১৯২০ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা অধিবেশন এবং
ঐ বছরের শেষে ডিসেম্বর মাসে নাগপুর অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর ১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। প্রায় এক বছর আন্দোলন সংঘটিত হবার পর চৌরিচৌরা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২২ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারি মাসে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই ১৯২০ থেকে ১৯২২ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়টিকে এককথায় ভারতের ইতিহাসে "অসহযোগ পর্ব" বলা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই পর্বেই শ্রমিক আন্দোলন সবচেয়ে তীব্র ও ব্যাপক আকার ধারণ করেছিলো।
(১.) শ্রমিক অসন্তোষের কারন :-
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অসহযোগ পর্বে একাধিক অর্থনৈতিক কারনে শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ পুঞ্জিভূত হয়।
(i.) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তীকালীন সময়ে খাদ্যাভাব, মুদ্রাস্ফিতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ব্যাপক আকার ধারন করলে তা শ্রমিকদের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ফেলে দেয়।
(ii.) ১৯২০ খ্রিঃ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ২৮১% পৌঁছে যায়। খাদ্যদ্রব্যের দাম ৮০ থেকে ১০০% বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই সময় শ্রমিকদের মজুরি ১৫ শতাংশও বাড়েনি। খাদ্যশস্য, কেরোসিন ও বস্ত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়।
(iii.) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় শিল্পের উৎপাদন ও লভ্যাংশ বৃদ্ধি পেলেও মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেন নি। এই সময় বোম্বাইয়ের বস্ত্রকল মালিকরা ও বাংলার পাটকল মালিকরা প্রভূত পরিমান মুনাফা লাভ করলেও, তীব্র আর্থিক সংকটের কালে শ্রমিকদের কোন মজুরি বাড়ান নি।
(iv.) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর পুনরায় ব্রিটিশ পন্য ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করে। এর ফলে ভারতীয় শিল্পে মন্দা দেখা দেয়। ফলে কারখানা গুলিতে ব্যাপক শ্রমিক ছাঁটাই আরম্ভ হয়। কারখানা গুলি এইসময় তাদের কর্মদিবস ও উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এর ফলে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
(v.) এই সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বেশ কিছু ঘটনা শ্রমিকদের ক্ষোভকে সংগ্রামী চেতনায় পরিনত করে। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সাফল্য শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে নতুন চেতনা ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। আবার এই সময় জাতীয় রাজনীতিতে হোমরুল আন্দোলন, রাওলাট সত্যাগ্রহ, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড এবং খিলাফৎ আন্দোলনের মতো ঘটনা গুলিও শ্রমিকদের অসন্তোষ ও ক্ষোভকে বহুগুন বৃদ্ধি করেছিলো।
(vi.) এছাড়া, বিদেশী পুঁজির মালিকানাধীন শিল্প সংস্থা গুলিতে ভারতীয় শ্রমিকরা অনেক সময়েই জাতি বৈষম্যের শিকার হতেন। ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি ইওরোপীয় মালিক ও অফিসারদের নানা অসম্মান সূচক মন্তব্য ও ব্যবহারও শ্রমিক শ্রেণীর একটা বড়ো অংশকে ক্ষিপ্ত ও অসন্তুষ্ট করেছিলো।
অসহযোগ পর্বের শ্রমিক আন্দোলন গুলিতে এই সম্মিলিত ক্ষোভেরই সংগঠিত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো।
(২.) শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য :-
অসহযোগ পর্বের শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(i.) এই সময় থেকেই ভারতে প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সূচনা ঘটে।
