লক্ষ্মী এবং অলক্ষ্মী দুজনেই হিন্দু ধর্মের দুজন দেবী। দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে আমাদের অনেকটা পরিচয় থাকলেও, অলক্ষ্মী আমাদের অনেকের কাছেই কিছুটা অপরিচিত এবং অজানা।
হিন্দু ধর্মে কিভাবে এসেছিলো লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মীর ধারনা? |
লক্ষ্মী সবার অলক্ষ্যে থাকেন। তার বাহন প্যাঁচাও সকলের অগচরে থাকেন। এরা দুজনেই লুকিয়ে থাকেন এবং আড়াল থেকে সব কিছু দেখেন।
লক্ষ্মী হলেন ধন ও ঐশ্বর্যের দেবী। "ধন" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে "ধান" শব্দটি থেকে। আগেকার দিনে যার যতো জমি ও ধান হতো, তাকেই সবচেয়ে বেশি ধনী ও ঐশ্বর্য্যশালী বলে মনে করা হতো। ধান খেয়ে নষ্ট করে ফেলে ইঁদুর। আর ইঁদুরের শত্রু হলো প্যাঁচা। প্যাঁচা ইঁদুর খেয়ে ধান ও ধন দুই'ই রক্ষা করেন। এই কারনে লক্ষ্মীর বাহন রূপে প্যাঁচাও সর্বত্র বিচরন করেন।
ধন - ঐশ্বর্য্য যেমন আমরা সবাই লুকিয়ে রাখি। এনারাও তেমনি লুকিয়ে থাকেন। হিন্দু ধর্ম ও দর্শনের এমন অদ্ভুত সমন্ধ একমাত্র সনাতন ধর্মেই লক্ষ্য করা যায়।
লক্ষ্মীরা দুই বোন ছিলেন বলে পুরান থেকে জানা যায়। লক্ষ্মী এবং অলক্ষ্মী। লক্ষ্মীর বিপরীত কনসেপ্ট নিয়ে অলক্ষ্মী চরিত্রটি সৃষ্টি হয়েছিলো। যদিও অলক্ষ্মী সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক কালে অনেক ইতিহাস গবেষক অলক্ষ্মীর কনসেপ্ট নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অলক্ষ্মী ছিলেন লক্ষ্মীর বড়ো বোন। হিন্দু পুরান অনুযায়ী অলক্ষ্মী হলেন দুর্ভাগ্যের দেবী। হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে লক্ষ্মী এবং অলক্ষ্মী কখনই একত্রে বসবাস করেন না। যে কোন স্থানে আগে অলক্ষ্মী আসেন তারপর সেখানে পদার্পণ করেন লক্ষ্মী। এই কারনে লক্ষ্মী পুজার আগে অলক্ষ্মীর পুজো করে তাকে সন্তুষ্ট করা হয়। তারপর তাকে বাড়ি থেকে ঝেঁটিয়ে বা কুলোতে বাতাস করে তাড়ানো হয়। বাংলায় দিপাবলীর সন্ধ্যায় এই রীতি আজও অনেক জায়গায় পালন করা হয়ে থাকে।
কালো গোবর দিয়ে একটি পুতুল তৈরি করা হয়। ঐ পুতুলটিতে দুটো কড়ি দিয়ে তার চোখ বানানো হয়। এর সঙ্গে মেয়েদের ঝড়ে পড়া চুল দিয়ে পুতুলটির মাথার কেশ তৈরি করা হয়। এইভাবেই তৈরি হয় অলক্ষ্মী। এরপর বাম হাত দিয়ে তার পুজো করে পুতুলকে কুলো করে পেটাতে পেটাতে বাড়ির সীমানার বাইরে বের করা হয়। এই রীতি সমাপ্ত করার পরেই শুরু হয় লক্ষ্মীর পুজো। এইজন্যই বোধ হয় বাংলা প্রবাদে বলা হয়, অলক্ষ্মীকে আগে বাড়ি থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় না করা পর্যন্ত বাড়িতে লক্ষ্মী আসে না।
