অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা

১৯২১ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছিলো অসহযোগ আন্দোলন। এই গন আন্দোলনে আপামোর ভারতবাসীর সাথে ছাত্রসমাজও ব্যাপক ভাবে যোগদান করে এবং তাদের অনবদ্য ভূমিকার স্বাক্ষর রাখে।

১৯২০ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব পাশ হয়। ঠিক হয়, সমগ্র গন আন্দোলনটি অহিংসার পথ ধরে চলবে এবং দুটি কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন এগিয়ে যাবে। প্রথম কর্মসূচিটি ছিলো "বয়কট" বা নেতিবাচক কর্মসূচি। এখানে ব্রিটিশ সরকারের সমস্ত রকম খেতাব ও প্রাতিষ্ঠানিকতা বর্জনের কথা বলা হলো। 

বলা হয়, বয়কট কর্মসূচিকে সফল করে তুলবার জন্য আইনজীবীরা আদালত বর্জন করবেন, চাকুরিজীবীরা চাকুরি ত্যাগ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসবেন এবং ছাত্ররা স্কুল কলেজ পরিত্যাগ করবেন। অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচিটি ছিলো গঠনমূলক স্বদেশী বা ইতিবাচক কর্মসূচি, যেখানে চরখা, খাদির প্রসার, দেশীয় শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা বলা হয়।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন যে "বয়কট" ও "স্বদেশী" কর্মসূচির মধ্যে আবর্তিত হয়েছিলো, গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন সেই কর্মসূচিরই সর্বভারতীয় প্রকাশ ছিলো। গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অসহযোগ আন্দোলনের "বয়কট" কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিলো শিক্ষা ক্ষেত্রে।

এই সময় যে পরিমাণ ছাত্র সরকারি স্কুল কলেজ ত্যাগ করে আন্দোলনে সামিল হয়, তা অন্য কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯২১ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে আন্দোলন শুরুর সময়েই প্রায় ৯০,০০০ হাজার ছাত্র স্কুল কলেজ ছেড়ে আন্দোলনে সামিল হয়। পরে এই সংখ্যাটি কয়েক লক্ষে গিয়ে তিনি দাঁড়ায়।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই সমস্ত তথ্য পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত সক্রিয়, ব্যাপক, প্রভাবশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ

অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা 


(ক.) কেন ছাত্ররা অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে এসেছিলো ?

মহাত্মা গান্ধী সহ অন্যান্য দেশপ্রেমিক জন - নেতাদের আহ্বানেই মূলত ভারতের ছাত্রসমাজ অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। 

এক্ষেত্রে তাদের গন আন্দোলনে যোগদানের পিছুনে দুটি কারন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। প্রথম কারটি অবশ্যই ছিলো দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ। দ্বিতীয়টি ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, হতাশা ও ক্ষোভ

১৯১৪ খ্রিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইংরেজরা ভারতকে স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধের যাবতীয় রসদ ও সমর্থন ভারত থেকে নির্বিচারে সংগ্রহ করেছিলো। যুদ্ধ যখন শেষ হলো, তখন দেখা গেলো ইংরেজ তার প্রতিশ্রুতি পালন করলো না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেশের একটা বড়ো অংশের মধ্যে এর ফলে প্রচন্ড ক্ষোভের জন্ম হয়।

এমনিতেই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া ইত্যাদি নানাবিধ অর্থনৈতিক চাপের কারনে ভারতবাসী জর্জরিত ছিলো। এর ওপর ভারতীয়দের কন্ঠরোধের জন্য ১৯১৯ খ্রিঃ সংগঠিত হয় একের পর এক কুখ্যাত ঘটনা ও আইন। ১৯১৯ খ্রিঃ ইংরেজরা মন্টেগু চেমস ফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তিত করে ভারতীয়দের হাতে নামমাত্র শাসন ক্ষমতা দেওয়ার বন্দোবস্ত করলে তা ভারতীয়দের রাগকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। ঐ বছরটিতেই কুখ্যাত "রাওলাট" আইন প্রবর্তন করে ভারতীয়দের কন্ঠরোধের চেষ্টা করা হয় এবং সমস্ত সরকার বিরোধী সভা সমাবেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। রাওলাট আইনের কুখ্যাত প্রয়োগ ঘটাতে গিয়ে ইংরেজরা পাঞ্জাবে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

