নীল বিদ্রোহের আগে কোন কৃষক বিদ্রোহকেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনী প্রকাশ্যে সমর্থন করেন নি। কিন্তু নীল বিদ্রোহে শিক্ষিত সম্প্রদায় কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নেয় এবং এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়।
|
নীল বিদ্রোহে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ভূমিকা
|
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ভূমিকার মূল দিক
নীল বিদ্রোহে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ভূমিকার বিষয়টি পর্যালোচনা করলে এর কয়েকটি সাধারন রূপকে আমরা আলোচনার প্রথমেই তুলে ধরতে পারি। এগুলি হলো -
(১.) শিক্ষিত বাঙালিরা অন্যান্য সাধারন বাঙালিদের মতোই নীল বিদ্রোহের প্রতি তাদের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন।
(২.) শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেনীর এই সহানুভূতি জ্ঞাপন ছিলো নেহাতই মৌখিক। কার্যক্ষেত্রে এর কোন প্রয়োগ তারা ঘটান নি। বিদ্রোহীদের সমর্থনে কোন সভা সমাবেশ তারা করেন নি। নেতৃত্ব দেন নি, এমনকি পাশে থেকেও কোনরকম সাহায্যের হাতও তারা বাড়িয়ে দেন নি।
(৩.) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় , দীনবন্ধু মিত্র, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শিশির কুমার ঘোষের মতো কিছু ব্যতিক্রমী শিক্ষিত বাঙালি বিদ্রোহীদের পাশে থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য ও সমর্থনের নির্ভেজাল প্রচেষ্টা করেছিলেন। নীল বিদ্রোহে তাদের এই "ঐকান্তিক ও আন্তরিক উদ্যোগ" কলকাতা শহরের অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালিদের মনকে গভীর ভাবে বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলেছিলো। যদিও কোন ক্ষেত্রেই শিক্ষিত শ্রেনীকে সম্মিলিত ভাবে বিদ্রোহের সমর্থনে বা চাষীদের মূল অভিযোগ গুলির প্রতিকারে কোনরকম ভাবে উদ্যোগী হতে দেখা যায় নি।
কেন মধ্যবিত্ত শ্রেনী সক্রিয় ভূমিকা নেয় নি?
মনে রাখতে হবে, নীল বিদ্রোহ একটি কৃষক বিদ্রোহ ছিলো। বাংলার উদীয়মান শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর জীবন ও স্বার্থের সঙ্গে কৃষির সেই অর্থে কোন যোগাযোগ ছিলো না। মধ্যবিত্ত শ্রেনী বেঁচে থাকার ও টিকে থাকার প্রধান রসদ গুলি ইংরেজদের তৈরি প্রশাসনিক ও বহুবিধ চাকুরির ক্ষেত্র গুলি থেকেই পেরেছিলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই শ্রেনী স্বার্থ না থাকায় মধ্যবিত্ত শ্রেনী নীলবিদ্রোহে কোন সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে নি। মৌখিক সহানুভূতি জানিয়েই তারা যাবতীয় দায় সেরে ফেলতে চেয়েছিলো।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলায় নীলচাষের উদ্যোগকে প্রথমদিকে অনেক প্রখ্যাত বাঙালিই সমর্থন করেছিলেন। রামমোহন রায় এবং দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন তাদের অন্যতম। তারা মনে করতেন, বাংলায় নীলচাষ শুরু হলে বিদেশী পুঁজি ভারতে আসবে। কর্মসংস্থান বাড়বে এবং এর ফলে দেশেরই লাভ হবে। এদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে।
তাদের এই মতবাদ সমকালীন সময়ের এবং পরবর্তীকালের অনেক শিক্ষিত বাঙালিকেই বিভ্রান্ত করেছিলো। তাছাড়া এইসময়ের শিক্ষিত বাঙালিরা নিজেদের চাকরির সমস্যা, অত্যন্ত উচ্চ ধরনের আধ্যাত্মিক চিন্তা (ব্রাহ্মধর্ম), এবং সমাজ সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
