প্রজাস্বত্ব আইন কি ও কেন প্রবর্তন করা হয়?

ইংরেজরা ভারতে আসার পর একাধিক আইন প্রবর্তন করেছিলেন। সেইসব আইন গুলির মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন ছিলো - "প্রজাস্বত্ব আইন"।

প্রজাস্বত্ব আইন কি ও কেন প্রবর্তন করা হয়?
প্রজাস্বত্ব আইন কি ও কেন প্রবর্তন করা হয়? 

(১.) "প্রজাস্বত্ব আইন" কী?

"প্রজা" অর্থাৎ কৃষকের (জমিতে) "স্বত্ব" বা "অধিকার" প্রতিষ্ঠার জন্য যে আইন গুলি প্রণয়ন করা হয়েছিলো, সেই আইন গুলিকেই এককথায় বলা হয় "প্রজাস্বত্ব আইন"। ইংরেজরা ভারতে একাধিক প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন করেছিলো।

১৮৫৯ খ্রিঃ তারা প্রবর্তন করে প্রথম প্রজাস্বত্ব আইন। সেই আইনটিকে সংশোধন করে ১৮৮৫ খ্রিঃ প্রবর্তিত হয় "বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন"। এই আইনটিকেই পরে ভারতের অন্যান্য জায়গায় লাগু করা হয়েছিলো। এই দুটি ছাড়াও আঞ্চলিক ভিত্তিতে আরোও বেশ কিছু "প্রজাস্বত্ব আইন" প্রবর্তন করা হয়েছিল। 

প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন করার পর ভারতের নিন্ম আদালত গুলিতে ঐ সব "প্রজাস্বত্ব আইন" গুলির ভিত্তিতে" কৃষকদের অধিকার" সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। 

(২.) "প্রজাস্বত্ব আইন"  প্রবর্তনের কারন :-

এখন প্রশ্ন হলো কৃষকদের অধিকার বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইংরেজরা কেন এই ধরনের প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিলো? এর পিছুনে মূল কারনই বা কি ছিলো? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদের ইতিহাসের আরেকটু পিছুনে গিয়ে জিজ্ঞাসার অন্বেষণ করতে হবে। 

মাথায় রাখতে হবে, ইংরেজরা ভারতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার পর একাধিক ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলো। ঐ সমস্ত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা গুলির সঙ্গে পূর্ববর্তী মুঘল আমলের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার একটি মৌলিক পার্থক্য ছিলো। মুঘল আমলে জমির মালিকানা ছিলো কৃষকদেরজমিদাররা ছিলেন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি এলাকার রাজস্ব সংগ্রাহক। 

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো আফগান শাসক শেরশাহ জমির ওপর কৃষকদের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য "পাট্টা" ও "কবুলিয়ৎ" নামে দুই ধরনের দলিল প্রবর্তন করেছিলেন। পাট্টা দলিলে কৃষকের জমির স্বত্ব নিশ্চিত থাকতো। এখানে জমির অবস্থান, দাগ নং, পরিমান ইত্যাদির উল্লেখ থাকতো। অন্যদিকে "কবুলিয়ৎ" দলিলে কৃষক তার জমির স্বত্বের পরিমানের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমান ভূমিরাজস্ব সরকারকে দেওয়ার কথা "কবুল" বা অঙ্গীকার করতো। এই দুই দলিলের মাধ্যমে জমির ওপর কৃষকের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়। এই ব্যবস্থা এতটাই সুফলদায়ী ছিলো যে, পরবর্তী মুঘল সম্রাট আকবর শেরশাহ প্রবর্তিত এই ব্যবস্থাটি বহাল রেখে দেন। 

আরোও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে, মুঘল আমলে বেশিরভাগ এলাকাতেই জমিদাররা ছিলেন শুধুমাত্র রাজস্ব সংগ্রাহক। অর্থাৎ রাজস্ব সংগ্রহের জন্য এলাকা ভিত্তিতে জমিদারদের নিয়োগ করা হয়েছিলো বা তাদের ভোগদখলের স্বত্ব প্রদান করা হয়েছিলো। জমিদাররা নায়েব, গোমস্তার মাধ্যমে তার এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতেন, আবার সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন শৃঙ্খলার দিকটিও পরিচালনা করতেন। 

