প্রিয় ছাত্রছাত্রী, তোমরা জানো পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ইতিহাসের নতুন সিলেবাসে মানচিত্রের অনুশীলনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাধ্যমিক বোর্ডের পরীক্ষায় তোমাদের আবশ্যিক ভাবে অন্তত একটি মানচিত্র বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
মূল প্রশ্নপত্রে বিভাগ - খ এর উপবিভাগ - ২.৪ এ তোমাদের মানচিত্র বিষয়ক প্রশ্ন দেওয়া থাকে। বিভাগ - খ এ প্রত্যেকটি উপবিভাগ থেকেই তোমাদের অন্তত ১ টি করে মোট ১৬ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অর্থাৎ না চাইলেও প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীকেই আবশ্যিক ভাবে অন্তত ১ টি মানচিত্র বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
মাধ্যমিক ইতিহাসের মানচিত্রের প্রস্তুতি কিভাবে নেবে? |
মূল প্রশ্নপত্রে বিভাগ - খ এর উপবিভাগ - ২.৪ এ তোমাদের মানচিত্র বিষয়ক প্রশ্ন দেওয়া থাকে। বিভাগ - খ এ প্রত্যেকটি উপবিভাগ থেকেই তোমাদের অন্তত ১ টি করে মোট ১৬ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অর্থাৎ না চাইলেও প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীকেই আবশ্যিক ভাবে অন্তত ১ টি মানচিত্র বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
তোমাদের মানচিত্রের প্রশ্ন সাধারনত (১.) তৃতীয় অধ্যায়, (২.) চতুর্থ অধ্যায়ের মহাবিদ্রোহের কেন্দ্র সমূহ এবং (৩.) অষ্টম অধ্যায় অধ্যায়টি থেকে এসে থাকে। তাই এই অধ্যায় গুলি পড়বার সময় তোমাদের ঐ অধ্যায়ের মানচিত্র গুলির দিকেও বারংবার দৃষ্টি দিতে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে।
(১.) তৃতীয় অধ্যায় :-
তৃতীয় অধ্যায় - "প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ" চ্যাপ্টারটি পড়বার সময়ে মূল সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি বিদ্রোহের এলাকা ও কেন্দ্র গুলিকে ভালো করে দেখে রাখতে হবে। যেমন -
(১.) চুয়াড় বিদ্রোহের কেন্দ্র বা এলাকা,
(২.) সাঁওতাল/ কোল/মুন্ডা বিদ্রোহের এলাকা,
(৩.) সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অঞ্চল,
(৪.) ফরাজি, ওয়াহাবি বা বারাসাত বিদ্রোহের কেন্দ্র বা এলাকা, এবং
(৫.) নীল বিদ্রোহের কেন্দ্র বা এলাকা ইত্যাদি।
মনে রাখবে, প্রত্যেক বছরেই বোর্ডের পরীক্ষায় অন্তত একটি করে মানচিত্রের উত্তর করতে হয়। আর প্রতি বছরই বোর্ডের পরীক্ষায় তৃতীয় অধ্যায় থেকে মানচিত্র বিষয়ক একাধিক প্রশ্ন থাকে। তাই মানচিত্রের অনুশীলনের জন্য এই অধ্যায় টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই অধ্যায়ে টুকরো কথা অংশে একাধিক বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তোমাদের পাঠ্য বইয়ে দেওয়া আছে। যেমন ভিল বিদ্রোহ, রংপুর বিদ্রোহ ইত্যাদি। বোর্ডের প্রশ্নপত্রের গাইডলাইনে বলা আছে, টুকরো কথা অংশ গুলি থেকে স্কুলে ইউনিট টেস্টে প্রশ্ন এলেও, বোর্ডের মূল পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে না। তাই তৃতীয় অধ্যায়ে মূল সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিদ্রোহ গুলির এলাকা বা কেন্দ্র গুলিকে তোমাদের খুব ভালো করে দেখে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাজার থেকে ভারতের মানচিত্র কিনে এনে দু একবার প্রস্তুতি নিয়ে নাও।
(২.) চতুর্থ অধ্যায় :-
চতুর্থ অধ্যায় - "সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা" চ্যাপ্টারটির একেবারে গোড়াতেই তোমরা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি পড়ে থাকো। এই অধ্যায়ে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ আলোচনা সিলেবাসে স্থান না পেলেও, মহাবিদ্রোহের বিভিন্ন কেন্দ্র গুলিকে তোমাদের খুব ভালো করে দেখে রাখতে হবে। কারন বিগত কয়েক বছর ধরেই মহাবিদ্রোহের বিভিন্ন কেন্দ্র গুলির অবস্থান কোথায় ছিলো, সে সম্পর্কে বোর্ডের পরীক্ষায় প্রশ্ন আসছে।