(ii.) শ্রমিক ধর্মঘটের সংখ্যা এই সময় প্রভূত পরিমানে বৃদ্ধি পায়। বস্তুত পক্ষে এ সময় এমন কোন শিল্প ছিলো না, যাতে ধর্মঘট হয় নি।
(iii.) এই পর্বেই শ্রমিকদের শ্রমিকদের বৃহত্তম এবং সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন AITUC প্রতিষ্ঠিত হয়।
(iv.) এই পর্বেই জাতীয় কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনে এগিয়ে আসে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
(v.) এই সময় শ্রমিক ইউনিয়নের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে।
(vi.) এই পর্বের মধ্য দিয়েই ভারতের শ্রমিক আন্দোলন সর্বভারতীয় চরিত্র লাভ করে।
(vii.) এই পর্বের শ্রমিক আন্দোলনের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রমিক সংগঠনে কমিউনিস্টদের উত্তরোত্তর প্রভাব বৃদ্ধি।
(viii.) এই সময়ে যে অসংখ্য ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠেছিলো, তার নেতৃত্ব প্রধানত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতাদের হাতেই ছিলো।
(ix.) মধ্যবিত্ত নেতাদের মধ্যপন্থা ও আপোষমুখী মনোভাবের কারনে এই সময়ের শ্রমিক আন্দোলন গুলি কোন জঙ্গী রূপ নেয় নি। শ্রমিক শ্রেণী শান্তিপূর্ণ ভাবেই এই পর্বে ধর্মঘট গুলি চালিয়ে নিয়ে যায়।
(x.) সর্বোপরি, এই পর্বেই প্রকৃত অর্থে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা হয়। শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট ও আন্দোলনকে বৈধতা দান করার জন্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নিজেদের সংগ্রাম তথা ধর্মঘটের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এর ফলে ক্রমশ শ্রমিক আন্দোলন গুলি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ধারার সঙ্গে অঙ্গীভূত হতে শুরু করে।
(xi.) অসহযোগ পর্বে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশী মালিকানাধীন শিল্প সংস্থা গুলিতে ধর্মঘট জোরদার করা হয়। কিন্তু দেশীয় মালিকানাধীন শিল্প সংস্থা গুলিতে আন্দোলন শুরুর পরেই মধ্যবিত্ত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক নেতৃত্বের উদ্যোগে আপোষ মীমাংসা করে নেওয়া হয়।
(৩.) শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় :-
(ক.) জাতীয় কংগ্রেস ও শ্রমিক শ্রেণী :-
প্রখ্যাত মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনী পাম দত্তের মতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশের অভ্যন্তরে শ্রমিকদের ক্রম অসন্তোষের ফলে কংগ্রেসের পক্ষে আর সহযোগীতার নীতি অনুসরন করা সম্ভব হচ্ছিলো না। এমতাবস্থায় কৃষক - শ্রমিক শ্রেণীর ক্রম অসন্তোষকে গান্ধীজি শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের পথে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
গান্ধীজি যদিও তাত্ত্বিক ভাবে শ্রমিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি শ্রমিক সংগঠনে "শ্রেনী সংগ্রামের" তত্ত্বেও বিশ্বাসী ছিলেন না। শ্রেনী সংগ্রামের বদলে তিনি শ্রমিক ও পুঁজির আপোষ মীমাংসা ও সমঝোতায় বিশ্বাসী ছিলেন।
মাথায় রাখতে হবে প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকেই কংগ্রেসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও আর্থিক সাহায্যকারীদের সবচেয়ে বড়ো সমর্থক ছিলেন দেশীয় শিল্পপতিরা। শ্রমিক আন্দোলন যদি শ্রেনী সংগ্রামের পথে পরিচালিত হয়, তাহলে তা অবশ্যই দেশীয় শিল্পপতিদের আর্থিক স্বার্থে আঘাত করবে এবং এটি হলে শিল্পপতিরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারেন। ফলে কংগ্রেস সাংগঠনিক দিক থেকে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য।
প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই তাই জাতীয় কংগ্রেসের দলীয় অবস্থান ছিলো কংগ্রেসের সকল সম্প্রদায়ের জন্য সম্মিলিত ভাবে সংগ্রাম করবে। কোন বিশেষ বা একক শ্রেনীর জন্য নয়। কিন্তু বিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই দেখা যায় কংগ্রেস তার অবস্থান থেকে সরে আসে এবং শ্রমিক সমস্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করে। এক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবকে কোন মতেই উপেক্ষা করা যায় না।
১৯১৮ খ্রিঃ আমেদাবাদের কাপড়ের কলে মিল মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ তীব্র হয়। শ্রমিকরা বোনাস, ছাঁটাই বন্ধ এবং ৫০% মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে। ১৯১৮ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারি - মার্চ মাসে গান্ধীজি শ্রমিকদের পক্ষ অবলম্বন করেন এবং ৩৫% মজুরি বৃদ্ধির জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। শেষপর্যন্ত মালিকরা গান্ধীজির প্রস্তাব মেনে নেন।
গান্ধীজির এই শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের শ্রমিক নির্লিপ্ততার আপাত অবসান ঘটে। এর ঐতিহাসিক প্রভাব কংগ্রেসের পরবর্তী অধিবেশন গুলিতে দেখা যায়। ১৯১৯ খ্রিঃ জাতীয় কংগ্রেসের অমৃতসর অধিবেশনে কংগ্রেস শ্রমিক সমস্যাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে। এই অধিবেশনে প্রতিটি প্রাদেশিক সংগঠনকে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। ১৯২০ সালের নাগপুর ও গয়া অধিবেশনে কংগ্রেস ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। গয়া অধিবেশনের ভাষনে চিত্তরঞ্জন দাশ এক ভাষনে বলেন - "শ্রমিক ও কৃষকদের কংগ্রেসের পক্ষে আনতেই হবে এবং তাদের বিশেষ স্বার্থের দৃষ্টিকোন ও উচ্চতর আদর্শের দৃষ্টিকোন উভয় দিক থেকেই সংগঠিত করতে হবে।"
খুব স্বাভাবিক ভাবেই অসহযোগ আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতারা শ্রমিক ধর্মঘট সংগঠিত করেন এবং শ্রমিক শ্রেণীকে জাতীয় আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। শ্রমিক শ্রেণীর অর্থনৈতিক অসন্তোষকে জাতীয়তাবাদী নেতারা রাজনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন।
(খ.) AITUC প্রতিষ্ঠা ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন :-
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও প্রবনতা ছিলো ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন।
১৯১৮ খ্রিঃ "মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন" প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের আধুনিক পর্বের সূচনা হলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। এমতাবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্য একটি সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়।
এই চিন্তা ভাবনার ফলশ্রুতিতেই ১৯২০ খ্রিঃ বোম্বাই শহরে এক শ্রমিক সমাবেশে জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক "All India Trade Union Congress" প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিলো ভারতের প্রথম সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন।
AITUC প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন লালা লাজপত রায়। প্রথম সহ সভাপতি নির্বাচিত হন জোসেফ ব্যাপ্তিস্তা এবং দেওয়ান চমনলাল এর প্রথম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। গান্ধীজি না চাইলেও জাতীয় কংগ্রেসের অনেক নেতাই AITUC আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু।
AITUC প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য গুলি ছিলো -
(১.) সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরোধিতা করা,
(২.) শ্রমিকদের সর্বভারতীয় ভিত্তিতে সংগঠিত করা,
(৩.) বিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকা শ্রমিক আন্দোলন গুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করা, এবং
