মহেন্দ্রলাল সরকার ও ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা

 বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে যেসব ব্যক্তি অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছিলেন, ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩ - ১৯০৪) ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

মহেন্দ্রলাল সরকার ও ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা
মহেন্দ্র লাল সরকার ও ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা

সংক্ষিপ্ত জীবনী

অত্যন্ত খিটখিটে, দুর্মুখ স্বভাবের এই মানুষটি ছিলেন তাঁর সময়কালের একজন সেরা ডাক্তার। শুরুর দিকে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কে শিক্ষার জন্য ভর্তি হন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ১৮৬৩ খ্রিঃ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি এম ডি (ডক্টর অফ মেডিসিন) ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় গুরুত্ব

ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার একজন  এলোপ্যাথ হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই একজন সেরা এলোপ্যাথ চিকিৎসক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। এই সময় ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে ভাঁওতা ও বুজরুকি বলে মনে করতেন। 

কিন্তু কিছুদিন পরে মরগান লিখিত "Philosophy of Homeopathy" বইটি পড়ে তিনি গভীর ভাবে প্রভাবিত হন এবং হোমিওপ্যাথির চর্চা শুরু করেন। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিজেকে একজন সেরা হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এইসময় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ক্যানসারে আক্রান্ত হলে, তাঁর চিকিৎসা করেন ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার। 

বলা বাহুল্য, এলোপ্যাথ ও হোমিওপ্যাথ দুটি চিকিৎসা পদ্ধতিতেই ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কিংবদন্তি চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও, জীবিতকালে কোন যোগ্য সম্মান পান নি। 

"Bengal medical Association" এ এক বক্তিতায় ডঃ সরকার হোমিওপ্যাথিকে এলোপ্যাথির চেয়ে অনেক ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি বলে উল্লেখ করলে, কলকাতায় ব্রিটিশ চিকিৎসকগন ক্রুদ্ধ হয়ে ডঃ সরকারকে ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কলকাতা শাখা থেকে বহিষ্কার করেন। যদিও এই বহিষ্কার, খ্যাতির অন্তরালে থাকতে পছন্দ করা মানুষটির কোন ক্ষতিই করতে পারে নি।

"ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা" প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষিত

কিংবদন্তি চিকিৎসক ছাড়াও, ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের এক যুগান্তকারী কৃতিত্বের দিক ছিলো - "ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স" বা "ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা" র প্রতিষ্ঠা করা।

ডঃ সরকার'ই প্রথম ভারতীয়, যিনি সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের রয়েল ইন্সটিটিউটের মতো একটি বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষনাগারের প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন। সমকালীন সময়ে প্রথম বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই তখন বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার জন্য ছিলো অনেক বড়ো নামকরা সংগঠন ও গবেষনাগার। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলো ভারতবর্ষ। 

আসলে ইংরেজ সরকার কোন দিনই চায় নি, ভারতীয়রা বিজ্ঞানের গবেষনা ও উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনার দিকে এগিয়ে যাক। পরাধীন করে রাখার সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইংরেজ সরকার দেখিয়েছিলো। তাই তো বিজ্ঞানের কোন মৌলিক গবেষণাগার তারা এদেশে স্থাপন করে নি। সরকারি শিক্ষা কাঠামোর মধ্যে যেটুকু গবেষনার সুযোগ ছিলো, সেখানেও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো সরকার। ফলে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ভারতীয়দের স্বার্থে এক নিজস্ব, জাতীয় গবেষনাগারের প্রয়োজন পড়ে। 

বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানীদের জন্য পৃথিবীর সব দেশেই নানা সংগঠন ও গবেষনাগার থাকলেও, ভারত'ই একমাত্র দেশ ছিলো, যেখানে এরকম কোন প্রতিষ্ঠান ছিলো না। এই অভাব বোধ থেকেই ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার মতো ভারতীয়দের একটি মৌলিক  বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন। ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার প্রতিষ্ঠা এই ভাবনার ফলশ্রুতি ছিলো, বলা যায়।

