ভারতে গান্ধীজির ডাকা সর্বশেষ গন আন্দোলন ছিলো ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন। আন্দোলন শুরুর আগেই অবশ্য ১৯৪২ খ্রিঃ ৮ ই আগস্টের শেষরাত্রে ব্রিটিশ পুলিশ গান্ধীজি সহ কংগ্রেসের প্রথম শ্রেণীর নেতাদের গ্রেপ্তার করায়, জনগন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই আন্দোলন শুরু করে। কংগ্রেসের উচ্চমার্গের নেতাদের কোন নিয়ন্ত্রন না থাকায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ১৯৪২ এর জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন "আগস্ট বিপ্লবের" রূপ নেয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন |
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রধান প্রানশক্তি ছিলো কৃষকরা। ডেভিড লো সম্পাদিত "Congress and the Raj" গ্রন্থে ম্যাক্স হারকোট "Kisan populism and Revolution in Rural India the 1942 disturbances in Bihar and east United provinces" নামক এক প্রবন্ধে তথ্য প্রমান দিয়ে দেখিয়েছেন , "ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিলো মূলত একটি কৃষক বিদ্রোহ - জাতীয় বিদ্রোহ নয়"। ভারতীয় জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ ভারতীয় কৃষক সমাজ গান্ধীজির যেকোন আন্দোলনের প্রধান প্রানশক্তি ও চালিকা শক্তি ছিলো। ভারত ছাড়ো আন্দোলনও তার ব্যতিক্রম ছিলো না।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছাত্র ও যুব সম্প্রদায় প্রথম সারিতে থেকে আন্দোলনের রথ টেনে নিয়ে গিয়েছিল। সেই রথের প্রধান অশ্বশক্তি ছিলো কৃষকরা। ড.সুমিত সরকার তাই যথার্থই বলেছিলেন, কৃষকদের ব্যাপক অভ্যুত্থান আগস্ট আন্দোলনকে যথেষ্ট বলশালী করে তুলেছিলো। প্রকৃতপক্ষে কৃষকরাই ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে প্রকৃত গন আন্দোলন ও জঙ্গি আন্দোলনে পরিনত করে। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা কৃষক শ্রেনীর মধ্যে (১.) মধ্যবিত্ত কৃষক,(২.) প্রান্তিক কৃষক ও (৩.) ক্ষেতমজুরদের সংখ্যাই ছিলো বেশি।
(ক.) ভারত ছাড়ো পর্বে কৃষক বিদ্রোহের কারন :-
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক বিদ্রোহ ও কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের পিছুনে ৩ টি মূল কারন ছিলো। যথা - (১.) বিশ্বযুদ্ধ জনিত অর্থনৈতিক ক্ষোভ, (২.) পুলিশি অত্যাচার ও নির্যাতন, এবং (৩.) জাতীয়তাবাদী আবেগ।
১৯৩৯ খ্রিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব ভারতের কৃষক শ্রেনীর ওপর এসে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জনিত মুদ্রাস্ফিতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভারতের ক্ষুদ্র, প্রান্তিক কৃষক এবং ক্ষেতমজুরদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছিলো।
পেন্ডেরেল মুনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ব্রহ্মদেশ দখল করায় সেখান থেকে ভারতে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ভারতে যেটুকু চাল থাকে, তা সরকার সেনার জন্য মজুত করতে শুরু করলে, চাল সহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। খাদ্যশস্যের দাম ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে তারা ব্রিটিশ সরকারের ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়। তারা তাদের দুরবস্থার জন্য ব্রিটিশ শাসনকেই দায়ী করে।
এইজন্য দেখা যায়, দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকরা ব্যাপক ভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। তারা সরকারি সম্পত্তি ভাঙ্গচুর ও লুটপাট করে নিজেদের ক্ষোভ ও রাগের নিবারন করে।
জাপানি আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার পোড়ামাটি নীতি অনুসরন করে ভারতের পূর্ব সীমান্তের সব নৌঘাট, নৌকা, সেতু ও রাস্তাঘাট ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে সাধারন গ্রামীন কৃষকদের মধ্যে, বিশেষত বাংলার কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কেননা যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসের ফলে কৃষকদের ফসল পরিবহনে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
