সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ

 ঔপনিবেশিক আমলে সংগঠিত কৃষক বিদ্রোহ গুলির মধ্যে  সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলো - সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ দুটি কারনে ইতিহাসে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ -

  1. এই বিদ্রোহ ছিলো ঔপনিবেশিক আমলে সংগঠিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ। 
  2. প্রায় ৩৭ বছর ধরে (১৭৬৩ - ১৮০০) এই বিদ্রোহ চলেছিলো। এত দীর্ঘ কালীন কৃষক বিদ্রোহের নজির ঔপনিবেশিক আমলে অন্য কোন কৃষক বিদ্রোহে দেখা যায় নি।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ 

সন্ন্যাসী ও ফকিরদের পরিচয়

সন্ন্যাসী ও ফকিররা ছিলেন ভারতের দুটি পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায়। সন্ন্যাসীরা মূলত হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলেন, অন্যদিকে মুসলিম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ফকিররা

"দবিস্তান" গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সন্ন্যাসী ও ফকিররা যাযাবর অবস্থায় ভারতের নানা স্থানে দলবদ্ধ ভাবে ঘুরে বেড়াতেন এবং প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতেন। সন্ন্যাসীরা নাগা, পূর্নিয়া, ভোজপুরী, গিরি, পুরী ইত্যাদি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিলেন। অন্যদিকে ফকিররা মাদারি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিলেন।

ধর্মীয় কাজকর্মের পাশাপাশি সন্ন্যাসী ও ফকিররা অস্ত্র চালনা ও যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। এই বিশেষ গুনের কারনে এদের অনেকেই মুঘল সেনাবাহিনীতে সৈনিকের কাজও করতেন। তবে মুঘল যুগের শেষদিকে এদের জীবন ধারায় একটি পরিবর্তন ঘটে। 

এই সময় সন্ন্যাসীদের একটা অংশ পূর্ববঙ্গে এবং ফকিরদের একটা অংশ উত্তরবঙ্গে জমি লাভ করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করে এবং কৃষিজীবীতে পরিনত হয়। তবে মাথায় রাখতে হবে, জমি লাভ করলেও সন্ন্যাসী ও ফকিররা কিন্তু তাদের যাযাবর জীবন থেকে সরে আসেন নি।

সাধারনত চাষবাসের প্রয়োজনে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও, ফসল উঠে যাওয়ার পর তারা দলবদ্ধ ভাবে পুনরায় তীর্থযাত্রায় বের হতো। তীর্থযাত্রার সাথে সাথে সন্ন্যাসী ও ফকিররা মশলা, কাপড় ও রেশমের ব্যবসাও করতেন। 

পলাশীর যুদ্ধের অব্যবহিত পরে বাংলায় কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দুটি দিক থেকেই সন্ন্যাসী ও ফকিররা নানা রূপ বাধা ও ক্ষতির সম্মুখীন হন। এর ফলেই মূলত তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। ১৭৬৩ খ্রিঃ থেকে ১৮০০ খ্রিঃ পর্যন্ত টানা ৩৭ বছর সন্ন্যাসী ফকিররা বিদ্রোহ চালিয়ে যান। 

বিদ্রোহের মূল কারন 

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের নেপথ্যে একাধিক কারন দায়ী ছিলো। এই কারন গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি -

(১.) ভূমিরাজস্ব জনিত ক্ষোভ 

১৭৬৫ খ্রিঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল বাদশাহের কাছ থেকে বাংলাদেশের দেওয়ানী অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করবার পরে কোম্পানি বাংলা থেকে অত্যন্ত উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করতে শুরু করে। এর ফলে কৃষিজীবি সন্ন্যাসী ফকিরদের মধ্যে প্রচন্ড অসন্তোষের জন্ম হয়। 

(২.) নিষ্কর জমি অধিগ্রহণ 

সন্ন্যাসী ও ফকিররা জায়গীর ও দান হিসাবে দীর্ঘদিন ধরেই নিষ্কর জমি ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু দেওয়ানী লাভ করবার পর কোম্পানি সন্ন্যাসী ও ফকিরদের নিষ্কর জমির অধিকার বাতিল করে দেয় এবং তাদের জমি গুলির ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করে। এর ফলে সন্ন্যাসী ফকিরদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। 

(৩.) মধ্যসত্ত্ব ভোগীদের অত্যাচার ও শোষন

ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য ইংরেজরা প্রথম থেকেই একদল মধ্যসত্ত্ব ভোগীর জন্ম দেয়। যারা এলাকা থেকে সর্বোচ্চ পরিমানে রাজস্ব তুলে দেওয়ার গ্যারান্টি দিতে পারতো, তাদেরকেই মূলত কোম্পানি ভূমি রাজস্ব আদায়ের উপ অধিকার প্রদান করে। 

কোম্পানির এরূপ ভূমি রাজস্ব নীতির কারনে বাংলার কৃষকরা ভয়ঙ্কর ভাবে জমিদার, ইজারাদার, মহাজন, প্রমুখের দ্বারা নির্যাতিত ও শোষিত হতে থাকে। সন্ন্যাসী ও ফকিররা যেহেতু প্রকৃতিগত দিক থেকে কৃষক ছিলেন, তাই তারাও এই নির্যাতনের শিকার হন। কোম্পানি সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ভোগদখল করা নিষ্কর জমি গুলিকেও নতুন ভূমি ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসে। ফলে সন্ন্যাসী ফকিররাও সাধারন কৃষকদের মতোই অর্থনৈতিক শোষনের শিকার হন। 

(৪.) ব্যবসায়িক ক্ষতি ও জোর জুলুম

আমরা আগেই বলেছি, সন্ন্যাসী ফকিরদের একটা অংশ মশলা, রেশম, কাপড় ইত্যাদি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে এই বানিজ্যিক দ্রব্য গুলি বিক্রি করতেন। 

কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলায় কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্যিক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হলে, ইংরেজ বনিকরা সন্ন্যাসী ফকিরদের কাছ থেকে মশলা, রেশম ইত্যাদি নামমাত্র দামে বিক্রি করতে বাধ্য করে। সন্ন্যাসী ফকিরদের কেউ কেউ স্বল্প দামে তা বিক্রি করতে রাজি না হলে ইংরেজ বনিকরা সেগুলি বলপূর্বক ভাবে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে থাকে

 এর ফলে সন্ন্যাসী ফকিররা বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং ইংরেজদের প্রতি তাদের মনে প্রবল ঘৃনা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এই ঘৃনা ও অসন্তোষ পুঞ্জিভূত হতে হতে একসময় বিদ্রোহের আকারে ফেটে পড়ে। 

(৫.) তীর্থকর আরোপ 

কোম্পানির শাসনের শুরুতে সন্ন্যাসী ও ফকিররা ধর্মীয় দিকেও নানা ক্ষতি ও বাধার সম্মুখীন হন। অস্ত্রধারী সন্ন্যাসী ফকিরদের মতো কোন যাযাবর গোষ্ঠী কোম্পানির শাসনতান্ত্রিক এলাকায় যখন তখন প্রবেশ করলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, চিন্তা করে কোম্পানি সরকার নানা ভাবে সন্ন্যাসী ফকিরদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। 

 এইজন্য সরকার সন্ন্যাসী ফকিরদের ওপর তীর্থকর আরোপ করে। এছাড়া, সন্ন্যাসী ফকিরদের তীর্থযাত্রায় নানা রূপ বাধা ও নিষেধাজ্ঞাও ঘোষনা করে। এর ফলে সন্ন্যাসী ফকিরদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম হয় এবং তারা তীর্থকর আরোপ ও তীর্থযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাকে তাদের ধর্মাচরনের বাধা হিসাবে প্রচার করতে থাকেন। 

(৬.) অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা 

সন্ন্যাসী ও ফকিররা যেহেতু ভারতের নানা এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন, তাই আত্মরক্ষার প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন অস্ত্র বহন করতেন। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে সন্ন্যাসী ফকিররা অস্ত্র নিয়ে মুঘল সেনাবাহিনীতেও সৈনিকের কাজও করতেন। এসব কারনে অস্ত্র বহন ও অস্ত্র চালনা সন্ন্যাসী ফকিরদের জীবন ও জীবিকার একটি অঙ্গে পরিনত হয়েছিলো। 

কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস যাযাবর সন্ন্যাসী ফকিরদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করবার জন্য ১৭৭৩ খ্রিঃ এক নির্দেশিকায় ঘোষনা করেন, কেউ অস্ত্র নিয়ে যত্র তত্র চলাফেরা করতে পারবে না। এই সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সন্ন্যাসী ফকিররা প্রচন্ড ভাবে ক্ষুব্ধ হন। কারন এই সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে সন্ন্যাসী ফকিরদের জীবন ও জীবিকায় সংকট নেমে আসে। 

(৭.) ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কুফল 

সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারন ছিলো ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্য, উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব আদায়, অজন্মা, অনাবৃষ্টি ইত্যাদির ফলে ১৭৭০ খ্রিঃ বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটে। এই মন্বন্তরে গ্রাম বাংলা শশ্মানে পরিনত হয়ে যায় ।

 এই সময়ে কোম্পানির আর্থিক শোষন ও নির্যাতনের ফলে বহু কারিগর, শিল্পী ও ব্যবসায়ী কর্মচ্যুত হন। অনেক কৃষক খাজনা দিতে না পেরে জঙ্গলে পালিয়ে যান। পরবর্তীকালে ক্ষতিগ্রস্ত এইসব শ্রেনী গুলিই তাদের রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহে সামিল হন। 

রনকুশলী সন্ন্যাসী ও ফকিররা এই সময় বিদেশী বিধর্মীদের অপশাসন থেকে "ধর্ম ও দেশ" কে রক্ষার আহ্বান জানান। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারন শোষিত, নির্যাতিতদের অনেকেই সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহে সামিল হন। এদের সকলের যোগদানের ফলেই সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। 

বিদ্রোহের স্থান 

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ মূলত বাংলা (উত্তরবঙ্গ) ও বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকাতেই সংগঠিত হয়েছিলো। 

বিদ্রোহের সূচনা ও রূপ 

  1. ১৭৬৩ খ্রিঃ ঢাকাতে ইংরেজদের বানিজ্যিক কুঠি আক্রমণের মধ্য দিয়ে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। 
  2. পরে তা রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, কোচবিহার অর্থাৎ বর্তমান উত্তরবঙ্গ, বিহার ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। 
  3. বিদ্রোহী সন্ন্যাসী ও ফকিররা কোম্পানির বানিজ্য কুঠি, রাজস্ব দপ্তর, ধনী জমিদারদের কাছারি ও শস্যভান্ডার গুলি আক্রমণ করে। 
  4. এই বিদ্রোহের প্রভাবে অনেক জায়গায় সাধারন কৃষকরা কর প্রদান বন্ধ করে দেয়। 
  5. ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে (১৭৭২ - ১৭৮৫) এই বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারন করে। 
  6. এই বিদ্রোহে সন্ন্যাসী ও ফকিররা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে কোন আক্রমণ পরিচালনা করেন নি। তারা কেবলমাত্র আক্রমণ করেছিলেন ইংরেজ কর্মচারী, তাদের বানিজ্য কুঠি ও জমিদারদের। 
  7. এই কারনে গ্রাম বাংলার বহু সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই বিদ্রোহে যুক্ত হয়ে পড়েন। 

বিদ্রোহের প্রধান নেতা 

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে যারা নেতৃত্ব দেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন - 
  • ভবানী পাঠক, 
  • দেবী চৌধুরানী, 
  • চিরাগ আলি, 
  • মুসা শাহ, 
  • পরাগল শাহ, 
  • অনুপ নারায়ন, 
  • নুরুল মহম্মদ, 
  • পীতাম্বর শ্রীনিবাস। 

বিদ্রোহীদের দূর্বলতা ও বিদ্রোহের অবসান

প্রথমদিকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সন্ন্যাসী ফকিররা জয়লাভ করলেও শেষের দিকে বিশেষত, ১৮৯০ এর দশক থেকে বিদ্রোহীরা দূর্বল হয়ে পড়তে থাকে। 

বিদ্রোহীদের দূর্বলতার পিছনে অবশ্য অনেকগুলি কারন ছিলো। যেমন - 
  1. ইংরেজ সেনার সঙ্গে যুদ্ধ করার পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব
  2. বিদ্রোহীদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, 
  3. যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, 
  4. উন্নত যানবাহন ও দুর্গম রাস্তাঘাটের জন্য একপ্রান্তের বিদ্রোহীদের পক্ষে অন্য জায়গায় গিয়ে বিদ্রোহীদের যুদ্ধে সাহায্য করা সম্ভব হয় নি। 
  5. বিদ্রোহের শেষদিকে নেতৃত্বের প্রশ্নে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ। 
এই সমস্ত কারনে শেষপর্যন্ত বিদ্রোহীরা দূর্বল হয়ে পড়লে ইংরেজ সরকার ভেদনীতি ও তীব্র দমন নীতির প্রয়োগ করে এই বিদ্রোহকে দমন করে। 

সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য 

  1. সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিলো ধর্মীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ভারতের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ
  2. এই বিদ্রোহে প্রথম ইংরেজ সরকার হিন্দু মুসলিম যৌথ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই বিদ্রোহে সামিল হন এবং নেতৃত্ব দেন। 
  3. সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ছিলো ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম সশস্ত্র অভ্যুত্থান। প্রায় ৪০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এই বিদ্রোহ চলেছিলো। 
  4. এই বিদ্রোহেই প্রথম গেরিলা রননীতি অনুসৃত হয়। 
  5. এই বিদ্রোহে সন্ন্যাসী ফকিররা ইংরেজ সরকার এবং তাদের দোসর জমিদার ও মহাজনদের আক্রমণ করে। 
  6. কোন সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিররা কোন আক্রমণ পরিচালনা করেন নি। এই কারনে বহু সাধারন গ্রামীন মানুষ এই বিদ্রোহে সামিল হয়ে পড়েছিলেন। 

সাহিত্যে প্রভাব 

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ পরবর্তীকালের সাহিত্য জগতে গভীর প্রভাব ফেলেছিলো। এই বিদ্রোহের বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লেখেন - "আনন্দমঠ" ও "দেবী চৌধুরানী" উপন্যাস। 

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি 

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি কি ছিলো, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। এ প্রসঙ্গে ৩ টি প্রধান মত ইতিহাস পর্যালোচনায় উঠে আসে - 
  1. ওয়ারেন হেস্টিংস সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষন করতে গিয়ে একে "হিন্দুস্থানের যাযাবর ও পেশাদার ডাকাতদের উপদ্রোপ" বলে বর্ণনা করেন। তিনিই প্রথম এই বিদ্রোহকে "সন্ন্যাসী বিদ্রোহ" বলে অভিহিত করেন। অর্থাৎ তার মতে এই বিদ্রোহ ছিলো সন্ন্যাসীদের একক বিদ্রোহ। 
  2. কিন্তু সুপ্রকাশ রায় উপরোক্ত মতের বিরোধীতা করেছেন। তার মতে, এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র সন্ন্যাসীদের একার বিদ্রোহ ছিলো না। এটি ছিলো প্রকৃত অর্থে একটি গন সংগ্রাম। কারন ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, কারিগর, কর্মচ্যুত মুঘল সৈনিক সাধারন গ্রামবাসী সকলেই এই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন। এবং এদের যোগদানের ফলে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ একটি গন সংগ্রামের রূপলাভ করেছিলো।
  3. আধুনিক ঐতিহাসিকদের অনেকে আবার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহকে ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি কৃষক সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। প্রসঙ্গত বলে রাখা প্রয়োজন, উইলিয়াম হান্টার প্রথম সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহকে একটি কৃষক বিদ্রোহ বলে প্রথম উল্লেখ করেছিলেন। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post