১৯২৭ সালে ভারতে দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিলো ৫৬২ টি। এর মধ্যে একমাত্র মহীশূর, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ছিলো সবচেয়ে বড়ো দেশীয় রাজ্য। আবার এমন অনেক ছোট রাজ্যও ছিলো, যার পরিধি কয়েক কিলোমিটারের বেশি ছিলো না।
দেশীয় রাজ্য গুলির সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক |
দেশীয় রাজ্য গুলির শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি
দেশীয় রাজ্য গুলির শাসন ব্যবস্থা ছিলো স্বৈরাচারী ধাঁচের। দেশীয় রাজ্য গুলোতে রাজার হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিলো এবং দেশীয় রাজ্যের রাজারা নিজ নিজ রাজ্যে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সেখানে কোন আইনের শাসন ছিলো না। নাগরিকদের অধিকারও সুনিশ্চিত ছিলো না।
দেশীয় রাজ্য গুলো অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, রাজনৈতিক প্রায় সব দিক থেকেই ব্রিটিশ অধিকৃত ভারত থেকে পিছিয়ে ছিলো। এই কারনে সরাসরি যুদ্ধনীতি এবং নানা ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে ইংরেজরা দেশীয় রাজ্য গুলির ওপর ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়।
দেশীয় রাজ্যের ওপর ব্রিটিশ আধিপত্য
ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রথম পর্বে ইংরেজরা যুদ্ধ নীতির দ্বারা ভারতের বড়ো বড়ো দেশীয় রাজ্য গুলিকে জয় করে নেয়। বড়ো রাজ্য গুলো জয় করার পরেও অবশ্য অসংখ্য ছোট ও মাঝারি আকারের রাজ্য ছিলো। সেগুলো দখল করার জন্য ইংরেজরা সরাসরি যুদ্ধ নীতির বদলে কূটনীতি অবলম্বন করে। যেমন - অধীনতা মূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতি।
(ক.) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি :-
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ১৭৯৮ খ্রিঃ লর্ড ওয়েলেসলি প্রবর্তন করেছিলেন। এখানে বলা হয়েছিলো, দেশীয় রাজ্য গুলো ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে মিত্রতামূলক অর্থাৎ বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক নিলে ইংরেজরা ঐ সমস্ত দেশীয় রাজ্য গুলোকে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। বিনিময়ে অবশ্য ঐ দেশীয় রাজ্য গুলোকে একটি চুক্তিপত্রে সই করতে হবে এবং ব্রিটিশ সরকারের কিছু শর্ত পালন করতে হবে। যেমন - মিত্রতাবদ্ধ রাজ্যে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট থাকবেন, ঐ রাজ্যে ব্রিটিশ সরকারের একটি সেনাদল থাকবে, এছাড়া ঐ রাজ্যের বৈদেশিক নীতি সম্পূর্ণ ভাবে ইংরেজ কোম্পানির নির্দেশে পরিচালিত হবে।
(খ.) স্বত্ত্ববিলোপ নীতি :-
লর্ড ডালহৌসি স্বত্ত্ববিলোপ নীতি প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি দেশীয় রাজ্য গুলোকে ৩ টি শ্রেনীতে ভাগ করেছিলেন - কোম্পানি সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য, ইংরেজ আশ্রিত করদ রাজ্য এবং স্বাধীন দেশীয় রাজ্য।
