অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার পর ভারতের কৃষক আন্দোলনে কিছুটা ভাঁটা দেখা গেলেও, ১৯৩০ দশকে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রভাবে ভারতে কৃষক আন্দোলন পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আইন অমান্য আন্দোলনকে উপলক্ষ্য করে এই সময় কৃষক আন্দোলন বৃক্ষের শাখা প্রশাখা বিস্তৃতির মতো ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
এই পর্বে উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, বাংলা, আসাম, ঊড়িষ্যা, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করে।
আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলন |
(১.) কৃষক আন্দোলনের কারন :-
১৯৩০ দশকে আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির পিছুনে ৩ টি কারন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। এগুলি ছিলো যথাক্রমে -
(এক,)১৯২৯ খ্রিঃ বিশ্বব্যাপী মহামন্দার প্রভাব,
(দুই,) ১৯২৮ খ্রিঃ বারদৌলী সত্যাগ্রহের প্রভাব, এবং
(তিন,) ১৯৩০ দশকে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রভাব।
১৯২৯ খ্রিঃ বিশ্বব্যাপী মহামন্দা দেখা গেলে ভারতেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। ১৯৩০ খ্রিঃ মহামন্দার প্রভাবে ভারতে কৃষিজাত পন্যের দাম অর্ধেকরও বেশি কমে যায়। তার ফলে কৃষি থেকে কৃষকের আয়ও অনেক কমে যায়। অথচ এই সময়ে শিল্প জাত দ্রব্যের (যেমন কাপড়, মশলা, ঔষুধ, কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) দাম কৃষিজাত পন্যের মতো কমে যায় নি। অন্যদিকে সরকারি রাজস্ব ও জমিদারদের খাজনাও কমানো হয় নি। এর ফলে কৃষকের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে।
(ক.) সরকার বা জমিদারদের কর মেটাতে গিয়ে এবং (খ.) সাংসারিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে কৃষক মহাজনদের দ্বারস্থ হয়। ক্রমে করের বোঝা ও মহাজনদের ঋন শোধ করতে না পেরে কৃষকরা জমি হারাতে শুরু করে। যত দিন যাচ্ছিলো তত মহামন্দার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, সেইসঙ্গে কৃষক অসন্তোষও তীব্র হয়ে উঠেছিলো।
এই তীব্র কৃষক অসন্তোষের জন্যই গান্ধীজি ভূমিরাজস্ব কমানোর বিষয়টি আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তি করেন।
আইন অমান্য আন্দোলন শুরুর আগেই অবশ্য গান্ধীজি ১৯৩০ খ্রিঃ ২ রা মার্চ বড়োলাট আরউইনকে ১১ দফা দাবিসনদে কৃষকদের খাজনা ৫০% কমিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার গান্ধীজির ১১ দফা দাবি মানতে অস্বীকার করলে গান্ধীজি আনুষ্ঠানিক ভাবে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন।
আইন অমান্য আন্দোলন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কৃষক সমাজও দলে দলে তাতে অংশগ্রহণ করেন। গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলন ও কৃষকদের খাজনা বন্ধের আন্দোলন এই পর্বে মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছিলো। কৃষকদের সংগ্রামী চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো ১৯২৮ খ্রিঃ বারদৌলীতে সত্যাগ্রহী কৃষকদের সাফল্য।
(২.) আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য :-
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ভারতে কৃষক আন্দোলনের বেশ কিছু লক্ষ্যনীয় বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন -
(i.) ভারতের যে সব অঞ্চলে আইন অমান্য আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিলো, সেখানেই কিষান আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিলো।
(ii.) এই পর্বে জাতীয় কংগ্রেসের পাশাপাশি কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল ও কমিউনিস্টরা কৃষকদের সংগঠিত করতে এগিয়ে এসেছিলো।
(iii.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলন অসহযোগ পর্বের থেকেও ছিলো অনেক বেশি সংগঠিত।
(iv.) বিভিন্ন "কিষান সভা"ও "কৃষক সংগঠনের" মাধ্যমে পরিশিলিত ভাবে এই পর্বে কৃষক আন্দোলন পরিচালিত হয়।
