উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় - ক্লাস - ১ (অতীত স্মরন)


১. অতীত কল্পনা : মিথ, কিংবদন্তি, লোককথা, স্মৃতিকথা ও মৌখিক ঐতিহ্য (Imagine the past : myth, legends, folk-tales, memory and Oral Traditions) :- 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস "প্রথম অধ্যায়", ক্লাস - ১
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস "প্রথম অধ্যায়", ক্লাস - ১

জনশ্রুতি 

মডেল প্রশ্ন ও উত্তর :- 

১. জনশ্রুতি কাকে বলে? 
অথবা, জনশ্রুতি বলতে কী বোঝা?

উত্তর :- যেসব ঐতিহাসিক বিবরন বা কাহিনী গুলির তথ্য ও সন তারিখের যথার্থতার কোন প্রমান থাকে না এবং যেগুলি বংশ পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে বর্তমান সময়েও প্রচলিত আছে সেইসব পৌরাণিক কাহিনী গুলিকেই এককথায় "জনশ্রুতি" বলা হয়।

গল্পের মাধ্যমে অতীত সংরক্ষণ মানুষের ইতিহাস চর্চার একটি আদিম ধারা। জনশ্রুতিকে তাই ইতিহাসের আদি রূপও বলা যায়।

২. জনশ্রুতির কাহিনী গুলি প্রথম সংকলিত হয় - (ক.) জার্মানিতে, (খ.) আফ্রিকাতে, (গ.) জাপানে, (গ.) ইন্দোনেশিয়াতে।

উত্তর :- জার্মানিতে। 

৩. "Kinderund Hausemarchen" কারা কত খ্রিঃ প্রকাশ করেন?

উত্তর :- জেকব গ্রিম ও উইলহেম গ্রিম জার্মানির বিভিন্ন জনশ্রুতির কাহিনী গুলিকে সংগ্রহ করে ১৮১২ খ্রিঃ প্রকাশ করেন - "Kinderund Hausemarchen" নামক গ্রন্থ।

৪. গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় নামে কারা পরিচিত ছিলেন?
অথবা, গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় বিখ্যাত কেন? 

উত্তর :- জনশ্রুতির কাহিনী গুলিকে সংগ্রহ করার কাজ প্রথম জার্মানিতে শুরু করেন জেকব গ্রিম ও উইলহেম গ্রিম নামে জার্মানির দুই ভাই। জার্মানির বিভিন্ন জনশ্রুতির কাহিনী গুলিকে সংগ্রহ করে  তারা ১৮১২ খ্রিঃ প্রকাশ করেন - "Kinderund Hausemarchen" নামক গ্রন্থ। এই কারনে গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় বিখ্যাত। 

৫. ইতিহাসমালা গ্রন্থটি রচনা করেন - (ক.) উইলিয়াম ওয়ার্ড, (খ.) মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার, (গ.) উইলিয়াম কেরি, (ঘ.) উইলিয়াম টম।

উত্তর :- উইলিয়াম কেরি। 

(৬.) ইতিহাসমালা গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় প্রচলিত অতীতের কল্পকথার __________ঘটনার একটি সংকলন ছিলো।

উত্তর :- দেড়শ। 

(৭.) জনশ্রুতির কাহিনী গুলি কিভাবে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিলো?

উত্তর :- অষ্টাদশ শতকে ইওরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলি এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ গড়ে তুললে তাদের হাত ধরে বিভিন্ন মহাদেশের জনশ্রুতি গুলি ছড়িয়ে পড়েছিলো। 

(৮.) জনশ্রুতিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?

উত্তর :- উৎপত্তির ধরন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে জনশ্রুতির কাহিনী গুলিকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা -
  • পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ, 
  • কিংবদন্তি বা লিজেন্ড, 
  • লোককথা, 
  • স্মৃতিকথা, 
  • মৌখিক ঐতিহ্য।

মিথ বা পৌরাণিক কাহিনী 

(৯.) কোন শব্দ থেকে "মিথ" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিলো?