১৯৪২ খ্রিঃ এপ্রিল মাস থেকে সরকার মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ১৮০০ টি নৌকা ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে কৃষকরা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকেই শুধু বঞ্চিত হয় নি, তাদের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়। এককথায় দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার ধ্বংস, চাল ও গমের আকাশ ছোঁয়া দাম, সরকারের খাদ্যশস্য মজুত করা,এসবই কৃষকদের ক্ষোভকে চরম সীমায় পৌঁছে দেয়।
তবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকদের অংশগ্রহণের পিছুনে অর্থনৈতিক ক্ষোভই একমাত্র কারণ ছিলো না। রনজিৎ গুহ তাঁর "Subaltern studies" গ্রন্থে "Quit India in Bihar and Eastern United provinces" নামক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, চল্লিশের দশকে শুধুমাত্র আর্থিক দুর্দশার জন্য কৃষকরা আন্দোলনমুখী হয় নি। (১.) পুলিশি অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া, (২.) উচ্চবর্গের মানুষদের প্রচার এবং (৩.) জাতীয়তাবাদী আবেগ - কৃষক শ্রেনীর বিদ্রোহী হবার মূল কারন ছিলো।
স্টিফেন হেনিংহ্যামের মতেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্যাতন কৃষকদের ব্রিটিশ বিরোধী চেতনাকে বহুগুন স্ফিত করে তুলেছিলো। এই ক্ষোভের কারনেই তারা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকদের অংশগ্রহণের গতিপ্রকৃতির দিকটি গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আন্দোলনের সূচনায় সম্পন্ন উচ্চবর্নের কৃষকরা ও ছোট জমিদাররা অংশগ্রহণ করে। এক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেসের আহ্বান ও জাতীয়তাবাদী আবেগ তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। পরে ঐ সব সম্পন্ন কৃষকদের দেখাদেখি এবং স্বাধীনতা এলে তাদের যাবতীয় দুরবস্থার অবসান হবে এমন আশায় দরিদ্র নিন্মবর্গের কৃষকরা দলে দলে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
(খ.) পূর্ববর্তী আন্দোলন গুলির সঙ্গে ভারত ছাড়ো পর্বে কৃষক আন্দোলনের পার্থক্য :-
অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলন পর্বের কৃষক আন্দোলন গুলির সঙ্গে ভারত ছাড়ো পর্বের কৃষক আন্দোলনের কতকগুলি মৌলিক পার্থক্যের দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(১.) আগের দুই পর্বের কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেস ও গান্ধীজির সরাসরি ভূমিকা ছিলো। কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তা লক্ষ্য করা যায় না। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় জাতীয় কংগ্রেস বেআইনি ঘোষিত হয়। গান্ধীজি সহ কংগ্রেসের প্রথম শ্রেণীর নেতারা আন্দোলন শুরুর আগেই গ্রেপ্তার হন। ফলতঃ কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
(২.) অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকদের আক্রমণ ও রোষের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো স্থানীয় মহাজন ও জমিদাররা। কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকদের আক্রমণ ও রোষের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো সরকার ও সরকারি সম্পত্তি।
(৩.) ভারত ছাড়ো পর্বের কৃষক আন্দোলন গুলিতে অতীতের কৃষক আন্দোলন গুলির মতো রাজস্ব না দেওয়ার কোন অভিযান সংগঠিত হয় নি। তাছাড়া, জমিদার বা মহাজন বাড়ি আক্রমণ এবং মহাজনদের ঋনের কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও আগের আন্দোলন গুলির তুলনায় অনেক কম ছিলো।
(৪.) আসলে ভারত ছাড়ো পর্বে কৃষকরা সাধারনত জমিদার বিরোধী কোন সংগ্রামে লিপ্ত হয় নি। তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিলো ব্রিটিশ সরকার। তবে যেসব জমিদার ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য দেখায়, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই কৃষকরা রাজস্ব বয়কট করে। এমনকি ঐ সব জমিদারদের "দেশদ্রোহী" হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের সামাজিক ভাবেও বয়কট করা হয়।