মহেন্দ্রলাল সরকার প্রথম ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রন ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি বিজ্ঞান সমিতি গঠনের প্রস্তাব তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই প্রস্তাবে কোন সাড়া দেয় নি। আসলে আমরা এর আগে বহু বার'ই বলেছি, যথার্থ বিজ্ঞান শিক্ষার মধ্য দিয়ে ভারতীয়দের মেধা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশ ঘটুক, এটা কোন মতেই ইংরেজ সরকার চায়তো না।

যাইহোক, ১৮৬৮ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার "ক্যালকাটা জার্নাল অব মেডিসিন" নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকাতে ১৮৬৯ খ্রিঃ আগস্ট মাসে এক প্রবন্ধে তিনি ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখেন। ১৮৭০ খ্রিঃ এটি "হিন্দু প্যাট্রিয়ট" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে ক্যালকাটা জার্নালের মূল প্রবন্ধটির বঙ্গানুবাদ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় প্রকাশ করে বিজ্ঞান সভা গঠনের অপরিহার্যতা সম্পর্কে একটি জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ লেখেন।

এর ফলে, বিজ্ঞান সভা গঠনের স্বপক্ষে জনমত গঠিত হয় এবং বহু জ্ঞানী গুনি ব্যক্তি ডঃ সরকারের পাশে এসে দাঁড়ান।

ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার প্রতিষ্ঠা

১৮৭৬ খ্রিঃ ১৫ জানুয়ারি, বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর রিচার্ড টেম্পলের সভাপতিত্বে এবং কলকাতার বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় - "ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স" বা ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা।

প্রতিষ্ঠার সময় এই গবেষনাগারটি ২১০ নং বৌবাজার স্ট্রিটে অবস্থিত ছিলো। পরে ১৯০৭ খ্রিঃ এটি কলকাতায় যাদবপুর স্থানান্তরিত হয়। ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার প্রথম ডিরেক্টর নির্বাচিত হন।

উদ্দেশ্য

ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয় -

  1. ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রন, আর্থিক সাহায্য ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি হবে দেশের জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। 
  2. এই প্রতিষ্ঠানে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, উদ্ভিদ বিদ্যা, প্রানী বিদ্যা, শারীর বিদ্যা, ভূ বিদ্যা, গনিত শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয় গুলি নিয়ে মৌলিক গবেষনা চলবে এবং 
  3. বক্তিতাদানের মধ্য দিয়ে এই বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের ব্যবস্থা করা হবে।

ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার কার্যাবলী

প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভাকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করেন। 

(১.) বিজ্ঞান বিভাগ স্থাপন - 

ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা গুলির, যেমন - পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, উদ্ভিদ বিদ্যা, প্রানী বিদ্যা, শারীর বিদ্যা, ভূ বিদ্যা, গনিত শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয় গুলির জন্য পৃথক পৃথক বিভাগ স্থাপন করা হয়।

(২.) জ্ঞানী গুনি ব্যক্তিদের আহ্বান -

ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার উৎকর্ষ বাড়ানোর জন্য এই প্রতিষ্ঠানে দেশের সেরা বিজ্ঞান সাধক ও পন্ডিতদের আহ্বান জানানো হয়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন - জগদীশ চন্দ্র বসু, চুনীলাল বোস, প্রমথনাথ বোস, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।

(৩.) বক্তিতা দানের ব্যবস্থা -

জ্ঞানী গুনি ব্যক্তিদের বক্তিতা দানের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ঠিক করা হয়, এই প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের বক্তিতা চলবে।
  • এক, জনসাধারণের জন্য জনপ্রিয় সাধারণ বক্তিতা সমূহ এবং 
  • দুই, স্বপ্ন সংখ্যক মেধাবীদের জন্য বিশেষ গবেষনামূলক বক্তব্য।
১৯০১ খ্রিঃ ২৪ তম সাধারন বার্ষিক অধিবেশনে মহেন্দ্রলাল সরকারের দেওয়া এক ভাষন থেকে জানা যায়, সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ১০০ টির মতো বক্তিতার ব্যবস্থা বিজ্ঞান সভায় করা হয়েছিলো।