উত্তর :- গ্রিক শব্দ "মিথস্" থেকে ইংরেজি "মিথ" কথাটির উৎপত্তি হয়েছিলো।

(১০.) মিথের সংজ্ঞা দাও। 

উত্তর :- মিথ হলো এমন এক ধরনের (১) ঐতিহ্যগত, (২.) অবাস্তব, (৩) অলৌকিক, (৪) কাল্পনিক গল্পকথা, যেখানে (৫) মানবকুল এবং জগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে সৃষ্টি তত্ত্বের নানা বিবরন (৬) কাহিনীর মাধ্যমে প্রজন্ম পরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে চলে। 

(১১.) মিথের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর :- (১) মিথ গুলি মৌখিক ঐতিহ্যনুসারি,
(২) মিথের স্রষ্টাদের নাম জানা যায় না,
(৩) মিথের কাহিনী গুলি বর্তমানেও প্রচলিত রয়েছে।
(৪) মিথের কাহিনী গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে।
(৫) বিশ্বের অধিকাংশ মিথ গুলির সন্ধান পাওয়া যায় মহাকাব্য (রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড, ওডিসি) গুলিতে।

(১২.) পৌরাণিক কাহিনী গুলি হল - (ক) প্রাগৈতিহাসিক, (খ) ঐতিহাসিক, (গ) প্রায় ঐতিহাসিক, (ঘ) আধুনিক যুগের ইতিহাস ।

উত্তর :- প্রাগৈতিহাসিক। 

(১৩.) ইতিহাস চর্চায় মিথের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী? 

উত্তর :- (১) মিথের মধ্যে নানা অবাস্তব ও কাল্পনিক ঘটনার উল্লেখ থাকলেও, অনেক সত্য উপাদানও লুকিয়ে থাকে। 
(২) মিথ থেকে প্রাচীন ভারতের বহু রাজবংশের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়। 
(৩) মিথের কাহিনী গুলির সঙ্গে তুলনামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করে ইতিহাসের বহু সাল তারিখ নির্নয় করা সম্ভব হয়। 
(৪.) প্রাচীন গ্রিসের মিথের সূত্র ধরেই আধুনিককালে ট্রয় নগরী ও ট্রয়ের যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান নির্নয় করা সম্ভব হয়েছে। (৫) প্রাচীন ভারতীয় মিথ রামায়নের সূত্র ধরে রামসেতুর আবিষ্কার এবং মহাভারতের মিথের সূত্র ধরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ক্ষেত্রের অবস্থান নির্নয় করা সম্ভব হয়েছে। 

কিংবদন্তি বা লিজেন্ড

(১৪.) কোন শব্দ থেকে "Legend" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিলো? 

উত্তর :- ইংরেজি "Legend" শব্দটি লাতিন শব্দ "Legenda" থেকে উৎপত্তি লাভ করেছিলো, যার আক্ষরিক অর্থ ছিলো - পাঠের বিষয়বস্তু বা অধ্যায়নের বিষয়বস্তু। 

 (১৫.) কিংবদন্তি বা লিজেন্ড বলতে কী বোঝা? 

উত্তর :- কিংবদন্তি বা লিজেন্ড হলো কোন বিশেষ অঞ্চলে সংগঠিত কোন ঘটনা বা চরিত্র ভিত্তিক কাহিনী, যা সেই অঞ্চলের মানুষ প্রজন্ম পরম্পরায় মনে রাখে, বিশ্বাস করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রচার করে। 