অলক্ষ্মী হলো অশুভ ও অন্ধকারের প্রতীক। এই অন্ধকার দূর করে আলোর মাধ্যমে শুভ শক্তির জাগরনের জন্যই আমরা দিপাবলীতে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালাই,বাজি ফাটাই এবং নিজেদের বাড়ি ও তার আশপাশে সর্বত্র'ই আলোয় সাজিয়ে তুলি। এসবই হলো অলক্ষ্মী বিদায়ের প্রতীক।
বাংলা ছাড়াও খ্রিঃ পূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালীন সময়ে দক্ষিণ ভারতে বিশেষত, তামিলনাড়ুতে অলক্ষ্মীর পুজো হতো বলে জানা যায়। দেবী অলক্ষ্মীর কথা দক্ষিণ ভারতের সঙ্গম সাহিত্য থেকে যেমন জানতে পারা যায়, তেমনি দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি মন্দিরের ভাষ্কর্যের গায়ে এই দেবীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে এই দেবীর অনাদরে অবস্থান থেকে বুঝে নেওয়া যায়, সমাজে ধীরে ধীরে অলক্ষ্ণীর পুজো কমে এসেছিলো অথবা নেহাতই ঘৃনা ও তাচ্ছিল্য সহযোগে তার পুজা করা হতো।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর "বাংলার ব্রত" গ্রন্থে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, অলক্ষ্মী ছিলেন মূলত অনার্যদের দেবী। তিনি অলক্ষ্মীকে "আদি শষ্যলক্ষ্মী" বলে অভিহিত করেছেন। এর বাহন ছিলো কালো প্যাঁচা। আমরা সবাই জানি, আর্য - অনার্য সংঘাতে শেষপর্যন্ত অনার্যরা পরাজিত হয়েছিলো।
যুদ্ধে পরাজিতরা সব কালেই বিজয়ীদের কাছে ঘৃনার পাত্র হয়ে থাকেন। বৈদিক যুগেও তার অন্যথা হয় নি। আর্যদের কাছে অনার্যরা পরাজিত হবার পর শুধু যে ঘৃনার পাত্র হয়েছিলেন তাই নয়, তাদের দেবতারাও আর্যদের কাছে ঘৃনার বস্তু হয়ে ওঠেন ও নানা ভাবে নিন্দিত ও তিরস্কৃত হন।
শিব একজন অনার্য দেবতা ছিলেন। বৈদিক দেবতা বিষ্ণু, ব্রহ্মা, দেবরাজ ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতাদের মতো তিনি সভ্য ছিলেন না। শিব ছাই ভষ্ম মেখে থাকেন। তার বেশ ভূষাও বেশ অসভ্য, জংলি ধরনের। এই কারনে দক্ষ রাজার যজ্ঞে শিবকে আমন্ত্রণ'ই জানানো হয় নি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বৈদিক যুগে "রুদ্র" নামে একজন খুব রাগী দেবতা ছিলেন। ইনি সব কিছুকেই ধ্বংস করে দেন। অন্যদিকে অনার্য দেবতা শিব আদিবাসীদের মতোই ছিলেন খুবই সহজ, সরল, শান্ত ও ভোলা।
যাইহোক, দক্ষ রাজার যজ্ঞে শেষপর্যন্ত স্বামী নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী যজ্ঞ কুন্ডে আত্মহুতি দিয়েছিলেন, একথা আমরা সকলেই জানি। ঠিক এই সময়টাতেই শান্ত শিব রাগে "রুদ্র" মূর্তি ধারন করেন। এইভাবে শিবের সাথে বৈদিক দেবতা রুদ্রের রূপান্তর ঘটিয়ে বৈদিক সংস্কৃতিতে শিবের আর্যীকরন ঘটানো হয়।
কালীও একজন অনার্য দেবী ছিলেন। তার স্থানও আর্য সংস্কৃতিতে অনাদরেই জুটেছিলো। তিনি বাস করেন শশ্মানে। অন্যদিকে দেবী মনসা আর একজন অনার্য দেবী ছিলেন। তথাকথিত সভ্য বৈদিক দেবকুলে তারও কোন জায়গা হয় নি। নিজের পুজোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে তাকে কত যে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো, তা মনসা মঙ্গল যারা পড়েছেন, তারাই জানেন।
অলক্ষ্মীও এদের মতোই একজন অনার্য দেবী ছিলেন। বৈদিক দেবকুলে তার স্থানও অন্যান্য অনার্য দেবদেবীদের মতোই ছিলো। অনার্যদের মতো তিনিও ঘৃনিত ছিলেন। মনসার মতো তার পুজোও ডান হাতে না করে, করা হতো বাম হাতে।
অনার্যরা ছিলেন কৃষ্ণবর্ন অর্থাৎ কালো। তাই স্বাভাবিক নিয়মে তাদের দেবতারাও ছিলেন কালো। প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করবেন, আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত যে সমস্ত অনার্য দেব দেবীর কথা বললাম, শিব, কালী, মনসা,অলক্ষ্মী - এরা সকলেই কিন্তু কালো অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ন। এইকারনে এই সব অনার্য দেবতাদের স্থান বৈদিক গৌরবর্ন দেবতাদের মতো কোন বিলাসবহুল সুন্দর প্রাসাদে বা গৃহস্থে জোটে নি। এরা সকলেই গৃহের বাইরেই বসবাস করতেন। গৃহস্থ আর্য বাড়িতে প্রবেশ করতে এদের অনেকটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিলো।
বেশ কিছুকাল পরে, আর্য পুরুষেরা অনার্য নারীদের বিবাহ করতে শুরু করেন। আর্য নারীদের সংখ্যা এমনিতেই তখন সমাজে যথেষ্ট কম ছিলো। এমতাবস্থায়, অনার্য নারী বিবাহ করা ছাড়া সমাজের সামনে বিকল্প কোন পথ ছিলো না।
এই বিবাহের ফলে আর্য বাড়িতে অনার্য নারীদেরই শুধু প্রবেশ ঘটলো না, অনার্য বিভিন্ন দেবতারাও নারীদের হাত ধরে আর্য সমাজে ঢুকতে আরম্ভ করলেন। শুরুর দিকটিতে পুরুষদের পাশাপাশি আর্য নারীদেরও উপবীত বা পৈতা হতো। নারীদের সমাজে পৌরহিত্য করারও অধিকার ছিলো।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, অনার্য নারীদের বিয়ে করে নিয়ে আসার পরও, অনার্য নারীরা আর্য সমাজে কোন উপযুক্ত সম্মান পান নি। পরাজিত অনার্যদের প্রতি স্বাভাবিক ঘৃনা ও অবদমন মনোভাব বিবাহিত অনার্য নারীদের ওপরেও বর্ষিত হতে থাকলো।
ধীরে ধীরে নারীদের প্রতি সমাজের এই অবদমিত মানসিকতার প্রসার ঘটতে থাকলো। অনার্য নারীদের প্রতি আচরন ক্রমে ক্রমে আর্য নারীদের মধ্যেও প্রসারিত হয়। এরই পরিনামে পরবর্তীকালে আর্য নারীরা বেদ পাঠের অধিকার হারালেন। উপবীত বা পৈইতা ধারনের অধিকার হারালেন। এমনকী পৌরহিত্য করবারও অধিকার হারালেন। পরাজিত ও বিজিত মানসিকতা সামগ্রিক ভাবে নারী পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেলো। শেষটায় আর্য সমাজে আর্য ও অনার্য নারীদের অবস্থা সমান্তরাল হয়ে গেলো।
অনার্য দেবীদের মধ্যে অনেকেই তাদের কৌলিন্য ও প্রভাব হারিয়েছিলেন। অলক্ষ্মী তেমনই একজন দেবী ছিলেন। প্রথম দিকটায় তার পুজো করা হলেও, পরে বৈদিক সংস্কৃতিতে অলক্ষ্মী কে অশুভের প্রতীক বলে প্রচার করা হয়। এর ফলে তার পুজা অনাদরের সঙ্গে করা হতে থাকে এবং পরবর্তীতে সেই পুজাটিও একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু পুজো বন্ধ হলেও, সমাজে "লক্ষ্মী" ও "অলক্ষ্মীর" কনসেপ্ট আজও রয়ে গেছে।
হিন্দুদের বিভিন্ন পুরান গুলিতে লক্ষ্মী এবং অলক্ষ্মীর কথা জানতে পারা যায়। এ সম্পর্কে বিভিন্ন পুরানের ব্যাখ্যা ও কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। কিন্তু মোদ্দা কথাটি হলো লক্ষ্মী এবং তার দিদি অলক্ষ্মী দুজনেই আগে পাতাল দেশ বা সমুদ্রে ছিলেন। পরে সেখান থেকে স্বর্গ বা মর্ত্যে উঠে এসেছিলেন।
বিষ্ণুপুরান ও ভাগবত পুরানে এই নিয়ে ভারি মজাদার একটা গল্পও আছে। দুর্বাসা মুনির কথা হয়তো আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন। তার ভালো কোন গুনের কথা তেমন ভাবে জানা না গেলেও, এই মুনি অভিশাপ দিতে খুবই পটু ছিলেন। একদিন তেমনই এক কান্ড তিনি করে ফেলেন।
শোনা যায়, একদা দেবরাজ ঈন্দ্রকে তিনি একটি ফুলের মালা উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু রম্ভার সাথে সম্ভোগ করার সময় তিনি ঐ মালাটি ছুড়ে দেন তার বাহন ঐরাবতের দিকে। ঐরাবত ছিলো ইন্দ্রের বাহন (হাতি)। কিছু না বুঝে ঐরাবত ফুলের মালাটি পা দিয়ে মাড়িয়ে দেয়।
এইসব দেখে দুর্বাসা মুনি খুব রেগে গিয়ে ইন্দ্রকে ভয়ানক একটি অভিশাপ দিলেন যে, তোমার স্বর্গে আর শ্রী থাকবে না। সে পাতালে চলে যাবে।
এই অভিশাপের পর সমগ্র দেবলোক "শ্রী হীন" অর্থাৎ সম্পদ হীন হয়ে পড়লো। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, বর্তমানে "শ্রী" বলতে "লক্ষ্মী" কে বোঝালেও, আমরা যে সময়ের ইতিহাস আলোচনা করছি, তখন "শ্রী" একজন পৃথক দেবী ছিলেন। বৈদিক যুগে "শ্রী" ছিলেন সম্পদ বা সমৃদ্ধির দেবী।
যাইহোক, দেবলোক বেশ কিছুদিন শ্রীহীন থাকার পর দেবতারা ছুটে গেলেন বিষ্ণুর কাছে। বিষ্ণু এর একটা উপায় বের করে বললেন, যদি সমুদ্র মন্থন করা যায়, তাহলে শ্রী পাতাল থেকে উঠে আসবে। শেষপর্যন্ত, দেব আর দানব মিলে চললো ক্ষীর সমুদ্রের মন্থন। এই মন্থনের ফলে ২ জন দেবী নির্গত হলেন। প্রথম জন ছিলেন অলক্ষ্মী। ইনি বাসকি নাগের কালকূট বিষ থেকে নির্গত হয়েছিলেন। অপরজন ছিলেন শ্রী। নানা ধন রত্ন ও সম্পদ নিয়ে তিনি আবির্ভূত হন।
এই "শ্রী" নামক দেবীর কনসেপ্টের সঙ্গে পরবর্তীকালে লক্ষ্মীর কনসেপ্টকে জুড়ে দেওয়া হয়। লক্ষ্মী ছিলেন শষ্য অর্থাৎ উৎপাদনের দেবী। মেয়েরাই কৃষিকাজের প্রথম সূচনা করেছিলেন বলে অনেক নৃতত্ত্ববিদ মনে করে থাকেন। লিঙ্গ দ্বারা কর্ষনের বৌদ্ধিক ধারনা থেকেই লাঙ্গল এর উৎপত্তি হয়েছিলো। মাটিকে লিঙ্গের মতো কর্ষন করলে উৎপাদন হবে, এই বৌদ্ধিক ধারনা নারীদের মনেই প্রথম এসেছিলো।পরে এই ভাবনা থেকেই কৃষিকাজের সূচনা হয়। অর্থাৎ কৃষিকাজের প্রথম আবিষ্কারক ও উদগাতা ছিলেন মেয়েরা।
লক্ষ্মী এই উৎপাদনেরই দেবী ছিলেন। প্রাচীন কালে উৎপন্ন ফসল বা ধানকেই প্রধান সম্পদ বলে মনে করা হতো। গ্রাম বাংলায় আজও হাড়িতে ধান ভর্তি করেই লক্ষ্মীকে রেখে দেওয়া হয় (হাঁড়ির লক্ষ্মী)।একেবারে শুরুতেই আমরা বলেছি, ধান থেকে ধন অর্থাৎ সম্পদের ধারনা এসেছিলো। প্রাচীনকাল ধান ও ধন অর্থাৎ সম্পদ প্রায় সমার্থক ছিলো।
হিন্দু পুরান গুলিতে লক্ষ্মী নামের একটি নারীর পরিচয় পাওয়া যায় । এই লক্ষ্মী ছিলেন ঋষি ভৃগুর কন্যা। লক্ষ্মীর মায়ের নাম ছিলো খ্যাতি। লক্ষ্মী বিষ্ণুকে পতি রূপে লাভ করার জন্য পাতালে গিয়ে ধ্যান করেন। পরে বিষ্ণু তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করার বর প্রদান করেন। সমুদ্র মন্থনের সময় এই লক্ষ্মী'ই "শ্রী" রূপে উঠে আসেন। এই সময় বলা হয়, "শ্রী" এবং "লক্ষ্মী" একই দেবীর অভিন্ন রূপ।
ঠিক যেভাবে, হিন্দু পুরানে শিব ও রুদ্র দেবতার মিলন ঘটিয়ে তার আর্যীকরন ঘটানো হয়। ঠিক একই ভাবে শ্রী ও অনার্য শষ্যের দেবী (অ)লক্ষ্মীর কনসেপ্টের মিলনে গড়ে ওঠে বর্তমান লক্ষ্মীর ধারনা। পরবর্তীকালে লক্ষ্মীর বিপরীত ধারনা ও প্রতীক গুলি "ঘৃনা ও অবজ্ঞা" রূপে অনার্য দেবী "লক্ষ্মীর" সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তাকে "অলক্ষ্মী" রূপে মহিমান্বিত করা হয়।
লক্ষ্মীর আর্যীকরন ঘটিয়ে তাকে বৈদিক দেবলোকে স্থান দেওয়া হয়। বিষ্ণু লক্ষ্মীকে তার স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন। অন্যদিকে অলক্ষ্মীকে দৈত্যকুলের হাতে সমপর্ন করা হয়। কল্কি পুরান অনুযায়ী দৈত্য কলি অলক্ষ্মীকে বিবাহ করেন। অলক্ষ্মী যখন কোন বাড়িতে প্রবেশ করে, তখন গৃহে হিংসা,ঝগড়া অমঙ্গল, দারিদ্রতা, রোগ, শোক ইত্যাদি বহন করে নিয়ে আসে।
কলিকালে "কলির" সঙ্গে "অলক্ষ্মী" একত্রে বসবাস করবেন বলে হিন্দু পুরাণে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, যা কিছু অশুভ - হিংসা, লোভ, ক্রোধ, ভন্ডামি, দ্বিচারিতা, কাম, অত্যাচার, দুরাচার এইসব এসময়ে দেখা দেবে। কালক্রমে বিষ্ণু কল্কি অবতার নিয়ে কলির বিনাষ করবেন এবং অলক্ষ্মীর গ্রাস থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করবেন।