বলা বাহুল্য, জাতীয় রাজনীতির এই সমস্ত ঘটনাবলী সাধারন ভারতবাসীর পাশাপাশি ছাত্রদের মনকেও অত্যন্ত বিচলিত করে তুলেছিলো। ছাত্রসমাজের মন কখনই সমাজের অন্যান্য শ্রেনী গুলির মতো ব্যক্তি স্বার্থে বা শ্রেনী স্বার্থে নিমজ্জিত থাকে না। তাই দেখা যায়, জাতীয় রাজনীতির যে কোন ঘটনাবলী ছাত্রদের মনকেই সর্বপ্রথম এবং সর্বাপ্রেক্ষা বেশি বিচলিত, অস্থির এবং ব্যাকুল করে তোলে। এই ব্যাকুলতার কারনেই তারা দেশপ্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে দলে দলে জাতীয় সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অসহযোগ আন্দোলনেও তাই দেখা গিয়েছিলো।

(খ.) ছাত্রদের অংশগ্রহণের ধরন ও প্রকৃতি :- 

অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের ধরন ও প্রকৃতির মধ্যে প্রধান যে প্রবনতা ও বৈশিষ্ট্য গুলি দেখা যায় তা হলো - 
(১.) কোন রকম সংগঠন ছাড়াই ছাত্র সমাজ এই সময় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে সামিল হয়। 
(২.) ছাত্ররা প্রধানত জাতীয় নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়েই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসে। 
(৩.) এই সময়ে ছাত্র আন্দোলনের রাশ, নেতৃত্ব সবকিছুই জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলো। 
(৪.) এই পর্বের ছাত্র আন্দোলনের চরিত্র ছিলো অসাম্প্রদায়িক
(৫.) অসহযোগ আন্দোলনে "বয়কট" কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে ছাত্রদের ভূমিকা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
(৬.) অসহযোগ আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ গুলিতে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করলেও, বাংলা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চল গুলিতে তাদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত ব্যপক ও সক্রিয়। 
(৭.) এই সময় ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার একাধিক চেষ্টা করা হলেও, তা বিশেষ সাফল্য লাভ করতে পারে নি। 

(গ.) ছাত্রদের ভূমিকার বহুবিধ দিক :- 

১৯২০ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে নাগপুরে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব নেওয়া হলে তাকে সর্বান্তকরনে সমর্থন জানান লালা লাজপত রায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহেরু এবং খিলাফৎ আন্দোলনের প্রধান নেতা মহম্মদ আলি ও শওকত আলি (আলি ভ্রাতৃদ্বয়)। 

১৯২০ খ্রিঃ ২৫ শে ডিসেম্বর, বড়ো দিনের দিনে কংগ্রেস নেতা লালা লাজপত রায়ের নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ঐ দিন নাগপুরে "সর্বভারতীয় কলেজ ছাত্র সম্মেলন" অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে লালা লাজপত রায় সভাপতির ভাষনে তৎকালীন ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। 

এই সম্মেলনে বিদেশী শিক্ষার বদলে স্বদেশী শিক্ষার দাবি তোলা হয় এবং সরকারি স্কুল কলেজের বদলে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলা হয়। লালাজি ঐ সম্মেলনে ছাত্রদের জাতীয় কংগ্রেসের ডাকে মাতৃভূমির শৃঙ্খল মোচনে সর্বপ্রকার আত্মত্যাগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