(গ.) ভারত ছাড়ো পর্বে কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য :-
ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বের কৃষক আন্দোলনের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(১.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলন গন আন্দোলনের সঙ্গে মিশে যায়। তাই একে আলাদা করা খুবই কঠিন। প্রবল জাতীয়তাবাদের দ্বারা এই পর্বের কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়।
(২.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলন শ্রেনী সংগ্রামের পথে চলে নি। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ইংরেজ বিরোধিতার মাত্রা এত তীব্র ছিলো যে, কৃষকরা জমিদারদের সঙ্গে তাদের সংগ্রাম নিয়ে মাথা ঘামায় নি।
(৩.) গান্ধীজি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব গ্রেপ্তার হওয়ায় এবং বামপন্থীরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করায় কৃষক আন্দোলন সংগঠনে এই পর্বে তাদের তেমন ভূমিকা ছিলো না।
(৪.) কংগ্রেস ও গান্ধীর অন্তরালে এই পর্বে ছাত্ররা ও স্থানীয় নেতারা কৃষকদের সংগঠিত করেন।
(৫.) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আগে ভারতের যেসব জায়গায় কৃষক সভার সংগঠন ও আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিলো, দেখা গিয়েছিলো ঐ সব জায়গাতেই কৃষক আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিলো। ঐ সব এলাকায় কৃষকরা সংগঠিত ভাবে দলে দলে আন্দোলনে অংশ নেয়। কৃষকদের সংগঠনে "কৃষক সভা" ব্যতিত ছাত্ররাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৬.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলন থানা আক্রমণ, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস, সংরক্ষিত অরন্যে অনুপ্রবেশের অধিকার, কোন কোন স্থানে খাজনা বয়কট ইত্যাদি কাজকর্মের মধ্যেই আবদ্ধ ছিলো।
(৭.) ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ক্ষেতমজুর, ক্ষুদ্র, ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষক, প্রভৃতি নিন্মবর্নের কৃষকদের অংশগ্রহণ ছিলো অনেক বেশি। আদিবাসী কৃষকরাও এই আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভাবে অংশগ্রহণ করে।
(৮.) আন্দোলনের প্রাথমিক পর্বে জাতীয় কংগ্রেসের বড়ো ও সম্পন্ন কৃষক এবং জমিদাররা আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরে তাদের দেখাদেখি ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দেন।
(৯.) এই পর্বে কৃষকদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ বা বিক্ষোভের চেহারা ৫ টি মূল কেন্দ্রে লক্ষ্য করা যায়। যথা - বিহার, উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশ, বাংলা, ঊড়িষ্যা এবং মহারাষ্ট্র কর্নাটকের অঞ্চল।
(ঘ.) ভারত ছাড়ো পর্বে কৃষক আন্দোলনের পরিচয় :-
ঐতিহাসিক সুমিত সরকার ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৩ টি পর্যায় উল্লেখ করেছেন। প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ভারত ছাড়ো আন্দোলন সূচনার সময় এই আন্দোলন শহরাঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এই সময়ে আন্দোলনের ভরকেন্দ্র শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তরিত হয়। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের এই দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় ব্যাপক কৃষক আন্দোলন।
এই পর্যায়ে কৃষক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিলো ৫ টি অঞ্চল। যথা - (১.) বিহার, (২.) উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল (৩.) ঊড়িষ্যা (৪.) বাংলার মেদিনীপুর এবং (৫.) মহারাষ্ট্র কর্নাটক অঞ্চল। এই সময় বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন জায়গায় কৃষকরা "জাতীয় সরকার" গঠন করে। সরকার এই সময় দমন নীতি প্রয়োগ করে আন্দোলন স্তব্ধ করার চেষ্টা করলে কৃষকরা বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে জঙ্গি আন্দোলনে পরিনত করেন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রকৃত গন আন্দোলনে পরিনত হয়।
