বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ - ইওরোপীয় উদ্যোগ

ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটলেও, গুপ্ত পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক অনৈক্য ও অস্থিরতা, বৈদেশিক আক্রমণ, শিক্ষার অবনমন ইত্যাদি নানা কারনে বিজ্ঞান শিক্ষার ধারাটি লুপ্ত হয়ে যায়।

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ - ইওরোপীয় উদ্যোগ
বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ - ইওরোপীয় উদ্যোগ 


প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষা 

 মনে রাখতে হবে, ইওরোপে সতেরো শতকে "বিজ্ঞান বিপ্লব" ঘটার পর থেকে "বিজ্ঞান" সেখানে একটি পৃথক চর্চা ও গবেষনার বিষয় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো। কিন্তু ভারতে কখনই বিজ্ঞান পৃথক বা আলাদা কোন গবেষনা বা চর্চার বিষয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় নি।

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে দর্শন আর বিজ্ঞান একই সঙ্গে যুক্ত ছিলো। প্রাচীনকালে দর্শন চর্চার মধ্য থেকেই বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ ঘটেছিলো। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা বোঝা যাবে। প্রাচীন ভারতীয় দর্শনে বলা হয়েছিলো - "সর্বম অনিত্যম, সর্বম শূন্যম"। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়, শূন্য বা মৃত্যুই চরম সত্য। "মন" ও "জগতের" শুরু শূন্য থেকে, এবং শূন্যতেই তারা বিলিন হয়।

ভারতীয় দর্শনের এই শূন্যতাবাদ থেকেই গানিতিক "০" (শূন্য) সংখ্যার উৎপত্তি হয়েছিলো। এইভাবেই ভারতে দর্শন চর্চার মধ্য থেকেই বিজ্ঞান চর্চা উৎপত্তি লাভ করেছিলো।

তবে স্বতন্ত্র কোন বিষয় বা শাখা হিসাবে আধুনিক ইওরোপীয় ধাঁচের বিজ্ঞান ভারতে কোন কালেই গড়ে ওঠে নি। যে কারনে প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজোও জোটে নি।

বিজ্ঞান ভারতে একটি পৃথক শিক্ষার বিষয় হিসাবে আত্মপ্রকাশ না করার জন্য, বিজ্ঞান শিক্ষার বিষয়ে ভারতীয়দের মধ্যে কোন সচেতনতা বোধও গড়ে ওঠে নি। কোন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিও গড়ে ওঠে নি। 

এর ফলস্বরূপ, গুপ্ত পরবর্তী যুগ থেকেই ভারতে ক্রমাগত অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, যুক্তিহীন আচার প্রথা ইত্যাদি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মধ্যযুগে তা আরোও বৃদ্ধি পায়। 

মুঘল যুগের পরে ভারতে ইংরেজ কোম্পানির শাসন শুরু হয়। কোম্পানি প্রশাসনের সুবিধার্থে এদেশে একদল কেরানির দরকার পড়লো। এইজন্য কেরানি সৃষ্টির তাগিদে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন ঘটে। এই পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের সুবাদে বাংলা তথা ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ ধীরে ধীরে ঘটতে আরম্ভ করে।

বিজ্ঞান শিক্ষায় কোম্পানির বিরোধীতা

তবে মনে রাখতে হবে, একেবারে শুরুতেই কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইংরেজরা এদেশে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটুক, এটি চান নি। কারন তারা মনে করেছিলেন, ইওরোপের মতো ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের বিকাশ ঘটলে, ভারতেও শিল্পায়ন ঘটবে। ফলে তা ইংল্যান্ডের স্বার্থের প্রতিকূলই হবে। 

খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম দিকে ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার ভয়ঙ্কর ভাবে উদাসীন ছিলো। তবে এই উদাসীনতার মধ্যেও ঔপনিবেশিক স্বার্থ সুরক্ষিত করতে কোম্পানি এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার ফলে বাংলায় ধীরে ধীরে বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিলো। এর পাশাপাশি সরকারের পূর্ত বিভাগ স্থাপিত হলে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও অনুভূত হয়।

ভারতে বিজ্ঞান চর্চার আদি প্রতিষ্ঠান 

এদেশে কোম্পানি শাসনের প্রথম পর্বে ৩ টি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে বিজ্ঞান চর্চার সূচনা ও বিকাশ ঘটে। এই প্রতিষ্ঠান ৩ টি হলো -

  1. সার্ভে অব ইন্ডিয়া, 
  2. বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং 
  3. এশিয়াটিক সোসাইটি। 

(১.) সার্ভে অব ইন্ডিয়া (১৭৬৭)

১৭৬৭ খ্রিঃ ২৯ জানুয়ারি, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ভারতে বিজ্ঞান চর্চার প্রথম কেন্দ্র - "সার্ভে অব ইন্ডিয়া"। এর প্রথম সার্ভেয়ার ছিলেন জেমস রেনেল

মাথায় রাখতে হবে, ১৭৬৫ খ্রিঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেওয়ানী লাভ করার পর রাজস্ব আদায় করার জন্য জমি জরিপের প্রয়োজন পড়লো। প্রয়োজন পড়লো রাস্তাঘাট ও নদীপথ জানার। সার্ভে অব ইন্ডিয়া এসব নিয়েই কাজ শুরু করে। 

