সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - ক্লাস - ১

উনিশ শতকে বাংলা সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন 

সংস্কার :বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা, ক্লাস - ১
সংস্কার :বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা, ক্লাস - ১

(১.) সংক্ষিপ্ত পরিচয় :- 

সাময়িকপত্র /সংবাদপত্র 
হিন্দু প্যাট্রিয়ট (১৮৫৩)

সম্পাদক - গিরিশচন্দ্র ঘোষ (প্রথম), 
হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (দ্বিতীয়) 
প্রকাশ - ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র হিসাবে ১৮৫৩ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়। 
বৈশিষ্ট্য - (১.) ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা। 
(২.) জমিদারদের মুখপত্র হলেও, জমিদারদের অত্যাচার গুলি কখনই এই পত্রিকা সমর্থন করতো না। 

বামাবোধিনী পত্রিকা (১৮৬৩)

সম্পাদক - উমেশচন্দ্র দত্ত। 
প্রকাশ - শিমুলিয়া, কলকাতা, ১৬ নং রঘুনাথ স্ট্রিট থেকে ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বামাবোধিনী সভার মুখপাত্র হিসাবে ১৮৬৩ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়। 
বৈশিষ্ট্য - (১.) বাংলা ভাষায় প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা। 
(২.) বামা অর্থাৎ মেয়েদের কথা এই পত্রিকা তুলে ধরতো। 

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা (১৮৬৩)

সম্পাদক - হরিনাথ মজুমদার। 
প্রকাশ - কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থেকে ১৮৬৩ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়। 
বৈশিষ্ট্য - (১.) প্রথমে এটি ছিলো মাসিক পত্রিকা। পরে এটি পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে প্রকাশিত হতো। 
(২.) গ্রামে দরিদ্র কৃষকদের ওপর জমিদার, জোতদার, নীলকর, পুলিশদের শোষন ও অত্যাচারের সংবাদ গুলি তুলে ধরতো। 

সাহিত্য 
নীলদর্পন (নাটক - ১৮৬০)

লেখক - দীনবন্ধু মিত্র। 
প্রকাশ - ঢাকা থেকে ১৮৬০ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়। 
অনুবাদ - নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। 
ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক - রেভারেন্ড জেমস লঙ। 
বৈশিষ্ট্য - নীল বিদ্রোহ ও বাংলার নীলচাষীদের ওপর নীলকর সাহেবদের ভয়াবহ অত্যাচারের প্রেক্ষাপটে এই নাটকটি লেখা হয়েছিলো। 

হুতোম প্যাঁচার নকশা (ব্যাঙ্গাত্মক রচনা - ১৮৬২)

লেখক - কালীপ্রসন্ন সিংহ। 
প্রকাশ - ১৮৬২ খ্রিঃ হুতোম প্যাঁচার নকশার প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৮৬৪ খ্রিঃ প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড একত্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়। 
বৈশিষ্ট্য - উনিশ শতকে কলকাতার সমাজ জীবন, বাবু কালচার, তৎকালীন কথ্য ভাষা ও সাংস্কৃতিক জীবনচর্চার পরিচয় এই গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়। 

(৩.) গুরুত্বপূর্ণ সাল গুলিকে মনে রাখার কৌশল:- 

ইতিহাসে সাল মনে রাখা একটু কঠিন মনে হলেও, অসম্ভব নয়। সামান্য বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিলেই তোমরা সাল গুলিকে খুব সহজেই মনে রাখতে পারবে।

আজকের আলোচ্য বিষয়ের সাল গুলিকে তোমরা খুব সহজেই নিন্মলিখিত ভাবে সাজিয়ে মনে রাখবার চেষ্টা করো। 

১৮৫৩ - হিন্দু প্যাট্রিয়ট।
১৮৬৩ - বামাবোধিনী পত্রিকা + গ্রামবার্তা প্রকাশিকা। 
১৮৬০ - নীলদর্পন।
১৮৬২ - হুতোম প্যাঁচার নকশা।