(1.) বিহারে কৃষক আন্দোলন
সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা যায়, বিহারে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিস্তার ও তীব্রতা ছিলো সবচেয়ে বেশি। এর পিছুনে দুটি কারন ছিলো - (১.) বিহারে কিষান সভার ব্যাপক সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও আন্দোলন, এবং (২.) কৃষক সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ।
১৯৩০ দশক থেকেই স্বামী সহজানন্দের নেতৃত্বে বিহারের কৃষকরা কিষান সভার মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে আসছিলেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সেই সংগঠিত রূপেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছিলো। এর একটি প্রমান সুমিত সরকার দিয়েছেন। তিনি একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন, বিহারে আন্দোলনকারী ২৪২ জনের মধ্যে ৩৬.৫% ছিলো কৃষক, ০.৮% ছিলো জমিদার এবং ৩.০১% ছিলো কৃষি শ্রমিক।
আন্দোলনের প্রাথমিক পর্বে পাটনা শহর থেকে বিদ্রোহের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে বিহারের প্রায় প্রতিটি জেলায়। ছাত্রদের উদ্যোগে সংগঠিত হয়ে হাজার হাজার কৃষক সরকারি ভবন, সরকারি কোষাগার, টেলিগ্রাফ লাইন, রেললাইন ও রেলস্টেশন আক্রমণ করে। সতীনাথ ভাদুড়ির "জাগরী" উপন্যাসের আলোকে ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠি এর একটি মনোজ্ঞ বিবরন দিয়েছেন। বিহারে প্রায় ৮০% থানা জনতার দখলে চলে গিয়েছিলো।
(১.) যদুবংশ সাহার নেতৃত্বে বিহারের পালামৌ জেলার কৃষকরা, (২.) তালেবর সারার নেতৃত্বে কাটিহারের কৃষকরা এবং (৩.) রামকল ধনুকের নেতৃত্বে মজঃফরপুরের কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়। এছাড়া, (৪.) এইসময় বিহারের হাজারিবাগ, মুঙ্গের, ঝড়িয়া, ভাগলপুর ও ভোজপুরেও ব্যাপক কৃষক অভ্যুত্থান দেখা যায়। (৫.) "ঢেঁড়াইচরিত মানসের" বিবরন থেকে বিহারের কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ততার পরিচয় পাওয়া যায়। সমগ্র ভারত ছাড়ো আন্দোলন জুড়ে গরিব কৃষকের দল বিহার জুড়ে ব্যাপক অভ্যুত্থান ঘটায়। (৬.) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বিহারের সারন জেলায় জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে কৃষক অভ্যুত্থান তীব্র আকার ধারণ করেছিলো।
বিহারের কৃষক আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য ব্রিটিশ সরকার চূড়ান্ত দমন নীতি গ্রহণ করে। সেনাদলকে অবাধে অত্যাচার চালাবার এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।
ব্রিটিশের তীব্র দমন নীতির প্রত্যুত্তরে কৃষকদের নিয়ে "আজাদ দস্তা" নামে একটি গেরিলা সংগঠন গঠন করা হয় দক্ষিণ বিহারে। এর পর গেরিলা কায়দায় শুরু হয় সহিংস নানা কার্যকলাপ। এই কার্যকলাপে কৃষকরা অংশগ্রহণ করেন।
(2.) উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে কৃষক আন্দোলন
উত্তর প্রদেশের কৃষকরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সামিল হয়। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের আজমগড়, বালিয়া ও গোরক্ষপুর জেলা কৃষক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারী কৃষকরা রেলপথ ও স্টেশন ধ্বংস করে দেয় এবং কোর্ট অব ওয়ার্ডের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রে আগুন লাগিয়ে দেয়। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর প্রদেশে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