সত্ত্ববিলোপ নীতিতে বলা হয়, কোম্পানি সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের রাজা যদি অপুত্রক থাকেন, তাহলে তিনি দত্তক বা পালিত পুত্রকে সিংহাসনে বসাতে পারবেন না। রাজা মারা গেলে ঐ রাজ্যটি সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়বে। করদ রাজ্য গুলিতে দত্তকপুত্র গ্রহনের ক্ষেত্রে অবশ্য কোম্পানির অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু অনুমতি না মিললে ঐ করদ রাজ্যও অপুত্রক রাজার মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়বে।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং স্বত্ত্ববিলোপ নীতির দ্বারা ভারতের প্রায় সমস্ত দেশীয় রাজ্য গুলোকেই ব্রিটিশ অধীনতার ছত্রছায়ায় নিয়ে আসা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, এই দুটি নীতির নির্লজ্জ প্রয়োগ অনেক দেশীয় রাজার মনে প্রচন্ড ক্ষোভ ও অসন্তোষও সৃষ্টি করেছিলো। ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহে তার স্পষ্ট প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
মহাবিদ্রোহের অভিজ্ঞতা ও দেশীয় রাজ্য নীতি
দেশীয় রাজ্য গুলোর প্রতি নেওয়া ইংরেজ সরকারের কিছু পূর্বতন নীতির ভুল ভ্রান্তি ও ক্রুটি মহাবিদ্রোহের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসে। ফলে ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহের অভিজ্ঞতা দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতি ব্রিটিশ সরকারের নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছিলো।যেমন -
(১.) স্বত্ববিলোপ নীতি জনিত ক্ষোভ দেশীয় রাজ্য গুলির একাংশকে বিদ্রোহে প্ররোচিত করে। এই ক্ষোভের কারনে বেশ কয়েকজন দেশীয় রাজন্যবর্গ মহাবিদ্রোহে অংশ নেন এবং নেতৃত্ব দেন। এতে সরকার বুঝতে পারে, দেশীয় রাজ্য গুলির প্রতি অবজ্ঞা ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে কখনই শুভ হবে না।
(২.) অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য অধীনতামুলক মিত্রতা নীতিতে আবদ্ধ হয়ে এই বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ সরকারকে নানা ভাবে সাহায্য করে। এ থেকে সরকার বুঝতে পারে, দেশীয় রাজ্য গুলিই ভবিষ্যতে ভারতে জমিদার শ্রেনীর মতোই ইংরেজ শাসনের প্রধান সমর্থক হয়ে উঠতে পারে।
(৩.) এই কারনে সরকার আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে দেশীয় রাজ্য গুলিকে যতটা বেশি সম্ভব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ওপর নির্ভরশীল করার নীতি নেন।
(৪.) দেশীয় রাজ্য গুলির ব্রিটিশ আনুগত্য ও সমর্থন কে কাজে লাগিয়ে ইংরেজরা ভারতের জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন গুলিকে দুর্বল ও দমন করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে।
অর্থাৎ দেশীয় রাজ্য গুলির কাঁধে বন্দুক রেখে ইংরেজরা সমগ্র ভারতের ক্ষেত্রে " Divine and rule" নীতিকে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলো।
মহাবিদ্রোহের পর গৃহীত ব্যবস্থা
মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার দেশীয় রাজ্য নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে। ব্রিটিশ সরকার মহাবিদ্রোহের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য দেশীয় রাজ্য গুলিকে আশ্বস্ত করা এবং তাদের ক্ষোভ নিরসন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইজন্য ১৮৫৮ খ্রিঃ মহারানীর ঘোষনায় অত্যন্ত সুস্পষ্ট করে বলা হয় -
(১.) ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের অর্থাৎ নতুন করে কোন ভারতীয় রাজ্য জয় করার আর কোন পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকারের নেই। ব্রিটিশ সরকার অদূর ভবিষ্যতে এমন কাজ আর কখনই করবে না।
(২.) এখন থেকে দেশীয় রাজারা তাদের দত্তকপুত্র গ্রহন করতে পারবেন এবং ঐ সমস্ত দত্তকপুত্রদের তারা তাদের উত্তরাধিকার ঘোষনাও করতে পারবেন।