মনে রাখবে, ১৮৫৩ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়েছিলো হিন্দু প্যাট্রিয়ট। এর ১০ বছর পর ১৮৬৩ খ্রিঃ একই বছর প্রকাশিত হয়েছিলো দুটি পত্রিকা। যথা - বামাবোধিনী পত্রিকা ও গ্রামবার্তা প্রকাশিকা। ১৮৫৩ এবং ১৮৬৩ সাল দুটিকে মনে রাখা তাই খুব কঠিন নয়। 

তোমরা সবাই জানো, নীল বিদ্রোহ ১৮৬০ খ্রিঃ হয়েছিলো।আর নীলদর্পন নাটক তো নীল বিদ্রোহকে নিয়েই লেখা। বিষয়বস্তু যেমন এক, তেমনই সময়কালও এক। নীলবিদ্রোহ ও নীলদর্পন নাটক দুটোই হয়েছিলো ১৮৬০ খ্রিঃ। এইদিক থেকে বিচার করে ১৮৬০ খ্রিঃ কে মনে রাখা খুব কষ্টকর বিষয় নয়। 

অন্যদিকে নীলদর্পন প্রকাশিত হবার একবছর পর ১৮৬২ খ্রিঃ প্রকাশিত হয় হুতোম প্যাঁচার নকশা। তাহলে ১৮৫৩ - ১৮৬৩ - ১৮৬০ - ১৮৬২ এইভাবে সাজিয়ে পড়লে অনায়াসে তোমরা সাল গুলিকে মনে রাখতে পারবে। 