(v.) অসহযোগ পর্বের মতো আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলন গুলি বিদ্রোহের রূপ ধারন করে নি। বিভিন্ন কর্মসূচি ও দাবি নিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিলো।
(vi.) বামপন্থীরা এইসময় কৃষকদের সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
(vii.) কৃষক সভা গুলির মধ্য দিয়ে এই পর্বে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা সংগঠিত হতে শুরু করেন।
(viii.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও মহাত্মা গান্ধীর প্রভাব ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
(ix.) ইংরেজদের সর্বোচ্চ কর আদায়ের নীতি, আদিবাসীদের চিরাচরিত বনভূমির অধিকারে হস্তক্ষেপ, কৃষকদের ভূমিস্বত্ব হারানো, ইত্যাদি বিষয় গুলি এই পর্বেও কৃষক আন্দোলনের প্রধান কারন হিসাবে উঠে আসে।
(x.) ১৯৩০ দশকে কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কিষান সভার ভূমিকা ও অবদান ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিষান সভার ভিত্তিতেই কৃষকরা বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক ভিত্তিতে এই পর্বে সংগঠিত হতে থাকে। এক্ষেত্রে বিহার,অন্ধ্রপ্রদেশ, বাংলাতে কিষান সভা যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।
(৩.) অসহযোগ পর্বের সঙ্গে আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলনের পার্থক্য :-
প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো, অসহযোগ পর্বের কৃষক আন্দোলনের মতো আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলন একই তালের বা বৈশিষ্ট্যের ছিলো না। দুই পর্বের কৃষক আন্দোলনের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(i.) অসহযোগ আন্দোলনের সময় বেশিরভাগ কৃষক আন্দোলন গুলি বিদ্রোহের রূপ নিয়েছিলো। কিন্তু আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের একটি পরিশিলিত ধারা লক্ষ্য করা যায়।
(ii.) অসহযোগ পর্বের চেয়ে আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষকরা অনেক বেশি সংগঠিত ছিলো।
(iii.) অসহযোগ আন্দোলন পর্বের কোন কৃষক আন্দোলনেই জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদের দাবি উঠে নি। কিন্তু আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলনে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদের দাবি উঠেছিলো।
(iv.) দুই পর্বের কৃষক আন্দোলনের মধ্যে আরেকটি পার্থক্যের জায়গা হলো, অসহযোগ পর্বে কৃষক আন্দোলন সংগঠনে কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। কিন্তু আইন অমান্য পর্বে কংগ্রেস ছাড়াও বামপন্থীরা কৃষক আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
(৪.) আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলনের পরিচয় :-
১৯৩০ খ্রিঃ ভারতে গান্ধীজির ডাকে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩০ খ্রিঃ - ১৯৩৪ খ্রিঃ, দুটি পর্বে আইন অমান্য আন্দোলন চলেছিলো। আইন অমান্য আন্দোলনের মূল কর্মসূচিতে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা অর্থাৎ ভূমিরাজস্ব কমানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দলে দলে কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই আন্দোলনে সামিল হয়। প্রকৃতপক্ষে কৃষকরাই আইন অমান্য আন্দোলনকে প্রকৃত গন আন্দোলনে পরিনত করে। কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আইন অমান্য আন্দোলন ও খাজনা বন্ধের আন্দোলন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
যাইহোক, ১৯৩০ খ্রিঃ আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ভারতে কৃষক আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত চালচিত্র আমরা নিন্মলিখিত ভাবে উপস্থাপন করতে পারি।
(ক.) উত্তর প্রদেশে কৃষক আন্দোলন :-