রেনেল বাংলা সহ ভারতের নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে সমীক্ষা চালাতে লাগলেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার ফলে তৈরি হয় ভারতের প্রথম আধুনিক মানচিত্র। এর ফলে সরকারের প্রশাসনিক কাজ কর্ম চালাতে অনেকখানি সুবিধা হয়। এইভাবে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে ভারতের প্রথম অফিসিয়াল মানচিত্র।

মানচিত্র প্রস্তুত ছাড়াও সার্ভে অব ইন্ডিয়ার আরেকটি কৃতিত্ব ছিলো মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নির্নয়। ১৮৫৫ খ্রিঃ সার্ভে অব ইন্ডিয়া একেবারে নিখুঁত ভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা মাপতে সক্ষম হয়েছিলো। ইয়ংবেঙ্গল দলের অন্যতম সদস্য রাধানাথ শিকদার সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাজে নিযুক্ত হয়ে এভারেস্টের উচ্চতা মাপেন। এই কাজের প্রধান পরিচালক ছিলেন জর্জ এভারেস্ট। 

আসল কাজ রাধানাথ শিকদার করলেও, সমস্ত কৃতিত্বের ভাগীদার হন জর্জ এভারেস্ট। তার নামেই হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম রাখা হয় মাউন্ট এভারেস্ট। 

(২.) বোটানিক্যাল গার্ডেন (১৭৮৭)

দুর্লভ গাছ গাছালির সংরক্ষনের জন্য ইওরোপের দেশ গুলিতে বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করা হতো। এটি ইওরোপীয় সংস্কৃতি ও অভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলো। এই অভ্যাসের দরুন ইংরেজরা কলকাতার হুগলি নদীর তীরে শিবপুরে "শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন" তৈরি করে। এই গার্ডেনটি ১৭৮৭ খ্রিঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন ফৌজি অফিসার কর্নেল রবার্ট কিড তৈরি করেছিলেন। 

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমদিকে নানা ধরনের ব্যবসার পাশাপাশি কাঠ ব্যবসাও করতেন। মূলত কোম্পানির জাহাজ তৈরির জন্য উপযুক্ত সেগুন কাঠ চাষ ও মশলাপাতির চাহিদা পূরনের জন্যই এই বাগানটি তৈরি করা হয়েছিলো। 

কিডের মৃত্যুর পর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিদর্শক নিযুক্ত হন উইলিয়াম রক্সবার্গ। ভারতে উদ্ভিদ বিদ্যা নিয়ে তিনিই প্রথম গবেষণার সূত্রপাত করেন বলে, তাকে "ভারতীয় উদ্ভিদ বিদ্যার জনক" বলে অভিহিত করা হয়। 

রক্সবার্গ বাংলায় ৩৫০০ টি গাছের নামের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। উইলিয়াম কেরি এটির সম্পাদনা করে "হার্টস বেঙ্গেলেনসিস" নামে প্রকাশ করেন। এর ফলে উদ্ভিদ বিদ্যা ও চর্চার সূত্রপাত ঘটে। বাগানের পরবর্তী পরিদর্শক ওয়ালিক বোটানিক্যাল গার্ডেনে উদ্ভিদ বিদ্যা চর্চার আরোও প্রসার ঘটান।

(৩.) এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪)

১৭৭৩ খ্রিঃ রেগুলেটিং আইনের ফলে ভারতে কোম্পানির একটি প্রশাসন গড়ে ওঠে। এই প্রশাসনের কাজ কর্ম ভালো ভাবে পরিচালিত করবার জন্য ভারতবর্ষের অতীতকে জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলো। এই প্রয়োজন পূরনের জন্য প্রাচ্যবাদের চর্চা আবশ্যক হয়ে পড়লো। আর প্রাচ্যবাদের চর্চার জন্যই উইলিয়াম জোন্স ১৭৮৪ খ্রিঃ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। 

ভারতবর্ষের সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভুগোল, ইতিহাস, পুরাতত্ব, ভূ তত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, প্রানীবিদ্যা ও উদ্ভিদ বিদ্যা সম্পর্কে চর্চার জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। ভারতে প্রাচ্য বিদ্যার পাশাপাশি বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রেও এশিয়াটিক সোসাইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। 

মনে রাখতে হবে, বহু বিদগ্ধ ব্যক্তি এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য পদে থেকে যেটুকু বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ লাভ করেছিলেন, তা থেকেই এদেশে প্রথম আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত ঘটে। 

তবে এখানে এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে, উপরোক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক সূত্রপাত ঘটলেও, বিজ্ঞান চর্চার যাবতীয় আয়োজনটাই হয়েছিলো ইংরেজদের স্বার্থে ও প্রয়োজনের তাগিদে। 

প্রথম থেকে ইংরেজরা কখনই চায় নি, ভারতীয়রা আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে উঠুক। তারা সবসময় চেয়েছিলো, "বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি" কে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রেখে দিতে। এজন্য ভারতে কোনরূপ বিজ্ঞান গবেষনাতেও তারা সেভাবে সাহায্য করে নি বা উৎসাহ দেখায় নি। 