এবার আসা যাক কোম্পানির আমলে এক্ষেত্রে কি পরিবর্তন ঘটেছিলো। কোম্পানি ভারতে যেসব ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলো সেগুলিতে জমির ওপর কৃষকদের স্বত্ব নিশ্চিত ছিলো না। ইংরেজরা বাংলা, ঊড়িষ্যার মতো উর্বর এলাকা গুলিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলো। এই ব্যবস্থায় জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছিলো জমিদারদের। কৃষকরা খাজনা দিতে না পারলেই জমিদাররা জমি থেকে কৃষককে উৎখাত করে তার জমি অন্য কাউকে দিয়ে দিতেন। এইভাবে জমিদারি ব্যবস্থায় বহু কৃষক জমি হারিয়ে ভূমিহীন কৃষকে পরিনত হন। 

বাংলা সহ অন্যান্য এলাকায় আবার অনেক জমিদার একই সঙ্গে মহাজনী কারবারও করতেন। ইংরেজ আমলে নগদে রাজস্ব নেওয়া হতো এবং রাজস্বের হার ছিলো অনেক বেশি। সেই সময় এখনকার মতো ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাও ছিলো না। মহাজনরাই গ্রামীন এলাকায় ব্যাঙ্কারের ভূমিকা পালন করতেন। ইংরেজদের উচ্চ ভূমিরাজস্ব ও নগদ টাকা সংগ্রহের জন্য কৃষকরা মহাজনদের দ্বারস্থ হতেন

আগেই বলেছি, ইংরেজ আমলে কিছু লোক যেমন আলাদা ভাবে মহাজনী কারবার করতো। ঠিক তেমনি অনেক জমিদারও এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মহাজনরা কৃষকদের এতটাই চড়া সুদে ঋন দিতেন, যে কৃষকরা কোনদিনই তা শোধ করে উঠতে পারতো না। এর ফলে মহাজনদের কবলে পড়ে কৃষকরা তাদের জমি হারাতে শুরু করে। জমিদাররা ঋনের ফাঁদে কৃষককে জড়িয়ে তার জমি কেড়ে নিয়ে স্ফিত হতে থাকে। মহাজনও একই ভাবে কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়ে জমিদার হয়ে উঠতে শুরু করেছিলো। 

এইভাবে দেখা যায়, ইংরেজদের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সূত্র ধরে ভারতের কৃষকদের একটি বড়ো অংশ ভূমিচ্যুত হয়ে ভাগচাষী বা কৃষিশ্রমিকে পরিনত হয়। আরোও একটি লক্ষ্য করার বিষয়, জমির ক্ষেত্রে কৃষকদের স্বত্ব যেমন অনিশ্চিত ছিলো। তেমনই কৃষকদের খাজনার বিষয়টিও অনিশ্চিত ছিলো। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের দেয় খাজনা চিরস্থায়ী থাকলেও, কৃষকদের ছিলো না। চিরস্থায়ী এলাকায় জমিদার ধীরে ধীরে কৃষকদের ওপর খাজনার পরিমান বাড়িয়ে দেন এবং খাজনা দিতে অপারগ কৃষকদের জমি গুলি আত্মসাৎ করে নেন। চিরস্থায়ী এলাকা বাদ দিয়ে কোম্পানির রাজস্ব সংগ্রহের আরোও নানা এলাকা ছিলো। যেমন রায়তওয়ারী এলাকা। যেখানে রাজস্বের পরিমান ছিলো অত্যন্ত বেশি। বিদ্রোহের অপরাধে বা অন্য কোন কারনে সরকার কৃষকদের জমি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে নিতে পারতো। 

ইংরেজদের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সূত্র ধরে ভারতের এক বিরাট সংখ্যক কৃষক ভূমিচ্যুত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ক্রমাগত ক্ষোভের বারুদ পুঞ্জিভূত হতে থাকে। সেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফরনেই সমগ্র ইংরেজ শাসনকাল জুড়ে কৃষক অসন্তোষ ও কৃষক বিদ্রোহ অব্যাহত থাকে। এই পরিস্থিতিতে বিরাট ভূমিহীন কৃষকদের ক্ষোভ দূর করা এবং জমির ওপর তাদের অধিকার কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই ইংরেজরা "প্রজাস্বত্ব আইন" প্রবর্তন করেছিলো।

(৩.) বিভিন্ন "প্রজাস্বত্ব আইনের" পরিচয় :- 

(i.) দশম আইন বা প্রথম প্রজাস্বত্ব আইন

১৮৫৯ খ্রিঃ প্রনয়ন করা হয় "দশম আইন" বা প্রথম প্রজাস্বত্ব আইন। এই আইনটি বাংলা, বিহার, ঊড়িষ্যা ও বারানসীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। 

এই আইনের দ্বারা বলা হয় যদি কোন কৃষক ১২ বছর ধরে কোন জমিতে অস্থায়ী দখলী স্বত্ব ভোগ করে বা চাষাবাদ করে, তবে তাকে পাকা দখলী স্বত্ব দেওয়া হবে