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিলো যুক্তপ্রদেশ বা এখনকার উত্তরপ্রদেশ। কৃষকদের ব্যাপক সমর্থন ও অংশগ্রহণের ফলে উত্তর প্রদেশের আইন অমান্য আন্দোলন গন আন্দোলনের চেহারা নেয়।
(১.) খাজনা বন্ধের আন্দোলন :-
প্রথমে সরকারি খাজনা বন্ধের মাধ্যমে এখানকার কিষান আন্দোলন শুরু হলেও, অতি অল্প সময়ের মধ্যে জমিদার ও তালুকদারদেরও খাজনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৩০ খ্রিঃ কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটি উত্তর প্রদেশে খাজনা বন্ধের নির্দেশ দিলে রায়বেরিলী, আগ্রা, বারবাঁকি জেলায় খাজনা বন্ধের আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করে।
কৃষকরা সরকার, জমিদার ও তালুকদারদের খাজনা দিতে অস্বীকার করে। সরকার এর বিরুদ্ধে তীব্র দমন নীতি নিয়ে অনেক কৃষককে গ্রেপ্তার করলেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। উত্তর প্রদেশের কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন স্বয়ং জওহরলাল নেহেরু। তিনি ভূমিরাজস্বের পাশাপাশি কৃষকদের লবন কর দিতেও নিষেধ করেন। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সদস্যরা এবং কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা এই সময় কিষান আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
(২.) আন্দোলনে ভাঁটার টান ও হিংসার প্রবেশ :-
১৯৩১ খ্রিঃ গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থগিত রেখে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিলে উত্তর প্রদেশের কিষান আন্দোলনে মন্দা ভাব দেখা যায়। গোলটেবিল বৈঠক ভেঙ্গে যাবার পর পুনরায় দ্বিতীয় পর্বের কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়। কংগ্রেস পুনরায় খাজনা বন্ধ আন্দোলনের নির্দেশ দেয়। এই সময় উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলীতে কালিকা প্রসাদ ও অঞ্জনি কুমার নামে দুজন চরমপন্থী কংগ্রেস নেতা অত্যাচারী জমিদারদের বাড়ি ঘেরাও করে কৃষকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।
(৩.) চরমপন্থী আন্দোলনের বিরোধিতা ও দমননীতি:-
কংগ্রেস অবশ্য এই চরমপন্থী আন্দোলনকে সমর্থন করে নি। কালিকা প্রসাদকে কংগ্রেস থেকে বহিস্কার করা হয়। উত্তর প্রদেশের খাজনা বন্ধের আন্দোলনকে গান্ধীজিও সমর্থন করেন নি। এসবের ফলে এবং আইন অমান্য আন্দোলন অস্থায়ীভাবে কিছুদিন স্থগিত রাখার জন্য কিষান আন্দোলনে ভাঁটা পড়ে।
উত্তরপ্রদেশের ছোটলাট হেইলী এই সুযোগে
একদিকে দমন নীতি অপর দিকে টাকায় দু আনা খাজনা হ্রাস করে উত্তর প্রদেশের কৃষক আন্দোলনের রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেন।
(খ.) বাংলায় কৃষক আন্দোলন :-
(১.) বাংলাতে খাজনা বন্ধের কারন:-
মহামন্দার প্রভাবে বাংলায় ধান ও পাটের দাম মারাত্মক ভাবে পড়ে গিয়েছিলো। এর ফলে বাংলার কৃষকদের আয় প্রায় অর্ধেকেরও নীচে নেমে গিয়েছিলো। এর বিরুদ্ধে বাংলাতেও কৃষকরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করে। বাংলায় কৃষকরা (১.) চৌকিদারী কর,(২.) লবন কর ও (৩.) জমিদারি খাজনা বন্ধের জন্য এইসময় আন্দোলন শুরু করেন।
(২.) পূর্ববঙ্গে কৃষক আন্দোলন :-
১৯৩০ দশকে বাংলাদেশে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলো মূলত কিষান সভা, শ্রমিক কৃষক দল ও কৃষক প্রজা দল। এই সময় বাংলায় যেসব কৃষক আন্দোলন হয়েছিলো তার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিলো পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে স্থানীয় জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে সাধারন হিন্দু মুসলমান কৃষকদের সংগঠিত আন্দোলন।
এই কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেছিলো শ্রমিক কৃষক দলের যুব সংগঠন ইয়ং কমরেড লীগ। ক্রমে এই আন্দোলন ঢাকা, ত্রিপুরা, বগুড়া, নোয়াখালী ও রংপুর জেলাতে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
