প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও প্রবনতা ছিলো ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন।১৯১৮ খ্রিঃ মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের আধুনিক পর্বের সূচনা হলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। এমতাবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্য একটি সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়। এই চিন্তা ভাবনার ফলশ্রুতিতে ১৯২০ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো - "All India Trade union Congress"।
অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস |
(১.) AITUC র প্রতিষ্ঠা :-
১৯২০ খ্রিঃ জুলাই মাসে বোম্বাই শহরে বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে এক শ্রমিক সমাবেশে "All India Trade Union Congress" গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। লালা লাজপৎ রায়কে এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন - বি পি ওয়াদিয়া, বাল গঙ্গাধর তিলক, যোসেফ ব্যাপ্তিস্তা, লালা লাজপৎ রায়, এন এম যোশী এবং দেওয়ান চমনলালা।
১৯২০ খ্রিঃ ৩০ শে অক্টোবর বোম্বাই শহরে "সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের" উদ্বোধনী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাল গঙ্গাধর তিলক মারা যাওয়ায় উদ্বোধনী সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন - লালা লাজপত রায়। এর প্রথম সহ সভাপতি নির্বাচিত হন - জোসেফ ব্যাপ্তিস্তা এবং প্রথম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন - দেওয়ান চমনলাল।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৮০৬ জন শ্রমিক নেতা এই অধিবেশনে যোগদান করেন। গান্ধীজি না চাইলেও জাতীয় কংগ্রেসের অনেক নেতাই AITUC আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেন। উদ্বোধনী সভায় জওহরলাল নেহেরুর পিতা মতিলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল, অ্যানি বেশান্ত, জিন্নাহ প্রমুখ বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীকালে AITUC র সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর মতো প্রথম সারির কংগ্রেস নেতারা।
বলা বাহুল্য, জাতীয় কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতৃবৃন্দ AITUC র সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, জাতীয় কংগ্রেস কিন্তু এই সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয় নি।
(২.) উদ্দেশ্য :-
AITUC প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য গুলি ছিলো -
(১.) সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরোধিতা করা,
(২.) শ্রমিকদের সর্বভারতীয় ভিত্তিতে সংগঠিত করা,
(৩.) বিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকা শ্রমিক আন্দোলন গুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করা, এবং
(৪.) জাতীয় রাজনীতিতে শ্রমিক শ্রেণীর অংশগ্রহণের পথকে প্রশস্ত করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে বলিষ্ঠতার জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।
AITUC র উদ্বোধনের সময় সভাপতির ভাষনেই লালা লাজপৎ রায় এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি তুলে ধরেন। তিনি রাশিয়ার সাম্যবাদী বিপ্লবকে স্বাগত জানান এবং ভারতীয় শ্রমিকদের সংগঠিত হবার পরামর্শ দেন। শ্রমিকদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিতি হবার কথাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন - "জঙ্গীবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে পুঁজিবাদের যমজ সন্তান। তারা সকলেই বিষময়। তাদের প্রতিষেধক হচ্ছে সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণী"।
(৩.) AITUC কর্মপদ্ধতি :-
AITUC প্রতিষ্ঠিত হবার পর দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গুলিকে AITUC অধীনে আনা হয়। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক ট্রেড ইউনিয়ন AITUC র অনুমোদন লাভ করে।
তবে AITUC মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি গান্ধীর আদর্শ ও চিন্তাধারার পরিপন্থী হওয়ায় গান্ধীজি কোন দিনই AITUC সভায় যোগদান করেন নি। এমনকি দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন AITUC ছত্রছায়ায় যোগ দিলেও, গান্ধীর নেতৃত্বাধীন "আমেদাবাদ মজদুর মহাজন" কোনদিনই AITUC ছত্রছায়ায় যোগ দেয় নি।
আসলে গান্ধীজি শ্রমিক শ্রেনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি "শ্রেনী সংগ্রাম" তত্ত্বেও বিশ্বাসী ছিলেন না। শ্রম ও পুঁজির সংঘাতের বদলে তিনি শ্রম ও পুঁজির সুসম্পর্কের তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই AITUC র ভাবধারা ও আদর্শ গান্ধীজির চিন্তাধারার বিরোধী ছিলো।