বালিয়াতে কৃষক আন্দোলনের তীব্রতা ছিলো সবচেয়ে বেশি। কিছুদিনের জন্য সেখানে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং চিতু পান্ডের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বারানসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিনতাই করা "আজাদ" ট্রেনে চড়ে বালিয়া জেলায় পৌঁছে কৃষকদের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেন।
১৯ আগস্ট বিশাল কৃষক জনতা বালিয়া শহর অবরোধ করে। এই ঘটনায় বালিয়ার জেলাশাসক কোষাগারের সমস্ত কাগুজে মুদ্রা পুড়িয়ে ফেলতে এবং সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হন।
উত্তর প্রদেশের কৃষক আন্দোলনের এক প্রধান ঝটিকা কেন্দ্র ছিলো আজমগড়। সেখানকার উত্তেজিত জনতা মধুবন পুলিশ থানা দখল করে নেয়। আজমগড়ের জেলাশাসকের বিবরন থেকে জানা যায়, প্রায় ৫ হাজার লোক লাঠি, বল্লাম, লাঙ্গলের ফাল, হাতুরি, করাত ও কোদাল নিয়ে থানা অবরোধ করে। বলা বাহুল্য, আন্দোলনকারীদের একটা বড়ো অংশই ছিলো শ্রমিক - কৃষক জনতা।
(3.) বাংলাতে কৃষক আন্দোলন
বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলাতেও কৃষকরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলার দিনাজপুর, মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া প্রভৃতি জেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিলো। ঐ সমস্ত এলাকায় জাতীয় আন্দোলন কৃষকদের মধ্যে লোকসংস্কৃতির প্রধান অঙ্গ হয়ে উঠেছিলো।
বাংলায় কৃষকদের সংগঠিত করতে কৃষক সভা এবং ফরওয়ার্ড ব্লক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। বাংলায় কৃষক আন্দোলনে অনেক দলিত ও আদিবাসীরাও কৃষকদের সঙ্গে সামিল হয়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দিনাজপুরে পাইয়া ও রাজবংশী জনজাতি এবং সাঁওতাল জনগোষ্ঠী।
তবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনের প্রধান প্রান কেন্দ্র ছিলো মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি মহকুমা। ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরুর প্রায় একমাস পর ১৯৪২ খ্রিঃ ৮ ই সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর আন্দোলনের প্রধান ঝটিকা কেন্দ্রে পরিনত হয়। বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানকার কৃষকদের ক্ষোভ ছিলো অনেক বেশি। মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথিতে কৃষিজীবী মাহিষ্য সম্প্রদায় আন্দোলনের পুরোভাগে এসেছিলো।
জাপানি আক্রমণ মোকাবিলায় সরকার মেদিনীপুর উপকূলের প্রায় ১৮০০ নৌকা ধ্বংস করে দেয়। এজন্য সরকার কোন ক্ষতিপূরন দেয় নি। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে কৃষকরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরের বছর প্রাকৃতিক বন্যায় মেদিনীপুরে প্রভূত ক্ষতি হলেও, সরকার কোন ত্রানকার্য পরিচালনা করে নি। এই সব কারনে এখানে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ চরম আকার ধারন করেছিলো।
স্থানীয় কংগ্রেসি স্বেচ্ছাসেবী ছাত্ররা মেদিনীপুরের কৃষকদের সংগঠিত করে। প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ একসঙ্গে মিছিল করে মেদিনীপুরের অনেক গুলি থানার ওপর আক্রমণ চালায়। কৃষক জনতার সম্মিলিত আক্রমণে কাঁথি ও তমলুকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রশাসন প্রায় ভেঙ্গে পড়ে।
১৯৪৩ খ্রিঃ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রচুর মানুষ মারা গেলেও সরকার উদাসীন থাকে। কৃষক আন্দোলনের ব্যপকতায় ১৯৪২ খ্রিঃ ১৭ ডিসেম্বর, তমলুকের সমান্তরাল "তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার" গঠিত হয়। তমলুক, সুতাহাটা ও নন্দীগ্রাম থানা নিয়ে জাতীয় সরকারের কাজ চলে। জাতীয় সরকার সম্পন্ন জোতদার ও মজুতদারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে।
এই সময় মেদিনীপুরে মহিষাদল রাজার দেশদ্রোহীতায় ক্রুদ্ধ জনতা ও কৃষকরা সরকারের কাছারি বাড়ি, ধানের গোলা লুঠ করে ও খাজনা বয়কট করে। সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, পটাশপুর থানা উত্তেজিত কৃষক জনতা দখল করে নেয়।
(4.) ঊড়িষ্যাতে কৃষক আন্দোলন
