলো। পাথরকে তারা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে একদিকে প্রকৃতির ভয়াল জীবজন্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করতো, অন্যদিকে পাথরের হাতিয়ারের সাহায্যে তারা শিকার করতো। মাংস কাটার ক্ষেত্রেও তারা পাথরের ব্যবহার করতো। এককথায় পাথরকে অবলম্বন করেই এই সময় মানুষের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিলো বলে এই সময়কালকে ঐতিহাসিকরা "প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি" বলে অভিহিত করেছেন।
(খ.) প্রস্তর যুগের সমাজ :-
প্রস্তর যুগে আদিম মানুষ যাযাবর হিসাবে দলবদ্ধভাবে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতো। এই সময় কখনো খোলা আকাশের নীচে, কখনোবা গুহাতে তারা বসবাস করতো। শিকার করা পশুর চামড়া বা গাছের ছালকে তারা বস্ত্র হিসাবে পরিধান করতো। প্রস্তর যুগের মানুষরা শিকার করা পশুর কাঁচা মাংস ভাগাভাগি করে খেতো। এছাড়া বিভিন্ন ফলমূলও তারা খেতো।
পৃথিবীতে বিশেষ কিছু প্রানীর মধ্যে সামাজিক বোধ ও গুনের অস্তিত্ব দেখা যায়। যেমন - পিঁপড়ে, মৌমাছি, হাতি ইত্যাদি। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, যারাই পৃথিবীতে একসঙ্গে জোটবদ্ধ ভাবে থাকে, তারাই টিকে থাকে। প্রাগৈতিহাসিক মানুষও তার ব্যতিক্রম ছিলো না।
বলা বাহুল্য, মানুষ যে আজকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সামাজিক জীব হয়ে উঠতে পেরেছে, তার অনুশীলন ও অভ্যাস প্রস্তর যুগ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। প্রস্তর যুগে হিংস্র, ভয়াল ও বৃহদাকার জীবজন্তুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার তাগিদেই মানুষকে দলবদ্ধ ভাবে থাকতে হয়েছিলো। প্লেইস্টোসিন যুগে প্রচন্ড ঠান্ডায় যখন অনেক জীবজন্তু মারা গেলো, তখন খাবারের সংকট দেখা গেলো। খাবার জোগাড় করতে গিয়ে এই সময় আদিম মানুষকে শিকার করতে হতো। মনে রাখতে হবে, শিকার অনেকে মিলে একসঙ্গে করতে হয়। শিকারের প্রয়োজনেও আদিম মানুষকে জোটবদ্ধ থাকতে হয়েছিলো।
আবার মধ্য প্রস্তর যুগের শেষের দিকে বা নব্য প্রস্তর যুগে আদিম মানুষ যখন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়লো, তখন কৃষির প্রয়োজনে মানুষের একসঙ্গে থাকাটা আরোও প্রয়োজনীয় হয়ে পড়লো। কেননা কৃষিকাজ কখনোই একা একা করা যায় না। আমরা জানি, পরবর্তীকালে এই কৃষি থেকেই সভ্যতার জন্ম হয়।
সুতরাং আজকের মানুষের "সামাজিক বোধ ও অভ্যাস" দীর্ঘ ঐতিহাসিক অনুশীলন ও অভ্যাসেরই ফসল ছিলো। যাইহোক, ইতিহাসে আমরা মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিবর্তনের দিক গুলিকেই পড়ে থাকি। প্রস্তর যুগে আদিম মানুষের সংস্কৃতি পাথরকে অবলম্বন করেই আবর্তিত হয়েছিলো।
"সভ্যতা" হলো উন্নত চিন্তা ও রুচিশীল অভ্যাসের বহিঃপ্রকাশ ও প্রতিস্থাপন। অন্যদিকে "সংস্কৃতি" হলো তা যাকে কেন্দ্র করে মানুষের চিন্তা, চেতনা ও মনন আবর্তিত হয়। প্রস্তর যুগে মানুষের জীবন চর্চা ও জীবন ধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলো পাথর। আদিম মানুষের জীবনে পাথরের ভূমিকাটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তা একটু আগেই আমরা আলোচনা করেছি।
(গ.) প্রস্তর যুগের শ্রেনী বিভাগ :-
প্রাগৈতিহাসিক যুগেই আদিম মানুষ পাথরের অস্ত্র ও ব্যবহারের ক্ষেত্রটিকে আরোও উন্নত ও সুবিধাজনক করার জন্য চিন্তা করেছিলো। এই চিন্তা ও মনন থেকে পাথরের হাতিয়ারকে সে আরোও উপযোগী ও দক্ষ করে তোলার অনুশীলন শুরু করে। বলা বাহুল্য, এটি করতে গিয়েই আদিম মানুষ ধীরে ধীরে অসভ্য থেকে সভ্য, বর্বর থেকে রুচিশীল এবং যাযাবর থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিনত হয় এবং সভ্যতার জন্ম দেয়।
প্রস্তর যুগের আদিম মানুষের হাতিয়ার গুলির বিবর্তনের ধারা বা অগ্রগতির দিকটি অনুসন্ধান করে ঐতিহাসিকরা প্রস্তর যুগকে ৩টি উপভাগে ভাগ করেছেন। যথা -
(১.) প্রাচীন প্রস্তর যুগ,
(২.) মধ্য প্রস্তর যুগ, এবং
(৩.) নব্য প্রস্তর যুগ।