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি সরকারের এই বিরূপ মনোভাবের কারনে মহেন্দ্রলাল সরকার, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো মানুষদেরকে বিজ্ঞান গবেষনার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে গবেষনাগার খুলতে হয়েছিলো। এইসব প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠিত গবেষনাগারের হাত ধরেই ভারতে যথার্থ অর্থে আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার অগ্রগতি ঘটে। বিজ্ঞান গবেষণার কাজ শুরু হয় এবং ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রশংসা লাভ করে। 

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা লাভ করার কয়েক বছর বাদে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতে একাধিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হতে আরম্ভ করেছিলো। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পত্র পত্রিকার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে সবার প্রথমে শ্রীরামপুর মিশনের কথা স্মরন করা যেতে পারে।

শ্রীরামপুর মিশন ও বিজ্ঞান শিক্ষা 

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার যথার্থ সূত্রপাত ঘটে শ্রীরামপুর ব্যপটিস্ট মিশনের হাত ধরে। ১৮০০ খ্রিঃ উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও ওয়ার্ড এই মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বাংলা ছাপাখানার বিকাশে যেমন এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো, বিজ্ঞান শিক্ষার সূচনা ও বিকাশের ক্ষেত্রেও তেমনি অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছিলো। 

শ্রীরামপুর মিশন থেকে ১৮১৮ খ্রিঃ বাংলার প্রথম সাময়িকপত্র দিগদর্শন প্রকাশিত হয়েছিলো। এতে ছাত্রদের উপযোগী বিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুরে একটি কলেজ গড়ে ওঠে এবং এই কলেজেই প্রথম পদার্থবিদ্যা, আবহবিদ্যা, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীবন বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিষয় গুলির শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। 

বিজ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক পুস্তক রচনাতেও শ্রীরামপুর মিশন তার অবদানের সাক্ষ্য রেখে দিয়ে যায়। 
  • শ্রীরামপুর কলেজের রসায়নের অধ্যাপক জন ম্যাক রচনা করেন - "Principle of chemistry" (প্রিন্সিপলস্ অব কেমিস্ট্রি)। এটি ছিলো বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম রসায়ন গ্রন্থ। 
  • এছাড়া, কেরির পুত্র ফেলিক্স কেরি বাংলায় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো - "বিদ্যাহারাবলী" নামক বিশ্বকোষ।এই বইটি ছিলো বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম "Anatomy" বা অস্থি ও শারীর বিদ্যার গ্রন্থ। 

স্কুল বুক সোসাইটি ও বিজ্ঞান শিক্ষা 

শ্রীরামপুর মিশনের পাশাপাশি স্কুল বুক সোসাইটিও বাংলা ভাষায় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ১৮১৭ খ্রিঃ স্কুল গুলিতে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ ও যোগানের উদ্দেশ্য নিয়ে ডেভিড হেয়ার এটি গড়ে তুলেছিলেন। 

স্কুল বুক সোসাইটি থেকে বিজ্ঞানের বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৮৭৫ খ্রিঃ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, স্কুল বুক সোসাইটি ১৫৪৪ টি বাংলা বই প্রকাশ করেছিলো। এর মধ্যে ১১২ টি ছিলো গনিতের বই। ৬১ টি ছিলো প্রকৃতি বিজ্ঞানের বই এবং ৯৯ টি ছিলো চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত বই। 

স্কুল বুক সোসাইটির বিজ্ঞান বিষয়ক পুস্তক গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো - 
  • "অঙ্ক পুস্তকম্", এটি রচনা করেন রবাট মে। এই বইটি ছিলো বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বিজ্ঞান বিষয়ক বই। 
  • তবে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের প্রথম পাঠ্যপুস্তকটি রচনা করেছিলেন ইয়েটস। তার লেখা বইটির নাম ছিলো - "পদার্থবিদ্যসার"। 
  • এছাড়াও স্কুল বুক সোসাইটি থেকে ১৮২২ খ্রিঃ প্রকাশিত হতে থাকে" পশ্বাবলী" নামে একটি সাময়িকপত্র। এটি ছিলো প্রানী বিশ্বকোষ জাতীয় একটি পত্রিকা। বিদ্যাহারাবলীকে বাদ দিয়ে এটিই ছিলো বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বিশ্বকোষীয় রচনা। 

উপসংহার 

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে আজকের পর্বের আলোচনা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রথম পর্বের সমস্ত উদ্যোগ গুলিই ছিলো ইওরোপীয়দের বা বিদেশীদের। এর মধ্যে একমাত্র শ্রীরামপুর মিশন বা স্কুল বুক সোসাইটি ছাড়া বাদবাকি উদ্যোগ গুলির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষার কোন সুফল বা সুযোগ ভারতীয়রা তেমন ভাবে লাভ করতে পারেন নি। 

দ্বিতীয় পর্ব - বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ - ভারতীয়দের উদ্যোগ

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post