(৩.) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একঝলকে :- 

  1. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম (সাপ্তাহিক) সংবাদপত্র ছিলো - সমাচার দর্পন।
  2. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িক (মাসিক) পত্রিকা ছিলো - দিগদর্শন। 
  3. বাঙালি সম্পাদিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ছিলো - বাঙ্গাল গেজেটি। 
  4. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক সংবাদপত্রের নাম ছিলো - সংবাদ প্রভাকর। 
  5. বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠিত হয় - ১৮৬৩ খ্রিঃ।
  6. বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো - ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে।
  7. বামাবোধিনী পত্রিকা প্রকাশিত হয় - ১৮৬৩ খ্রিঃ।
  8. বামাবোধিনী পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো - বামা অর্থাৎ মেয়েদের জন্য।
  9. বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন - উমেশচন্দ্র দত্ত।
  10. বামাবোধিনী পত্রিকা টিকে ছিলো - ১৮৬৩ - ১৯২২ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৬০ বৎসর।
  11. বামাবোধিনী পত্রিকা ছিলো একটি - মাসিক পত্রিকা।
  12. বামাবোধিনী পত্রিকার সর্বশেষ সম্পাদক ছিলেন - আনন্দকুমার দত্ত।
  13. বামাবোধিনী পত্রিকার সদর কার্যালয় ছিলো - ১৬ নং রঘুনাথ স্ট্রিট, শিমূলিয়া, কলকাতা।
  14. প্যাট্রিয়ট শব্দের অর্থ হলো - দেশপ্রেমিক।
  15. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা প্রকাশিত হয় - ১৮৫৩ খ্রিঃ।
  16. সূচনালগ্নে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা ছিলো একটি - সাপ্তাহিক পত্রিকা।
  17. হিন্দু প্যাট্রিয়ট প্রকাশিত হতো - ইংরেজি ভাষায়।
  18. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন - গিরিশচন্দ্র ঘোষ।
  19. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার দ্বিতীয় সম্পাদক ছিলেন - হরিশচন্দ্র মুখার্জি। 
  20. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম স্বত্বাধিকারী ছিলেন - মধুসূদন রায়। 
  21. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা দৈনিক পত্রিকায় পরিনত হয় - ১৮৯২ খ্রিঃ মার্চ মাসে। 
  22. ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী পত্রিকা ছিলো - হিন্দু প্যাট্রিয়ট।
  23. ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র ছিলো - হিন্দু প্যাট্রিয়ট।
  24. সাঁওতাল বিদ্রোহকে একমাত্র সমর্থন করেছিলো - হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা ।
  25. হিন্দু প্যাট্রিয়টে দীনবন্ধু মিত্র নীল বিদ্রোহের সংবাদ পরিবেশনের জন্য কোন বিভাগ খোলেন? - নীল জেলা। 
  26. "নকশা" কথার অর্থ হলো - ব্যঙ্গ বিদ্রুপাত্মক রচনা। 
  27. হুতোম প্যাঁচার নকশা লিখেছিলেন - কালীপ্রসন্ন সিংহ।
  28. হুতোম প্যাঁচার নকশা প্রথম প্রকাশিত হয় - ১৮৬২ খ্রিঃ।
  29. হুতোম প্যাঁচার নকশা দুই খন্ড একত্রিত হয়ে প্রকাশিত হয় - ১৮৬৪ খ্রিঃ। 
  30. হুতোম প্যাঁচার নকশা ছিলো - কথ্য ভাষায় লেখা প্রথম বাংলা বই। 
  31. হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থকে চার্লস ডিকেন্সের "বজের স্কেচ" এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। 
  32. হুতোম প্যাঁচা কার ছদ্মনাম ছিলো - কালীপ্রসন্ন সিংহের। 
  33. বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন - কালীপ্রসন্ন সিংহ
  34.  কলকাতার চড়কপার্বন অন্তর্ভুক্ত ছিলো - হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে। 
  35. হুতোম প্যাঁচার নকশাতে কোন সময়কালের কলকাতার সমাজ চিত্র পাওয়া যায়? - ঊনবিংশ শতাব্দীর।
  36. নীলদর্পন নাটকটি রচনা করেন - দীনবন্ধু মিত্র। 
  37. নীলদর্পন নাটকটি প্রথম প্রকাশিত হয় - ১৮৬০ খ্রিঃ। 
  38. নীলদর্পন প্রকাশিত হয়েছিলো - ঢাকা থেকে। 
  39. নীলদর্পন নাটকটি রচিত হয়েছিলো - নীলবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে। 
  40. নীলদর্পন নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন - মাইকেল মধুসূদন দত্ত। 
  41. নীলদর্পনের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক ছিলেন - রেভারেন্ড জেমস্ লঙ।
  42. নীলদর্পনকে আঙ্কেল টমস কেবিনের সঙ্গে তুলনা করেন - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। 
  43. নীলদর্পন নাটকের প্রথম অভিনয় হয় - ১৮৭২ খ্রিঃ ন্যাশনাল থিয়েটারে। 
  44. নীলদর্পন প্রকাশ করার অপরাধে লং সাহেবের শাস্তি হয়েছিলো - একমাস কারাদন্ড ও ১০০০ টাকা জরিমানা। 
  45. উড ও রোগ সাহেব চরিত্র গুলি সংযুক্ত ছিলো - নীলদর্পন নাটকের সঙ্গে। 
  46. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা প্রকাশিত হয় - ১৮৬৩ খ্রিঃ।
  47. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন - কাঙাল হরিনাথ মজুমদার। 
  48. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশিত হতো - কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালির "মথুরানাথ প্রেস" থেকে। 
  49. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় - কলকাতার মির্জাপুরের গিরিশ বিদ্যারত্ন প্রেস থেকে। 
  50. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা ছিলো একটি - মাসিক পত্রিকা।
  51. গ্রামবার্তা প্রকাশিকাতে থাকতো - গ্রামসমাজের প্রান্তিক মানুষদের জীবনকথা। 
  52. কাঙাল হরিনাথের প্রকৃত নাম ছিলো - হরিনাথ মজুমদার। 
  53. হরিনাথ মজুমদার পরিচিত ছিলেন - কাঙাল হরিনাথ ও ফিকির চাঁদ বাউল নামে। 
  54. কাঙাল হরিনাথ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদনা করেন - ১৮ বছর। 
  55. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে প্রকাশিত হয় - ১৮৭১ খ্রিঃ থেকে। 

প্রতি রবিবার প্রকাশিত হয় নতুন লেখা *** প্রতি রবিবার প্রকাশিত হয় নতুন লেখা *** প্রতি রবিবার প্রকাশিত হয় নতুন লেখা**** প্রতি রবিবার প্রকাশিত হয় নতুন লেখা
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post