ঊড়িষ্যাতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন সেইসব জায়গাতেই তীব্র হয়ে উঠেছিলো যেখানে আগে থেকেই কৃষকরা কিষান সংঘ ও প্রজামন্ডলের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছিলো। ঊড়িষ্যাতে কৃষক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র গুলি ছিলো কটক, বালেশ্বর, কোরাপুট ও তালচের।
ঊড়িষ্যাতে প্রথমে কটকে আন্দোলন শুরু হয়, তারপরেই আন্দোলনের ভরকেন্দ্র গ্রামাঞ্চলের দিকে সরে যায়। এই সময় কটক, বালেশ্বর ও পুরির মতো উপকূলবর্তী জেলা গুলি আন্দোলনে কেঁপে ওঠে। এইসব জায়গায় কৃষকরা বিভিন্ন রকম গুজবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আন্দোলনকে তীব্র করে তোলেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকদের অতি - সক্রিয়তায় ঊড়িষ্যাতে জেলাগুলির আন্দোলন "গ্রামীন বিদ্রোহের" রূপ নেয়। কৃষকরা প্রকাশ্যে সরকারি আইন লঙ্ঘন করেন, থানা আক্রমণ করে বন্দীদের মুক্ত করেন, পুলিশের ঊর্দি খুলে নেয়, চৌকিদারী কর দেওয়া বন্ধ করে, কোন কোন জায়গায় জমিদারদের কাছারি আক্রমণ করে, মহাজনদের কাছে ধান কেড়ে নেয়। কৃষকদের সাথে গ্রামের বিভিন্ন জাতির মানুষ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
(১.) ঊড়িষ্যাতে দেশীয় রাজ্য "নীলগিরি" ও" ঢেনকানলে" প্রজামন্ডলের নেতৃত্বে উপজাতীয় ও দলিত কৃষকরা অরন্য আইন অমান্য করে বিক্ষোভ করে।
(২.) কোরাপুটে লক্ষন নায়কের নেতৃত্বে উপজাতি কৃষকরা জাপুরের রাজার সংরক্ষিত অরন্য ধ্বংস করে এবং থানা আক্রমণ করে।
(৩.) তবে তালচের রাজ্যে কৃষক আন্দোলন অভিনব আকার ধারন করে। সেখানে স্থানীয় প্রজামন্ডল নেতারা ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করে "চাষী - মৌলি রাজ" প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। তারা স্থানীয় রাজা ও ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করে কৃষকদের স্বপ্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। যেখানে প্রত্যেকের জন্য অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
(৪.) বিকল্প কৃষক রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মালকানগিরি ও নওরঙ্গপুরের উপজাতি কৃষকরাও আন্দোলন শুরু করেছিলো। তারা লক্ষন নাইকোর নেতৃত্বে মদ ও অফিমের দোকান গুলি আক্রমণ করে।
(5.) মহারাষ্ট্র - কর্নাটক অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বোম্বাই প্রেসিডেন্সির কৃষক আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিলো - (১.) মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলা এবং (২.) গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ জেলা ও জম্বুসর তালুক।
গুজরাটের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ঘটনাবহুল না হলেও, এখানে আগস্ট আন্দোলন সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলেছিলো। গুজরাতের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা গেরিলা আক্রমণ চালায়। সুরাটে কৃষকরা রেলপথ অবরোধ করে, রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং সরকারি নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়।
তবে আন্দোলন সবথেকে বেশি তীব্র হয়ে ওঠে পশ্চিম মহারাষ্ট্রের সাতরা জেলায়। সাতরা ছিলো মূলত কৃষকদের জেলা। সেখানে নীচু কুনবি জাতির দরিদ্র কৃষকরা ব্যাপক কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তারা সাতারায় "ন্যায়দান মন্ডল" ও "পতি সরকার" গঠন করে। সাতরার কৃষক আন্দোলন ছিলো ব্রাহ্মন বিরোধী ও ইংরেজ বিরোধী।
"পতি সরকার" ব্রিটিশ বিরোধিতার জন্য গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। দিনের বেলায় কৃষক এবং রাত্রে স্বদেশী গেরিলা সেজে সাতরার জাতীয় সরকার কাজ চালিয়ে যায়। বিদ্রোহী কৃষকরা এই পর্বে নানা পাটিলের নেতৃত্বে ট্রেন লুঠ করে, নীচু তলার অফিসারদের ওপর আক্রমণ করে। ইংরেজদের বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে ন্যায়বিচারের জন্য সাতারায় কৃষকরা "ন্যায়দান মন্ডল" নামক আদালত প্রতিষ্ঠিত করেছিলো।