পূর্ববঙ্গের জমিদারদের একাংশ জমিদারির পাশাপাশি মহাজনী কারবারও চালাতেন। মহামন্দার প্রভাবে কৃষকরা জমিদারদের রাজস্ব পরিশোধ করতে না পেরে পুনরায় "মহাজনী জমিদারদের" দ্বারস্থ হয়। এই সুযোগে জমিদাররা চড়া সুদে ঋন দিয়ে কৃষকদের জমি গুলি দখল করে নেন। এর ফলে চাষিরা ভূমিস্বত্ব হারিয়ে "বর্গাদারে" পরিনত হয়। কিষান সভার নেতৃত্বে বর্গাদার কৃষকরা এইসময় সংগঠিত হতে শুরু করেন। বেঙ্গল ওয়াকার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির নেতারা এই সময় জমিদারি ব্যবস্থা বিলোপের দাবি জানিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করতে থাকেন।
(৩.) পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আন্দোলন :-
পূর্ববঙ্গ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিলো।
(১.) মেদিনীপুরে কৃষকদের কর বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করেছিলো।
(২.) ১৯৩০ খ্রিঃ জুলাই থেকে বাঁকুড়া জেলায় খাজনা বন্ধের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
(৩.) এই সময় বাংলায় বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে বর্ধমানের কৃষকরা দামোদর খালের জন্য বর্ধিত করের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয় এবং সরকারকে কর কমাতে বাধ্য করেন।
(গ.) বিহারে কৃষক আন্দোলন :-
১৯৩০ এর দশকে আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে বিহার সংগঠিত কিষান আন্দোলনের তীর্থক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিলো। বিহারে কিষান আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন কংগ্রেসকর্মী স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী।
(১.) স্বামী সহজানন্দ ও কিষান সভার আন্দোলন :-
আইন অমান্য আন্দোলনের আগেই ১৯২৯ খ্রিঃ তিনি বিহার প্রাদেশিক কিষান সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমিদারদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আপোষমুখী নীতির প্রতিবাদে তিনি ১৯৩২ খ্রিঃ কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং কৃষক আন্দোলনকে তীব্র করে তোলেন।
তিনি বিহারের গ্রামে গ্রামে কিষান সভার সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সময় তার কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কার্যানন্দ শর্মা, রাহুল সংকৃত্যায়ন, পঞ্চানন শর্মা ও যদুনন্দন শর্মার মতো অনেক বামপন্থী নেতা জেলায় জেলায় কৃষক সভার শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
কিষান সভার কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য "বিহার প্রাদেশিক কিষান সভা" বৈঠক, সভা, সমাবেশ, পদযাত্রা, গন সত্যাগ্রহ, গন মিছিল ও জ্যাঠা গঠন করে গন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
(২.) কিষান সভার জোরদার আন্দোলন ও কর্মসূচি :-
আইন অমান্য আন্দোলনের পরবর্তীকালে ১৯৩৫ খ্রিঃ "বিহার প্রাদেশিক কিষান সভা" জমিদারি প্রথা বিলোপের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এছাড়া বেআইনি লেভি বন্ধ করা, রায়ত উচ্ছেদ বন্ধ করা, বখস্ত জমি ফেরত দেওয়ার জন্যও জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করে। "বখস্ত" জমি হলো সেই জমি, যা মহামন্দার সময়ে খাজনা দিতে না পারায় প্রজাস্বত্বভোগী কৃষকদের কাছ থেকে জমিদাররা বাজেয়াপ্ত করে কেড়ে নিয়েছিলো।
(ঘ.) আসামে কৃষক আন্দোলন :-
আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনের ঢেউ আসামকেও আন্দোলিত করে।
এইসময় আসামের সুরমা উপত্যকায় জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকরা প্রায় ৬ মাস ধরে খাজনা বন্ধের আন্দোলন চালিয়ে যায়। আসামের কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন করুনা সিন্ধু রায়। তিনি প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনের জন্য বড়ো আকারের কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন।
(ঙ.) ঊড়িষ্যায় কৃষক আন্দোলন :-
