ভারতের নারী মুক্তি আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে সমস্ত নারী সংঘ গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো, তার মধ্যে অন্যতম ছিলো "দীপালি সংঘ"। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লীলা নাগ।
লীলা নাগের সংক্ষিপ্ত জীবনী :-
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মেধাবী ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে লীলা নাগ ছিলেন অন্যতম। তিনি ইংরেজীতে স্বর্ণপদক নিয়ে কলকাতা বেথুন কলেজ থেকে ১৯২১ খ্রিঃ বি.এ পাশ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিঃ প্রথম এম. এ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া, ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন "দীপালি ছাত্রী সংঘ" তিনিই প্রতিষ্ঠা (১৯২৩ খ্রিঃ) করেন।
১৯০০ খ্রিঃ লীলা নাগ আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পিতৃভূমি ছিলো সিলেট। লীলার পিতা ও মাতার নাম ছিলো যথাক্রমে গিরীশচন্দ্র নাগ এবং কুঞ্জলতা নাগ। লীলার পিতা বাংলা ও আসামের সিভিল সার্ভিসে চাকুরিরত ছিলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কর্মসূত্রে তার পিতাকে প্রায়ই নানা সময়ে বাসস্থান পরিবর্তন করতে হতো।
১৯২১ খ্রিঃ পর লীলা নাগের পিতা ঢাকাতে স্থায়ী বাসস্থান নির্মান করেন। এই সময় লীলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ খ্রিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
এই সময়টাতে ঢাকাকে কেন্দ্র করে লীলা নাগ একাধিক সমাজসেবা ও নারী সচেতনতামূলক কর্মকান্ড
শুরু করেন। এই প্রচেষ্টারই অন্যতম অঙ্গ ছিলো "দীপালি সংঘের" প্রতিষ্ঠা।
দীপালি সংঘ |
দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা :-
১৯২৩ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে লীলা নাগ ঢাকাতে তাঁর ১২ জন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন "দীপালি সংঘ"। তাঁর এই সংঘ প্রতিষ্ঠার অন্যতম শরিক ছিলেন - এনাক্ষী রায়, কমলা বসু, মনোরমা বসু, লতিকা রায়, বীনা দত্ত, সরোজ বসু, মিসেস এম চৌধুরী, মিস ফুলা গুপ্ত, মিস এস দাশগুপ্ত প্রমুখ নারী।দীপালি সংঘের উদ্দেশ্য :-
দীপালি সংঘ ছিলো মূলত একটি নারীকেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠান। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো গৃহকোনে আবদ্ধ,জ্ঞান,কর্ম,আনন্দ থেকে বঞ্চিত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত নারী সমাজে "আলোর দীপ" জ্বালানো।
দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদিকা লীলা নাগ নিজেই এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন -
"জ্ঞান, কর্ম ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত নারী সমাজকে জ্ঞানে ও কর্মে - সজীব, সতেজ ও আনন্দময় করে তোলাই ছিলো এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য।"
সংক্ষেপে "দীপালি সংঘের" মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য গুলি ছিলো -
(১.) নারীদের মধ্যে জ্ঞান ও শিক্ষার প্রসার ঘটানো,
(২.) শিল্প চর্চার মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা,
(৩.) গৃহকোনে আবদ্ধ নারী সমাজে কিছু আনন্দের রসদ ও সাংস্কৃতিক বিনোদনের উপকরন পৌঁছে দিয়ে তাদের একঘেয়েমি জীবন দূর করা,
(৪.) নারীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের প্রচার করা,
(৫.) বিপ্লবী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের সামিল করা।
দীপালি সংঘের কর্মসূচি :-
গৃহকোনে আবদ্ধ নিরানন্দময় বদ্ধ জীবন থেকে নারীদের মুক্তি ও আনন্দের স্বাদ দিতে দীপালি সংঘ একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো -
(১.) নারীদের শিক্ষা ও শিল্প চর্চার ব্যবস্থা করা,
(২.) সঙ্গীত সম্মিলনী আহ্বান করা,
(৩.) নারীদের চিত্রাঙ্কনের ব্যবস্থা করা এবং
(৪.) তাদের অভিনয় ও বক্তৃতা দানের ব্যবস্থা করা।
বলা বাহুল্য, দীপালি সংঘের এসব কর্মসূচির মূল লক্ষ্যই ছিলো নারী সমাজের মধ্যে জ্ঞান ও শিক্ষার দীপ জ্বালিয়ে তাদের অন্ধকারময় জীবন থেকে মুক্ত করা।
কর্মসূচির বাস্তবায়ন :-
"দীপালি সংঘ" তার উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিকে নিন্মলিখিত ভাবে রূপদান করে -
(১.) নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা :-
নারী শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘ - "দীপালি স্কুল","নারী শিক্ষা মন্দির" ও "শিক্ষা ভবন" নামে ৩ টি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দীপালি সংঘের উদ্যোগে ১৫ টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলি ছাড়া, বেশ কিছু বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র এবং শিল্প শিক্ষাকেন্দ্রও দীপালি সংঘ গড়ে তুলেছিলো।
এই সমস্ত শিক্ষাকেন্দ্র গুলিতে মূলত মহিলা শিক্ষিকারাই মেয়েদের শিক্ষাদান করতেন। এইসব বিদ্যালয় গুলিতে সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, গনিত, স্বাস্থ্য নীতি, শিল্পচর্চা, সেলাই ও শরীরচর্চা ইত্যাদি শিক্ষা দানের মধ্য দিয়ে সমাজের সমস্ত স্তরের নারীদের স্বনির্ভর ও সচেতন করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
(২.) শিল্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা :-
১৯২৪ খ্রিঃ দীপালি সংঘ "দীপালি শিল্প প্রদর্শনী" নামে একটি বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এখানে নিয়মিত মেয়েদের নানা ধরনের হস্তশিল্প ও অন্যান্য কারিগরি শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হতো। তখনকার দিনে এই উদ্যোগ ও প্রদর্শনী সত্যিই অভিনব ছিলো, যা সাধারন নারীদের আত্মজাগরন ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো।
(৩.) নারী অধিকার বিষয়ে সচেতনতা ও উদ্যোগ :-
তবে শুধু নারী সমাজকে শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলাই নয়, দীপালি সংঘ নারী সমাজে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দানের ব্যবস্থা করে এবং তাদের মতামত প্রকাশের বহুবিধ সুযোগ করে দিয়েও নারী চেতনার বিকাশ ঘটায়। এছাড়া, নারীর ভোটাধিকারের স্বপক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে, চিত্তরঞ্জন স্মৃতিসভার আয়োজন করে এবং মহাত্মা গান্ধীকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে নারী সমাজকে জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক দিক থেকেও সচেতন করে তোলার উদ্যোগ নেয়।
১৯২৬ খ্রিঃ ৮ ই ফেব্রুয়ারি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় এলে দীপালি সংঘের পক্ষ থেকে এক বিরাট সভার আয়োজন করে কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ এইসময় দীপালি সংঘের ভূয়েসী প্রশংসা করে বলেছিলেন - "এশিয়ায় এতো বড়ো মহিলা সমাবেশ আর কখনো দেখি নাই"।
কবির এই উক্তি থেকেই উপলব্ধি করা যায়, নারী সমাজের কাছে দীপালি সংঘের আবেদন কত গভীর ও ব্যাপক ছিলো।
(৪.) বিপ্লববাদের সঙ্গে সংযোগ :-