(১৬.) কিংবদন্তির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর :- (১) কিংবদন্তির কাহিনী গুলি সাধারনত চরিত্র নির্ভর হয়ে থাকে। 
(২.) কিংবদন্তির কাহিনীর মধ্যে নানা অতিরঞ্জন থাকলেও কিংবদন্তির চরিত্র গুলির বাস্তব ভিত্তি থাকে, অর্থাৎ কিংবদন্তির চরিত্র গুলি অতীতে কোন একসময় নিশ্চিত জীবিত ছিলেন। 
(৩.) কিংবদন্তি গুলি মৌখিক ঐতিহ্যনুসারি, অর্থাৎ কিংবদন্তি মুখে মুখে রচিত ও প্রচারিত হয়। 
(৪) কিংবদন্তির কাহিনী গুলি বর্তমানেও প্রচলিত আছে। 
(৫) কিংবদন্তির বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন - ইতিহাস নির্ভর, প্রেম বিরহ নির্ভর, ভূত প্রেতের কাহিনী নির্ভর ইত্যাদি। 
(৬.) কিংবদন্তির কাহিনীর নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকা বা অঞ্চল আছে। 

(১৭.) কোন যুগে কিংবদন্তির উদ্ভব ঘটে? 

উত্তর :- ঐতিহাসিক যুগে নির্দিষ্ট জনসমাজের মধ্যে বড়ো বড়ো রাজা মহারাজা বা শক্তিশালী দলপতির উদ্ভব ঘটার পরে কিংবদন্তির সৃষ্টি হয় বলে ঐতিহাসিকরা অনুমান করে থাকেন। 
(১৮.) ইতিহাস চর্চায় কিংবদন্তি গুরুত্বপূর্ণ কেন? 

উত্তর :- (১) কিংবদন্তির কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে ভারতে বহু প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। 
(২) বাংলার রঘু ডাকাতের কিংবদন্তির সূত্র ধরে ঐতিহাসিকরা হুগলি জেলার বাসুদেবপুরের একটি প্রাচীন কালী মন্দিরকে চিহ্নিত করেছেন। 
(৩) দেবী চৌধুরানীর কিংবদন্তির সূত্র ধরে জলপাইগুড়িতে বেশ কিছু প্রাচীন কালী মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। 
(৪) কিংবদন্তির বিক্রমাদিত্যকে অনুসন্ধান করে ঐতিহাসিকরা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন বলে উল্লেখ করেছেন। 
(৫) যে কোন জনসমাজের জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরনের ক্ষেত্রেও কিংবদন্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

(১৯.) মিথ ও কিংবদন্তির মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী? 

উত্তর :- (১) কিংবদন্তি হলো চরিত্র নির্ভর কাহিনী। কিন্তু মিথ বা পৌরাণিক কাহিনী গুলি হলো মূলত ধর্মীয় ।
(২) মিথের প্রধান চরিত্র হলো দেবদেবী। কিন্তু কিংবদন্তির কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো মানুষ। 
(৩) মিথের কোন কালপঞ্জি থাকে না। কিন্তু কিংবদন্তির ঘটনা গুলির একটি আনুমানিক কালপঞ্জি থাকে। 
(৪) মিথ বা পৌরাণিক কাহিনীর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কিন্তু কিংবদন্তির ঘটনার একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকে। 

লোককথা

(২০.) লোককথা কাকে বলে? 

উত্তর :- লোককথা হলো এমন একধরনের কাল্পনিক গল্পকথা, যেগুলি প্রাচীনকাল থেকেই প্রজন্ম পরম্পরায় জনসমাজে প্রবাহিত হয়ে চলেছে এবং যেগুলি বর্তমানেও প্রচলিত আছে। 

সহজ কথায় বলতে গেলে লোককথা হলো অবাস্তব, আজগুবি, কাল্পনিক রূপকথার গল্প। 

(২১.) লোককথার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর :- (১) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোককথা গুলিকে প্রধানত ৩ টি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়। যথা - পশুকথা, রূপকথা ও পরীকথা।
(২) লোককথা গুলির সৃষ্টিকর্তা বা রচয়িতাদের নাম জানা যায় না।
(৩.) লোককথা গুলি সাধারনত শিশুদের বিনোদনের জন্যই রচনা করা হয়।
(৪) লোককথায় বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক বিষয় যেমন ভূত, প্রেত, দৈত্য দানব, পক্ষীরাজ ঘোড়া, ডানা লাগানো পরী ইত্যাদি চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
(৫) লোককথা গুলিতে স্থান, কাল, পাত্রের কোন সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকে না।

(২২.) ইতিহাস চর্চায় লোককথা গুরুত্বপূর্ণ কেন? 