পরের দিন আন্দোলনে সভাপতিত্ব করেন বম্বে ক্রনিক্যালের সম্পাদক মি. পিচেল। ঐ দিন সভায় অসহযোগ আন্দোলনে "বয়কটের" সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সময় সভায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত বিপুল ভোটে পাশ হয়। শিক্ষা বয়কটের প্রস্তাব পাশ হওয়ার মধ্য দিয়েই অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকার এক বিরাট পথের সূচনা ঘটে। এর ফলে ভারতের প্রায় সর্বত্র ছাত্র আন্দোলনের ব্যপকতা লক্ষ্য করা যায়। 

তবে অসহযোগ পর্বে বাংলা ও পাঞ্জাবে ছাত্র আন্দোলনের যে "ব্যপকতা ও তীব্রতা" লক্ষ্য করা গিয়েছিলো, তা ভারতের অন্যত্র সেভাবে দেখা যায় নি। এর পিছুনে ঐ দুই অঞ্চলের দুজন জননেতার অবদান ও ভূমিকা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদের একজন ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ (বাংলা), অন্যজন ছিলেন - লালা লাজপত রায় (পাঞ্জাব)

(ঘ.) ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :- 

(১.) বাংলায় ছাত্র আন্দোলন :- 

অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সবার আগে সাড়া দেয় বাংলার ছাত্র সমাজ। বয়কট আন্দোলনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে অংশগ্রহণ করে। মনে রাখতে হবে, অসহযোগ আন্দোলনের সময় বয়কট আন্দোলন সবথেকে বেশি সফল হয়েছিলো শিক্ষা ক্ষেত্রে। আর শিক্ষা বয়কটের আন্দোলন সবথেকে বেশি সফল হয়েছিলো বাংলাদেশে। এজন্য বাংলার ছাত্রসমাজের অবদান ও ভূমিকা ছিলো সবথেকে বেশি। 

(অ.) কলকাতার ছাত্র আন্দোলন :- 

বাংলার ছাত্রদের বয়কট আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ১৯২১ খ্রিঃ ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে কলকাতার অন্তত ৫ টি ছাত্র সভায় ভাষন দিয়ে তিনি ছাত্রদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বয়কটের নির্দেশ দেন। তিনি ছাত্রদের স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে "গোলামখানা" বলে অভিহিত করেন এবং ছাত্রদের তা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে তার বিখ্যাত ও স্মরনীয় উক্তি ছিলো - "Education May wait but Swaraj can not" অর্থাৎ "শিক্ষা অপেক্ষা পারে, কিন্তু স্বরাজ নয়"। 

দেশবন্ধুর ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯২১ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে কলকাতার ছাত্র সমাজ ব্যাপকভাবে স্কুল কলেজ পরিত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হয়। আন্দোলনের প্রথম সারিতে এসে দাঁড়ায় বঙ্গবাসী কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজ, রিপন ( বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) কলেজ এবং সিটি কলেজের ছাত্ররা। 

ভারতে সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্ররা। অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের পাশাপাশি তারা নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষনারও দাবি জানায়। তারা কলেজ কর্তৃপক্ষকে সরকারি অনুদান বয়কটের জন্য অনুরোধ করে। 

১৬ জানুয়ারি দুপুরের মধ্যে কলকাতার প্রায় সমস্ত স্কুল কলেজ খালি করে প্রায় ৩,০০০ ছাত্র মিছিল ও ধর্মঘট করে মির্জাপুর পার্কে (বর্তমান শ্রদ্ধানন্দ পার্কে) সমবেত হয়। সভায় ছাত্রদের সামনে বক্তৃতা দেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, ওয়ালিদ হাসান সহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। 

২০ জানুয়ারি কলকাতার প্রায় সব সরকারি স্কুল কলেজ খালি করে হাজার হাজার ছাত্র বন্যার জলের মতো কলকাতার রাজপথে নেমে আসে। তাদের নেতৃত্ব দেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। কলকাতার রাজপথে ছাত্র আন্দোলনের ব্যপকতাকে অভিনন্দন জানিয়ে এক জনসভায় তিনি বলেন - "বাংলার ছাত্রসমাজ, আমি তোমাদের নমস্কার করি"।

