১৭০০ খ্রিঃ ঔরঙ্গজেব হায়দ্রাবাদের দেওয়ান করতলব খানকে বাংলার দেওয়ান এবং মুকসুদাবাদের ফৌজদার হিসাবে মনোনীত করেন। করতলব খান পরবর্তীকালে মুর্শিদকুলি খাঁ নামে অধিক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর নাম অনুসারেই পরবর্তীকালে মুকসুদাবাদের নামকরন করা হয় মুর্শিদাবাদ। এই মুর্শিদাবাদেই একসময় মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলায় স্বাধীন নবাবীর সূচনা করেছিলেন, সে গল্প অবশ্য অন্য।
জমিদারদের বৈকুন্ঠ দর্শন |
১৭০২ খ্রিঃ থেকে মুর্শিদকুলি খাঁ প্রত্যেক বছর নিয়মকরে বাংলার রাজস্ব বাবদ মুঘল কোষাগারে এক কোটি টাকা করে পাঠাতেন। বাংলায় রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে মুর্শিদকুলি খাঁ অত্যন্ত কড়া স্বভাবের ছিলেন। এক্ষেত্রে "জমিন্দারদের" ফাঁকিবাজি তিনি মোটেই বরদাস্ত করতেন না। তার "মাল - জামিনী" ব্যবস্থায় রাজস্ব আদায়ের জন্য মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার হিন্দু জমিদারদের খুব বেশি পছন্দ করেন। হিন্দুরা মুসলিম অভিজাতদের থেকে কর্মদক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততায় অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। হিন্দুরা ভীতু ও কর্তব্যপরায়ন ছিলেন বলে তাদের তরফ থেকে বিদ্রোহ, কারচুপি বা দুর্নীতির সম্ভাবনাও অনেক কম ছিলো। তাছাড়া, জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে হিন্দুদের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি ছিলো। এই কারনে মুর্শিদকুলি খাঁর "মাল - জামিনর "সংখ্যাগুরু অংশই ছিলো হিন্দু।
মুনশি সালিমুল্লার লেখা "তারিখ ই বাংলা" থেকে জানা যায়, মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে রাজস্ব বকেয়া রাখার শাস্তি ছিলো মারাত্মক। রাজস্ব খেলাপকারী জমিদারদের মুর্শিদাবাদের প্রাসাদের সামনে সাধারন বন্দির মতো ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। অনেক সময় বেত্রাঘাত করা হতো। আবার প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ - বোসও করানো হতো।
মুর্শিদকুলির দৌহিত্রীর স্বামী (অর্থাৎ মেয়ের মেয়ের স্বামী/নাতনীর স্বামী) সৈয়দ রাজী খানকে বাংলার সহকারী দেওয়ানের পদ দেওয়া হলে, তিনি রাজস্ব খেলাপকারী জমিন্দারদের সাজা দেওয়ার জন্য অনেক অভিনব পন্থা অবলম্বন করতেন। এরকমই তার এক অভিনব পন্থা ছিলো রাজস্ব খেলাপকারী জমিদারদের জন্য বৈকুন্ঠ দর্শনের ব্যবস্থা করা।
বৈকুন্ঠ দর্শন ছিলো অত্যন্ত অভিনব, ব্যাঙ্গাত্মক এবং জঘন্য পন্থা। একটি কুয়ো খনন করে তাতে মানুষের মল মূত্র সঞ্চিত করে রাখা হতো। পরে রাজস্ব খেলাপকারী জমিন্দারদের ঐ পুতিদুর্গন্ধময় কুয়োতে বেশ কিছুক্ষন ডুবিয়ে রেখে দিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। এই কুয়োকে বলা হতো "বৈকুন্ঠ"। ভগবান বিষ্ণুর লোককে বলা হয় বৈকুন্ঠ। কিন্তু মুর্শিদকুলির আমলে বৈকুন্ঠ দর্শন বাংলার জমিন্দারদের কাছে রীতিমত ত্রাসের ব্যাপার হয়ে উঠেছিলো।
তথ্যসূত্র :-
মুঘল যুগ থেকে কোম্পানি আমল,
লেখক - সৌমিত্র শ্রীমানি।