(৩.) ইংরেজ সরকার এখন থেকে দেশীয় রাজাদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করবে। এজন্য দেশীয় রাজাদের বিভিন্ন ভাবে পুরষ্কৃত করার নীতি নেওয়া হয়।
মহাবিদ্রোহের আগে এবং মহাবিদ্রোহের পরে ব্রিটিশ সরকারের "দেশীয় রাজ্য নীতির" প্রধান পার্থক্যের জায়গাটি ছিলো এই যে, মহাবিদ্রোহের আগে আধিপত্য স্থাপন ও সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্য হিসাবে ব্রিটিশ সরকার দেশীয় রাজ্য গুলিকে দখল করার নীতি নিয়েছিলো। কিন্তু মহাবিদ্রোহের পরে ইংরেজরা সরাসরি দেশীয় রাজ্য গুলিকে দখল করার বদলে অদৃশ্য ভাবে তাদের ওপর ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব আরোপ করে তাদেরকে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগীতে পরিনত করার নীতি নেয়।
মনে রাখতে হবে, মহাবিদ্রোহের পরে অনেক সময়েই ইংরেজরা দেশীয় রাজাদের পদচ্যুত করতো।কিন্তু রাজাকে পদচ্যুত করার পরেও রাজ্য কেড়ে নেওয়া হতো না, যেটা ১৮৫৭ খ্রিঃ আগে হতো। তার পরিবর্তে রাজাকে সরিয়ে তাঁর উত্তরাধিকারীকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। এই নীতির ফলে দেশীয় রাজ্য গুলিতে ক্ষমতার বদল ঘটলেও, ব্রিটিশ আনুগত্যে কোন ভাঁটা পড়ে নি।
ফলাফল
মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত নতুন "দেশীয় রাজ্য নীতির" বেশ কিছু সুফল ব্রিটিশ সরকার লাভ করে। যেমন -
(১.) মহাবিদ্রোহের পর ইংরেজদের নতুন দেশীয় রাজ্য নীতির কারনে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশীয় রাজারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম প্রধান সমর্থক শ্রেনী হয়ে ওঠে।
(২.) প্রতি পদে পদে জাতীয় আন্দোলনে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং নিজ নিজ রাজ্যের প্রজাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশ গ্রহণের কাজে বাধা দিয়ে দেশীয় রাজ্যের রাজারা জাতীয় আন্দোলনের পথে বাধা সৃষ্টি করেন।
(৩.) ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহে, ১৯০৫ খ্রিঃ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে, ১৯২০ - ২২ খ্রিঃ অসহযোগ আন্দোলনে, ১৯৩০ - ৩৪ খ্রিঃ আইন অমান্য আন্দোলনে তারা ইংরেজদের পাশে দাঁড়ান এবং নিজ নিজ রাজ্যে কংগ্রেসী কাজকর্মকে কঠোর হাতে দমন করেন।
(৪.) এমনকি ১৯৩৫ খ্রিঃ ভারত শাসন আইনে "যুক্তরাষ্ট্র" গঠনে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের পর্বেও তারা বাধা সৃষ্টি করেন।
দেশীয় রাজ্য গুলোর প্রকৃত অবস্থা
মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে দেশীয় রাজ্য গুলি টিকে থাকলেও, তাদের প্রকৃত অবস্থা দাঁড়ায় এইরকম :-
(১.) এই সময়ের পর দেশীয় রাজ্য গুলো ইংরেজ আশ্রিত ও সহযোগী হয়ে প্রকৃতপক্ষে তাদের সমস্ত স্বাধীনতা খুইয়ে ফেলতে শুরু করেছিলো।
(২.) ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহের আগে দেশীয় রাজ্য গুলিকে ইংরেজরা নানা ভাবে হস্তক্ষেপ করতো। দখল করে নিতো। অর্থাৎ দেশীয় রাজ্য গুলোর পৃথক সার্বভৌম শক্তিকে তখন ইংরেজরা স্বীকার করতো। কিন্তু ১৮৫৭ খ্রিঃ পর দেশীয় রাজ্য গুলো তাদের সমস্ত সার্বভৌম শক্তি হারিয়ে ফেলে।
(৩.) ১৮৭৭ খ্রিঃ ১ লা জানুয়ারি, ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়াকে "ভারতের সম্রাজ্ঞী" বলে ঘোষনা করা হয়। এর অর্থ দাঁড়ায়, ভারতের সমগ্র অংশের ওপরেই ব্রিটিশ সরকারের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
(৪.) পরবর্তীকালে ভাইসরয় লর্ড কার্জন এই সার্বভৌমত্বকে ব্যাখ্যা করে বলেন, এখন থেকে দেশীয় রাজারা ব্রিটিশ নৃপতির প্রতিনিধিমাত্র। ব্রিটিশ রাজের প্রতিনিধি হিসাবেই তারা রাজ্য শাসন করছেন। তাঁরা কেউই সার্বভৌম রাজা নন।