 ২৩ শে জানুয়ারি, গান্ধীজি কলকাতায় এসে বাংলার ছাত্র আন্দোলনের ব্যপকতা লক্ষ করে বলেন - "ছাত্রদের কাছ থেকে এর কিছু কম আশা করিনি। আমি ভরসা করি তোমরা আরোও অনেক বেশি সাড়া দেবে। বাংলার ছাত্র সমাজই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে, এ বিষয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই"।

(আ.) কলকাতার বাইরে ছাত্র আন্দোলন :-

কলকাতার ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব খুব দ্রুত বাংলার বিভিন্ন মফস্বল শহর ও অঞ্চল গুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, চাঁদপুর, ঢাকা, খুলনা অঞ্চলের ছাত্ররা স্কুল কলেজ ত্যাগ করে ধর্মঘটে ও পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ করে। ছাত্ররা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জন করে নি, বিভিন্ন পরীক্ষাও বয়কট করে।ছাত্রদের ধর্মঘট ও প্রতিরোধের ফলে ১৯২১ খ্রিঃ B. L পরীক্ষায় ৫০০ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৫০ জন পরীক্ষায় বসেন।

কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র গুলির মধ্যে ছিলো - মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম। তবে অসহযোগ আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় মেদিনীপুর জেলাতে। মেদিনীপুর জেলাতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন "দেশপ্রান" নামে খ্যাত বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। তিনি গ্রামে গ্রামে ইউনিয়ন বোর্ড বর্জন ও চৌকিদারি ট্যাক্স না দেওয়ার আহ্বান জানান। তার আন্দোলনের প্রধান সহকারীদের মধ্যে ছিলেন স্কুল কলেজের ছাত্ররা।

এই সময় মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমার মহিষাদলের একটি গ্রামে জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। এই বিদ্যালয় পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব গ্রহণ করেন B. Se পাশ করা ছাত্র গুনধর হাজরা। তাকে সাহায্য করেন বঙ্গবাসী কলেজের B. Se ক্লাসের ছাত্র শ্রীপতিচরন কয়াল ও যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র সতীশচন্দ্র সামন্ত

সরকারি দমন নীতির ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই জাতীয় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। গুনধর হাজার ও শ্রীপতিচরন কারারুদ্ধ হয়। গুনধর হাজরা কারাগারেই প্রানত্যাগ করেন। তিনিই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে তমলুক মহকুমার প্রথম শহিদ।

(ই.) বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনকে ছাত্রসমাজের সমর্থন :-


বাংলার ছাত্রসমাজ অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনকেও সমর্থন করে। ১৯২১ - ২২ খ্রিঃ আসামের চা শ্রমিকদের আন্দোলনকে সমর্থন করে। চা শ্রমিকরা এই সময় ঢাকা, চাটগাঁ, চাঁদপুর ও গোয়ালন্দে ধর্মঘট ডাকলে ছাত্র সমাজ তাকে সফল করে তোলে।

(ঈ.) প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত আগমনের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ :-

১৯২১ খ্রিঃ ১৭ নভেম্বর ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত পরিদর্শনের জন্য বোম্বাইয়ে পদার্পণ করলে সারা ভারতব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। এই ধর্মঘটে বাংলার ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভাবে অংশগ্রহণ করে।

এই সময় বাংলাদেশে বয়কট ও ধর্মঘট আন্দোলনকে সফল করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তরুন জননেতা সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে। চিওরঞ্জন দাশ এই সময় ছাত্র আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব দেন সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সুভাষচন্দ্রের হাতে। ইংল্যান্ডের যুবরাজ যেদিন কলকাতা এলেন, সেদিন কলকাতায় হরতাল পালিত হয়। 

ঐ দিন বাংলার ছাত্ররা সর্বত্র স্কুল কলেজ বয়কট করে দলে দলে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য যুবরাজের যাত্রাপথের দুপাশে পুলিশের দমন পীড়ন উপেক্ষা করে সমবেত হয়। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় লাঠিপেটা করলেও, ছাত্রসমাজ পিছু হটে নি। এই সময় ছাত্ররা "স্বাধীন ভারতের জয়", "যুবরাজ ফিরে যাও" ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে।