সভার মূল সদস্য ও তাদের অনুমোদিত ব্যক্তিরা বিনা পয়সায় এবং ছাত্রছাত্রী ও বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী সাধারন জনগন সামান্য প্রবেশমূল্য দিয়ে বক্তিতা শুনতে পারতো।

(৪.) নারীদের অংশগ্রহণ -

নারীরাও যাতে বিজ্ঞান চর্চায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়েও ডঃ সরকার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে সরলা দেবী চৌধুরানী এই প্রতিষ্ঠানের পদার্থ বিদ্যার শ্রেনী কক্ষে ছাত্রদের সঙ্গে একত্রে পাঠ গ্রহনের অনুমতি লাভ করেন। 

(৫.) গবেষনাগারের উৎকর্ষ সাধন -

বিজ্ঞান গবেষনার কাজে ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে সেইজন্য ডঃ সরকার ১৮৭৮ খ্রিঃ ফ্রান্স থেকে নানা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আনিয়ে বিজ্ঞান সভার গবেষনাগারকে সাজিয়ে তোলেন। অল্প দিনের মধ্যেই দেশ বিদেশের বহু ছাত্রছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানে এসে বিজ্ঞান গবেষণা করতে থাকেন।

(৬.) বিজ্ঞানের গবেষনা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি -

অল্প সময়ের মধ্যেই বহু জ্ঞানী গুনি ব্যক্তিদের গবেষনার ফলে ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। 
  • এই প্রতিষ্ঠানে গবেষনা করেই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরামন (সি ভি রামন) ১৯২৮ খ্রিঃ "রামন এফেক্ট" আবিষ্কার করেন। এই মৌলিক গবেষনার জন্য তিনি ১৯৩০ খ্রিঃ নোবেল প্রাইজ পান।
  • রামনের পাশাপাশি সমকালীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এস ভাগবন্তম, এল শ্রীবাস্তব, এন কে শেঠি, সি প্রসাদ, মেঘনাদ সাহা প্রমুখরাও এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক হিসাবে সুনাম অর্জন করেন।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স বা ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম।

সংক্ষেপে এর গুরুত্বের প্রধান দিক গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি -
  1. ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা ছিলো ভারতের সর্বপ্রাচীন বেসিক সায়েন্সের মৌলিক গবেষণা কেন্দ্র। 
  2. এই প্রতিষ্ঠানটি ছিলো ঔপনিবেশিক আমলে ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দেশীয় ও জাতীয় বিজ্ঞান গবেষনা কেন্দ্র। 
  3. অল্প আয়াসে ও সামান্য পরিকাঠামোর মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক অসংখ্য বক্তিতা দানের ব্যবস্থা করে এই সভা ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রভূত বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। বেসরকারি কলেজের বহু ছাত্রছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানে বক্তিতা শুনতে আসতেন।
  4. এক্স রশ্মি, আলোক বিজ্ঞান, চুম্বকত্ব, রামন এফেক্ট প্রভৃতি নানা বিষয়ে গবেষনার সুযোগ ও অনুকূল পরিবেশ প্রদান করে এই প্রতিষ্ঠান ভারতীয়দের বিজ্ঞান বিষয়ক মেধাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্তরে পৌঁছে দেয়। 
  5. বিজ্ঞান সভা তার নিজস্ব পত্রিকা "ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্সের" মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানের নানা মৌলিক গবেষনার বিষয় গুলিকে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে উনিশ ও বিশ শতকে বাংলার বৌদ্ধিক জাগরনে এক বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন দেশীয় ব্যক্তিদের সাহায্য

ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার মনে প্রানে চেয়েছিলেন, বিজ্ঞান সভা ভারতের একটি জাতীয় বিজ্ঞান চর্চার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক। তিনি জানতেন, এটি তখনই সম্ভব হবে, যখন দেশবাসী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাত্মতাবোধ করবে। এজন্য তিনি চেয়েছিলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যায়ভার দেশবাসী বহন করুক।ঔপনিবেশিক সরকারের দয়া ও দাক্ষিন্যে নয়, দেশের সাধারন মানুষের  টাকাতেই এই বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এগিয়ে চলুক, এটাই ডঃ সরকার চাইতেন।

তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সমকালীন সময়ের বহু দেশীয় রাজা, মহারাজা, জমিদার ও সংস্কারক ব্যক্তিরা অর্থ সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন -
  • জয়কৃষ্ণ মুখার্জি, 
  • রাজা কমলকৃষ্ণ দেব, 
  • দিগম্বর মিত্র, 
  • যোগেশ্বর সিং, 
  • পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, 
  • মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, 
  • দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। 
IACS বা ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার ট্রাস্ট্রি বোর্ডের দুজন  সদস্য ছিলেন - পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও কেশবচন্দ্র সেন। এছাড়াও -
  • স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, 
  • রাজেন্দ্রলাল মিত্র, 
  • সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, 
  • ডঃ নীলরতন সরকার, 
  • জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, 
  • সত্যেন্দ্রনাথ বোস প্রমুখ, 
এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই সব জ্ঞানী গুনি নানা ব্যক্তিদের সাহচার্যে ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা একটি জাতীয় বিজ্ঞান সাধনার প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়।

ডঃ সরকার উত্তর সময়ের বিজ্ঞান সভা 

ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অমৃতলাল সরকার এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার নেন। 
  • ১৯৪৬ - ৫১ সময়কালে ডঃ মেঘনাদ সাহা এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকাকালে যাদবপুরে বিজ্ঞান সভার নতুন ভবন তৈরি হয়।
  • ১৯৫৪ খ্রিঃ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বিজ্ঞান সভার নতুন ভবনের দ্বার উদ্বোধন করেছিলেন।
  • সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় উৎসাহ দেবার জন্য ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের অধিকার লাভ করেছে। 

রামন এফেক্ট কি?

আলো কোন অনুর ওপর দিয়ে ক্রিয়া করলে কিছুটা শক্তি সেই অনুকে দিয়ে দেয়। এর ফলে অনুটি স্পন্দিত হয় এবং  আলোর রং বদলে  যায়। এটাই হলো "রামন এফেক্ট"।

১৯২১ সালে সি ভি রামন জলপথে বিদেশে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই তার মাথায় আসে, সমুদ্রের জল কে নীল রংয়ের দেখায় কেন? রামনের আগে বিজ্ঞানী রেলে অবশ্য এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

আমরা জানি, বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন অনুর সাথে আলোক কনার বিক্ষেপের ফলে নীল আলোর তরঙ্গ আমাদের চোখে আসে। তাই আমরা আকাশ নীল দেখি। রেলে বললেন - এই নীল আকাশের প্রতিফলনের ফলেই সমুদ্রের জল নীল দেখায়।

রেলের ব্যাখ্যায় রামন সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি আকাশের প্রতিফলন কে প্রতিহত করেও দেখলেন, সাগরের জল কে নীল'ই দেখাচ্ছে। পরে সাগরের কিছুটা জল তিনি কলকাতায় নিয়ে আসেন এবং ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভায় গবেষনা চালান। 
এই গবেষনায় তিনি দেখলেন, সাগরের জল আকাশের প্রতিফলনের দ্বারা নয়, জলে আলোক কনার বিশেষ বিক্ষেপনেই জল নীল রং ধারন করছে। ১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, এই সি ভি রামনের এই গবেষনা "রামন এফেক্ট" নামে স্বীকৃতি লাভ করে।

এই মৌলিক গবেষণার জন্য ১৯৩০ খ্রিঃ তাকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post