অন্যদিকে কর্নাটকে কৃষকদের আন্দোলন সহিংস রূপ ধারন করেছিলো। তারা সম্মিলিত ভাবে ১৬০০ টি টেলিগ্রাফ লাইনের ওপর আক্রমণ করে। এছাড়া, ২৬ টি রেল স্টেশন ও ৩২ টি ডাকঘরে হামলা চালায়।
(ঙ.) কৃষক আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা :-
ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(১.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলন শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী আবেগের ওপর ভর করে চলেছিলো। কোন সুনির্দিষ্ট কৃষি ভিত্তিক কর্মসূচি না থাকায় কৃষক আন্দোলন শ্রেনী সংগ্রামের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে নি।
(২.) অনেক জায়গায় কৃষক আন্দোলন গন আন্দোলনের মধ্যে হয় বিলীন হয়ে গিয়েছিলো, না হয় হারিয়ে গিয়েছিলো। এই পর্বের কৃষক আন্দোলনের কোন সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সুফল কৃষকরা লাভ করে নি।
(৩.) পাঞ্জাব, বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও তামিলনাড়ুর যেখানে কৃষি অগ্রগতির হার অপেক্ষাকৃত বেশি ছিলো সেখানে প্রভাবশালী ধনী কৃষকরা শ্রেনী স্বার্থে ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে ছিলো। যুদ্ধের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আবহে জমি বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকি তারা নিতে চায় নি।
(চ.) ঐতিহাসিক গুরুত্ব
অবশ্য এইসব সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও, ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের গুরুত্বকে কখনই উপেক্ষা করা যায় না।
(১.) শ্রেনী সংগ্রাম ছাড়াও কোন আন্দোলন যে কৃষক বিদ্রোহের রূপ নিতে পারে ভারত ছাড়ো পর্বের কৃষক আন্দোলন গুলি ছিলো তার সবচেয়ে বড়ো প্রমান।
(২.) ভারত ছাড়ো পর্বের কৃষক আন্দোলন গুলির মধ্যে দিয়েই ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রকৃত গন আন্দোলনের রূপ লাভ করে। কৃষকরাই প্রকৃত পক্ষে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের শিকড়কে ভারতের প্রত্যন্ত এলাকা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দেয়।
(৩.) ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণের ফলে কৃষক শ্রেনীর রাজনৈতিক সচেতনতাও অনেকখানি বৃদ্ধি পায়। তারা নিজেদের অধিকারবোধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
(৪.) সর্বোপরি বলা যায়, শ্রেনীস্বার্থ ও শ্রেনী সংগ্রামের ধারাকে উপেক্ষা করে ভারতীয় কৃষক শ্রেনী যেভাবে এই আন্দোলনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলো, তাতে প্রমানিত হয়েছিলো, শ্রেনী সংগ্রামের ধারার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ।
সবশেষে বলা যায়, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বামপন্থীরা যেমন অনুপস্থিত ছিলেন। তেমনই অনুপস্থিত ও উপেক্ষিত ছিলো তাদের শ্রেনী সংগ্রামের তত্ত্বও। আন্দোলনে উপস্থিত না থেকেও গান্ধীর শ্রেনী সমন্বয়ের তত্ত্বেই উদ্ভাসিত হয়েছিলো ভারত ছাড়ো পর্বের কৃষক আন্দোলন। এখানেই বোঝা যায়, অনুপস্থিত থাকলেও কৃষকদের ওপর গান্ধীর প্রভাব ঠিক কতখানি ছিলো।
গ্রন্থঋন
১. আধুনিক ভারত (পলাশি থেকে নেহরু) - সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়।
২. আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাস (১৭০৭ - ১৯৬৪) - সিদ্ধার্থ গুহ রায় ও সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
৩.আধুনিক ভারতের ইতিহাস (ব্রিটিশরাজ থেকে নেহেরু) - রতন কুমার বিশ্বাস।
৪. আধুনিক ভারতের রূপান্তর - রাজ থেকে স্বরাজ - সমর কুমার মল্লিক ।
৫. আধুনিক ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস - জীবন মুখোপাধ্যায়।
৬. ভারত ইতিহাস পরিক্রমা - প্রভাতাংশু মাইতি ও অসিত কুমার মন্ডল।
৭. ভারতের ইতিহাস - আধুনিক যুগ ১৭০৭ - ১৯৬৪ - তেসলিম চৌধুরী ।
৮. পলাশী থেকে পার্টিশান - শেখর বন্দোপাধ্যায়।
৯. আধুনিক ভারতের ইতিহাস - বিপান চন্দ্র।
১০. ভারত ছাড়ো আন্দোলন - সম্পাদনা ইয়াসিন খান ও সুশান্ত দে।