তারা শহরে থাকতেন। গ্রামের সঙ্গে, গ্রামের সমস্যার সঙ্গে তাদের কোন নাড়ির টান ছিলো না বলেই নীলবিদ্রোহে শিক্ষিত শ্রেনী এবং কৃষকদের মধ্যে কোন আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। দূর থেকে সহানুভূতি জ্ঞাপন করেই তারা তাদের নৈতিক দায়টুকু সেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।
মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ত ও উদাসীন ভূমিকা
মনে রাখতে হবে, নীলচাষীদের প্রতি নীলকরদের অন্যায় গুলির প্রতিরোধে কলকাতা বা মফস্বলের শিক্ষিত সম্প্রদায় -
- কোন সভা সমাবেশ করেন নি। কোন গন দরখাস্ত বা আবেদনপত্র তাদের তরফ থেকে সরকারকে পাঠান নি।
- শিক্ষিত শ্রেনীর মধ্যে ছিলেন,উকিল ও ব্যারিস্টার। নীলবিদ্রোহে যখন কৃষকরা ধর্মঘট করে হাজারে হাজারে জেলে যাচ্ছিলো, তখন শিক্ষিত সমাজের পক্ষ থেকে কোন উকিলই কৃষকদের হয়ে মামলা লড়তে চাইতেন না।
- সৌভাগ্যক্রমে কৃষকদের হয়ে মামলা লড়তে দু একজনই উকিল মোক্তারই পাওয়া গিয়েছিলো, যাদের ভূমিকা নেহাতই ব্যতিক্রমী ছিলো।
- শিক্ষিত বাঙালিরা অর্থ সংগ্রহ করে কৃষকদের সাহায্য করেছেন, এমন কোন তথ্য এখনও পর্যন্ত ইতিহাসে পাওয়া যায় নি। এমনকি তখনকার বাঙালি শিক্ষিতদের একমাত্র সংগঠন "ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনও" নীল বিদ্রোহে বিশেষ কোন সক্রিয় ভূমিকা নেয় নি।
- হরিশচন্দ্র তার "হিন্দু প্যাট্রিয়টে" নিয়মিত সংবাদ প্রেরনের জন্য শহরের কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পান নি। তাই তাকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বালক শিশির কুমার ঘোষকে নিযুক্ত করতে হয়েছিলো। এই সময় শিশির কুমারের বয়স ছিলো মাত্র ষোল সতেরো বৎসর। এসব থেকেই বোঝা যায়, নীল বিদ্রোহে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি কতটা নির্লিপ্ত ও উদাসীন ছিলেন।
- হরিশচন্দ্র তার "হিন্দু প্যাট্রিয়টে" নীলকরদের অত্যাচারের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করতে থাকলে, নীলকররা প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওঠেন। ফলস্বরূপ হরিশচন্দ্রের অকাল মৃত্যুর পর তার অসহায় ও নিঃসম্বল বিধবার বিরুদ্ধে তারা মামলা এনেছিল। এই সময় তাকে রক্ষা করবার জন্য শিক্ষিত বাঙালিরা পাশে এসে দাঁড়ায় নি। শিক্ষিতরা মৌখিক সহানুভূতি জানিয়েই তাদের দায় সেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।
মোটকথা, এই ছিলো নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মনোভাব ও ভূমিকা। তাদের ভূমিকা "নির্লিপ্ত সমর্থন ও মৌখিক সহানুভূতির" স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
কিছু "ব্যক্তিগত" শিক্ষিতের সমর্থন ও সাহায্য
নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর এই "নির্লিপ্ত সমর্থন ও মৌখিক সহানুভূতির" বাইরেও অবশ্য কয়েকজন মধ্যবিত্ত তাদের "ব্যক্তিগত উদ্যোগে" বিদ্রোহীদের নানা ভাবে সাহায্য করেছিলেন এবং বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সবশেষে তাদের কথাও আমরা তুলে ধরবো। তবে মনে রাখতে হবে, তাদের ভূমিকা আর সমগ্র মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ভূমিকা কখনই এক ছিলো না।
(১.) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় :-
নীল বিদ্রোহে যেসব শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অগ্রগন্য ছিলেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
