বিজ্ঞান শিক্ষার মতোই এদেশে কারিগরি শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রেও ইংরেজদের ছিলো প্রবল অনীহা। কোম্পানির শাসনের সূচনায় এদেশে সরকারি অফিস ও প্রশাসন বিভাগে কাজ চালানোর জন্য ইংরেজি জানা কিছু কেরানির প্রয়োজন পড়েছিলো। এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই এদেশে সাধারন শিক্ষা বা জেনারেল শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে।
কারিগরি শিক্ষার বিকাশ |
কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
কিন্তু অচিরেই এদেশে সড়ক, সেতু, বন্দর নির্মান ও রেলপথ স্থাপনের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ করিগরের অভাব অনুভূত হয়। পূর্ত বিভাগ স্থাপনের ফলে সরকারের স্বার্থেই কারিগরি শিক্ষার সূচনা ঘটে। যদিও তার পরিধি ছিলো খুবই সীমিত।
কোম্পানির শাসনকালে (১৭৭৩ - ১৮৫৭) এদেশে মাত্র ৬ টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে উচ্চ কারিগরি শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে ১৮৪৭ খ্রিঃ রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ১৮৫৬ খ্রিঃ শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দেশ তথা বিশ্বে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।
ভারতীয়দের সোচ্চার দাবি
বিকল্প কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে ভারতীয়রা দীর্ঘদিন ধরেই কারিগরি শিক্ষার প্রসারের বিষয়টিকে নিয়ে সোচ্চার হন। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ বসু ১৮৮৬ সালে সর্বপ্রথম কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য একটি পৃথক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব দেন।
উনিশ শতকের শেষদিক থেকে জাতীয় কংগ্রেস ও দেশীয় সংবাদপত্র গুলি কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের দাবি তোলে। ১৯০৪ খ্রিঃ কলকাতায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠে। এই অ্যাসোসিয়েশন স্কলারশিপ দিয়ে এদেশের ছাত্রদের কারিগরি শিক্ষা লাভের জন্য ইওরোপ, আমেরিকা ও জাপানে পাঠায়।
স্বদেশী আন্দোলন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ভাবনা
ইতিমধ্যে ১৯০৫ খ্রিঃ ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ করলে এর প্রতিবাদে শুরু হয় স্বদেশী আন্দোলন। শিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর ও স্বাধীন হয়ে ওঠার জাতীয় ভাবনা এই সময় গুরুত্ব পায়। ইংরেজী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো কেরানি তৈরি করে ভারতীয়দের গোলাম করে রাখা। এর বিরুদ্ধে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সমবেত ভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তন করতে চাইলেন। এরই ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে -
- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এবং
- বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।