উত্তর :- লোককথাকে ইতিহাস বলে গন্য করা যায় না। তবে কেউ কেউ লোককথাকে আধা ইতিহাস বলে মনে করে থাকেন। 
(১) লোককথা থেকে সামান্য হলেও একটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ সম্পর্কে একটি আভাস পাওয়া যায়। 
(২) লোককথা থেকে যেকোন প্রাচীন জনসমাজের সামাজিক চরিত্র ও নৈতিক মানদন্ডের দিকটি লক্ষ্য করা যায়।
(৩) লোককথা থেকে  বেশ কিছু ঐতিহাসিক তথ্যেরও আভাস মেলে। যেমন মধ্যযুগের বাংলার চাঁদ সওদাগরের লোককাহিনীতে সপ্তডিঙ্গা মধুকর ভাসিয়ে দূরদেশে বানিজ্যে যাওয়ার বর্ননা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন কাল থেকেই বাংলার বনিকরা দূর দেশে বানিজ্য করতে যেতো। 

স্মৃতিকথা 

 (২৩.) স্মৃতিকথা কাকে বলে? 

উত্তর :- স্মৃতিকথা হলো এমন একধরনের সাহিত্য, যেখানে লেখক তার জীবনে ঘটে যাওয়া বা জীবনে প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ স্মৃতি থেকে এনে তুলে ধরেন। অর্থাৎ স্মৃতিকথা হলো অতীতের স্মৃতিচারণ। 

(২৪.) স্মৃতিকথার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর :- (১) স্মৃতিকথা হলো ইতিহাসের একটি মৌখিক উপাদান।
(২) স্মৃতিকথা মৌখিক উপাদান হলেও তা লিখিত আকারে থাকে। 
(৩) স্মৃতিকথায় কথক ব্যক্তির কোন বিশেষ ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখিত থাকে। 
(৪) স্মৃতিকথা উপস্থাপন করা হয় উত্তম পুরুষে। 
(৫) স্মৃতিকথায় কোন ঐতিহাসিক ঘটনার মানসিক অনুভূতির দিকটি উপলব্ধি করা যায়। 

(২৫.) ইতিহাস চর্চায় স্মৃতিকথা গুরুত্বপূর্ণ কেন? 

উত্তর :- (১) স্মৃতিকথা সাধারণত গুনি ও বিদগ্ধ ব্যক্তিরা লিখে থাকেন বলে এতে অবান্তর, পক্ষপাতমূলক ও অতিরঞ্জন ঘটনার উল্লেখ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। 
(২) স্মৃতিকথায় লেখক বা কথক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী থাকেন বলে তার বিবরনের ঐতিহাসিক সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি থাকে। 
(৩) পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইওরোপে ভৌগলিক আবিষ্কার ও নতুন দেশ আবিষ্কারের কথা একমাত্র স্মৃতিকথা থেকেই জানা যায়। 
(৪) ভারতে দেশভাগের ইতিহাস, দাঙ্গার ইতিহাস, উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস, জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর অত্যাচারের ইতিহাস সম্পূর্ণ ভাবেই স্মৃতিকথার ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। 
(৫) স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রেও স্মৃতিকথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

মৌখিক ঐতিহ্য 

(২৬.) মৌখিক ঐতিহ্য কী? 