(৪.) জাতীয় রাজনীতিতে শ্রমিক শ্রেণীর অংশগ্রহণের পথকে প্রশস্ত করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে বলিষ্ঠতার জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।
AITUC মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি নিঃসন্দেহে গান্ধীর আদর্শ ও চিন্তাধারার পরিপন্থী ছিলো। এই কারনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন AITUC ছত্রছায়ায় যোগ দিলেও, গান্ধীর নেতৃত্বাধীন "আমেদাবাদ মজদুর মহাজন" কোনদিনই AITUC ছত্রছায়ায় যোগ দেয় নি।
ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠনে AITUC গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ খ্রিঃ ৩০ অক্টোবর, বোম্বাই শহরে AITUC উদ্বোধনী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২১ খ্রিঃ ৩০ নভেম্বর বিহারের কয়লাখনি ঝরিয়াতে AITUC দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে দেওয়ান চমললাল শ্রমিকদের স্বাধীনতা ও স্বরাজের কথা প্রচার করেন।
পরবর্তীকালে ১৯২৪ খ্রিঃ কলকাতায় AITUC চতুর্থ অধিবেশনে সংগঠনের মুখপত্র প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর গঠনতন্ত্র রচনা করা হয়েছিলো। কংগ্রেসের জাতীয় নেতারা AITUC সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকার ফলে শ্রমিক আন্দোলনে এক নতুন ব্যাপ্তি আসে। ১৯২০ খ্রি AITUC উদ্যোগে মোট ২০০ টি ধর্মঘট পালিত হয়। AITUC গঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং দিকে দিকে শ্রমিক ইউনিয়ন স্থাপিত হতে থাকে।
এর ফলে ১৯২০ খ্রিঃ মধ্যে সারা ভারতে প্রায় ১২৫ টি শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হয়। এদের সম্মিলিত সদস্য সংখ্যা ছিলো প্রায় আড়াই লক্ষ। ১৯২০ খ্রিঃ থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনায় শ্রমিক শ্রেণীর অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছিলো। ১৯২০ খ্রিঃ শ্রমিক আন্দোলনের ধারা ১৯২১ ও ১৯২২ খ্রিঃ অব্যাহত থাকে।
(গ.) শ্রমিক ধর্মঘটের সংখ্যা :-
খিলাফৎ - অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৯২০ - ২২ খ্রিঃ ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সর্বাত্মক রূপ লাভ করে। বস্তুত পক্ষে এই সময়ে এমন কোন শিল্প ছিলো না, যাতে ধর্মঘট হয় নি।
(১.) ১৯২০ খ্রিঃ AITUC র ডাকে ২০০ টি শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়।
(২.) ১৯২১ খ্রিঃ অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সারা ভারতে ধর্মঘটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯৬ টি।
(৩.) ১৯২২ খ্রিঃ তা আরোও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৫০ টিতে।
এক পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী ১৯২০ খ্রিঃ বিভিন্ন শ্রমিক ধর্মঘটে প্রায় ৪ লক্ষ শ্রমিক এবং ১৯২১ খ্রিঃ ধর্মঘটে প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিক অংশগ্রহণ করেছিলো। ১৯২০ খ্রিঃ দ্বিতীয়ার্ধে শুধুমাত্র বাংলাতেই মোট ১১০ টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিলো। বাংলা সরকারের একটি গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলায় ১৯২০ সালে স্থায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের সংখ্যা ছিলো ৪০ টি। ১৯২১ ও ১৯২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো যথাক্রমে ৫৫ টি ও ৭৫ টিতে।
"The committee of Industrial Unrest" এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯২০ - ২১ খ্রিঃ বাংলায় মোট ১৩৭ টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিলো। কিছু ধর্মঘট সংগঠিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্মঘট গুলি ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত।
(ঘ.) বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিক ধর্মঘটের পরিচয় :-