মহাবিদ্রোহের অন্যতম বিখ্যাত কেন্দ্র গুলির মধ্যে ছিলো - (১.) ব্যারাকপুর, (২.) মিরাট, (৩.) দিল্লি, (৪.) কানপুর, (৫.) ঝাঁসি, (৬.) এলাহাবাদ ইত্যাদি। সবকটি কেন্দ্রকেই তোমাদের খুব ভালো করে দেখতে হবে।
(৩.) অষ্টম অধ্যায় :-
তোমাদের পাঠ্য বইয়ের একেবারে শেষ অধ্যায় - "উত্তর - উপনিবেশিক ভারত" চ্যাপ্টারটিও মানচিত্রের অনুশীলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়ে দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি এবং ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন অংশ দুটি পড়বার সময় পুরাতন দেশীয় রাজ্য গুলির অবস্থান ও নবগঠিত ভারতীয় রাজ্য গুলির এলাকা বা অবস্থানটি খুব ভালো করে মানচিত্রে দেখে নিতে হবে। কারন এখান থেকে প্রত্যেক বছরেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে।
এই অধ্যায়ে - (১.) জুনাগড় রাজ্যের অবস্থান, (২.) হায়দ্রাবাদ রাজ্যের এলাকা, (৩.) পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এলাকা, প্রভৃতি অঞ্চল গুলি খুব ভালো করে দেখতে হবে।
এছাড়া, (৪.) নবগঠিত রাজ্য গুজরাট, (৫.) মহারাষ্ট্র, (৬.) জন্মু ও কাশ্মীর, (৭.) অন্ধ্রপ্রদেশ, (৮.) তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্য গুলির অবস্থানও ভালো করে অনুশীলন করতে হবে।
(৪.) মানচিত্রের অনুশীলন সম্পর্কে কিছু পরামর্শ :-
ইতিহাসে মানচিত্র করবার আগে কতক গুলি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবে -
(১.) পরীক্ষায় সরবরাহ করা মানচিত্রে শুরুতেই তোমার নাম, রোল নং, রেজিস্ট্রেশন নং ইত্যাদি গুলি খুব যত্ন সহকারে লিখবে।
(২.) মাথায় রাখবে বোর্ডের পরীক্ষায় মানচিত্রের উত্তর দেওয়ার জন্য তোমাকে একটাই মানচিত্রের কপি সরবরাহ করা হবে। সুতরাং মানচিত্রে ভুল, ত্রুটি গুলো এড়িয়ে চলার জন্য মানচিত্র সর্বদাই পেনসিলে করবে। কারন পেনসিলে ভুল আঁচড় কাটলে তুমি মুছে দিতে পারবে, কিন্তু পেনে কখনই তা করতে পারবে না।
(৩.) মানচিত্রে যে দাগের প্রশ্নটি তুমি করছো, সর্বদাই চিহ্নিত করা কেন্দ্রটির পাশে প্রশ্নের দাগ নং টি উল্লেখ করে দেবে।
(৪.) মানচিত্রে সাধারণত "নির্দিষ্ট কেন্দ্র" ও "নির্দিষ্ট এলাকা" চিহ্নিত করতে বলা হয়। সর্বদা মাথায় রাখবে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বললে ছোট্ট ভরাট বিন্দু দিয়ে তাকে চিহ্নিত করলেই হয়ে যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট এলাকা বললে তোমাদের ভৌগলিক মানচিত্র এঁকে এলাকাটিকে চিহ্নিত করে দিতে হবে।
(৫.) মানচিত্র নিয়ে খুব বেশি অযথা টেনশন বা দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। মনে রাখবে, তুমি যদি খুব দুর্বলও হও তবে মানচিত্র সম্পর্কে তোমাকে একটাই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এজন্য বিগত বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানচিত্র বিষয়ক যে প্রশ্ন গুলো এসেছে, শুধুমাত্র সে গুলি অনুশীলন করলেই তুমি অনায়াসে একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিতে পারবে।
আর তোমার মানচিত্র সম্পর্কে প্রস্তুতি যদি খুব ভালো থাকে তাহলে তুমি অনায়াসে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। এতে তোমার সময় অনেকটাই সাশ্রয় হবে। কারন তোমরা জানো একটি ১ বা ২ নম্বরের লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে যে সময় লাগে, তার থেকে অনেক কম সময়ে মানচিত্রের ৪ টা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেওয়া যায়।