তিনি নীলকরদের অত্যাচারের সংবাদ গুলি নিয়মিত ভাবে তার "হিন্দু প্যাট্রিয়ট" পত্রিকায় তুলে ধরতেন। হিন্দু প্যাট্রিয়টে এজন্য তিনি "নীল জেলা" নামে একটি আলাদা বিভাগ খুলেছিলেন। এখানে নিয়মিত সংবাদ পাঠাতেন - যশোহর এর শিশির কুমার ঘোষ, কৃষ্ণনগরের মনমোহন ঘোষ, কুমারখালির হরিনাথ মজুমদার প্রমুখ।
হিন্দু প্যাট্রিয়ট ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হওয়ায় তা খুব দ্রুত শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে নীলবিদ্রোহের স্বপক্ষে জনমত গঠন করে। তবে সংবাদ পরিবেশন করার পাশাপাশি, কৃষকদের মামলায় আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করা ও পরামর্শ দানের ক্ষেত্রেও হরিশচন্দ্র ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এজন্য তাঁর বাড়ির দরজা সব সময় কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকতো। নীল বিদ্রোহে দরিদ্র কৃষকদের অর্থ সাহায্য করে হরিশচন্দ্র প্রায় নিঃশ্ব হয়ে পড়েছিলেন।
হরিশচন্দ্র নীল কমিশনে চাষীদের স্বপক্ষে সাক্ষ্যদান করেন এবং নীলকরদের অত্যাচারের স্বপক্ষে নানা তথ্যপ্রমান পেশ করেন। ১৮৬১ খ্রিঃ ১৪ জুন অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
(২.) শিশির কুমার ঘোষ :-
নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের "হিন্দু প্যাট্রিয়ট" পত্রিকার অন্যতম সংবাদদাতা ছিলেন, শিশির কুমার ঘোষ। মাত্র ষোল সতেরো বছর বয়সে তিনি যশোহর ও নদীয়ার গ্রামে গ্রামে ঘুরে শুধু সংবাদ সংগ্রহ করতেন না, চাষীদের সংঘবদ্ধ করে তোলার কাজটিও করেছিলেন। কৃষকরা তাকে সিদ্ধপুরুষ বলে মনে করতো, তাই তাকে কৃষকরা "সিন্নিবাবু" নাম দিয়েছিলো।
নীল বিদ্রোহে প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও শিশির কুমারকে ধরতে পারেন নি। শেষপর্যন্ত যশোরের ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমারের বিরুদ্ধে মামলা আনার জন্য তৎকালীন কোম্পানি সরকারের কাছে আদেশ প্রার্থনা করেছিলেন। যদিও ম্যাজিস্ট্রেট অনেক চেষ্টা করেও শেষপর্যন্ত মামলা আনতে পারেন নি।
(৩.) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় :-
নীল বিদ্রোহে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ১৮৫৮ খ্রিঃ তিনি খুলনাতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন। সেখানে এক অত্যাচারী নীলকর হাতির শুঁড়ে মশাল বেঁধে একটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিলে, দারোগা বা পুলিশ কেউই ঐ অত্যাচারী নীলকর সাহেবকে ধরার সাহস দেখান নি। নীলকর সাহেবের কাছে একটি বন্দুক থাকায় গ্রেপ্তার করতে গেলেই তিনি গুলি চালাবার ভয় দেখাতেন।
কিন্তু সেসব উপেক্ষা করে দাপুটে ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিম নীলকর সাহেবটিকে গ্রেপ্তার করেন এবং তাকে বিচারের জন্য হাইকোর্টে হাজির করিয়ে ছিলেন। প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্তের লেখা "নীল বিদ্রোহ ও বাঙালি সমাজ" গ্রন্থটি থেকে এই তথ্যের কথা জানা যায়।
(৪.) দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্যরা :-
নীল বিদ্রোহে দীনবন্ধু মিত্র একটি শক্তিশালী ভূমিকা নেন। ডাক বিভাগের চাকুরি করায় তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে চাষীদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি "নীলদর্পন" নাটক লেখেন।
