বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্স
উত্তর :- ফরাসি শব্দ "আসিয়া রেজিমের" অর্থ ছিলো পুরাতন ব্যবস্থা বা প্রাচীন আমল। প্রাক্ বিপ্লব ফ্রান্সে যে স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং বৈষম্যমূলক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো তাকেই সাধারণত বলা হয় "আসিয়া রেজিম" বা "এনসেন্ট রেজিম"।
২. "বিপ্লব" বলতে কি বোঝা?
উত্তর :- প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, আমূল ও ব্যাপক পরিবর্তনকেই সাধারনত বিপ্লব বলা হয়। বিপ্লবের ফলে প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে থাকে।
৩. ফরাসি বিপ্লব কত খ্রিঃ সংঘটিত হয়?
উত্তর :- ১৭৮৯ খ্রিঃ।
৪. ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে কোন রাজবংশ রাজত্ব করতো?
উত্তর :- বুঁরবো রাজবংশ।
৫. ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা কে ছিলেন? অথবা, কোন বুঁরবো রাজার আমলে ফ্রান্সে বিপ্লব শুরু হয়?
উত্তর :- ষোড়শ লুই।
৬. ফ্রান্সে বুঁরবো রাজবংশের শেষ তিনজন রাজার নাম কি ছিলো?
উত্তর :- চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই ও ষোড়শ লুই।
৭. "I am the state" /"আমিই রাষ্ট্র" এটি কার উক্তি ছিলো?
উত্তর :- বুঁরবো রাজা চতুর্দশ লুইয়ের।
৮. "প্রজাপতি রাজা" কাকে বলা হতো?
উত্তর :- পঞ্চদশ লুই কে। পঞ্চদশ লুই ছিলেন বিলাসী ও রমনীরঞ্জন, এইজন্য তাকে "Butterfly Monarch" বা প্রজাপতি রাজা বলা হতো।
৯. "আমার রক্ত ফ্রান্সের সুখ নিশ্চিত করুক" এটি কার উক্তি ছিলো?
উত্তর :- বুঁরবো রাজা ষোড়শ লুইয়ের।
১০. "ঐশ্বর্যের ইন্দ্রপুরী" কাকে বলা হতো?
উত্তর :- ফ্রান্সে বুঁরবো রাজাদের ভার্সাইয়ের রাজপ্রসাদকে বলা হতো ঐশ্বর্যের ইন্দ্রপুরী।
১১. ফ্রান্সে "অর্থলোলুপ নেকড়ে" কাদেরকে বলা হতো?
উত্তর :- ইনটেনডেন্ট নামক রাজকর্মচারীদের ফ্রান্সের জনসাধারণ "অর্থলোলুপ নেকড়ে" বলতো।
১২. ইনটেনডেন্ট কারা ছিলো?
উত্তর :- ফ্রান্সের প্রদেশ গুলির রাজস্ব আদায়কারী রাজকর্মচারীরা পরিচিত ছিলেন "ইনটেনডেন্ট" নামে। বুঁরবো রাজবংশের শেষদিকে এরা অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলো। তাই ফ্রান্সের জনসাধারণ এদেরকে "অর্থলোলুপ নেকড়ে" বলতো।
১৩. কে ফ্রান্সকে "রাজনৈতিক কারাগার" বলে অভিহিত করেছিলেন? কেন তিনি একথা বলেছিলেন?
উত্তর :- ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার প্রাক্ বিপ্লব ফ্রান্সকে একটি "রাজনৈতিক কারাগার" বলে অভিহিত করেছিলেন।
(১.) ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বুঁরবো রাজতন্ত্র ছিলো অত্যন্ত স্বৈরাচারী। সেখানে সাধারন নাগরিকদের মতপ্রকাশের কোন সুযোগ ছিলো না।
(২.) রাজারা "লেতর দ্য ক্যাশে"নামক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সাহায্যে যে কোন ব্যক্তিকে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল কারাগারে বন্দী করে রাখতেন।
(৩.) বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের বিচার ব্যবস্থাও ছিলো প্রহসনমূলক।
(৪.) কোন নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচার বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে ছিলো না।
(৪.) স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রে সাধারণ মানুষের জীবন "কারাগারের" মতোই হয়ে উঠেছিলো দুঃসহ।
এই সব কারনের জন্য ভলতেয়ার বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সকে একটি "রাজনৈতিক কারাগার" বলে অভিহিত করেছিলেন।
১৪. "লেতর দ্য ক্যাশে" ও "লেতর দ্য গ্রাস" কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের দুটি রাজকীয় পরোয়ানা ছিলো "লেতর দ্য ক্যাশে" ও" লেতর দ্য গ্রাস"।
"লেতর দ্য ক্যাশে" নামক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সাহায্যে ফরাসি রাজারা যেকোন সাধারণ নাগরিককে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল আটক বা বন্দী রাখতে পারতেন। প্রাক্ বিপ্লব ফ্রান্সে বুঁরবো রাজারা এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ব্যাপক প্রয়োগ করতেন।
"লেতর দ্য গ্রাস" নামক রাজকীয় পরোয়ানার সাহায্যে বুঁরবো রাজারা আদালত দ্বারা দন্ডপ্রাপ্ত যেকোন অপরাধী ব্যক্তির শাস্তি মুকুব বা মাফ করতে পারতেন। বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে রাজারা এই রাজকীয় পরোয়ানার ব্যাপক অপপ্রয়োগ করায় সাধারন নাগরিকদের ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হয়েছিলো।
১৫." ওয়েলথ অফ নেশন" গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর :- ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ।
১৬. ফ্রান্সকে "ভ্রান্ত অর্থনীতির যাদুঘর" কে কেন বলেছিলেন?