(৫.) দেশীয় রাজ্য গুলির নিয়ন্ত্রনের জন্য অতঃপর ব্রিটিশ সরকার ঐ সমস্ত রাজ্য গুলিতে একজন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি বা Resident নিয়োগ করে।
(৬.) Resident নিয়োগ করার পর ব্রিটিশ সরকার নানা ভাবে দেশীয় রাজ্য গুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছিলো।
প্রকৃতপক্ষে প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত, দেশীয় রাজ্য গুলো ব্রিটিশ সরকারের "Divide and Rule" নীতি দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছিলো এবং পরিচালিত হয়েছিলো। তারা কংগ্রেসের গনতান্ত্রিক চিন্তাধারার দ্বারা আতঙ্কিত হয়েছিলো। কারন গনতান্ত্রিক ধ্যান ধারনায় বিশ্বাসী জাতীয় কংগ্রেস রাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলো। তাই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্বে জাতীয় কংগ্রেস ও তার আন্দোলন যতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো, দেশীয় রাজ্য গুলো ততই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলো ও ব্রিটিশ সরকারের দিকে ঝুঁকে পড়তে আরম্ভ করেছিলো।
তাই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থাকার চেয়ে ব্রিটিশ সরকারের আশ্রিত হয়ে থাকাই তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার পক্ষে সবচেয়ে বড়ো সহায়ক বলে তারা মনে করেছিলো। তাই ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় আন্দোলন থেকে তারা দূরে থাকাই নিরাপদ মনে করেছিলো।
মূল্যায়ন
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সবশেষে মূল্যায়নে বলা যায় -
(ক.) দেশীয় রাজ্যের রাজারা নিজেদের রাজ্যকে ইংরেজদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করেছিলেন নিজেদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে। অন্যদিকে -
(খ.) ইংরেজ সরকার দেশীয় রাজ্য গুলিকে টিকিয়ে রেখেছিলো নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে। দেশীয় রাজাদের নিজেদের পক্ষে টেনে নিয়ে ইংরেজরা ভারতবাসীর মধ্যে একটা বিভাজন সৃষ্টি করেছিলো এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল হিসেবে তাকে ব্যবহার করেছিলো।
তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় রাজ্যের রাজারা তাদের নিজ নিজ রাজ্যের প্রজাদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও, বিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের যে জোয়ার এসেছিলো, তার ঢেউ দেশীয় রাজ্য গুলির অভ্যন্তরেও আছড়ে পড়তে আরম্ভ করে। এরফলে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সূচনার জন্য একের পর এক দেশীয় রাজ্যে শুরু হয় প্রজা আন্দোলন।
এই আন্দোলন গুলি বিচ্ছিন্ন ভাবে শুরু হলেও, ১৯২৭ খ্রিঃ তা এক সংঘবদ্ধ রূপ নেয়। গঠিত হয় - "নিখিল ভারত দেশীয় রাজ্য প্রজা সম্মেলন"। দেশীয় রাজ্য গুলিতে জনগনের দুর্দশা ও রাজাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দমন পীড়নের বিষয়টি পরবর্তীতে জাতীয় কংগ্রেস অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে থাকে। ধীরে ধীরে দেশীয় রাজ্যে কংগ্রেস তার শাখা সংগঠন, কার্যকলাপ ও গনতান্ত্রিক ধ্যান ধারনার প্রচার করে। এসবের ফলশ্রুতিতে, দেশীয় রাজ্য গুলির প্রজা আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোতের সাথে মিশে যেতে শুরু করেছিলো।