যাইহোক, AITUC প্রতিষ্ঠিত হবার পর ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ খ্রিঃ ৩০ অক্টোবর, বোম্বাই শহরে AITUC উদ্বোধনী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২১ খ্রিঃ ৩০ নভেম্বর বিহারের কয়লাখনি ঝরিয়াতে AITUC দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশন বসেছিলো। এই অধিবেশনে দেওয়ান চমললাল শ্রমিকদের স্বাধীনতা ও স্বরাজের কথা প্রচার করেন। বলা বাহুল্য, পুঁজিপতি মালিকদের কারখানায় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক শ্রেনী শুধু যে শোষিত হয়েছিলেন তাই নয়। তারা তাদের স্বাধীনতাও হারিয়েছিলেন। এমতাবস্থায়, শ্রমিকদের স্বরাজের ঘোষনা নিঃসন্দেহে শ্রমিক চেতনার জাগরনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলো।
১৯২২ খ্রিঃ থেকে AITUC র অধিবেশন গুলি গতানুগতিক হয়ে পড়তে শুরু করে। ১৯২৩ ও ১৯২৪ খ্রিঃ AITUC র বার্ষিক অধিবেশন গুলিতে সভাপতিত্ব করেন - দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। ১৯২৪ খ্রিঃ কলকাতায় AITUC চতুর্থ অধিবেশনে সংগঠনের মুখপত্র প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর গঠনতন্ত্র রচনা করা হয়। ১৯২৬ খ্রিঃ পর্যন্ত AITUC নেতৃত্ব মধ্যবিত্ত শ্রেনীর নেতাদের হাতেই ছিলো। যদিও পরবর্তীকালে AITUC র রাশ কমিউনিস্টদের হাতে চলে যেতে শুরু করে।
১৯২৫ খ্রিঃ কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হবার পরেই শ্রমিক সংগঠনে বামপন্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে থাকেন। এই সময় AITUC তে বামপন্থীদের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। ১৯২৭ খ্রিঃ থেকেই বামপন্থীদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। ১৯২৭ সাল থেকে AITUC র নির্দেশে ভারতে ১ লা মে "মে দিবস" পালন করা হতে থাকে।
তবে গোড়া থেকেই কংগ্রেসের অনেক জাতীয় নেতা AITUC সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলো বলে শ্রমিক আন্দোলন পরিচালনায় AITUC গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পেরেছিলো।১৯২০ খ্রি AITUC উদ্যোগে মোট ২০০ টি ধর্মঘট পালিত হয়। এছাড়া, AITUC গঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনও যথেষ্ট শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে এবং দিকে দিকে শ্রমিক ইউনিয়ন স্থাপিত হতে থাকে।
AITUC র প্রভাবে ১৯২০ খ্রিঃ মধ্যে সারা ভারতে প্রায় ১২৫ টি শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হয়। এদের সম্মিলিত সদস্য সংখ্যা ছিলো প্রায় আড়াই লক্ষ।
(৪.) AITUC র ভাঙ্গন :-
১৯২৯ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে AITUC র নাগপুর সম্মেলনে বামপন্থী শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সংস্কারপন্থী শ্রমিক নেতাদের বিরোধ দেখা যায়। এই সময় এন এম যোশী, ভি ভি গিরির মতো সংস্কারপন্থী ও সরকারের সঙ্গে আপোস নীতিতে বিশ্বাসী শ্রমিক নেতারা AITUC থেকে বেরিয়ে এসে "All India Trade Union Federation" নামে আলাদা একটি শ্রমিক সংগঠন গঠন করেন। এই শ্রমিক সংগঠনটি শ্রমিকদের রাজনৈতিক আন্দোলনের বদলে শ্রমিকদের কল্যানমূলক কর্মসূচি রূপায়নে অধিক আগ্রহী ছিলো।
যাইহোক, AITUC র প্রথম ভাঙ্গনের পর এবং সংস্কারবাদীরা বেরিয়ে যাবার পর বামপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ "ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস" পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় সুভাষচন্দ্র বসু ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩১ খ্রিঃ জুলাই মাসে কলকাতায় AITUC র একাদশ বার্ষিক সম্মেলন বসে। এই সম্মেলনে "জাতীয়তাবাদী বামপন্থী" গোষ্ঠীর সঙ্গে "মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট" গোষ্ঠীর বিরোধ দেখা যায়।
এই সময় মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা জাতীয় কংগ্রেসের মতো বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে একসঙ্গে থেকে আন্দোলন করতে অস্বীকার করে। কংগ্রেসের চিন্তাধারায় পুঁজি ও শ্রমের সুসম্পর্কের তত্ত্ব এবং কমিউনিস্টদের শ্রেনী সংগ্রামের তত্ত্ব একে অপরের পরিপন্থী ছিলো। সুতরাং কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় থেকে প্রকৃত শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করা যাবে না বলে মস্কোপন্থীরা মনে করেন।
এমতাবস্থায় এস ভি দেশপান্ডের নেতৃত্বে AITUC থেকে বেরিয়ে এসে মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা ১৯৩১ খ্রিঃ "Red Trade Union Congress" নামে পৃথক একটি শ্রমিক সংগঠন গঠন করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন AITUC র পর পর দুবার ভাঙ্গন AITUC কে শুধু দুর্বল করে নি। শ্রমিক আন্দোলনকেও দুর্বল করেছিলো।
পর পর দুবার সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনে ভাঙ্গনের ফলে রেল শ্রমিক কর্মচারীদের অনেক সংগঠনই নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যায়। বাংলার চটকল ও বোম্বাইয়ের নাগপুরের বস্ত্রশিল্পেও একই অবস্থা ঘটেছিলো। AITUC র ভাঙ্গনের ফলে শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট ধাক্কা খায়।
(৫.) AITUC র পুনর্মিলন :-
তবে ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্টরা পুনরায় AITUC র কাছাকাছি আসে। এর পরের বছর রেড ট্রেড ইউনিয়নের কংগ্রেস সদস্যরা পুনরায় AITUC তে যোগদান করেন। এর ফলে আইন অমান্য আন্দোলন পর্বের শেষে পুনরায় সাংগঠনিক স্তরে শ্রমিক ঐক্য জোরদার হয়ে উঠতে শুরু করে।
১৯৩৪ খ্রিঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। ঐ বছর জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ১৯৩৪ খ্রিঃ আচার্য নরেন্দ্র দেব ও জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে "কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি" প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দল AITUC র অন্তর্ভুক্ত হয়। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল মনে করতো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম অংশ শ্রমিক কৃষকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষারও প্রয়োজন আছে। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হবার পর কমিউনিস্টদের অনেক নেতাই কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সঙ্গে সহযোগীতা করতে থাকেন।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী প্রাদেশিক আইন সভা গুলিতে শ্রমিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠাবার ব্যবস্থা রাখা হয়। এর ফলে নির্বাচনী বাধ্যবাধকতার দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করে। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে যে প্রাদেশিক নির্বাচন হয় তাতে AITUC সর্বত্র কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থন করে এবং তাদের স্বপক্ষে মিছিল ও সভা সমাবেশ করে। এর ফলে ১১ টির মধ্যে ৭ টি প্রদেশেই জাতীয় কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে জয়লাভ করে। কংগ্রেসের এই জয় ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে বিরাট উদ্মাদনার সঞ্চার করেছিলো।
যদিও এই উদ্মাদনা খুব শীঘ্রই স্তিমিত হয়ে যায়। নবগঠিত কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গুলি মিল মালিকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছিলো। ১৯৩৮ খ্রিঃ বোম্বাই সরকার "Bombay Trade Dispute Act" পাশ করে বেআইনি ধর্মঘটকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। এর পরের বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে জড়িয়ে ফেললে তার প্রতিবাদে কংগ্রেসী মন্ত্রীসভা গুলি পদত্যাগ করে।
(৬.) সীমাবদ্ধতা :-
শ্রমিক আন্দোলনে AITUC গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, পুরোপুরি সফল হতে পারে নি। বস্তুত পক্ষে এর ব্যর্থতার পিছুনে একাধিক সীমাবদ্ধতার দিক জড়িত ছিলো। যেমন -
(১.) প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই AITUC সঙ্গে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা যুক্ত থাকলেও, কংগ্রেস কখনই দলীয় ভাবে এই সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয় নি।
(২.) AITUC র ব্যর্থতার দ্বিতীয় কারনটি ছিলো এর নেতৃত্বের ভার ছিলো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে। শ্রমিকদের কোন নেতৃত্ব AITUC তে প্রতিষ্ঠিত হয় নি।
(৩.) AITUC র বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারার নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক মতাদর্শগত বিরোধের ফলে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে একই তালে শ্রমিক আন্দোলনের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি।
(৪.) সবচেয়ে বড়ো কথা, গান্ধীজির সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের কোন যোগ ছিলো না। গান্ধীজি কোন দিনই AITUC র সভায় যোগ দেন নি। গান্ধীজির আপত্তির কারনেই AITUC জাতীয় কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন হয়ে উঠতে পারে নি।
(৭.) ঐতিহাসিক গুরুত্ব :-
তবে এইসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, মনে রাখতে হবে -
(১.) AITUC ই ছিলো ভারতের প্রথম সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন।
(২.) AITUC গঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিশ শতকে যে সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন দেখা গিয়েছিলো, তার পিছুনে AITUC ভূমিকাকে কখনই উপেক্ষা করা যায় না।
(৩.) AITUC র মধ্য দিয়েই শ্রমিকদের নির্দিষ্ট দাবি দাওয়া ও ক্ষোভ বিক্ষোভ একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত হয় এবং তা একটি সর্ব ভারতীয় রূপ লাভ করে।
(৪.) শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা, পুঁজিবাদী শোষন ও শ্রমিক স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত করে AITUC ভারতীয় শ্রমিকদের রাজনৈতিক দিক থেকে অনেক বেশি সচেতন করে তুলতে পেরেছিলো।