ঊড়িষ্যায় কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে "উৎকল প্রাদেশিক কিষান সভা" গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। ঊড়িষ্যায় মালতী চৌধুরী ও তার অনুগামী কংগ্রেস কর্মীরা উৎকল প্রাদেশিক কিষান সভা গঠন করেছিলেন।
১৯৩৫ খ্রিঃ ভারত শাসন অনুসারে ১৯৩৭ খ্রিঃ নির্বাচনের সময় উৎকল কিষান সভার ইস্তাহার প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির ইস্তাহারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো।
ঊড়িষ্যায় দেশীয় রাজ্য গুলিতে বাধ্যতামূলক শ্রমদান, অরন্যের অধিকার ও খাজনা হ্রাসের জন্য উৎকল কিষান সভা ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যায়। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন সময়ে পুরী জেলার জমিদারদের সঙ্গে কৃষকদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
(চ.) পাঞ্জাবে কৃষক আন্দোলন :-
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিলো পাঞ্জাব। ১৯৩০ খ্রিঃ প্রথম দিকে পাঞ্জাবে নওজওয়ান ভারত সভা, কীর্তি কিষান, জাতীয় কংগ্রেস ও আকালি কর্মীদের প্রচেষ্টায় পাঞ্জাবে "কৃষক সভা"গড়ে ওঠে।
কিষান সভা পদযাত্রা, মিছিল ও সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে কৃষকদের দাবি দাওয়া গুলি নিয়ে সোচ্চার হয় ও কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করে। পাঞ্জাবে কিষান সভার নেতৃত্বে ভূমিরাজস্ব হ্রাস, জলকর হ্রাস, ঋনের পরিমান হ্রাস প্রভৃতির দাবি জানানো হয়। আইন অমান্য আন্দোলনের সময় রাজস্ব বয়কটের জন্য পাঞ্জাব কিষান সভা জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করে।
(ছ.) গুজরাটে কৃষক আন্দোলন :-
গান্ধীজির আইন অমান্য আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে গুজরাটের সুরাট ও খেদা অঞ্চলের কৃষকরা পুনরায় কৃষক আন্দোলন শুরু করেন। সরকার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই আন্দোলন দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সরকার বিদ্রোহী কৃষকদের জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা অন্যান্যদের কাছে বিক্রি করে দেয়। অন্যদিকে ঐ সমস্ত বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি যারা কিনেছিলো, তাদের বিরুদ্ধে কৃষকরা পাল্টা "সামাজিক বয়কট" আন্দোলন শুরু করেছিলো।
এর ফলে সরকারের আয় বহুগুন কমে যায়। গান্ধীজি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের আগে এই অঞ্চলের কৃষকদের সমস্যার সমাধান করতে সরকারকে হুমকি দেন। গান্ধীজির অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সরকার কৃষকদের অভিযোগের প্রতিকার না করলে তিনি ইংল্যান্ড সফর (গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়া) বাতিল করে দেবেন। ফলে সরকার দ্রুত কৃষকদের অভিযোগের প্রতিকার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
(জ.) অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন :-
অন্ধ্রপ্রদেশের আইন অমান্য আন্দোলন ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধির আন্দোলনের সঙ্গে মিশে তীব্র আকার ধারণ করেছিলো। আইন অমান্য আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ শুরু হয়েছিলো।
(১.) অন্ধ্র রায়ত সংঘ ও সমিতির ভূমিকা :-
১৯২৮ খ্রিঃ "অন্ধ্র প্রাদেশিক রায়ত সংঘ" গড়ে উঠেছিলো। ১৯২৯ খ্রিঃ বেজওয়াড়েতে অনুষ্ঠিত রায়ত সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে "রায়ত রাজ" গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিলো। "অন্ধ্র প্রাদেশিক রায়ত সংঘ" ও "অন্ধ্র জমিন রায়ত সমিতি" দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকদের ওপর ব্রিটিশ সরকার ও জমিদারদের শোষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সময় এদের সক্রিয়তা ও আন্দোলন বহুগুন বৃদ্ধি পায়।
(২.) এন জি রঙ্গের ভূমিকা :-
অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন কংগ্রেসকর্মী এন জি রঙ্গ। তিনি সংগঠিত ভাবে কিষান আন্দোলন পরিচালনার জন্য গুন্টুর জেলায় "ইন্ডিয়ান পেজেন্টস ইনস্টিটিউটের" মাধ্যমে কৃষকদের কিষান আন্দোলনের জন্য প্রশিক্ষণ দেন। এন জি রঙ্গের নেতৃত্বে অন্ধ্রপ্রদেশে "অরন্য সত্যাগ্রহ" অনুষ্ঠিত হয়।
