সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা

 বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের আজকের অন্তিম পর্বটিতে আমরা দুজন প্রখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানীর অবদানের কথা স্মরন করবো। এদের একজন ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। অপরজন ছিলেন মেঘনাদ সাহা। এই দুজনই জগদীশচন্দ্র বসুর অন্যতম প্রিয় ছাত্র ছিলেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা
সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা 

সত্যেন্দ্রনাথ বসু

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা সম্পর্কে তাঁর  বিখ্যাত উক্তি ছিলো - "যারা বলেন যে, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব নয়, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয়তো বিজ্ঞান জানেন না।"

বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯৪৮ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠা করেন - "বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ"। মূলত মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যেই তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের মুখপত্র "জ্ঞান ও বিজ্ঞান" পত্রিকার কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়।

১৯৬৩ খ্রিঃ "জ্ঞান ও বিজ্ঞান" পত্রিকার মৌলিক গবেষনা নিবন্ধ নিয়ে" রাজশেখর বসু সংখ্যা" প্রকাশ করে সত্যেন্দ্রনাথ প্রমান করেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের মৌলিক প্রবন্ধ রচনা করা সম্ভব। এছাড়া এর বহু আগে ১৯৩৭ খ্রিঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দিয়ে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের অনুবাদ বই" বিশ্ব পরিচয়" লিখিয়ে নিয়েও প্রমান করার চেষ্টা করেন, বাংলা ভাষাতেও বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব, এবং খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গেই তা করা সম্ভব।

 সত্যেন্দ্রনাথ বসুর গবেষনা

সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথ ভাবে "বোস আইনস্টাইন পরিসংখ্যান" তৈরি করেন, যা পদার্থ বিজ্ঞানে এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে বিবেচিত হয়। এই বোস আইনস্টাইন পরিসংখ্যান, বোস আইনস্টাইন ঘনীভবন এবং বোসন কনার ওপর গবেষনা করে পরবর্তীকালে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অথচ এর মূল আবিষ্কারক ও প্রবক্তাদের কোন নোবেল দেওয়া হয় নি। 

এই দিক থেকে বিচার করে সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে নোবেল পুরস্কার না দেওয়াটা নোবেল কমিটির অনেক সদস্যদের কাছে আজও পরম বিস্ময় ও হতাশার কারন হিসাবে থেকে গেছে।


মেঘনাদ সাহা

খুব ছোট্ট বেলায় মেঘনাদ সাহার বাবা তার নাম রেখেছিলেন - "মেঘনাথ", যার অর্থ ছিলো ইন্দ্র। দেবরাজ ইন্দ্রকে মেঘনাথ বলে ডাকা হয়। কিন্তু  নামের দিক থেকে দেবরাজ হলেও, নীচু জাতের হওয়ার কারনে মেঘনাথ সাহা কে ছাত্রজীবনে জাতি বৈষম্যের শিকার হতে হয়। 

এই ক্ষোভের কারনে তিনি তাঁর মেঘনাথ নাম পরিবর্তন করে রাখেন "মেঘনাদ"। মেঘনাদ ছিলেন রাক্ষসদের প্রতিনিধি। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে পরাস্ত করে ইন্দ্রজিৎ নামে পরিচিত হন। এর পর থেকে মেঘনাথ সাহা সারা বিশ্বের কাছে মেঘনাদ সাহা নামেই পরিচিতি লাভ করেন। 

গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার 

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অন্যতম সহপাঠী ছিলেন মেঘনাদ সাহা। একজন প্রখ্যাত জ্যোর্তিবিজ্ঞানী হিসাবেই তিনি সারা বিশ্বে স্মরনীয় ও পরিচিতি লাভ করেন। 

"থার্মাল আয়োনাইজেশন তত্ত্ব" ছিলো তাঁর গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তাঁর আবিষ্কৃত সাহা আয়োনাইজেশন সমীকরন নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলির ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়। এককথায় বলতে গেলে, আধুনিক জ্যোর্তি - পদার্থ বিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে কয়জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপর, অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা ছিলেন তাদের'ই একজন। 

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও অসহযোগীতার শিকার

মেঘনাদ সাহার আবিষ্কার তাপ আয়রন তত্ত্বকে হাতে কলমে পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলো না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষনাগারেই একমাত্র এরকম যন্ত্রপাতি ছিলো। ১৯২১ খ্রিঃ মেঘনাদ সাহা জ্যোর্তিবিদ হিলবার্ট হলকে এ বিষয়ে সাহায্যের প্রস্তাব পাঠালে হলের কাছ থেকে কোন উত্তর তিনি পান নি। 

বিজ্ঞান চর্চায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রম অসহযোগীতা মেঘনাদ কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো, তিনি যতই প্রতিভাধর হউন না কেন, আসলে তিনি এক পরাধীন দেশের বিজ্ঞানী। যে জাতি বৈষম্য ও অসহযোগীতা পরাধীন ভারতে অন্যান্য ক্ষেত্র গুলিতে লক্ষ্য করা গিয়েছিলো, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তার অন্যথা ছিলো না। 

শেষকথা

বাঙালি বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত বৈষম্য ও অসহযোগীতার শিকার হয়েছিলেন। অনেকেই তাদের পরিশ্রম লব্ধ গবেষনার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি টুকু পান নি। এসবই প্রমান করেছিলো, সবকিছুর চাইতে দেশের স্বাধীনতাটি সবার প্রথমে প্রয়োজন। যোগ্য সম্মান ও নায্য স্বীকৃতির জন্য সবার আগে পরাধীনতার গ্লানি মোচনে গুরুত্বপূর্ণ।

1 Comments

  1. Caesars Palace Casino | K-9 Newsroom
    Caesars Palace Casino is a premier entertainment and 토토 사이트 shopping destination 라이브 스코어 사이트 in South Africa. Caesars Palace 마리나 베이 샌즈 카지노 is 더킹카지노 도메인 located on the 우리카지노 banks of the Nile in

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post