(৬.) সবশেষে মানচিত্রের অনুশীলন সম্পর্কে আরো দুটো কথা বলতে চাই। মানচিত্র সম্পর্কে আলোচ্য ৩ টি অধ্যায় ধরে ধরে বেশ কয়েকবার প্র্যাকটিস করো। নির্দিষ্ট জায়গা গুলিকে নিখুঁত ভাবে চিহ্নিত করার জন্য স্কেলের সাহায্য নাও। মূল মানচিত্রে ভারতের বর্ডারের আড়াআড়ি বা লম্বালম্বি স্কেলকে রেখে বুঝে দেখবার চেষ্টা করো মানচিত্রে আলোচ্য কেন্দ্রটির অবস্থান ঠিক কোথায়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই তোমাকে মানচিত্রের কেন্দ্র গুলির অবস্থান মনে রাখতে হবে।
(৫.) মানচিত্র বিষয়ক বিগত বছর গুলির প্রশ্ন :-
মানচিত্র সম্পর্কে বিগত বছরের প্রশ্ন গুলি ভালো করে অনুশীলন করলেই আশা করা যায় তোমরা যে বছর পরীক্ষা দিচ্ছো, সেবছর কাঙ্খিত প্রশ্ন গুলো কমন পেয়ে যাবে।
(ক.) তৃতীয় অধ্যায় : প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ
(i.) নীল বিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র - যশোর ও নদিয়া (মাধ্যমিক - ২০১৭/২০১৯/২০২০/২০২২)
(ii.) কোল বিদ্রোহের এলাকা - ছোটনাগপুর (মাধ্যমিক - ২০২২)
(iii.) বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের কেন্দ্র - বারাসাত, অথবা বারাসাত বিদ্রোহের এলাকা (মাধ্যমিক - ২০১৯/২০২১/২০২৩)
(iv.) সাঁওতাল বিদ্রোহের এলাকা ( মাধ্যমিক - ২০১৭/২০১৯/২০২৩)
(v.) চুয়াড় বিদ্রোহের এলাকা ( মাধ্যমিক - ২০১৮)
(vi.) মুন্ডা বিদ্রোহের এলাকা - ( মাধ্যমিক - ২০১৮)
(vii) সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের এলাকা ( পঃ বঃ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত মাধ্যমিক মডেল প্রশ্ন)।
প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ |
(খ.) চতুর্থ অধ্যায় : সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা
(i.) মহাবিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র - দিল্লি (মাধ্যমিক - ২০২২)
(ii.) মহাবিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র - কানপুর (মাধ্যমিক - ২০২২)
(iii.) মহাবিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র - মিরাট ( মাধ্যমিক - ২০২০/২০২৩)
(iv.) মহাবিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র - ঝাঁসি ( মাধ্যমিক - ২০১৮)
(v.) ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের কেন্দ্র - ব্যারাকপুর ( পঃ বঃ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত মাধ্যমিক মডেল প্রশ্ন)।
মহাবিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র |
(গ.) অষ্টম অধ্যায় : উত্তর উপনিবেশিক ভারত
(i.) পুনর্গঠিত রাজ্য (১৯৬০) - মহারাষ্ট্র ( মাধ্যমিক - ২০২০)
(ii.) দেশীয় রাজ্য - হায়দরাবাদ ( পঃ বঃ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত মডেল প্রশ্ন / মাধ্যমিক - ২০১৭)
(iii.) দেশীয় রাজ্য - জুনাগড় (মাধ্যমিক ২০১৮)
(iv.) পুনর্গঠিত রাজ্য - গুজরাট ( মাধ্যমিক - ২০১৭)
(v.) কাশ্মীর রাজ্য অথবা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এলাকা
(vi.) নবগঠিত রাজ্য - অন্ধ্রপ্রদেশ।
ভাষার ভিত্তিতে গঠিত রাজ্যসমূহ |
একটি অনুরোধ
প্রিয় বন্ধুরা, এই আলোচনাটি থেকে যদি তোমরা উপকৃত হও তো অবশ্যই "HISTORY CLASS ROOM" চ্যানেলটিকে ফলো করে রাখো। মাধ্যমিকের পরামর্শ মূলক এই ধরনের আলোচনা কি ধারাবাহিক ভাবে তোমরা চাইছো? যদি চাও মাধ্যমিকের কি ধরনের আলোচনা করলে তোমরা উপকৃত হবে, অবশ্যই তা কমেন্ট বক্সে উল্লেখ করো।
(১.) মাধ্যমিকের প্রত্যেকটি অধ্যায় কি ভাবে পড়বো, কি ধরনের প্রশ্ন ঐ অধ্যায় গুলো থেকে আসে, সে সম্পর্কে আলোচনা।
(২.) মাধ্যমিক পরীক্ষার বিগত বছরের সালের প্রশ্ন গুলির আলোচনা।
(৩.) মাধ্যমিক ছোট প্রশ্ন আলোচনা।