দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ

 ঔপনিবেশিক আমলে সংঘঠিত আদিবাসী বিদ্রোহ গুলির মধ্যে প্রথম আদিবাসী বিদ্রোহ ছিলো - চুয়াড় বিদ্রোহ

দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ
দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ 

চুয়াড়দের আদি বাসভূমি ও পরিচয়

চুয়াড়রা ছিলো ভারতের অরন্যচারী একটি আদিম উপজাতি গোষ্ঠী। এদের আদি বাসভূমি ছিলো - বাঁকুড়া, মেদিনীপুর ও ধলভূমের বিস্তৃর্ন অরন্য অধ্যুষিত অঞ্চলে। এই এলাকাটি "জঙ্গলমহল" নামে পরিচিত ছিলো। 

মেদিনীপুর জেলার উত্তর দিক, বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ পশ্চিম দিক এবং মানভূম জেলার পূর্বদিকের দুর্গম অরন্য অধ্যুষিত, পাহাড়ি এলাকা নিয়ে "জঙ্গলমহল" গড়ে উঠেছিলো। চুয়াড়রা এই জঙ্গলমহল এলাকারই আদিম উপজাতি ছিলো। 

চুয়াড় শব্দের অর্থ 

চুয়াড় একটি অবজ্ঞা সূচনা শব্দ। এই শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো অসভ্য, বর্বর ও বন্য। ইংরেজ আশ্রিত জমিদাররা চুয়াড়দের প্রতি ঘৃনা ও অবজ্ঞা বশত তাদের চুয়াড় বা অভদ্র নামে অভিহিত করেছিলো। পরবর্তীকালে ইংরেজ আধিকারিকদের নথিপত্রে জঙ্গলমহলের এই আদিবাসী সম্প্রদায়কে "চুয়াড়" নামেই নথিভুক্ত করা হয়েছিলো। 

চুয়াড়দের জীবন ধারন পদ্ধতি 

চুয়াড়রা দীর্ঘকাল ধরেই জঙ্গলমহলের বনাঞ্চল এলাকায় বসবাস করতো। এরা আদিম পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতো এবং অরন্য থেকে মধু, কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতো ও শিকার করে তাদের জীবন অতিবাহিত করতো। 

জঙ্গলমহল এলাকায় কৃষিজমি উর্বর না থাকায় এখানে ফসল ভালো হতো না। এজন্য রাজস্বও খুব বেশি পাওয়া যেতো না। এই কারনে প্রাচীন ও মধ্যযুগের কোন শাসকই সেই অর্থে এই অঞ্চলে কঠোর নিয়ন্ত্রন আরোপ করেন নি। এর ফলে জঙ্গলমহলের চুয়াড়রা যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করতেন। এই স্বাধীনতা এখানকার স্থানীয় জমিদারেরাও ভোগ করতেন। 

খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে এই এলাকার অধিবাসীরা অধিক পরিমানে স্বাধীনতা ভোগ করতেন। এই স্বাধীনতা ভোগের কারনেই, মুঘল যুগের শেষদিকে এখানকার জমিদাররা প্রায় স্বাধীন হয়ে উঠেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গলমহল এলাকায় ছোট ছোট ভূম রাজ্যের মাধ্যমে তারা তাদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যেমন - সিংভূম, মানভূম, বরাভূম, শিখরভূম, ইত্যাদি।

কিন্তু ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর এই এলাকার স্বাধীনতাও বিঘ্নিত হয় এবং জমিদার ও প্রজা অর্থাৎ চুয়াড়রা একত্রিত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। কারন এখানকার জমিদারদের স্বার্থের সঙ্গে প্রজা অর্থাৎ চুয়াড়দের স্বার্থ ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলো। 

চুয়াড়রা স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকের কাজ করতো। এর বিনিময়ে তারা পারিশ্রমিক হিসাবে নিষ্কর জমি ভোগ করতো, যাকে বলা হতো "পাইকান"। 

অর্থাৎ জমিদারদের অস্তিত্বের সঙ্গে স্থানীয় চুয়াড়দের জীবন জীবিকার বিষয়টি ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কিত ছিলো। ইংরেজ আমলে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার জন্য জঙ্গলমহল এলাকায় জমিদারদের অস্তিত্বে সংকট দেখা দিলে তার প্রভাব চুয়াড়দের ওপরেও এসে পড়ে। এর ফলেই চুয়াড় বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।