১৯২৫ খ্রিঃ লীলা নাগ তাঁর সহপাঠী এবং বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি "শ্রী সংঘের" প্রধান নেতা অনিল রায়ের সান্নিধ্যে আসেন। এর ফলে তাঁর চিন্তার জগতে এক গভীর পরিবর্তন আসে। প্রকৃত ও পূর্ন নারী মুক্তির জন্য দেশের স্বাধীনতা যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটি এইসময় লীলা উপলব্ধি করেন।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই সময় অর্থাৎ ১৯২৫ খ্রিঃ থেকে লীলা রাজনৈতিক আন্দোলনের শরিক হয়ে ওঠেন এবং "শ্রী সংঘে" যোগদান করে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা নেন। অতঃপর লীলা নারী সমাজে বিপ্লবী সত্তার জাগরনের জন্য দীপালি সংঘকে কেন্দ্র করেই গড়ে তোলেন, "দীপালি ছাত্রী সংঘ" নামে ভারতের প্রথম নারী বিপ্লবী সংগঠন। পরবর্তীকালে এর শাখা বাংলা ও আসামের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
যাইহোক, ১৯৩০ খ্রিঃ অনিল রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করলে, লীলা "শ্রী সংঘের" নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। এই সময় "শ্রী সংঘ" এবং "দীপালি সংঘ" যৌথভাবে নানা বৈপ্লবিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে থাকে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা আমরা বলবো। ১৯৩০ দশকে মেয়েদের সহজভাবে মেলামেশা ও চলাফেরার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধা ছিলো। বিশেষত, মহিলা কলেজ গুলির আবাসিকদের নিয়মকানুন অত্যন্ত কঠোর ছিলো। রাজনীতি সচেতন নারীরা এজন্য নানা অসুবিধা ভোগ করতেন।
এই অসুবিধা দূর করার জন্য এবং বিশেষভাবে দীপালি সংঘের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ও ছাত্রদের সহজ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টির জন্য লীলা নাগ ১৯৩০ খ্রিঃ কলকাতার গোয়াবাগানে "ছাত্রীভবন" নামে একটি মহিলা আবাসিক কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এই ছাত্রীভবন প্রতিষ্ঠা এবং তার পরিচালনায় লীলা নাগের সহকর্মী রেনু সেন অসাধারণ কর্মকুশলতা ও সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় দেন। বলা বাহুল্য, এর ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই "দীপালি ছাত্রী সংঘ" এবং "ছাত্রীভবন" বিপ্লবীদের আঁতুরঘরে পরিনত হয়।
বিপ্লবী কর্মপন্থাকে গোপনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীপালি সংঘের সভ্যরা বোমা তৈরি,দলীয় অস্ত্রাগার রক্ষনাবেক্ষন, বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, আর্থিক সহায়তা প্রদান, নিষিদ্ধ বৈপ্লবিক পুস্তিকা প্রচারের মতো দুঃসাহসিক কাজকর্মে যুক্ত থাকতেন। সংঘের ইচ্ছুক সদস্যদের দক্ষতা বিচার করে, তাদের শারীরিক, বৌদ্ধিক ও সামরিক দিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে "শ্রী সংঘের" "Action" এর উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হতো।
১৯৩০ খ্রিঃ ডালহৌসী স্কোয়ারে টেগার্ট হত্যা মামলার তদন্তকালে গোয়েন্দা দপ্তর "ছাত্রীভবনে" তল্লাশি চালিয়ে বহু আবাসিককে গ্রেপ্তার করে।
তবে সংঘের যে সমস্ত সদস্য বৈপ্লবিক কাজকর্মে লিপ্ত হতে অসম্মত হতেন, তারা সংগঠনের গঠনমূলক কাজগুলি অর্থাৎ শিক্ষার প্রচার, জনসেবা ইত্যাদি কর্মসূচি গুলির সঙ্গে নিজেদের নিয়োজিত রাখতেন।
(৫.) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অবদান :-
বলা বাহুল্য, শুধু বৈপ্লবিক কাজকর্মেই নয়, গান্ধীজি পরিচালিত গন আন্দোলন গুলির ক্ষেত্রেও "দীপালি সংঘ" গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।
লাহোর জেলে যতীন দাসের ৬৩ দিন অনশনের পর মৃত্যুবরন অথবা সুভাষচন্দ্র বসুর ওপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদ, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের সংঘবদ্ধ মিছিল ও সভা সমাবেশ করে দীপালি সংঘ এক নব উন্মাদনার সঞ্চার করে। ১৯৩০ খ্রিঃ গান্ধীজি লবন সত্যাগ্রহের ডাক দিলে দীপালি সংঘের নেতৃত্বে "মহিলা সত্যাগ্রহ কমিটি" গঠিত হয়। এই সময় "শ্রী সংঘ" ও "দীপালি সংঘের" যৌথ রাজনৈতিক কর্মসূচি ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়।
