"ইতিহাসের ধারনা" অধ্যায়টি পড়বার সময়ে মূল সিলেবাসের বেশ কিছু ধারনার সংজ্ঞা তোমাদের জেনে রাখতে হয়। প্রত্যেক বছরেই এইসব ধারনার সংজ্ঞা সম্পর্কে প্রশ্ন এসে থাকে। আশা করছি, আজকের আলোচনাটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেকখানি সাহায্য করবে।
ইতিহাসের ধারনা : ক্লাস - ২ (সংজ্ঞা ও ধারনা) |
(১.) নতুন সামাজিক ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- নতুন সামাজিক ইতিহাস হলো আধুনিক ইতিহাস চর্চার একটি নতুন ধারা বা পদ্ধতি, যেখানে আগেকার রাজা মহারাজা কেন্দ্রীক ইতিহাসের বদলে সাধারণ মানুষের জীবন কাহিনীকে তুলে ধরা হয়।
এটি হলো এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ইতিহাস, যেখানে তল থেকে অর্থাৎ নীচ থেকে ইতিহাসকে দেখা হয় এবং বিশ্লেষন করা হয়। সমাজের অন্তরালে পড়ে থাকা শ্রেনী গুলির ভূমিকা এবং মানুষের প্রাত্যহিক জীবন ধারার সঙ্গে যুক্ত বিষয় গুলির বিবর্তন ও ভূমিকার দিক গুলিকে এই ইতিহাস চর্চায় তুলে ধরা হয়। নতুন সামাজিক ইতিহাসকে তাই ঐতিহাসিকরা "সংশোধনবাদী ইতিহাসও" বলে থাকেন।
(২.) খেলার ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- খেলাধুলার উৎপত্তি, বিবর্তন এবং মানব সমাজে তার প্রভাবের দিক গুলি নিয়ে যে ইতিহাস চর্চায় আলোচনা করা হয়, তাকেই সাধারণত "খেলার ইতিহাস" বলা হয়।
খেলার ইতিহাস চর্চার প্রথম সূত্রপাত ঘটে ইওরোপে ১৯৭০ এর দশকে।
(৩.) খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চা বলতে কি বোঝো?
উত্তর :- মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য, খাদ্য গ্রহণের নানা রীতি ও খাদ্যসংস্কৃতিকে নিয়ে আলোচনার ইতিহাসকেই এককথায় "খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস" বলা হয়।
খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চা সর্বপ্রথম ফ্রান্সের অ্যানাল গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক রা শুরু করেছিলেন।
(৪.) শিল্প চর্চার ইতিহাস বলতে কি বোঝো?
উত্তর :- সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক এবং চলচ্চিত্রের ইতিহাস চর্চাকেই এককথায় "শিল্পচর্চার ইতিহাস" বলা হয়। সামাজিক ইতিহাস চর্চারই একটি অন্যতম দিক হলো শিল্পচর্চার ইতিহাস।
(৫.) পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- সময়ের হাত ধরে মানুষের সাজ পোশাকে যে বদল আসে, তার ইতিহাসের আলোচনাই এককথায় "পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাস" নামে পরিচিত।
অর্থাৎ পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাস চর্চার মধ্য দিয়ে পোশাক পরিচ্ছদের উদ্ভব, প্রচলন ও বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন - শাড়ির ইতিহাস, ধুতি বা পাজামার ইতিহাস, জিন্সের ইতিহাস, বাঙালিদের বেশবাসের ইতিহাস ইত্যাদি।
(৬.) যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত ও বার্তা প্রেরনের মাধ্যম গুলির উদ্ভব, বিবর্তন এবং জনসমাজে তার প্রভাবের দিক গুলি নিয়ে আলোচনার ইতিহাসকেই সাধারনত "যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস" বলা হয়।
১৯৬০ - ৭০ এর দশকে "যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস" চর্চার সূত্রপাত ঘটে।
(৭.) দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- মানুষের হাতে আঁকা ছবি এবং ফটোগ্রাফির ইতিহাস চর্চাকেই সাধারনত "দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস" বলা হয়ে থাকে। দৃশ্যশিল্পকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা - চিত্র শিল্প ও ফটোগ্রাফি।
(৮.) ফটোগ্রাফি বলতে কি বোঝো?