উত্তর :- অডিও টেপ বা রেকর্ডের মাধ্যমে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কোন বিশেষ ব্যক্তি, পরিবার, স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং চর্চার বিষয়টিই সাধারনত "মৌখিক ঐতিহ্য" বা "মৌখিক ইতিহাস" নামে পরিচিত।

(২৭.) মৌখিক ঐতিহ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর :- (১) মৌখিক ঐতিহ্য হলো অলিখিত ইতিহাসেরই একটি ভাগ। 
(২) এখানে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 
(৩) মৌখিক ঐতিহ্যে যান্ত্রিক মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবার পর তাকে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হয়। 
(৪) ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ আছে এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকেই এখানে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

(২৮.) ইতিহাস চর্চায় মৌখিক ঐতিহ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর :- (১) মৌখিক ঐতিহ্য নিন্মবর্গের ইতিহাস রচনায় বিশেষভাবে সাহায্য করে। সমাজে প্রান্তিক মানুষদের জীবন সংগ্রামের তথ্য সেভাবে নথিভুক্ত থাকে না। তাই প্রান্তিক মানুষদের ইতিহাস রচনার একমাত্র উপায়ই হলো মৌখিক ঐতিহ্য।
(২) লিখিত উপায়ে অতীত সংরক্ষণের আগে আদিম মানুষ মৌখিক ভাবেই ইতিহাসের কাহিনী ও ঘটনা গুলিকে সংরক্ষন করে রাখতো। তাই মৌখিক ঐতিহ্য ইতিহাস রচনা ও সংরক্ষনের এক প্রাচীন ধারা।
(৩) মৌখিক ঐতিহ্য অনুসরন করেই গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস প্রথম ইতিহাস রচনা করেন। বাংলায় মৌখিক ঐতিহ্য অনুসরন করেই নীল বিদ্রোহের ইতিহাস রচনা করা হয়। দেশভাগের পর উদ্বাস্তু জীবনের ইতিহাস, দাঙ্গার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেও মৌখিক ঐতিহ্যের ধারা অনুসরন করেই ইতিহাস রচনা করা হয়।

(২৮.) মৌখিক ইতিহাস কিভাবে সংগ্রহ করা যেতে পারে? 

উত্তর :- মৌখিক ইতিহাস অডিওটেপ বা ভিডিও রেকর্ডে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। 
(১) লোক মুখে প্রচলিত বিভিন্ন ঘটনার বিবরন মানুষের মুখে শুনে শুনে এবং (২) লোকমুখে ছড়া, গান প্রভৃতি উপাদান থেকে মৌখিক ইতিহাস সংগ্রহ করা হয়। 

(২৮.) মৌখিক ইতিহাস চর্চার বিষয়ে দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম লেখো। 

উত্তর :- "ওরাল হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন" (১৯৬৬), "ওরাল হিস্ট্রি সোসাইটি" (১৯৬৯)। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।

(২৮.) কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ___________ মৌখিক ইতিহাস চর্চার আধুনিক ধারনার বিকাশ ঘটান।

উত্তর :- অ্যালান নেভিনস্।

(২৯.) "কলম্বিয়া ওরাল হিস্ট্রি রিসার্চ অফিস" কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর :- অ্যালান নেভিনস্ ১৯৪০ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠা করেন। 

(৩০.) __________ বলা হয় "সজীব জীবাশ্ম"। 
উত্তর :- লোককথাকে। 

পরিশিষ্ট :-

**গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও প্রবক্তার নাম ** 

(ক) "মিথ হলো প্রাক্ বৈজ্ঞানিক যুগের বিজ্ঞান" - প্রত্নতত্ত্ববিদ জন লরেন্স গোমস। 
(খ) "কিংবদন্তি হলো গুজবের পুনর্গঠন" - আর্নেস্ট বার্নহেইম।
(গ) "সন্তানকে বুদ্ধিমান করতে চাইলে তাদের লোককথার কাহিনী পড়তে দাও " - বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। 

** লোককথা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ **

(ক) "ঠাকুরমার-ঝুলি" - দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার।  
(খ) "টম থাম্বের কাহিনী" - রিচার্ড জনসন।
(গ) "বুড়ো আংলা" - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর । 