দীপালি সংঘের মুখপত্র :-
সংঘের বাইরে নারীদের মধ্যে বৈপ্লবিক ও জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটানোর জন্যও দীপালি সংঘ উদ্যোগী হয়েছিলো।
এইজন্য ১৯৩১ খ্রিঃ দীপালি সংঘের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত হয় - "জয়শ্রী পত্রিকা"। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ, বৈপ্লবিক আদর্শ, বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ এবং তাদের বীরগাথা এসব কিছুই "জয়শ্রী" তে প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতার মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হতো।
নিঃসন্দেহে এই পত্রিকা নারীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের জাগরনে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলো। তৎকালীন গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট থেকে বোঝা যায়, জয়শ্রীর লেখাপত্র কিভাবে ভারতে ব্রিটিশ সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিলো।
দীপালি সংঘের ওপর দমনমূলক নীতি ও নিষেধাজ্ঞা :-
কিন্তু "জয়শ্রীর" ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা, "শ্রী সংঘ" ও তার মহিলা শাখা সংগঠন "দীপালি সংঘের" বৈপ্লবিক কাজকর্ম ক্রমেই সরকারের মাথাব্যথার কারন হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে দীপালি সংঘের প্রাক্তন সদস্যা প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দারের চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ইওরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ, শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী কর্তৃক কুমিল্লার জেলাশাসক স্টিভেন্সকে হত্যা, ইত্যাদি নারীদের নাশকতামূলক কাজকর্মে সরকার রাশ টানার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।
এরই ফরস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের আতঙ্কিত পুলিশ বাহিনী ১৯৩১ খ্রিঃ ২০ ডিসেম্বর লীলা নাগ ও তার সহযোগী রেনু সেনকে গ্রেপ্তার করে। এরাই ছিলেন ভারতবর্ষে বিনা বিচারে আটক প্রথম মহিলা রাজবন্দী।
লীলা নাগের গ্রেপ্তারের পর দীপালি সংঘের অনেক সদস্যই গ্রেপ্তার হন এবং অল্প দিনের মধ্যেই সরকার দীপালি সংঘের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই গ্রেপ্তারির পরও অবশ্য সংঘ তার মুখপত্র "জয়শ্রী"র মধ্য দিয়ে তার বৈপ্লবিক অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা চালায়। তবে জয়শ্রীর ক্ষুরধার লেখনী আর দুঃসাহসিক স্পর্ধা সরকার বেশিদিন সহ্য করে নি।
অমিত শক্তিধর রাক্ষুসে দানবিক রাষ্ট্রশক্তির অন্যায়ের বিরুদ্ধে "ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর" বারে বারেই অবদমিত হয়ে এসেছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। অচিরেই কালবিলম্ব না করে ব্রিটিশ সরকার তাই ১৯৩৫ খ্রিঃ দীপালি সংঘের দুঃসাহসিক কন্ঠস্বরকে গলা টিপে হত্যা করে। এই হত্যারই ফরস্বরূপ ১৯৩৫ খ্রিঃ নিষিদ্ধ হয় "দীপালি সংঘের" মুখপত্র "জয়শ্রী"।
" জয়শ্রী"র অপমৃত্যুর সাথে সাথেই নারী জাগরনের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটলো। অবসান ঘটলো নারী জাগরনের নক্ষত্রসম একটি প্রয়াসের। তবে নক্ষত্রের মতোই মৃত্যুর পর তার সবকিছুই শেষ হয়ে যায় নি। থেকে গিয়েছিলো আলো, যে আলো "দীপ" হয়ে নারী সমাজকে দেখিয়েছিলো "মুক্তি ও জাগরনের" প্রকৃত পথের দিশা। নারী জাগরন ও চিন্তনের ইতিহাস চর্চায় "দীপালি সংঘ" তাই আজও অম্লান, অবিস্মরনীয়।