(২.) পাঞ্জাবে ছাত্র আন্দোলন :-

১৯২০ খ্রিঃ ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, লালা লাজপত রায় আমেরিকা থেকে লাহোরে ফিরে আসে। তার আগমন ছাত্রদের মধ্যে এক প্রবল উত্তেজনা ও উৎসাহ সৃষ্টি করে। ১৯২০ খ্রিঃ ৪ ঠা সেপ্টেম্বর, কলকাতা কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে সভাপতির ভাষনে লাজপত রায় বিলাতি পন্য বর্জন ও ছাত্রদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানালে তা ভারতের সমস্ত অংশের পাশাপাশি পাঞ্জাব ও লাহোরের ছাত্রদের মনকেও উদ্বুদ্ধ করে।

পাঞ্জাবে ছাত্রদের ক্ষোভ ছিলো সবচেয়ে বেশি। এর কারনও ছিলো বহুবিধ। (ক.) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সরকার সবথেকে বেশি সেনা সংগ্রহ করেছিলো পাঞ্জাব থেকে। কিন্তু (খ.) যুদ্ধ শেষে সেনাদের কোনরকম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় নি।(গ.) ক্ষতিগ্রস্তদের কোনরূপ সাহায্যও করা হয় নি। (ঘ.) এই সময় পাঞ্জাবে গদর আন্দোলনকারীদের দমন করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে অত্যাচার চালিয়েছিলো। (ঙ.) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছিলো পাঞ্জাবে(চ.) রাওলাট আইনের সবচেয়ে বেশি কুপ্রয়োগ পাঞ্জাবেই ঘটেছিলো। (ছ.) এই জন্যই সেখানে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছিলো। এইসব কারনে পাঞ্জাবের পরিস্থিতি এমনিতেই ছিলো অগ্নিগর্ভ

এমতাবস্থায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই পাঞ্জাবের ছাত্ররা তাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। গান্ধীজি ও আলি ভ্রাতৃদ্বয় পাঞ্জাবে এলে ছাত্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারন করে। গান্ধীজি ও আলি ভ্রাতৃদ্বয় লাহোরে ২০ ও ২১ অক্টোবর ছাত্রদের সঙ্গে মিলিত হলে ছাত্ররা দ্বিধাহীন ভাবে অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থনের ঘোষনা করে।

পাঞ্জাবে প্রথম ছাত্র আন্দোলনের উদ্ভব ঘটে অমৃতসর শহরে। পাঞ্জাবে সর্বপ্রথম ছাত্র আন্দোলন ঘটে অমৃতসরের খালসা কলেজে। এই কলেজকে ১৯২০ খ্রিঃ অক্টোবর মাসে সরকারি পরিচালন মুক্ত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষনা করা হয়। লালা লাজপত রায় ৫ ই নভেম্বরের মধ্যে কলেজের সমস্ত সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলামিয়া কলেজের পরিচালকদের একাংশ কলেজের সরকারি সাহায্য বা অনুদান গ্রহনে অসম্মতি জানান। পরিচালকবর্গ অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করায় লাহোরের ইসলামিয়া কলেজ ও D. A. V কলেজের হিন্দু মুসলিম ছাত্ররা ক্লাস বয়কট করে। তাদের সঙ্গে লাহোরের অন্যান্য স্কুল কলেজের ছাত্ররা যোগ দেয়। তারা স্কুল কলেজ বর্জন করে লাহোরের রাজপথে শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। তাদের নেতৃত্ব দেন ড. সৈফুদ্দিন কিচলু ও শ্রমতি রামভোগ দত্তা।

এই সময়ে ছাত্ররা দলে দলে পিকেটিং করে। ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে। অনেক ছাত্র কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগ দিয়ে অসহযোগ ও খিলাফৎ এর কথা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। ছাত্রদের বয়কট আন্দোলনকে সমর্থন করে এই সময় বহু বিশিষ্ট শিক্ষক ও অধ্যাপক ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান

(৩.) উত্তরপ্রদেশে ছাত্র আন্দোলন :-

উত্তর প্রদেশের ছাত্রসমাজ অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপক ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো। এক্ষেত্রে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। 

১৯২০ খ্রিঃ ১২ ই অক্টোবর, গান্ধীজি ও আলি ভ্রাতৃদ্বয় আলিগড়ে উপস্থিত হলে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইউনিয়ন ক্লাব হলে ছাত্রদের সভার ব্যবস্থা করে। উক্ত সভায় গান্ধিজী ও আলি ভ্রাতৃদ্বয় ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের জন্য আহ্বান জানালে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেইদিন থেকে ক্লাস বর্জন করা শুরু করে। শুধু তাই নয়, অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে সাধারন মানুষকে অবহিত ও উৎসাহিত করার জন্যও তারা প্রচারাভিযানে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকদের অধিকাংশই ছিলেন ইংরেজ সরকারের কট্টর সমর্থক। তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজ শিক্ষকদের একটা বড়ো অংশ অধ্যাপনার কাজও করতেন। এই সময় আলিগড় কলেজে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করলে কলেজের অধ্যক্ষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রদের অভিভাবকদের কাছে চিঠি পাঠাতে শুরু করেন। এছাড়া, ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশি হস্তক্ষেপের ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

 এসবের ফলে ছাত্র অসন্তোষ কমার বদলে আরোও বেড়ে যায়। ছাত্ররা দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে বেরিয়ে আসে। আন্দোলনরত ছাত্ররা ইংরেজ সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করার আহ্বান জানান। ছাত্ররা আশা করেছিলো তাদের আন্দোলনের ফলে খুব শীঘ্রই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত হবে। কিন্তু তাদের আশা শেষপর্যন্ত সফল হয় নি।

১৯২০ খ্রিঃ নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে আগ্রায় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ গৌরীশ প্রাসাদের সভাপতিত্বে উত্তরপ্রদেশ কলেজ ছাত্রদের এক সম্মেলন বসে। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০০ ছাত্র সেই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। এই সম্মেলনে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ইতিমধ্যে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের জন্য বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা অশান্ত হয়ে উঠলে পন্ডিত মদনমোহন মালব্য ছাত্রদের কলেজ ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। পন্ডিতজীর নির্দেশে সাড়া দিয়ে ছাত্ররা আপাত ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও, আন্দোলনের প্রচার ও সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এক ছাত্র কমিটি গঠন করে।

১৯২১ খ্রিঃ জুলাই মাসের মধ্যে উত্তর প্রদেশে ১৩৭ টি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিলো। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিলো কাশী বিদ্যাপীঠ। এই তথ্য পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বোঝা যায়, এক বিরাট সংখ্যক ছাত্র অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তারা সরকারি স্কুল কলেজ বর্জন করেন। তাদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্যই জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি গড়ে তোলা হয়েছিলো

(৪.) অন্যান্য অঞ্চলে ছাত্র আন্দোলন :-

(১.) বিহার :- 

অসহযোগ আন্দোলনের এক আদর্শ কেন্দ্র ছিলো বিহার। এখানেও দলে দলে ছাত্ররা অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয় এবং স্কুল কলেজ বর্জন করে। ১৯২২ সালে জুন মাসের মধ্যে সমগ্র বিহারে ৪১ টি উচ্চ  বিদ্যালয় এবং ৬০০ টি জাতীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিলো বিহার বিদ্যাপীঠ

(২.) গুজরাট :- 

গুজরাটেও ছাত্র সমাজ অন্যান্য শ্রেনীর সাথে অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হয়। সেখানে গড়ে তোলা হয় গুজরাট বিদ্যাপীঠ

(৩.) আসাম :- 

আসামেও ছাত্র ধর্মঘট তীব্র আকার ধারন করেছিলো। এই সময় কটক কলেজের ছাত্ররা ক্লাস বয়কট করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলো। তারা দলে দলে পিকেটিং করে ও বিলিতি কাপড়ে অগ্নিসংযোগ করে।