উত্তর :- সাধারণ অর্থে সূর্যের আলো কিংবা কৃত্রিম আলোকে ব্যবহার করে কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব আঁকার যান্ত্রিক পদ্ধতিকেই "ফটোগ্রাফি"বলা হয়।
অর্থাৎ সহজ করে বলতে গেলে ক্যামেরায় তোলা ছবিকেই ফটোগ্রাফি বলা হয়। ১৯৩৯ খ্রিঃ বানিজ্যিক ভাবে ফটোগ্রাফির সূচনা ঘটেছিলো।
(৯.) স্থাপত্যের ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- মানুষের সৃষ্টিশীল নির্মান বা স্থাপনা গুলির উদ্ভব, বিবর্তন এবং সেগুলির বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্বতন্ত্র ভাবে যে ইতিহাস চর্চা করা হয়, তাকেই সাধারণত "স্থাপত্যের ইতিহাস" বলা হয়।
স্থাপত্যের ইতিহাস চর্চার অন্যতম প্রখ্যাত ঐতিহাসিকদের মধ্যে ছিলেন - জেমস ফার্গুসন, আলেকজান্ডার কানিংহাম, পার্সি ব্রাউন, অমিয় কুমার বন্দোপাধ্যায়।
(১০.) স্থানীয় ইতিহাস বা আঞ্চলিক ইতিহাস বলতে কি বোঝো?
উত্তর :- কোন একটি স্থান বা অঞ্চলের জনসমাজের নিজস্ব ইতিহাসকেই সাধারন ভাবে স্থানীয় ইতিহাস বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন মানুষ বা জনগোষ্ঠী যে অঞ্চল বা এলাকায় বসবাস করে, সেই অঞ্চল বা এলাকার ইতিহাসকেই সাধারনত "স্থানীয় ইতিহাস" বা "আঞ্চলিক ইতিহাস" বলা হয়।
(১১.) শহরের ইতিহাস বলতে কি বোঝ?
উত্তর :- যে ইতিহাস চর্চার মধ্য দিয়ে কোন একটি শহরের পত্তন (প্রতিষ্ঠা), বিবর্তন (বিকাশ), এবং তার অবক্ষয়ের ইতিহাস নিয়ে অথবা এর মধ্যে কোন একটিকে নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকেই সাধারনত" শহরের ইতিহাস "বলা হয়।
(১২.) সামরিক ইতিহাস বলতে কি বোঝো?
উত্তর :- (১.) সামরিক সরঞ্জাম, (২.) সামরিক পদ্ধতি বা কৌশল, (৩.) সেনা সংগঠন, (৪.) যুদ্ধ কৌশল ও যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং (৫.) যুদ্ধের প্রভাব ও ফলাফল - এই মূল ৫ টি দিককে নিয়ে আলোচনার ইতিহাসকেই এককথায় "সামরিক ইতিহাস" বলা হয়।
অর্থাৎ সামরিক নানা দিকের পর্যালোচনা করা হলো সামরিক ইতিহাসের মূল আলোচ্য বিষয়। নতুন সামরিক ইতিহাসের চর্চা শুরু হয় ১৯৭০ এর দশকে। আমাদের দেশে সামরিক ইতিহাস নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন স্যার যদুনাথ সরকার।
(১৩.) পরিবেশের ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানব সমাজের ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসকেই সাধারন ভাবে" পরিবেশের ইতিহাস" বলা হয়।
অর্থাৎ সহজ করে বলতে গেলে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে কিরকম ব্যবহার করছি এবং প্রকৃতি পাল্টা আমাদের ব্যবহারের কি ফিডব্যাক দিচ্ছে, এটাই হলো এই ইতিহাস চর্চার মূল আলোচ্য বিষয়।
(১৪.) বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস বলতে কি বোঝায়?