(ঘ.) তিনটি যুগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :-
প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের আদি কালকে বোঝায়। এই সময় আদিম মানুষের হাতিয়ার গুলি ছিলো ভোঁতা, ভারী ও অমসৃন। মধ্য প্রস্তর যুগে আদিম মানুষরা পাথরের হাতিয়ার গুলিকে চটা খসিয়ে বেশ কিছুটা হালকা ও তীক্ষ্ণ করতে শিখেছিলো। তাই এই যুগকে "ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগও" বলা হয়। এই সময় পাথরের পাশাপাশি পশুর হাড় দিয়েও আদিম মানুষ অস্ত্র বানাতে শেখে।
মধ্য প্রস্তর যুগের পর এসেছিলো নব্য প্রস্তর যুগ। নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পাথরের অস্ত্র গুলিকে আরোও উন্নত, হালকা ও মসৃন করতে শেখে। এই সময় মানুষ আগুন জ্বালতে শেখে। কৃষিকাজ করতে শেখে। কাপড় বুনতে শেখে। মৃৎপাত্র গুলিকে আরোও উন্নত করতে শেখে। কৃষি অর্থাৎ উৎপাদনের জীবনে প্রবেশ করার পর মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে।
কৃষি কাজ করার পর মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। খাবারের সন্ধানে যাযাবর হিসাবে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরির দিন শেষ হয়ে যায়। কৃষির উদ্বৃত্তকে অবলম্বন করে ক্রমে বাজার, এবং বাজার থেকে নগরের সৃষ্টি হয়। এইভাবেই সভ্যতার জন্ম হয়।
সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা সর্বপ্রথম নগর সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলো। ভারতের প্রথম নগর সভ্যতা ছিলো সিন্ধু সভ্যতা।
(২.) তাম্র - প্রস্তর যুগ :-
নব্য প্রস্তর যুগের পরেই এসেছিলো তাম্র - প্রস্তর যুগ। আনুমানিক ৮০০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে পৃথিবীতে তাম্র - প্রস্তর যুগ শুরু হয়। তাম্র প্রস্তর যুগে তামা ও পাথরকে অবলম্বন করেই এই সময়ে মানুষের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিলো।
তামাই ছিলো পৃথিবীর প্রথম আবিষ্কৃত ধাতু। সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা সর্বপ্রথম তামার ব্যবহার শিখেছিলো। নব্য প্রস্তর যুগের শেষ দিকে ভারতের মেহরগড়বাসীরাও তামার ব্যবহার শিখে নিয়েছিলো। তাম্র প্রস্তর যুগে পাথরের পাশাপাশি তামা দিয়ে মানুষ নানা হাতিয়ার তৈরি করে। ক্রমে তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে মানুষ ব্রোঞ্জ আবিষ্কার করে।
তামার চেয়ে ব্রোঞ্জের অস্ত্র গুলি ছিলো অনেক মজবুত ও উন্নত। তাম্র প্রস্তর যুগের উন্নত সভ্যতা গুলির মধ্যে ছিলো - সুমেরীয় সভ্যতা, ভারতের সিন্ধু সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা।
(৩.) লৌহ যুগ :-
তাম্র প্রস্তর যুগের পর পৃথিবীতে আসে লৌহ যুগ। আনুমানিক ১২০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়ার হিট্টাইট জাতি লোহা আবিষ্কার করলে লৌহ যুগের সূচনা ঘটে। ভারতে এর অল্প কিছুদিন পর ১০০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে লোহার আবিষ্কার হয়েছিলো বলে ঐতিহাসিকরা বলেছেন।
লোহার আবিষ্কারের পর উন্নত ও মজবুত লোহার অস্ত্রের সাহায্যে কৃষি ক্ষেত্রের অভূতপূর্ব প্রসার ঘটে, ব্যবসা বাণিজ্য ও নগরের প্রসার ঘটে। এর পাশাপাশি উন্নত লোহার অস্ত্রের সাহায্যে বড়ো বড়ো সাম্রাজ্য গঠনও সম্ভব হয়।
(৯.) ইতিহাস চর্চায় প্রাক্ ইতিহাস পর্বের গুরুত্ব :-
প্রাক্ ইতিহাস নামকরন বা প্রাক্ ইতিহাস পর্বের বিভাজন নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক, ইতিহাস চর্চায় প্রাক্ ইতিহাস পর্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা -
(১.) মানব সভ্যতার প্রারম্ভকাল থেকে শুরু করে লিখিত উপাদান পাওয়ার আগের সময়কালের ইতিহাস প্রাক্ ইতিহাস থেকেই জানতে পারা যায়।
(২.) প্রাক্ ইতিহাস অলিখিত প্রত্নবস্তুর ভিত্তিতে রচনা করা হয়। তাই এই ইতিহাস অনেকটাই ভাবলেশহীন, আবেগবর্জিত এবং নিরপেক্ষ।
(৩.) যে কোন স্থানের বা অঞ্চলের মানব সভ্যতার সুপ্রাচীনত্বের ধারনা একমাত্র "প্রাক্ ইতিহাস"থেকেই জানা সম্ভব হয়।