এন জি রঙ্গের বিশ্বাস ছিলো কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে জমিদারী উচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করবে। এই বিশ্বাসের ওপর ভর করে এই সময় অন্ধ্রে জমিদার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩১ খ্রিঃ অন্ধ্রে বেঙ্কাটরামা নাইডু নামে এক দরিদ্র কৃষক জমিদার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।
অন্ধ্রপ্রদেশে বাল রামকৃষ্ণের নেতৃত্বে কৃষ্ণা জেলায় খাজনা বন্ধের আন্দোলন চলে। ক্রমে খাজনা বন্ধের আন্দোলন অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ধান উৎপাদনকারী এলাকা গুলিতে মহামন্দার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিলো। আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহারের পরেও ঐ সব এলাকায় রাজস্বের হার কমানোর জন্য কৃষকরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। স্থানীয় ভিত্তিতে সম্পন্ন কৃষকরা এই সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
(৩.) অন্ধ্র কৃষক আন্দোলনের পরিশিলিত ধারা :-
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষক আন্দোলনের এক পরিশিলিত ধারা লক্ষ্য করা যায়। ১৯৩৩ সাল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে মিছিলের মাধ্যমে কৃষকরা জেলা ও সদর তালুকে মিলিত হয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করতে থাকে। ১৯৩৬ সালের পর থেকে অন্ধ্রে কৃষকদের সংগঠিত করতে বামপন্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
(ঝ.) কেরালায় কৃষক আন্দোলন :-
দক্ষিণ ভারতের অন্যত্রও কৃষক আন্দোলনের প্রসার ঘটেছিলো। কেরালায় কংগ্রেস নেতা কেলাপ্পনের নেতৃত্বে "কিষান সত্যাগ্রহ" অনুষ্ঠিত হয়। কেরলে গ্রামে গ্রামে "কৃষক সঙ্গম" নামে কৃষক সমিতি গড়ে ওঠে। এই কৃষক সঙ্গম গুলি সভা সম্মেলনের মাধ্যমে কৃষকদের দাবি গুলি তুলে ধরে। পিল্লাই, রামচন্দ্র নেদুমগাড়ি প্রমুখ কমিউনিস্ট ও কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী নেতাদের উদ্যোগে এখানে কৃষকরা সংঘবদ্ধ হয়।
এই পর্বে কেরালায় সংগঠিত কৃষক আন্দোলনের প্রধান দাবি সমূহের মধ্যে ছিলো - কৃষক উচ্ছেদের অবসান ঘটাতে হবে, আগাম খাজনা প্রদানের রীতি বাতিল করতে হবে, সামন্ততান্ত্রিক করের বিলোপ ঘটাতে হবে, খাজনার হার কমাতে হবে।
(৫.) আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা :-
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ভারতে যে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিলো তার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(i.) অসহযোগ পর্বের কৃষক আন্দোলনের মতো কংগ্রেস আইন অমান্য পর্বের সংগঠিত কৃষক আন্দোলন গুলিকেও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টা করে। ফলে আইন অমান্য পর্বে কৃষক আন্দোলন শ্রেনী সংগ্রামের স্তরে উন্নীত হতে পারে নি।
(ii.) কংগ্রেস কৃষক আন্দোলনকে সবসময়ই চরমপন্থী চরিত্র গ্রহনে বাধা দেয়। কংগ্রেসের এই দোদুল্যমান, আপোষমুখী নীতির কারনে অনেক কংগ্রেসি কৃষক নেতা এই সময় বিরক্ত হয়ে কংগ্রেস পার্টি ছেড়ে দেন। বিহারে স্বামী সহজানন্দ এদের অন্যতম ছিলেন। কংগ্রেসের আপোষমুখী নীতির কারনেই আইন অমান্য পর্বে উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
(iii.) আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলন গুলি আগের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত হলেও, সেগুলি সর্বভারতীয় রূপ নেয় নি। কৃষক আন্দোলন গুলি মূলত আঞ্চলিক স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