অসহযোগ পর্বে বস্ত্রশিল্প, রেল, ট্রাম, চা বাগিচা ও চটকল গুলিতে ব্যাপক ধর্মঘট সংগঠিত হয়।
(i.) রেল ধর্মঘট :-
১৯১৯ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে রেল শ্রমিকরা রাওলাট আইন ও খিলাফৎ অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে অনেকবার ধর্মঘট সংগঠিত করেন। আর কে দাসের লেখা "Factory Labour in India" গ্রন্থ থেকে জামালপুর রেল ওয়ার্কশপে একাধিক রেল শ্রমিকদের ধর্মঘটের কথা জানা যায়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে শ্রমিক ধর্মঘট গুলি সংগঠিত হলেও, ১৯২১ ও ১৯২২ সালে ঝাঝা, তুন্ডলা ও কুমারধুবির রেল ধর্মঘট গুলির ক্ষেত্রে ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি ইওরোপীয় কর্মচারীদের জাতিগত অসম্মান ও নানা বৈষম্যমূলক নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। ১৯১৯ ও ১৯২০ খ্রিঃ উত্তর পশ্চিমে রেলকর্মীদের ধর্মঘট জাতীয় কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গুলির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলো।
(ii.) চটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট :-
এই সময়ের শ্রমিক ধর্মঘট সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় বাংলার পাটশিল্পে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে পাটজাত পন্যের চাহিদা হ্রাস পায়। ফলে মিল মালিকরা চার দিনের সপ্তাহ চালু করে উৎপাদন কমানোর পথে হাঁটতে শুরু করেন। অনেক শ্রমিককে এই সময় ছাঁটাই করা হয়। এর ফলে শ্রমিকরা ধর্মঘটের রাস্তা ধরেন।
১৯২০ খ্রিঃ জুলাই মাস থেকে ইংরেজ মালিকানাধীন বাংলার পাটকল গুলিতে ১৩৭ টি ধর্মঘট হয়। এতে প্রায় এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার শ্রমিক অংশগ্রহণ করে। ১৯২১ খ্রিঃ ধর্মঘটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ টি। মার্টিন,বার্ন, জেসপ প্রভৃতি ইওরোপীয় মালিকাধীন কারখানা গুলিতে এইসময় ধর্মঘট গুলি সংগঠিত হয়।
(iii.) ট্রাম ধর্মঘট :-
১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতার ট্রাম শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ধর্মঘট করে।
১৯২১ খ্রিঃ নভেম্বর মাসে উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোতে ট্রাম শ্রমিক ও চটকল শ্রমিকরা যৌথ ভাবে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
(iv.) ডক শ্রমিকদের ধর্মঘট :-
অসহযোগ আন্দোলনের সময় এক ইংরেজ অফিসার এক ডক শ্রমিকের মাথা থেকে গান্ধী টুপি খুলে নিলে এর প্রতিবাদে ১৯২১ খ্রিঃ ১৪ ডিসেম্বর ধর্মঘট পালন করেন কলকাতার পাঁচ হাজার ডক শ্রমিক।
(v.) স্টিমার ধর্মঘট :-
যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে এবং পূর্ববঙ্গের সর্বত্র স্টিমার ধর্মঘট শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯২১ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে এই ধর্মঘটের অবসান ঘটে।
(vi.) খনিশিল্পে ধর্মঘট :-
অসহযোগ আন্দোলন পর্বে স্বামী বিশ্বানন্দ ও স্বামী দর্শনানন্দের নেতৃত্বে রানীগঞ্জ ও ঝরিয়ার কয়লাখনি গুলিতে শ্রমিক ধর্মঘট চলেছিলো।
(vii.) চা বাগিচা শিল্পে ধর্মঘট :-
ভারতে ইংরেজ মালিকানাধীন চা বাগান গুলিতে ভারতীয় শ্রমিকরা নানা ধরনের অত্যাচার, অবিচারের শিকার হয়ে কাজ করতেন। তাদের নামমাত্র মজুরিতে কাজ করানো হতো। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তার উন্মাদনায় চা বাগানের শ্রমিকরা ধর্মঘটে অবতীর্ণ হয়।
১৯২১ খ্রিঃ মে মাসে আসামের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক দেশে ফেরার জন্য মালিকদের বিনা অনুমতিতে চা বাগান ত্যাগ করে পূর্ব বঙ্গের কুমিল্লা জেলার চাঁদপুর স্টিমার ঘাটে সমবেত হয়। ২২ মে রাত্রিতে গোর্খা বাহিনী ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে বহু কুলিকে হত্যা করে। এই নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে ইস্টবেঙ্গল রেল ও স্টিমার কোম্পানির শ্রমিকরা ব্যাপক ধর্মঘট সংগঠিত করেন।
(viii.) বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট :-
১৯২০ খ্রিঃ থেকে বোম্বাই, মাদ্রাজ ও আমেদাবাদের কাপড়ের কল গুলিতে ব্যাপক ভাবে ধর্মঘট চলতে থাকে। ১৯২০ খ্রিঃ বম্বের বস্ত্রশিল্পের ১২০ টি ট্রেড ইউনিয়নের অধীন প্রায় আড়াই লক্ষ শ্রমিক ধর্মঘট করে। ১৯২১ খ্রিঃ ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলসের আগমনের প্রতিবাদেও তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধর্মঘটে সামিল হয়।
(ix.) টাটা কারখানায় ধর্মঘট :-
১৯২০ খ্রিঃ জামসেদপুরে টাটা ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘটের সময় বাংলার কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্রনাথ হালদারের উদ্যোগে "জামসেদপুর লেবার অ্যাসোসিয়েশন" গঠিত হয়। ১৯২২ খ্রিঃ টাটা ইস্পাত কারখানায় পুনরায় শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত হয়।
(x.) প্রিন্সের আগমনের প্রতিবাদে সাধারণ ধর্মঘট :-
১৯২১ খ্রিঃ নভেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের যুবরাজ ভারত সফরে এলে কংগ্রেস বয়কটের ডাক দিলে ভারতের শ্রমিক শ্রেণী সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দেশব্যাপী সাধারন ধর্মঘটে সামিল হয়। এই সময় বম্বের সমস্ত বস্ত্রকল গুলি বন্ধ থাকে। সমগ্র বোম্বাই শহরে প্রায় আড়াই লক্ষ সূতিকল শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে। এই সময় পার্সিরা প্রিন্স অব ওয়েলসকে স্বাগত জানাতে গিয়ে বম্বের শ্রমিকদের আক্রমণের সম্মুখীন হন।
(ঙ.) শ্রমিক সংগঠনে "কমিউনিস্টদের" ভূমিকা :-
অসহযোগ আন্দোলনের শেষদিকে শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট কর্মীরা দৃঢ়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। এই সময় তারা শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রেনী সংগ্রামের আদর্শে চালানোর চেষ্টা করেন। এই সময় এস এ ডাঙ্গে, মাদ্রাজ সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের মতো আইনজীবীরা মার্কসবাদে দীক্ষিত হন এবং শ্রমিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এস এ ডাঙ্গে এই সময় বোম্বাইয়ের শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ১৯২২ খ্রিঃ এস এ ডাঙ্গের সম্পাদিত "সোস্যালিস্ট" পত্রিকা বোম্বাইয়ের শ্রমিক শ্রেণীর মনে জঙ্গী সংগ্রামী মানসিকতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
(চ.) আন্দোলন প্রত্যাহার ও হতাশা :-
ভারতে জাতীয় কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে তা সমস্ত শ্রেনীর পাশাপাশি শ্রমিকদের মনেও তীব্র আশার সঞ্চার করেছিলো। ১৯২০ খ্রিঃ কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত অসহযোগ প্রস্তাবে বিদেশী শিল্প প্রতিনিধিদের দ্বারা শ্রমিক নিপীড়নের কথা বলা হয়েছিলো। এর ফলে অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে নানা আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। তারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে তাদের ধর্মঘটকে যুক্ত করে নিজেদের সংগ্রামকে শক্তিশালী ও বৈধ করার চেষ্টা চালিয়েছিলো।
ভারতে কংগ্রেস পরিচালিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গুলিতে শ্রমিক শ্রেণী যোগ দিয়েছিলো এই প্রত্যাশায় যে আন্দোলন সফল হলে তাদের তাদের সমস্যা গুলির সমাধান হবে। তাদের মজুরি বাড়বে। মহাজন ও মালিক শ্রেনীর শোষন ও অত্যাচার বন্ধ হবে। কিন্তু ১৯২২ খ্রিঃ উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সাথে সাথে শ্রমিক আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ে।