এই নাটক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মধ্যে নীলচাষের বিপক্ষে তীব্র জনমত গড়ে তোলে। অত্যন্ত গোপনে এই নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করে দেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। রেভারেন্ড জেমস লঙ তা প্রকাশ করলে তার জেল ও জরিমানা হয়। কালীপ্রসন্ন সিংহ এই জরিমানার টাকা দিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, নিজ খরচে নীলদর্পনের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে তা বিনামূল্যে বিতরন করেন।
মূল্যায়ন
সুতরাং সবশেষে এটা বলা যায়, নীল বিদ্রোহে যে গুটিকতক শিক্ষিত বাঙালি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাদের সেই উদ্যোগের জন্যই অবশিষ্ট শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেনী বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে ৩ টি পত্রিকার অবদানের কথাও বলা প্রয়োজন। ১৮২২ খ্রিঃ মে মাসে সমাচার চন্দ্রিকা এবং সমাচার দর্পনই প্রথম নীলকরদের অত্যাচারের সংবাদ সর্বসমক্ষে তুলে আনে। ১৮৪৯ খ্রিঃ অক্ষয় কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সর্বপ্রথম নীলচাষীদের ওপর অমানুষিক অত্যাচারের বিষয়টি বিশদে তুলে আনে। তাদের এই সকল ভূমিকা নিঃসন্দেহে শহুরে শিক্ষিত শ্রেনীকে নীল বিদ্রোহের স্বপক্ষে সচেতন করে তোলে।
নীলবিদ্রোহে তাই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনী সরাসরি বিদ্রোহে সামিল না হয়েও, সাহিত্য ও সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে "বৌদ্ধিক ও মানসিক" সমর্থন জানিয়ে অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত গঠন করে। সমকালীন বাঙালি সম্পাদিত বেশ কিছু পত্র পত্রিকায় নীলচাষীদের সংবাদ সহানুভূতির সঙ্গে প্রকাশিত হতো। সরকার এই সংবাদপত্র গুলির বিষয়ে জানতো। শিক্ষিত বাঙালিরা যে নীলকরদের অত্যাচার গুলি সমর্থন করে না, এটা সরকার ভালো করেই উপলব্ধি করেছিলো।
নীলবিদ্রোহে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর এই ভূমিকা সরকারের মধ্যে যে একটি চাপ সৃষ্টি করেছিলো তাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ভারতে ব্রিটিশ সরকারের অন্যতম বড়ো হিতাকাঙ্খী এবং সমর্থনকারী মধ্যবিত্ত শ্রেনীকে চটিয়ে তাই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। সরকার তা করেও নি।
সদ্য ১৮৫৭ খ্রিঃ রক্তক্ষয়ী সিপাহী বিদ্রোহের পর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে ব্রিটিশ শাসনকে ভারতীয়দের কাছে অপ্রিয় করে তোলার কোন মানে ইংরেজ সরকার খুঁজে পায় নি। বিভিন্ন সময়ে তাই ব্রিটিশ সরকার নীল বিদ্রোহে নিজেকে নিরপেক্ষ হিসাবে তুলে ধরে বোঝাতে চেয়েছিলো, নীল সমস্যা একান্তই কৃষক ও নীলকরদের ব্যক্তিগত বিষয়। সরকার কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নয়।
কিন্তু ইংরেজি হিন্দু প্যাট্রিয়ট এবং ইংরেজি নীলদর্পনের মধ্য দিয়ে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নীল বিদ্রোহের স্বপক্ষে দেশ ও ইওরোপীয় সমাজে যে প্রবল জনমত তৈরি করে দেয়, তার ফলেই শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার ১৮৬২ খ্রিঃ ইন্ডিগো অ্যাক্ট এবং ১৮৬৮ খ্রিঃ অষ্টম আইন দ্বারা বাংলায় নীলচাষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
নীল বিদ্রোহে তাই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনী সক্রিয় অংশগ্রহণ না করলেও, তাদের ভূমিকাকে কখনই উপেক্ষা করা যায় না।