এই আইনের সবচেয়ে বড়ো ত্রুটির জায়গা হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমিদার জমিতে দখলদার প্রজাকে কোন খাজনার রসিদ দিতো না। অনেক কৃষকই মৌখিক ভিত্তিতে জমিতে চাষাবাদ করতো। এমতাবস্থায়, জমিদারের বিরুদ্ধে প্রজার ১২ বছরের দখলী স্বত্ব প্রমান করা খুবই কঠিন ছিলো। তাছাড়া এই আইনের পর জমিদাররা কৃষকদের জমি বদল করে ১২ বছরের দখলী স্বত্ব বিষয়ক ১৮৫৯ খ্রিঃ আইনকে ব্যর্থ করে দিতো। 

ফলে এই প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা কৃষকের কোন লাভ হয় নি। এই আইনে কৃষকদের ওপর আরোপিত খাজনার হারকে স্থায়ীভাবে বেঁধে দেওয়া হয় নি। ফলে জমিদারদের ব্যাপক খাজনা বৃদ্ধির পথ খোলা থাকে এবং বর্ধিত খাজনার চাপে যারা জমির স্বত্ব পেয়েছিলেন তাদের পুনরায় জমি হাতছাড়া হওয়ার পথও উন্মুক্ত থাকে। ফলে প্রজার স্বত্ব প্রতিষ্ঠায় একপ্রকার ব্যর্থই হয় এই প্রজাস্বত্ব আইন। 

(ii.) ১৮৮৫ খ্রিঃ বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন :- 

প্রথম প্রজাস্বত্ব আইনের ত্রুটি দূর করার জন্য ১৯৮৫ খ্রিঃ "বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন"প্রনয়ন করা হয়

এই আইনে বলা হয় - 
(১.) একই গ্রামে বা একই জমিদারিতে যদি কোন কৃষক কোন জমি একাদিক্রমে ১২ বছর দখল করে চাষ করে তবে সেই জমিতে তার স্থায়ী স্বত্ব বর্তাবে।
(২.) রায়ত তার দখলী স্বত্ব বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না। 
(৩.) সরকার সেটেলমেন্টের দ্বারা জমিতে কৃষকের স্বত্বের রেকর্ড তৈরি করবে। 
(৪.) প্রজার জমি বদল করে দখলী স্বত্ব থেকে তাদের বিচ্যুত করা যাবে না।

(iii) অন্যান্য এলাকায় ১৮৮৫ খ্রিঃ বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের প্রয়োগ :-

১৮৮৫ খ্রিঃ "বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনকে" ব্রিটিশ সরকার একটি আদর্শ ব্যবস্থা বলে মনে করতো। তাই এই আইন বাংলার বাইরে উত্তরপ্রদেশ ও অন্যান্য রাজ্য গুলিতে প্রয়োগ করা হয়। 

(iv) ১৮৮৫ খ্রিঃ "প্রজাস্বত্ব আইনের" প্রতিক্রিয়া :- 

১৮৮৫ খ্রিঃ বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের সবচেয়ে বড়ো ত্রুটি হলো বর্গা চাষি বা ভাগ চাষী, বছর বন্দোবস্তে চাষকরা খাজনা চাষী এই আইনে কোন জমির স্বত্ব লাভ করতে পারে নি। তাছাড়া, ক্ষেতমজুরদের কথাও এই আইনে ভাবা হয় নি। এই আইনের ফলে জোতদার শ্রেনী ১২ বছর স্থায়ী দখলী স্বত্ব পেয়ে সেই জমি ভাগ বা বর্গায় চাষ করাতে থাকে। ফলে পুরো ব্যাপারটা দাড়িয়েছিলো বাংলা প্রবাদ "তেলা মাথায় তেল দেওয়ার মতো"।

এর ফলে বাংলাদেশে ১৮৮৫ খ্রিঃ প্রজাস্বত্ব আইনের বিরুদ্ধে কৃষক সমিতি গুলি প্রতিবাদ জানায়উত্তর প্রদেশবিহারে ১৯২০ - ২১ খ্রিঃ এবং ১৯৩০ দশকে প্রবল কিষান আন্দোলন দেখা যায়। বিহার কংগ্রেস নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসার পর ১৯০৮ খ্রিঃ "বিহার প্রজাস্বত্ব আইন" পাশ করলেও, জমিদারদের বাধায় তা কার্যকর করতে পারে নি। বাংলাদেশে বর্গা আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করলে ১৯২৮ খ্রিঃ বর্গাদারদের স্বত্ব প্রদানের চেষ্টা হলেও, জমিদার ও জোতদারদের বাধায় সেটিকেও কার্যকর করা যায় নি। 

শেষপর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি বর্গাদারদের অধিকার ও জমিদারী ব্যবস্থা বাতিলের জন্য তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করলে স্বাধীনতার পর ১৯৫৩ খ্রিঃ "জমিদারী ও মধ্যস্বত্ব উচ্ছেদ আইন" পাশ করে বর্গাচাষীকে জমির স্থায়ী স্বত্ব প্রদান করা হয় এবং জমিদারী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করা হয়।

(৪.) ভারতের অন্যান্য প্রদেশের "প্রজাস্বত্ব আইন" :-

উপরোক্ত মূল দুই প্রজাস্বত্ব আইন ছাড়াও আঞ্চলিক ভিত্তিতে আরোও বেশ কিছু প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন করা হয়েছিলো। যেমন -

(ক.) উত্তর প্রদেশে প্রজাস্বত্ব আইন :-

১৮৬৮ খ্রিঃ উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় "অযোধ্যা খাজনা আইন" প্রবর্তন করা হয়।

এই আইনে বলা হয়েছিলো, ১৮৫৬ খ্রিঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কোন চাষী যদি একাদিক্রমে ৩০ বছর জমিতে স্বত্ব না থাকলেও ভোগদখল করে, তবে সেই চাষি ঐ জমিতে উত্তরাধিকার ভিত্তিতে ভোগদখল করতে পারবে। ১৮৭৩ খ্রিঃ সংশোধনীতে ৩০ বছর ভোগদখলের জায়গায় ১২ বছর ভোগদখল করার কথা বলা হয়।

(খ.) পাঞ্জাবে প্রজাস্বত্ব আইন :-

১৯০০ খ্রিঃ "পাঞ্জাব জমি হস্তান্তর আইন" প্রনয়ন করা হয়। এই আইনে বলা হয়, বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া জমি মর্টগেজ বা বন্ধক রাখলে তা অধিগ্রহণ বা দখল করা যাবে না

(গ.) ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন :-

মুন্ডা বিদ্রোহের পর ১৯০৮ খ্রিঃ "ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন" প্রণয়ন করা হয়। এই আইন দ্বারা -
(ক.)মুন্ডাদের খুৎকাঠিপ্রথাকে (যৌথ মালিকানা ভিত্তিক জমিচাষ প্রথা) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাছাড়া,
(খ.) এই আইনে মুন্ডাদের উপর আরোপিত বেগার প্রথাও বন্ধ করা হয়।

(ঘ.) দাক্ষিনাত্য প্রজাস্বত্ব আইন :-

দাক্ষিনাত্যে কৃষক বিদ্রোহের পর (১৮৭৫) ১৮৭৯ খ্রিঃ "দাক্ষিনাত্য কৃষক ত্রান আইন" প্রনয়ন করা হয়। এই আইনে বলা হয় - 

(ক.) ঋন পরিশোধে অক্ষম চাষিকে গ্রেপ্তার বা কারারুদ্ধ করা যাবে না। 
(খ.) এছাড়া এই আইনে মহাজনদের সুদের হার কমিয়ে তাদের সরকার অনুমোদিত সুদ নিতে বাধ্য করা হয়(গ.) মহাজনদের কাছে কৃষকদের জমি হস্তান্তরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

তবে এই আইনে জমি বন্ধক না রেখে সরাসরি বিক্রিতে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ক্ষুদ্র চাষি মহাজনকে ঋনের দায়ে জমি বিক্রি করে দেয়। ফলে এই আইন ক্ষুদ্র কৃষকদের জমিচ্যুত হওয়া আটকাতে পারে নি। 

(৫.) শেষ কথা 

মোটকথা, প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা কৃষকদের স্বত্ব বা অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কৃষকদের জমির ওপর স্বত্ব বা অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কৃষকদের ওপর জমিদার ও মহাজনদের শোষনকে কিছুটা নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু এসবের সুফল কিছু সম্পন্ন চাষি পেলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকরা তার কোন সুফল ভোগ করতে পারে নিঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার আইন তৈরি করলেও, অধিকার অর্জন বা অধিকার সুনিশ্চিত করার কোন সুব্যবস্থা ব্রিটিশ সরকার প্রবর্তন করে নি

কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতে যেতে হতো। কিন্তু ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা ও আমলাতন্ত্র এতটাই জটিল ও ব্যায়বহুল ছিলো যে আদালতে গিয়ে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনার মতো অর্থনৈতিক ক্ষমতা অভুক্ত কৃষক কুলের ছিলো না। ফলে ব্রিটিশ প্রজাস্বত্ব আইন ভারতীয় কৃষকদের অধিকার রক্ষা করতে পারে নি। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post