টুকরো কথা - প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ |
(১.) রংপুর বিদ্রোহ
বিদ্রোহের সময়কাল - ১৭৮৩ খ্রিঃ।
বিদ্রোহের স্থান - রংপুর, দিনাজপুর ও কোচবিহার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এই বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। তবে এই বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র ছিলো রংপুর। এজন্য এই বিদ্রোহ রংপুর বিদ্রোহ নামেই পরিচিত হয়।
বিদ্রোহের নেতা - রংপুর বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন শেখ নুরুলউদ্দিন ও ধীরাজরঞ্জন।
কারন - রংপুর বিদ্রোহের প্রধান কারন ছিলো -
- ইজারাদার দেবী সিংহের ভূমি রাজস্ব আদায়ে নানা অত্যাচার এবং
- কৃষক ও জমিদারদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ।
বৈশিষ্ট্য - (১.) রংপুর বিদ্রোহ ছিলো একটি কৃষক বিদ্রোহ, (২.) হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এই বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো।
(২.) ভিল বিদ্রোহ
বিদ্রোহের সময়কাল - ১৮১৯ খ্রিঃ - ১৮৪৬ খ্রিঃ।
বিদ্রোহের স্থান - মহারাষ্ট্রের সাতপুরা, সাতমালা ও অজন্তা অঞ্চলে এই আদিবাসী বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।
বিদ্রোহের নেতা - ভিল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন তাঁতিয়া ভিল, চিল নায়েক, হিরিয়া ও শিউরাম।
কারন - ভিল বিদ্রোহের প্রধান কারন ছিলো -
- ভিলদের ওপর ভূমি রাজস্বের হার বৃদ্ধি, এবং
- নানা ধরনের অতিরিক্ত কর আরোপ।
বৈশিষ্ট্য - (১.) ভিল বিদ্রোহ ছিলো একটি উপজাতি বিদ্রোহ, (২.) এই বিদ্রোহ দীর্ঘ দিন ধরে, প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিচালিত হয়েছিলো।
(৩.) পাগলপন্থী বিদ্রোহ
বিদ্রোহের সময়কাল - ১৮২৫ খ্রিঃ এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
বিদ্রোহের স্থান - পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলাতে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিলো।
প্রধান নেতা - পাগলপন্থী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন ফকির করিম শাহ ও টিপু শাহ।
ফকির করিম শাহ ময়মনসিংহের গারো উপজাতি কে বাউল বা পাগলপন্থী ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। তাঁর এই পাগলপন্থী মতবাদের মূল কথা ছিলো সাম্যবাদ। এই সাম্যবাদের প্রচার করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, সকলেই ঈশ্বরের সন্তান। সুতরাং কেউ কারো অধীন নয়, কেউ ছোট বা বড়ো নয়।
তাঁর এই ধর্মীয় মতবাদ কৃষক বিদ্রোহ সংগঠনে জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংঘবদ্ধ হতে সাহায্য করেছিলো।
কারন - পাগলপন্থী বিদ্রোহের মূল কারন ছিলো -
- ভূমি রাজস্বের হার বৃদ্ধি, এবং
- অন্যান্য অতিরিক্ত কর আরোপ।
বৈশিষ্ট্য - এটি ছিলো একটি উপজাতি কৃষক বিদ্রোহ।
(৪.) পাবনার কৃষক বিদ্রোহ
বিদ্রোহের সময়কাল - ১৮৭০ খ্রিঃ পাবনার কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।
বিদ্রোহের স্থান - পূর্ব বঙ্গের পাবনা, ঢাকা, ত্রিপুরা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলাতে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিলো।
প্রধান নেতা - পাবনা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন, ঈশানচন্দ্র রায়, যিনি "বিদ্রোহী রাজা" নামে পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন শম্ভুনাথ পাল, ক্ষুদিমোল্লা।
বিদ্রোহের কারন - পাবনা বিদ্রোহের মূল কারন ছিলো -
- কৃষকদের খাজনা বা ভূমি রাজস্বের হার বৃদ্ধি, এবং
- রায়ত বা চাষীদের দখলিস্বত্ত্ব বা স্বত্বাধিকার অস্বীকার করা।
বৈশিষ্ট্য - (১.) এটি ছিলো একটি কৃষক বিদ্রোহ, (২.) নিয়মতান্ত্রিক পথে আইনের সাহায্য নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করা এই বিদ্রোহের অপর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিলো।