ওয়াহাবি আন্দোলন

 উনিশ শতকের একটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার আন্দোলন ছিলো - "ওয়াহাবি আন্দোলন"। মূলত, ইসলামের সংস্কার ও পুনর্জাগরনের জন্যই "সুন্নি" মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো।

ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে তথ্য ভিত্তিক আলোচনায় প্রবেশের আগে এই আন্দোলনের মূল বিষয়বস্তু ও আন্দোলনের গতি প্রকৃতির দিকটিকে আমরা তুলে ধরবো। কারন এর  মধ্য দিয়ে আলোচনার একেবারে গোড়াতেই ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও স্পষ্ট ধারণা গড়ে উঠবে। 

ওয়াহাবি আন্দোলন
ওয়াহাবি আন্দোলন

ওয়াহাবি আন্দোলনের ৩ টি স্তর বা পর্যায়

দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে (১৮২২ - ১৮৮৫) ভারতে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে ওয়াহাবি আন্দোলন চলেছিলো। এত দীর্ঘ সময়কাল ধরে পরিচালিত হওয়ায়, খুব স্বাভাবিক ভাবেই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি ও চরিত্রের মধ্যে একাধিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিলো।

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই ৩ টি স্তর বা পর্যায় লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। যেমন -

(১.) প্রথম পর্যায় - ধর্মীয় চরিত্র

একেবারে শুরুর দিকে ওয়াহাবি আন্দোলন একটি বিশুদ্ধ ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসাবেই শুরু হয়েছিলো। তখন এর লক্ষ্য ছিলো ইসলাম ধর্মের মধ্যে অমুসলিম নানা প্রথা, সংস্কার ইত্যাদি বিষয় গুলিকে বর্জন করে, প্রকৃত ইসলামীয় অনুশাসন পালনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের যথার্থ "মুসলমান" এবং ইসলামকে তার "বিশুদ্ধ রূপে" প্রতিষ্ঠিত করা। 

মনে রাখতে হবে, মধ্যযুগ থেকে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটেছিলো। এইসময় বহু অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও, প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান ও শিক্ষার অভাবে ধর্মান্তরিত মুসলমানদের প্রকৃত ইসলামীকরন ঘটেনি।

উদাহরন হিসাবে বলা যায়, ভারতের বহু মুসলিম ইসলাম গ্রহণ করার পরেও হিন্দু ধর্মীয় পৌত্তলিক নানা আচার ও সংস্কার পালন করতেন। তারা এখনকার মতো আরবিতে নাম না রেখে ভারতীয় ভাষায় নাম রাখতেন। দাড়ি, টুপি সহ যে বিশেষ পোশাক বিধির দ্বারা একজন মুসলিমকে "মুসলমান" বলে আজ আমরা অনায়াসে চিনতে পারি, এসব কোন কিছুই তখন ছিলো না। 

ওয়াহাবি আন্দোলন মুসলিমদের পৌত্তলিক আচার ও সংস্কার গুলিকে বর্জন করে পাঁচওয়াক্ত নামাজ, রোজা, কোরান, হাদিস ইত্যাদি পালন করার কথা বলে। মুসলিম ধর্ম যে স্বতন্ত্র এক ধর্ম তা তুলে ধরার জন্য এই আন্দোলন হিন্দু ধর্মের বিপ্রতীপে মুসলিমদের পৃথক জাতিসত্ত্বা ও আত্মপরিচয়ে জোর দেয়। এইজন্য ওয়াহাবি আন্দোলন থেকে প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য কিছু অবশ্য পালনীয় নির্দেশ উঠে আসে। যেমন - একজন প্রকৃত মুসলিম মাত্রই -

  1. গোঁফহীন দাড়ি রাখবেন,
  2. ফেজ টুপি, পাজামা, লুঙ্গি ইত্যাদি স্বতন্ত্র পোশাক পরিধান করবেন।
  3. আরবিতে নাম রাখবেন। 
  4. কোরান, হাদিস ও শরিয়ৎ এর সামাজিক অনুশাসন গুলি মেনে চলবেন।
  5. পৌত্তলিক আচার অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকবেন, ইত্যাদি।
এই সকল ইসলামীয় অনুশাসন গুলি পালনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় মুসলিমদের যখন ধীরে ধীরে ইসলামীকরন ঘটতে থাকে, তখনই ওয়াহাবি আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন থেকে একটি অর্থনৈতিক আন্দোলনে রূপলাভ করে।

(২.) দ্বিতীয় পর্যায় - অর্থনৈতিক চরিত্র

পৃথিবীতে যখনই কোন নতুন ধর্ম এসেছে, তখনই তা সবার প্রথমে গ্রহন করেছিলো সর্বহারা, নিন্মবর্গের মানুষ। বৌদ্ধ ধর্মের ক্ষেত্রে এটি লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। খ্রিষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রেও এটি লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। ভারতে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের বেশিরভাগই ছিলেন নিন্মবর্গীয় ও কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের।

ঔপনিবেশিক আমলে নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিন্দুরা জমিদারি লাভ করেছিলেন। এই জমিদাররা হিন্দু এবং মুসলমান কৃষকদের নানা ভাবে শোষন ও উৎপীড়ন চালিয়ে ভূমি রাজস্ব আদায় করতেন। ওয়াহাবি আন্দোলন মুসলিম কৃষক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ চেতনায় উদ্দীপিত করে তোলে। ওয়াহাবির ধর্মীয় মতাদর্শের ছত্রছায়ায় যখন মুসলিম কৃষক সম্প্রদায় কতকগুলি ইসলামীয় অনুশাসন ও প্রতীকের ছত্রছায়ায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিলেন, তখন তাতে হিন্দু জমিদাররা প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

ইসলামের ছত্রছায়ায় কৃষকরা অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হলে যেকোন সময় জমিদারদের ওপর প্রতিরোধ নেমে আসতে পারে, আশঙ্কা করে অনেক জমিদার ওয়াহাবিদের আরবিতে নাম রাখা, দাড়ি রাখা ইত্যাদির ওপর কর আরোপ করতে থাকেন। 

এইভাবে দেখা যায়,ওয়াহাবি আন্দোলনের বিবর্তনের পর্যায়ে মুসলিমরা যখন কতকগুলি ইসলামীয় অনুশাসন পালন করার মধ্য দিয়ে প্রকৃত মুসলমান হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, তখন ঐক্যবদ্ধ গন আন্দোলনের আশঙ্কায় জমিদাররা তাতে নানা রূপ বাধার সৃষ্টি করেন। এর ফলেই ধর্মীয় ওয়াহাবি আন্দোলন জমিদার বিরোধী একটি অর্থনৈতিক আন্দোলনে পরিনত হয়।

(৩.) তৃতীয় পর্যায় - রাজনৈতিক চরিত্র

ঔপনিবেশিক আমলে জমিদাররাই ছিলেন ইংরেজদের প্রান ভ্রমরা। কারন দেশের মানুষদের কাছ থেকে ভূমি রাজস্বের মধু তারাই ইংরেজদের মৌচাকে তুলে আনতেন। ওয়াহাবি আন্দোলনে মুসলমান কৃষকরা যখন জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও আক্রমণ শুরু করে, তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই জমিদারদের রক্ষা করবার জন্য ইংরেজরা এগিয়ে আসে। 

এর ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্রে বদল আসে। ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক আন্দোলন থেকে এটি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিনত হয়। 

এই সময় ওয়াহাবি তাত্ত্বিক নেতারা প্রচার করতে থাকেন, যতদিন না ভারত থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করা যাবে, ততদিন বিশুদ্ধ ভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। মুসলমানদের ইসলামীকরনের পক্ষে সবচেয়ে বড়ো বাধা হলো ইংরেজরা। ইংরেজ শাসনাধীন ভারত হলো "দ্বার উল হারব" অর্থাৎ শত্রুর দেশ। যতদিন না ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করে ভারতবর্ষকে "দ্বার উল ইসলামে" অর্থাৎ মুসলমানের দেশে পরিনত করা যাচ্ছে, ততদিন ভারতে পূর্ন রূপে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।

এই ভাবে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বীজ থেকে যে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তা পরবর্তীকালে পূর্নতা লাভের তাগিদে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপলাভ করে।

ওয়াহাবি আন্দোলনের সময়কাল

  1. আরবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম "ওয়াহাবি আন্দোলনের" সূত্রপাত ঘটে। 
  2. ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রথম সূচনা হয় ১৮২২ খ্রিঃ। 
  3. ১৮২২ খ্রিঃ থেকে ১৮৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত  টানা প্রায় ৬৩ বছর ভারতে সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে এই আন্দোলন চলেছিলো। 
  4. ভারতে ১৮২২ খ্রিঃ থেকে ১৮৩১ খ্রিঃ পর্যন্ত চলেছিলো প্রথম পর্বের ওয়াহাবি আন্দোলন। এই সময়ে আন্দোলনের তীব্রতা ছিলো অনেক বেশি। 
  5. ১৮৩১ খ্রিঃ সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি ও তিতুমিরের মৃত্যুর পর তাদের অনুগামীদের হাত ধরে ভারতের অন্যান্য প্রদেশ গুলিতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিলো। 
  6. ১৮৩১ খ্রিঃ থেকে ১৮৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত চলেছিলো দ্বিতীয় পর্বের ওয়াহাবি আন্দোলন

আন্দোলনের স্থান 

ওয়াহাবি আন্দোলন প্রথমে শুরু হয় আরবে। পরে তা ভারতবাংলায় শুরু হয়। 

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট 

ইসলাম ধর্মের সংস্কারের মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিলো। 

ইসলাম ধর্মের উদ্ভবের পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশ ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটলেও অমুসলিম নানা প্রথা ও সংস্কার ইসলাম ধর্মের মধ্যে থেকে গিয়েছিলো। ভারতের ক্ষেত্রে যেমন সন্ত, পীর, মাজহাব ইত্যাদি পৌত্তলিক নানা ভাবনা ও সংস্কার ইসলামের মধ্যে চলে এসেছিলো। এই সমস্ত সংস্কার ও আচার আচরণ গুলি ইসলামকে ক্রমশ পৌত্তলিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো। 

ইসলাম ধর্মের মধ্যে তাই পৌত্তলিকতা ও অমুসলিম নানা প্রথা ও সংস্কার গুলি দূর করে ইসলামকে তার বিশুদ্ধ রূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও পুনর্জাগরিত করবার উদ্দেশ্যেই ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। 

সূচনা ও নেতৃত্ব 

(১.) প্রথম প্রবর্তক - 

আঠারো শতকে আরবে আব্দুল ওয়াহব নামে এক ধর্মপ্রান ব্যক্তি প্রথম ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করেন। 

(২.) ভারতে প্রথম প্রবর্তক - 

ভারতে দিল্লির সুফিসন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তার পুত্র আজিজ প্রথম এই সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। যদিও ওয়াহাবি আন্দোলনকে তারা জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন নি। 

(৩.) ভারতে প্রকৃত প্রবর্ত্তক/ প্রতিষ্ঠাতা - 

যার হাত ধরে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তিনি ছিলেন উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলির বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি। তিনি তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে ওয়াহাবি মতাদর্শ কে সারা ভারতে বিস্তৃত করেন। এজন্য তাকে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের "প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা" বা "প্রবর্তক" হয়। 

সৈয়দ আহমেদ প্রথমে দিল্লিতে শাস ওয়ালিউল্লাহের পুত্র আজিজের সংস্পর্শে আসেন। পরে আরবদেশের মক্কায় হজ করতে গিয়ে ওয়াহাবির মতাদর্শের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৮২২ খ্রিঃ মক্কা থেকে ভারতে ফিরে এসে ইসলামের শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করেন। 

(৪.) বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক - 

বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন মির নিসার আলি, যিনি তিতুমির নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। ইনিও মক্কায় হজ করতে গিয়েই ওয়াহাবি মতাদর্শের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে মক্কা থেকে বাংলায় ফিরে ইসলামের শুদ্ধিকরন আন্দোলন শুরু করেছিলেন। 

ওয়াহাবি আন্দোলনের নামকরন ও অর্থ

  1. আরবে আঠারো শতকের ইসলামের সংস্কার আন্দোলনটি "ওয়াহাবি আন্দোলন" নামে পরিচিতি লাভ করেছিলো। সেখানে আব্দুল ওয়াহব নামে এক ধর্ম প্রান ব্যক্তি প্রথম এই আন্দোলনের সূচনা করেন বলে, তার নামানুসারে এই আন্দোলন "ওয়াহাবি আন্দোলন" এবং তার প্রচারিত ধর্মমত "ওয়াহাবিবাদ" নামে পরিচিত হয়।
  2. "ওয়াহাবি" শব্দের অর্থ ছিলো - নবজাগরন। 
  3. ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত নাম ছিলো - "তারিখ ই মহম্মদীয়া" অর্থাৎ হজরত মহম্মদ প্রদর্শিত পথে ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। 

ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য 

ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো - 
  1. ইসলামের শুদ্ধিকরন করা, 
  2. ইসলাম ধর্মের মধ্যে নানা কুসংস্কার গুলি দূর করা, 
  3. ইসলাম ধর্মকে হজরত মহম্মদ প্রদর্শিত পথে সু প্রতিষ্ঠিত করা, 
  4. পাঞ্জাব থেকে শিখদের এবং বাংলা থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করে ভারতকে "দার উল হারব" বা শত্রুর দেশ থেকে "দার উল ইসলাম" বা মুসলমানের দেশে পরিনত করা। 

আন্দোলনের সূচনা ও আদর্শ প্রচার 

  1.  সৈয়দ আহমেদ মক্কায় হজ করতে গিয়ে ওয়াহাবি মতাদর্শের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৮২২ খ্রিঃ দেশে ফিরে এসে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে তার মতবাদ প্রচার করেন। 
  2. ওয়াহাবি মতাদর্শ কে প্রচারের জন্য সৈয়দ আহমেদ চারজন খলিফা নিযুক্ত করেন। 
  3. এই খলিফাদের কাজ ছিলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করে ওয়াহাবি মতাদর্শ প্রচার করা এবং আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ ও রসদ সংগ্রহ করা। 
  4. ওয়াহাবি অনুগামীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ধীরে ধীরে সৈয়দ আহমদের আন্দোলন একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ ধারন করে। 
  5. এইসময় ইংরেজরা এবং পাঞ্জাবের শাসকরা মুসলিম প্রজাদের ওপর নির্যাতন চালালে সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি ইংরেজ ও শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদ বা ধর্মযুদ্ধের ডাক দেন। 
  6. এইজন্য নিজ অনুগামীদের নিয়ে তিনি একটি সেনাদল গঠন করেন এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্তের সিতানায় মূল ঘাঁটি স্থাপন করে নিজ শক্তি সুসংহত করেন। 

বালাকোটের যুদ্ধ 

১৮৩০ খ্রিঃ সৈয়দ আহমেদ শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। একবছর যুদ্ধ চালাবার পর ১৮৩১ খ্রিঃ বালাকোটের যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হন। 

আন্দোলনের প্রসার 

  • সৈয়দ আহমদের মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীদের নেতৃত্বে পরবর্তীকালে এই আন্দোলন উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পাঞ্জাব, বাংলা, বিহার, ও হায়দরাবাদে ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো। 
  • এই বিদ্রোহ দমন করতে ইংরেজদের ১৮৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত চেষ্টা চালাতে হয়। 

ওয়াহাবি আন্দোলনের গুরুত্ব 

ভারতের ইতিহাসে ওয়াহাবি আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। সংক্ষেপে এর গুরুত্বের প্রধান দিক গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি - 
  1. ওয়াহাবি আন্দোলনের ফলে ইসলাম ধর্মের পৌত্তলিক আচার অনুষ্ঠান সহ কুসংস্কার গুলি অনেকাংশে দূর হয়। 
  2. মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি শ্রেনী সচেতনতাবোধ গড়ে ওঠে। 
  3. হিন্দু মুসলিম দরিদ্র কৃষকরা এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামে অবতীর্ন হয়।
  4. এই আন্দোলনের প্রভাবে ভারতে হিন্দু মুসলিম মিশ্র সংস্কৃতির ভাবধারা বিপন্ন হয় এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রসার ঘটে। এবং 
  5. হিন্দু - মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরে। 

ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃতি বা চরিত্র 

ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্রকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি - 
  1. ওয়াহাবিদের বেশিরভাগ কৃষক শ্রেনী থেকে উঠে এসেছিলেন। ওয়াহাবি আন্দোলন তাই ছিলো ধর্মীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত একটি কৃষক আন্দোলন
  2. এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো ইংরেজ সরকার ও তার দোসর জমিদার ও মহাজনদের বিরোধীতা করা।
  3. বহু নিন্মবর্নের হিন্দু এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় এটি কৃষকদের শ্রেনী সংগ্রামে পরিনত হয়েছিলো।
  4. জমিদারদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় এবং অধিকাংশ জমিদার হিন্দু হওয়ায় একে সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলে মনে হলেও, দরিদ্র নিন্মবর্নের হিন্দু ও অন্যান্য হিন্দুদের বিরুদ্ধে কখনই এই আন্দোলন পরিচালিত হয় নি। 
  5. এই আন্দোলন তাই ছিলো ধর্মীয় শ্রেনী সচেতনতার মোড়ে কৃষকদের একটি আর্থ - রাজনৈতিক আন্দোলন। 

1 Comments

  1. অসাধারণ একটি আলোচনা পেলাম এখানে। অনেক ধন্যবাদ। আমি অভিভূত।🙏

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post