চুয়াড় বিদ্রোহের সময়কাল

চুয়াড় বিদ্রোহ দুটি পর্বে দীর্ঘদিন ধরে চলেছিলো - 

  • প্রথম পর্বের বিদ্রোহ ১৭৬৬ খ্রিঃ (মতান্তরে ১৭৬৮) থেকে ১৭৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত চলেছিলো। ১৭৬৫ খ্রিঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী লাভ করবার পর এই এলাকায় উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব ধার্য করলে স্থানীয় জমিদারদের নেতৃত্বে চুয়াড়রা বিদ্রোহ ঘোষনা করে। 
  • দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ ঘটেছিলো ১৭৯৮ খ্রিঃ মার্চ মাস থেকে ১৮০০ খ্রিঃ জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই পর্বেও চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় জমিদাররা।

 চুয়াড় বিদ্রোহের কারন

ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা জনিত একাধিক ক্ষোভের কারনে চুয়াড়রা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলো। এই কারন গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি - 

(১.) নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা জনিত ক্ষোভ 

দেওয়ানী লাভ করবার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জঙ্গলমহল এলাকাকে নিজের শাসনের আওতায় নিয়ে আসে এবং বর্ধিত হারে এখানে ভূমিরাজস্ব ধার্য করে। এখানকার পুরাতন জমিদাররা এই বর্ধিত রাজস্ব তুলে দিতে না পারায়, তাদেরকে জমিদারি থেকে উচ্ছেদ করে এই এলাকায় বাইরে থেকে জমিদারদের এনে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। 

এর ফলে এই এলাকার পুরাতন জমিদারদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম হয়। পরবর্তীকালে দুর্জন সিংহ, রানি শিরোমনির মতো জমিদাররা এই ক্ষোভের কারনেই সমগ্র চুয়াড় জাতিকে একত্রিত করে চুয়াড় বিদ্রোহ সংগঠিত করেন এবং তাতে নেতৃত্ব দেন।

(২.) উচ্চহারে কর আরোপ

জঙ্গলমহলের বহিরাগত নতুন জমিদাররা কোম্পানি নির্ধারিত ভূমিরাজস্ব তুলবার জন্য তাদের জমিদারি এলাকা গুলিকে কয়েকজন ইজারাদারদের হাতে তুলে দেন। 

এই ইজারাদার এবং জমিদাররা চুয়াড়দের ওপর বিপুল পরিমান ভূমিরাজস্ব ধার্য করে, যা অধিকাংশ চুয়াড় কৃষিজীবিদের পক্ষে দেওয়া প্রায় অসম্ভব ছিলো। এর ফলে চুয়াড়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। 

(৩.) চুয়াড়দের জমি থেকে উচ্ছেদ 

নতুন জমিদার ও ইজারাদাররা চুয়াড়দের ওপর যে বিপুল পরিমান ভূমি রাজস্বের বোঝা চাপিয়ে ছিলো, তা চুয়াড়দের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না হলে, জমিদার ও ইজারাদাররা যৌথ ভাবে একের পর এক চুয়াড়দের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে থাকে। এরপর তারা বাইরে থেকে প্রজাদের জঙ্গলমহলে এনে চুয়াড়দের জমি গুলি বন্দোবস্ত দিতে থাকে। 

এর ফলে চুয়াড়দের অসন্তোষ চরমে ওঠে। তাদের কষ্টার্জিত জমিগুলি যে ভাবে কোম্পানি আশ্রিত জমিদার ও ইজারাদাররা কেড়ে নিচ্ছিলো, তা ছিলো রীতিমত অন্যায়। কেননা মুঘল যুগ থেকেই জঙ্গলমহল এলাকায় জমিদাররা কেবল রাজস্ব সংগ্রাহক ছিলেন। জমির মালিক কখনই ছিলেন না। ফলে প্রজাদের জমি থেকে উচ্ছেদের কোন নৈতিক অধিকার তাদের ছিলো না।

 কিন্তু ইংরেজদের নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় জমির ক্ষেত্রে চুয়াড়দের মালিকানা কে অস্বীকার করে জমিদার, ইজারাদারকেই জমির মালিকানা দেওয়া হয়। এর ফলে খুব সহজেই তারা চুয়াড়দের জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের জমিগুলিতে বহিরাগত কৃষকদের জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কৃষিকাজ করাতে থাকে। 

নিজের বহু পরিশ্রমে তৈরি কৃষি জমি গুলি হাতছাড়া হওয়ায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই চুয়াড়দের পক্ষে বিদ্রোহী হয়ে ওঠা ছাড়া আর বিকল্প কোন পথ ছিলো না। 

(৪.) পাইকদের জমি অধিগ্রহণ 

পূর্বে পুরাতন জমিদাররা পাইকদের সাহায্যে জঙ্গলমহল এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করতেন। স্থানীয় চুয়াড়দের একাংশ এই জমিদারদের অধীনে পাইক বা পুলিশের কাজ করতো। এই কাজের বিনিময়ে তারা নিষ্কর পাইকান জমি ভোগ করতেন। 

কিন্তু পুরাতন জমিদারদের অনেককে উচ্ছেদ করায় পাইকরাও কর্মচ্যুত হন। ফলে জঙ্গলমহল এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এই অবস্থায় কোম্পানি সরকার জঙ্গলমহল এলাকায় পাইকদের উচ্ছেদ করে নতুন পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং এই পুলিশ বাহিনীর ব্যায় নির্বাহের জন্য পাইকদের সমস্ত পাইকান জমি গুলি কেড়ে নেয়। 

এর ফলে জঙ্গলমহলে এক বিরাট সংখ্যক পাইক (যারা আসলেই ছিলো চুয়াড়, তারাও) কর্মচ্যুত ও জমিচ্যুত হয়ে সর্বহারা হয়ে যায়। এজন্য কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে পাইকদের ক্ষোভ চরমে ওঠে। 

চুয়াড়দের বিদ্রোহ ঘোষণা 

 উপরোক্ত এই সমস্ত কারনে জঙ্গলমহলের স্থানীয় জমিদার ও চুয়াড়রা একত্রিত হয়ে ১৭৯৮ খ্রিঃ দ্বিতীয় পর্যায়ে চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু করে। জঙ্গলমহলের জমিচ্যুত স্থানীয় জমিদাররা পাইক ও চুয়াড়দের ক্ষোভকে একত্রিত করে এই বিদ্রোহের ডাক দেন।

মনে রাখতে হবে, ইংরেজদের নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় পুরাতন জমিদার, পাইক ও সাধারন কৃষিজীবি চুয়াড় সকলেই জমিচ্যুত হয়েছিলেন ও নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এদের সকলের স্বার্থের সঙ্গেই জমি চ্যুতির বিষয়টি জড়িত ছিলো। 

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই ক্ষোভ জমিদার - পাইক - সাধারন চুয়াড় জাতিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসে। এদের সম্মিলিত ক্ষোভের কারনে দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ  ব্যাপক আকার ধারন করে এবং বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ে। 

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান নেতৃত্ব

দ্বিতীয় পর্যায়ের চুয়াড় বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন -

  •  দুর্জন সিংহ, 
  • গোবর্ধন দিকপতি, 
  • অচল সিংহ, 
  • লাল সিং, 
  • রানী শিরোমনি (মেদিনীপুরের লক্ষীবাঈ
দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে বাঁকুড়ায় এবং রানী শিরোমনির নেতৃত্বে মেদিনীপুরে চুয়াড় বিদ্রোহ ব্যপক আকার ধারন করেছিলো। এই বিদ্রোহে রানী শিরোমনির অসাধারণ সাহসিকতা ও বীরত্মপূর্ন লড়াইয়ের জন্য তাকে "মেদিনীপুরের লক্ষীবাঈ" বলে অভিহিত করা হয়। 

বিদ্রোহের ব্যপকতা ও দমননীতি 

চুয়াড় বিদ্রোহীরা দলবদ্ধ ভাবে তাদের নেতাদের নেতৃত্বে সর্বত্র লুঠপাঠ ও নৃশংস হত্যালীলা চালায়। বহিরাগত জমিদার, ইজারাদার, বহিরাগত কৃষক প্রজা কাউকেই তারা ছাড় দেয় নি। রায়পুর, বাসুদেবপুর, তমলুক, তুর্কাচর, জলেশ্বর, বলরামপুর, দুবাজল, রামগড়, শালবনি ও মেদিনীপুর পরগনার বহু জায়গা তারা আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। 