১৯২২ থেকে ১৯২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত ভারতের শ্রমিক আন্দোলনে মন্দা দেখা যায়। Royal commission of Labour এর তথ্য অনুযায়ী ১৯২৪ থেকে ১৯২৭ খ্রিঃ মধ্যে সারা বছরে মাত্র ১৩০ টি ধর্মঘট সংঘটিত হয়। ১৯২২ থেকে ১৯২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের গতি ছিলো মন্থর, খাপছাড়া ও বিচ্ছিন্ন।
(ছ.) সীমাবদ্ধতা :-
ভারতে অসহযোগ পর্বের শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে একাধিক সীমাবদ্ধতার দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(১.) এই সময় সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠলেও সেখানে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় নি।
(২.) শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব মধ্যবিত্ত শ্রেনীর হাতে থাকায় শ্রমিক আন্দোলনের ধারা ছিলো অনেক ক্ষেত্রেই আপোষমুখী।
(৩.) শ্রমিক আন্দোলনের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিচারিতা অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করেছিলো। ১৯২০ খ্রিঃ কংগ্রেসের অসহযোগ প্রস্তাবে বিদেশী পুঁজিপতিদের সংস্থায় শ্রমিক শোষনের কথা বলা হলেও, দেশীয় উদ্যোগপতিদের সংস্থায় শ্রমিক শ্রেণী যে একই ভাবে নিপীড়িত ছিলেন, সেকথা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়।
(৪.) শ্রমিক আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিলো, বিদেশী পুঁজিপতি সংস্থায় কংগ্রেস আন্দোলন সফল করতে যতটা তৎপর হয়েছিলো, দেশীয় সংস্থা গুলিতে শ্রমিক - মালিক আপোষ সমঝোতা করতে ততটাই উৎগ্রীব হয়ে উঠেছিলো। জামসেদপুরে টাটাদের কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘটের সময় এরকম ভাবেই আপোষ মীমাংসা করা হয়েছিলো।
(৫.) এই সময়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সূচনা হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধর্মঘট ও আন্দোলন শুরু করার পর দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন গুলি নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে। শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে একটি সন্তোষজনক আপোষ রফা করার ব্যাপারে ট্রেড ইউনিয়ন গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ফলতঃ মালিক পক্ষও ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করে।
(জ.) শ্রমিক আন্দোলনের গুরুত্ব :-
অসহযোগ পর্বের শ্রমিক আন্দোলন গুলির একাধিক ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিলো।
(১.) এই পর্বের শ্রমিক আন্দোলন গুলি অসহযোগ আন্দোলন ও এই পর্বের অন্যান্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও ভাবধারাকে তীব্র করে তুলতে সাহায্য করেছিলো।
(২.) এইসব শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও শ্রেনী সচেতনতা অনেক খানি বৃদ্ধি পায়।
(৩.) ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের উপযোগীতা এই পর্বের শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উপলব্ধ হয়।
(৪.) শ্রমিকদের ক্ষোভের কিছু কিছু নিস্পত্তি এই পর্বের আন্দোলনের মধ্যে ঘটেছিলো।
গ্রন্থঋন:-
১. আধুনিক ভারত (পলাশি থেকে নেহরু) - সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়।
২. আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাস (১৭০৭ - ১৯৬৪) - সিদ্ধার্থ গুহ রায় ও সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
৩.আধুনিক ভারতের ইতিহাস (ব্রিটিশরাজ থেকে নেহেরু) - রতন কুমার বিশ্বাস।
৪. আধুনিক ভারতের রূপান্তর - রাজ থেকে স্বরাজ - সমর কুমার মল্লিক ।
৫. আধুনিক ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস - জীবন মুখোপাধ্যায়।
৬. ভারত ইতিহাস পরিক্রমা - প্রভাতাংশু মাইতি ও অসিত কুমার মন্ডল।
৭. ভারতের ইতিহাস - আধুনিক যুগ ১৭০৭ - ১৯৬৪ - তেসলিম চৌধুরী ।
৮. পলাশী থেকে পার্টিশান - শেখর বন্দোপাধ্যায়।
৯. আধুনিক ভারতের ইতিহাস - বিপান চন্দ্র।
১০. আধুনিক ভারত (১৮৮৫ - ১৯৪৭) - সুমিত সরকার।