(৪.) দক্ষিণ ভারত :- 

দক্ষিণ ভারতের তামিল ও তেলেগুভাষী অঞ্চলে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে সেখানেও ছাত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশে ৯২ টি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়।

(ঙ.) অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারে ছাত্রসমাজের ক্ষোভ ও হতাশা :-

অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ছাত্রসমাজ প্রবল উৎসাহে সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো। আন্দোলনে যোগ দিয়ে তারা শপথ নিয়েছিলো স্বরাজ অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা স্কুল কলেজে ফিরবো না। কিন্তু ১৯২২ খ্রিঃ চৌরিচৌরাতে হিংসার অজুহাতে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনকে প্রত্যাহার করলে সারা দেশব্যাপী গান্ধীর সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। ছাত্রসমাজও চূড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়ে।

এই সময় জাতীয় কংগ্রেসের আন্দোলনের প্রতি ছাত্রসমাজের একটা বড়ো অংশ আস্থা হারিয়ে ফেলে। তারা কংগ্রেসী আন্দোলনের ধারা থেকে সরে এসে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গী আন্দোলন ও সাম্যবাদী আন্দোলনের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এই সময় চরমপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী বেশ কিছু ছাত্র যেমন এস এ ডাঙ্গের, আর এস নিম্বকর, আর ভি নাদকার্নী, কে এন জোগলেকার, এস ডি দেশপান্ডে গান্ধীর সমালোচনা করেন। এরা ক্রমশ মার্কসবাদী আদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকেন

(চ.) গুরুত্ব :-

অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের তাৎপর্য ছিলো অপরিসীম -

(১.) এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার ফলে ছাত্ররা রাজনৈতিক দিক থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়ে ওঠে। 

(২.) অসহযোগ আন্দোলনে কংগ্রেস নেতৃত্বের অবস্থান বদলের ( হঠাৎ করে আন্দোলন প্রত্যাহার) দিকটি পর্যবেক্ষণ করে ছাত্রসমাজ ছাত্র আন্দোলনের ধারাকে আপোষহীন ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পৃথক ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।

(৩.) অসহযোগ আন্দোলনের "বয়কট" কর্মসূচিকে একমাত্র ছাত্ররাই পরিপূর্ণ ভাবে সফল করে তোলে। তারা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জনের মধ্য দিয়ে বয়কট কর্মসূচিকে সফল করে তোলে। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে দেখা যায়, বয়কট কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে ৫১৮৬ জন ভারতীয় খেতাবধারীর মধ্যে মাত্র ২৪ জন সরকারি খেতাব বর্জন করেন। অথচ সেই সময় কয়েকলক্ষ ছাত্র নির্দ্ধিধায় সরকারি স্কুল কলেজ বর্জন করে চরম আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

(৪.) সর্বোপরি, অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রসমাজ দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের যে নির্দর্শন রাখেন তার দৃষ্টান্ত ইতিপূর্বের আর কোন আন্দোলনে লক্ষ্য করা যায় নি।

(ছ.) সীমাবদ্ধতা :-

অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রসমাজ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিলেও এর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন -

(১.) এই সময় ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব  ও নিয়ন্ত্রন পুরোটাই ছিলো জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের হাতে

(২.) ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য এই সময় একাধিক ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও, তা বিশেষ সফলতা লাভ করতে পারে নি। যেমন - বহরমপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রনেতা বিপ্লবী দলভুক্ত নিরঞ্জন সেনগুপ্ত একটি ছাত্র সংগঠন গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিরঞ্জন সেন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় সেই প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখতে পায় নি।

(৩.) এই সময়কার ছাত্র আন্দোলন মূলত বাংলা ও পাঞ্জাবের সবথেকে বেশি অনুভূত হয়েছিলো। বাংলা ও পাঞ্জাব ছাড়া এসময়ে ছাত্ররা ভারতের অন্যত্র স্বতন্ত্র কৃতিত্বের নজির সৃষ্টি করতে পারে নি। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post