উত্তর :- "ওয়েলথ অফ নেশন" গ্রন্থে ফ্রান্সকে "ভ্রান্ত অর্থনীতির যাদুঘর" বলে অভিহিত করেছিলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ।
(১.) যাদুঘর পুরাতন ও অত্যাশ্চর্য জিনিসে পরিপূর্ণ থাকে। বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থাও সেরকম ছিলো।
(২.) দীর্ঘদিন ফ্রান্সের কর ব্যবস্থার কোন সংস্কার করা হয় নি। ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা ছিলো অবৈজ্ঞানিক ও ভ্রান্ত। যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা ছিলো তাদের ওপর কোন কর আরোপ করা হয় নি। যাবতীয় কর তৃতীয় সম্প্রদায়কেই বহন করতে হতো।
(৩.) আয় ব্যায়ের ক্ষেত্রে কোন সামঞ্জস্যতা ছিলো না।
(৪.) ফ্রান্সের শুল্ক নীতি ও শিল্প নিয়ন্ত্রন নীতি ছিলো যথেষ্ট বিশৃঙ্খল এবং অবাধ বানিজ্য নীতির পরিপন্থী।
এই সব কারনে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ফ্রান্সকে "ভ্রান্ত অর্থনীতির যাদুঘর" বলেছিলেন।
১৭. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে ভূমিকর কি নামে পরিচিত ছিলো?
উত্তর :- টেইলি।
১৮. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে ক্যাপিটেশন কি ধরনের কর ছিলো?
উত্তর :- উৎপাদন কর।
১৯. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে লবন কর কি নামে পরিচিত ছিলো?
উত্তর :- গ্যাবেল।
২০. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে ভ্যাঁতিয়েম কি ধরনের কর ছিলো?
উত্তর :- স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ওপর ধার্য আয়কর।
২১. এডস কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে মদ, তামাক প্রভৃতির ওপর ধার্য কর "এডস" নামে পরিচিত ছিলো।
২২. "বানালিতে" কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে সামন্তপ্রভুর কলে গম, যব ভাঙানো ও মদ তৈরির জন্য উৎপাদিত শষ্যের একটি নির্দিষ্ট অংশ কর হিসাবে দিতে হতো। এই সামন্ততান্ত্রিক করকে বলা হতো "বানালিতে"।
২৩. টাইথ কি? /বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে চার্চে দেয় ধর্ম কর কি নামে পরিচিত ছিলো?
উত্তর :- টাইথ ছিলো বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে চার্চে দেয় ধর্মকর।
২৪. করভি কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষকদের বাধ্যতামূলক শ্রমদানকে বলা হতো করভি। করভি দ্বারা সামন্তপ্রভু তার খাস জমিতে চাষাবাদ করাতন। এছাড়া, সামন্ততান্ত্রিক এলাকায় রাস্তা, সেতু ইত্যাদি নির্মানের ক্ষেত্রেও "করভির" ব্যবহার করা হতো।
২৫. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের দুটি সামন্ততান্ত্রিক করের নাম করো।
উত্তর :- বানালিতে ও করভি।
২৬. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ কর কি কি ছিলো?