(iv.) এই পর্বের কৃষক আন্দোলনের আরেকটি দুর্বলতা হলো ঐক্যের অভাব। কংগ্রেস কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করলেও জঙ্গি কৃষক আন্দোলনকে কখনই সমর্থন করে নি। জমিদারদের সমর্থন হারানোর ভয়ে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের দাবিকে সমর্থন করে নি। কংগ্রেসের দ্বিচারিতা ও আপোষমুখী নীতির কারনে এই পর্বের কৃষক আন্দোলন তার কাঙ্খিত সুফল লাভ করতে পারে নি। কৃষক আন্দোলন বিক্ষোভ প্রদর্শনের কার্যক্রমের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে। কংগ্রেসের উচ্চমার্গের নেতৃত্বের সঙ্গে স্থানীয় কংগ্রেসি কৃষক নেতাদের বিরোধ দেখা যায়।
(v.) কংগ্রেস ছাড়া অন্যান্য কৃষক নেতাদের মধ্যেও নানা আদর্শগত ও দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্য ছিলো। উদাহরন হিসাবে স্বামী সহজানন্দ সরস্বতীর সঙ্গে বামপন্থীদের মতবিরোধের কথা বলা যায়।
(vi.) এই সময় প্রজাস্বত্ব নিয়ে সরকার যেসব আইন পাশ করেছিলো তাতে সম্পন্ন কৃষকরা লাভবান হলেও, দরিদ্র কৃষকরা কোনভাবে লাভবান হয় নি। প্রান্তিক কৃষকদের অবস্থানের কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটে নি।
(৬.) ঐতিহাসিক গুরুত্ব :-
তবে এইসব সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলনের গুরুত্বকে কখনই উপেক্ষা করা যায় না। এই সময়ে কৃষক আন্দোলনের ফলে -
(ক.) কৃষকদের রাজনৈতিক চেতনা অনেকখানি বৃদ্ধি পেয়েছিলো।
(খ.) এই পর্বে কৃষক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে কৃষকরা তাদের প্রধান সমস্যা ও প্রধান শত্রুদের চিহ্নিত করতে পেরেছিলো। কৃষকরা নিজেদের অধিকারবোধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেন। এককথায়, কৃষকদের শ্রেনী সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছিলো আইন অমান্য পর্বের কৃষক আন্দোলন। এটি পরবর্তীকালের কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করতে নানা ভাবে সাহায্য করেছিলো।
(গ.) আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করে কৃষকরা পরবর্তীকালে - (১.) কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করে ক্রমে বামপন্থী আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে। এছাড়া, (২.) পরবর্তীকালে কার্যকরী কৃষক আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভব করেন।
(ঘ.) এই উপলব্ধি থেকেই ১৯৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ ১৯৩৬ খ্রিঃ এপ্রিল মাসে লক্ষ্মৌতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল এবং কংগ্রেসের "বামপন্থী" অংশ সম্মিলিত ভাবে "ALL INDIA KISAN SABHA" প্রতিষ্ঠা করে। বিহারের প্রখ্যাত কৃষক নেতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী কিষান সভার প্রথম অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সম্পাদক হন অন্ধ্রপ্রপ্রদেশের জনপ্রিয় কিষান নেতা এন জি রঙ্গ।
(ঙ.) সবশেষে বলা যায়, ১৯৩০ এর দশকে কৃষক আন্দোলন ভারতে আইন অমান্য আন্দোলনকে প্রকৃত গন আন্দোলনে পরিনত করে। কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় আন্দোলনের শিকড় ভারতের প্রান্তিক এলাকা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বোপরি, কৃষক আন্দোলন আইন অমান্য আন্দোলনে যে অভূতপূর্ব গতি এনেছিলো তা ভবিষ্যত সংস্কারের পথকেও প্রশস্ত করেছিলো।
গ্রন্থঋন
১. আধুনিক ভারত (পলাশি থেকে নেহরু) - সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়।
২. আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাস (১৭০৭ - ১৯৬৪) - সিদ্ধার্থ গুহ রায় ও সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
৩.আধুনিক ভারতের ইতিহাস (ব্রিটিশরাজ থেকে নেহেরু) - রতন কুমার বিশ্বাস।
৪. আধুনিক ভারতের রূপান্তর - রাজ থেকে স্বরাজ - সমর কুমার মল্লিক ।
৫. আধুনিক ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস - জীবন মুখোপাধ্যায়।
৬. ভারত ইতিহাস পরিক্রমা - প্রভাতাংশু মাইতি ও অসিত কুমার মন্ডল।
৭. ভারতের ইতিহাস - আধুনিক যুগ ১৭০৭ - ১৯৬৪ - তেসলিম চৌধুরী ।
৮. পলাশী থেকে পার্টিশান - শেখর বন্দোপাধ্যায়।
৯. আধুনিক ভারতের ইতিহাস - বিপান চন্দ্র।