উত্তর :- বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যা সংক্রান্ত জ্ঞানের বিকাশ এবং মানব সমাজের ওপর তার ব্যবহারিক প্রয়োগের অতীত ইতিহাসের চর্চাকেই সাধারণ ভাবে "বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস" বলা হয়।
১৯২৭ খ্রিঃ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বিজ্ঞান, প্রযুক্তি চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস চর্চায় উদ্যোগী হয়।
(১৫.) নারী ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর :- সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্র গুলিতে নারীদের - (ক.) ভূমিকা, (খ.) অংশগ্রহণ ও (গ.) অবদানের দিক গুলি পর্যালোচনা করে ইতিহাসে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রকৃত মূল্যায়নের লক্ষ্যে যে ইতিহাস চর্চা করা হয়, তাকেই সাধারণত "নারী ইতিহাস" বলা হয়।
নারী ইতিহাস সমাজ ও সভ্যতায় নারীদের অবদানের দিক গুলি তুলে ধরে ইতিহাস চর্চায় দীর্ঘ লিঙ্গ বৈষম্যকে দূর করতে চায়।
(১৬.) মানবীবিদ্যা বা ফেমিনিজম কি?
(১৭.) সরকারি নথিপত্র বলতে কি বোঝো?
উত্তর :- সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারী ও আধিকারিকদের লিপিবদ্ধ বিবরন, প্রতিবেদন ও চিঠিপত্রকেই এককথায় "সরকারি নথিপত্র" বলা হয়।
অর্থাৎ সহজ করে বলতে গেলে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম লিখিত ডকুমেন্টের মধ্য দিয়েই পরিচালিত হয়। এই লিখিত ডকুমেন্ট বা তথ্য গুলিকেই "সরকারি নথিপত্র" বলা হয়।
(১৮.) আত্মজীবনী কাকে বলে?
উত্তর :- আত্মজীবনী হলো কোন ব্যক্তির "নিজস্ব জীবনকথা"। এটি এমন এক ধরনের অ - উপন্যাসধর্মী সাহিত্য, যেখানে ব্যক্তি জীবনের আখ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সমকালীন নানা ঘটনা ও সমাজ সংস্কৃতির আখ্যান।
(১৯.) স্মৃতিকথা কাকে বলে?
উত্তর :- স্মৃতিকথা হলো কোন ব্যক্তির অতীত জীবনে ফেলে আসা স্মরনীয় কোন ঘটনা বা বিশেষ কোন মুহূর্তের "স্মৃতিচারণ মূলক বিবরন"।
আত্মজীবনীর মতো স্মৃতিকথাও স্বনামধন্য, বিখ্যাত ব্যক্তিরা সারধনত লিখে থাকেন।
(২০.) সাময়িকপত্র কাকে বলে?
উত্তর :- যখন কোন পত্রিকা একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর পর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়, তখন তাকেই সাধারণ ভাবে সাময়িকপত্র, সাময়িক বা ম্যাগাজিন বলা হয়ে থাকে।
সাময়িকপত্র বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন - সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি।
(২১.) সংবাদপত্র কাকে বলে?
উত্তর :- যখন কোন পত্রিকা দৈনিক বা প্রত্যহ প্রকাশিত হয়, তখন তাকে "সংবাদপত্র" বলা হয়। সংবাদপত্রে তাৎক্ষণিক নানা সংবাদই মূলত পরিবেশিত হয়।
(২২.) মহাফেজখানা বলতে কি বোঝ?
উত্তর :- সরকারি নথিপত্র যেখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাকে বলা হয়" মহাফেজখানা" বা আর্কাইভস। ভারতে মুঘল আমল থেকেই প্রথম সরকারি নথিপত্র সংরক্ষনের প্রথা প্রচলিত হয়েছিলো। ইংরেজ শাসনকালে ব্রিটিশ পদ্ধতি মেনে সরকারি নথিপত্রকে সংরক্ষণ করা হতো।
ব্রিটিশ আমলে ভারতে ৪ টি সরকারি মহাফেজখানা ছিলো।যথা - কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই এবং মাদ্রাজ (চেন্নাই)।