প্রায় দুবছর তীব্র দমননীতি চালিয়েও সরকার চুয়াড়দের বাগে আনতে পারে নি। শেষপর্যন্ত বিদ্রোহ প্রশমনের জন্য সরকার ভেদনীতির আশ্রয় নেয় এবং - 
  1. পাইকদের নিষ্কর জমিগুলি ফিরিয়ে দেয়। 
  2. পাইকদের একাংশকে জমিদারদের সুপারিশের ভিত্তিতে পুলিশের কাজে নিয়োগ করা হয়। 
  3. জমিদারদের আশ্বস্ত করা হয় রাজস্ব বাকি পড়লেও, তাদের জমিদারি নিলামে উঠিয়ে বিক্রি করা হবে না 
  4. পাইক ও চুয়াড়দের ওপর খুব অল্প পরিমানে রাজস্ব আরোপ করা হয়। 
এইসব ব্যবস্থার ফলে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া, ১৮১৬ খ্রিঃ নাগাদ সমগ্র জঙ্গলমহল এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। 

গুরুত্ব ও ফলাফল 

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক গুলি হলো - 
  1. চুয়াড় বিদ্রোহ ছিলো ভারতের প্রথম আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ
  2. একে অন্যতম সফল আদিবাসী বিদ্রোহও বলা যেতে পারে। কারন যে সমস্ত ক্ষোভের কারনে চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করেছিলো, বিদ্রোহ শেষে সে সবই কোম্পানি সরকার মেনে নিয়েছিলো। পাইকদের নিষ্কর জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের পুলিশ বাহিনীতে নিযুক্ত করা হয়। জমিদারদের উচ্ছেদ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। 
  3. এছাড়া, পৃথক জঙ্গলমহল জেলা গঠন করে সরকার চুয়াড়দের পৃথক সত্ত্বা ও স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে মেনে নেয়। 
  4. ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষন নীতির বিরুদ্ধে সংগঠিত চুয়াড়দের এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালের বিদ্রোহীদের কাছে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। 
  5. জমিচ্যুত হওয়া ও উচ্চ ভূমিরাজস্ব এই বিদ্রোহের প্রধান কারন ছিলো। তাই এই বিদ্রোহ আদিবাসী বা উপজাতি বিদ্রোহ হলেও, প্রকৃতিগত দিক থেকে এটি ছিলো একটি কৃষক বিদ্রোহ

চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য 

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যের দিক গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি - 
  1. চুয়াড় বিদ্রোহ ছিলো একটি স্থানীয় বা আঞ্চলিক উপজাতি বিদ্রোহ
  2. এই বিদ্রোহ ছিলো ঔপনিবেশিক ভারতের প্রথম সংগঠিত আদিবাসী বিদ্রোহ
  3. এই বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে দুটি পর্বে চলেছিলো। প্রথম পর্ব - ১৭৬৮ খ্রিঃ, দ্বিতীয় পর্ব - ১৭৯৮ খ্রিঃ।
  4. এই বিদ্রোহের মূল চালিকা শক্তি ছিলো পাইকরা
  5. অনেক জমিদার এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন ও বিদ্রোহকে সমর্থন করেন। যেমন দুর্জন সিংহ, রানি শিরোমনি। 
  6. বিদ্রোহীরা দলবদ্ধ ভাবে লুটপাঠ ও হত্যালীলা চালিয়েছিলো। 
  7. সহিংসতা ও গেরিলা রননীতি এই বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো। 
  8. স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই বিদ্রোহের অপর উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো। 
  9. জমিচ্যুত হওয়া ও উচ্চ ভূমিরাজস্ব এই বিদ্রোহের প্রধান কারন ছিলো। তাই এই বিদ্রোহ আদিবাসী বা উপজাতি বিদ্রোহ হলেও, প্রকৃতিগত দিক থেকে এটি ছিলো একটি কৃষক বিদ্রোহ।

 শব্দগত অর্থ 

  • চুয়াড় - চুয়াড় একটি অবজ্ঞা সূচনা শব্দ। এই শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো অসভ্য, বর্বর ও বন্য। ইংরেজ আশ্রিত জমিদাররা চুয়াড়দের প্রতি ঘৃনা ও অবজ্ঞা বশত তাদের চুয়াড় বা অভদ্র নামে অভিহিত করেছিলো। পরবর্তীকালে ইংরেজ আধিকারিকদের নথিপত্রে জঙ্গলমহলের এই আদিবাসী সম্প্রদায়কে চুয়াড় নামেই নথিভুক্ত করা হয়েছিলো। 
  • পাইক - জঙ্গলমহলে স্থানীয় জমিদারদের অধীনে চুয়াড়দের একাংশ সৈনিক বা পুলিশের কাজ করতো। এদেরকে পাইক বলা হতো। 
  • পাইকান - পাইকদের কাজের বিনিময়ে ভোগ করা নিষ্কর জমি পাইকান নামে পরিচিত। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post