**কয়েকটি  উল্লেখযোগ্য স্মৃতিকথার সংক্ষিপ্ত পরিচয় :-


(i.)  "জীবনের জলসাঘরে" 

লেখক - মান্না দে, 

বিষয়বস্তু - মুম্বাই ও কলকাতার সঙ্গীত জীবন সম্পর্কে জানা যায়। 


(ii.) "আমি নেতাজীকে দেখেছি"

লেখক - নারায়ণ সান্যাল, 
বিষয়বস্তু - সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনী সম্পর্কে লেখা এই স্মৃতিকথা।

(iii.) "আমি সূর্য সেনের শিষ্য" 

লেখিকা - আশালতা সরকার, 
বিষয়বস্তু - সূর্য সেন ও বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে লেখা। 

(iv.) "সেদিনের কথা" 

লেখিকা - মনিকুন্তলা সেন, 
বিষয়বস্তু - ১৯৪৬ খ্রিঃ কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সম্পর্কে লেখা। 

(v.) "দেশভাগ - স্মৃতি আর সত্বা" 

লেখক - সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, 
বিষয়বস্তু - দেশভাগ সম্পর্কে লেখা। 


(vi.) "একাত্তরের ডায়েরি" 

লেখক - সুফিয়া কামাল, 
বিষয়বস্তু - বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লেখা। 


(vii.) "ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম" 

লেখক - মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, 
বিষয়বস্তু - ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা সম্পর্কে লেখা। 

(viii.) "দ্যা স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ" 

লেখক - মহাত্মা গান্ধী, 
বিষয়বস্তু - সত্যগ্রহ আদর্শ ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে লেখা। 


(ix.) "যুক্ত বঙ্গের স্মৃতি" 

লেখক - অন্নদাশঙ্কর রায়, 
বিষয়বস্তু - অবিভক্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে লেখা। 

(x.) "উদ্বাস্তু" 

লেখক - হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায়, 
বিষয়বস্তু - দেশভাগের পর উদ্বাস্তু জীবন সম্পর্কে লেখা। 


(xi.) "ছেড়ে আসা গ্রাম" 

লেখক - দক্ষিনারঞ্জন বসু, 
বিষয়বস্তু - দেশ ভাগের ফলে পূর্ব বঙ্গ থেকে হিন্দুদের বিতাড়ন ও দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে লেখা। 


(xii.) "জীবনস্মৃতি" 

লেখক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, 
বিষয়বস্তু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের প্রথম ২৫ বছর ও ঠাকুরবাড়ী সম্পর্কে লেখা। 

(xiii.) "দেশভাগ - স্মৃতি ও স্তব্ধতা" 

লেখক - সেমন্তী ঘোষ 
বিষয়বস্তু - দেশভাগ সম্পর্কে লেখা। 


(xiv.) "আমার জীবন" 

লেখক - বুদ্ধদেব বসু
বিষয়বস্তু - পূর্ব বাংলার গ্রামীন জীবন সম্পর্কে লেখা। 


(xv.) "সি ইউ কি" 

লেখক - চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙের লেখা,
বিষয়বস্তু - প্রাচীন ভারতের বৌদ্ধধর্ম ও রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখা। 

(xvi.) "ফো কুয়ো কি" 

লেখক - চৈনিক পর্যটক ফা হিয়েনের লেখা,
বিষয়বস্তু - প্রাচীন ভারতের বৌদ্ধধর্ম ও রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখা

মিথ,কিংবদন্তি ও লোককথার উদাহরণ:- 


মিথের উদাহরন কিংবদন্তির উদাহরন লোককথার উদাহরণ
দেবী দুর্গা, গনেশ, শিব, বিষ্ণু রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, গোপালভাঁড়, বিক্রমাদিত্য, সিধু, কানু, বীরসা মুন্ডা, রঘু ডাকাত, রবিনহুড, হারকিউলিস, প্রমিথিউস সাত ভাই চম্পা, আরব্য রজনীর গল্প, বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post