উত্তর :- টেইলি (সম্পত্তি কর), ক্যাপিটেশন (উৎপাদন কর) এবং ভিংলিয়েমে (আয়কর)
২৭. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে দুটি পরোক্ষ করের নাম করো।
উত্তর :- গ্যাবেল (লবন কর), এইডস (মদ ও তামাক কর), বানালিতে (শস্য পেষাই কর), করভি (বাধ্যতা মূলক শ্রম কর) ও টাইথ (ধর্মকর)।
২৮. কনট্র্যাক্ট অফ পোইসি কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে ১৫৬১ খ্রিঃ রাজার সঙ্গে যাজকদের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির নাম ছিলো "কনট্র্যাক্ট অফ পোইসি" বা পোইসির চুক্তি।
এই চুক্তির ভিত্তিতে যাজকরা রাজাকে সামান্য কিছু স্বেচ্ছাকর প্রদান করতো।
২৯. স্টেটস জেনারেল কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের জাতীয় সভার নাম ছিলো "স্টেটস জেনারেল" । যাজক, অভিজাত ও তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সভা গঠিত হয়েছিলো।
৩০. প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে স্টেটস জেনারেলের ভোটদান পদ্ধতি কেমন ছিলো?
উত্তর :- প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে স্টেটস জেনারেলের ভোটদান পদ্ধতি মাথাপিছু ছিলো না। ছিলো সম্প্রদায় ভিত্তিক। যাজক, অভিজাত ও তৃতীয় সম্প্রদায় "সম্প্রদায়গত" ভাবে একসঙ্গে একটি করে পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিতো। অর্থাৎ স্টেটস জেনারেলে মোট ভোট ছিলো ৩ টি।
৩১.বুঁরবো রাজারা কবে স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন বন্ধ করে দেন?
উত্তর :- বুঁরবো রাজা ত্রয়োদশ লুই ১৬১৪ খ্রিঃ স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন বন্ধ করে দেন। ১৬১৪ থেকে ১৭৮৮ খ্রিঃ পর্যন্ত প্রায় ১৭৫ বছর ফ্রান্সে স্টেটস জেনারেলের কোন অধিবেশন ডাকা হয় নি।
৩২. "আমি যা ইচ্ছা করি, সেটাই আইন" (What I disire is decree) এটি কার উক্তি?
উত্তর :- ষোড়শ লুইয়ের উক্তি।
৩৩. ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের সমাজ কটি ভাগে বিভক্ত ছিলো ও কি কি?
উত্তর :- ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের সমাজ ৩ টি ভাগে বিভক্ত ছিলো। যথা - যাজক, অভিজাত ও তৃতীয় সম্প্রদায়।
৩৪. বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে "পার্লেমেন্ট" কাকে বলা হতো? অথবা, "parlement of Paris" কি?
উত্তর :- বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের প্রাদেশিক বিচারসভা গুলিকে বলা হতো "পার্লেমেন্ট"।
ফ্রান্সের রাজা নতুন কোন আইন জারী করলে তা পার্লেমেন্ট নামক বিচার সভায় নথিবদ্ধ করতে হতো। নতুবা এই আইন বৈধ বলে স্বীকৃত লাভ করতো না। পার্লামেন্ট চাইলে রাজার প্রস্তাবিত আইন নাকচ করে দিতে পারতো। পার্লামেন্ট গুলি সম্পূর্ণ ভাবে অভিজাতদের নিয়ন্ত্রনে ছিলো। অভিজাতরাই পার্লেমেন্ট গুলির প্রধান বিচারক ছিলেন।
বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে মোট পার্লেমেন্ট ছিলো ১২ টি। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পার্লেমেন্ট ছিলো "Parliament of paris"। পঞ্চদশ লুই এই পার্লেমেন্ট গুলি ভেঙ্গে দিলেও, ষোড়শ লুই এগুলিকে পুনর্গঠিত করেছিলেন।
বুরবোঁ রাজা | সময়কাল | গুরুত্বপূর্ণ তথ্য |
---|---|---|
চতুর্থ হেনরি | ১৫৮৯ - ১৬১০ | বুরবোঁ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। |
ত্রয়োদশ লুই | ১৬১০ - ১৬৪৩ | ১৬১৪ খ্রিঃ স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন বন্ধ করে দেন। |
চতুর্দশ লুই | ১৬৪৩ - ১৭১৫ | বুরবোঁ রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা ছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তিটি ছিলো - আমিই রাষ্ট্র । |
পঞ্চদশ লুই | ১৭১৫ - ১৭৭৪ | প্রজাপতি রাজা বলা হতো। ফ্রান্সের পার্লেমেন্ট গুলিকে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। |
ষোড়শ লুই | ১৭৭৪ - ১৭৯২ | ষোড়শ লুইয়ের আমলেই ফ্রান্সে বিপ্লব শুরু হয়। |