মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা

এদেশে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে ইংরেজরা যে "ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার" প্রবর্তন করেছিলো, উনিশ শতকের শেষের দিকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। যে সমস্ত ভারতীয় চিন্তাবিদ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বিকল্প শিক্ষা পদ্ধতির কথা বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। 

মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা
মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা 

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনার মূল বক্তব্য 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনার মধ্যে মূল দিক ছিলো তিনটি। যথা - 

  • এক, তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার "মূল ধারা" বা "পদ্ধতির" একেবারেই বিরোধী ছিলেন। কারন ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় জীবনাদর্শ, ঐতিহ্য ও রীতিনীতি কে কোন মূল্যই দেওয়া হয় নি। 
  • দুই, ঔপনিবেশিক "শিক্ষা পদ্ধতি" ও "ভাবধারার" মধ্যে প্রকৃতি ও মানুষের কোন সমন্বয় ছিলো না। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন এক শিক্ষা ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন, যার মধ্যে প্রকৃতি ও মানুষ দুইয়েরই সংযোগ থাকবে।
  • তিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন, ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিকড় গ্রামেই নিহিত। তাই গ্রাম সমাজ ও তার অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে হবে। 

(১.) প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় 

প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - 

  1. শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, 
  2. সেখানে ব্রহ্ম বিদ্যালয় বা পাঠভবন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, 
  3. প্রকৃতির কোলে শিশুদের উন্মুক্ত পরিবেশে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। 
  4. বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, বন মহৎসব, পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব ইত্যাদির প্রচলন করেন। 

(২.) মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় 

অন্যদিকে শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সমন্বয় ঘটাতে তিনি - 

  1. সমন্বয়বাদী ভাবধারা ও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
  2. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং তাকে প্র্যাকটিক্যালে রূপায়িত করবার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন "বিশ্বভারতী" বিশ্ববিদ্যালয়।

(৩.) গ্রামসমাজ ও শিক্ষার সমন্বয় 

  1. শিক্ষার সুফল ও সুবিধা যাতে শহরাঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেইজন্য রবীন্দ্রনাথ গ্রাম সমাজ ও কৃষির উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
  2. শিক্ষার মধ্য দিয়ে গ্রামীন পরিকাঠামো, অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন ঘটানোর কথা ভাবেন।
  3. এই উদ্দেশ্য পূরনের জন্য শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন। 

ঔপনিবেশিক শিক্ষার সমালোচনা 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। "শিক্ষা সমস্যা", "স্বদেশী সমাজ", "শিক্ষার হেরফের", "তোতাকাহিনী", "শিক্ষার বিকিরন" ইত্যাদি অসংখ্য প্রবন্ধে তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি গুলিকে তিনি তুলে ধরেন এবং শিক্ষার বিকল্প ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। 

তাঁর মতে, ভারতে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে দেশের কোন নাড়ির যোগ ছিলো না। শিক্ষার্থীদের কোন প্রানের যোগ ছিলো না, এবং সমগ্র শিক্ষা পদ্ধতিটি ছিলো "কেরানিগিরির কল" এবং "একটা প্রকান্ড ছাঁচে ঢালা ব্যাপার"। 

বস্তুতপক্ষে ঔপনিবেশিক শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে এমন কিছু দিক ছিলো যেগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেনে নিতে পারেন নি। ঔপনিবেশিক শিক্ষার এই ত্রুটিপূর্ন দিক গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি - 

(১.) মাতৃভাষা অবহেলিত

ঔপনিবেশিক শিক্ষা পদ্ধতিতে মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করা হয়েছিলো। এটিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনই মেনে নিতে পারেন নি। তিনি বিদেশী ভাষার মাধ্যমে বিদেশী শিক্ষার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। কারন - 
  • মাতৃভাষার মাধ্যমে ছাত্ররা যেকোন বিষয়ের অর্ন্তনিহিত অর্থকে যতটা সহজে আত্মস্থ করতে পারে তা কখনই তারা বিদেশী ভাষায় করতে পারে না। তাছাড়া, 
  • বিদেশী ভাষা আয়ত্ত করতে ছাত্রদের এত বেশি পরিশ্রম করতে হয় যে, তারা বিষয়ের অর্ন্তনিহিত অর্থ ও তার মূল ভাবের কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছাতেই পারে না। ফলে শিক্ষা তাদের কাছে হয়ে ওঠে "বোঝার" মতো, বিরক্তিকর, দুর্বোধ্য ও একঘেয়ে। 

(২.) মানুষের মধ্যে বিভেদ 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেছিলেন, ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতবর্ষের মানুষদের মধ্যে একটি বিভেদ সৃষ্টি করেছে। কেননা এই শিক্ষার সুযোগ একমাত্র শহরের কিছু মুষ্ঠিমেয় মানুষরাই লাভ করেছিলেন। 

মনে রাখতে হবে, ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহরাঞ্চলেই গড়ে উঠেছিলো। ভারতের সিংহভাগ লোক গ্রামে বসবাস করতেন। তারা শিক্ষার আলো থেকে দূরেই ছিলেন। তাদের শিক্ষিত করবার কোন কথা ব্রিটিশ শিক্ষা নীতিতে ছিলো না।

 আসলে ঔপনিবেশিক শিক্ষা নীতিতে সকলকে শিক্ষা দানের কথাও বলা হয় নি। মেকলের ফিলট্রেশন থিওরির কথা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়। কিছু মুষ্ঠিমেয় মানুষকে শিক্ষিত করে ইংরেজরা আসলেই তাদের ঔপনিবেশিক স্বার্থ পূরন করতে চেয়েছিলেন।

 রবীন্দ্রনাথ তাই ঔপনিবেশিক শিক্ষা নীতি কে জাতীয়তা বিরোধী বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর মতে, বিদেশীদের মুখাপেক্ষী না থেকে, এজন্য আমাদের নিজেদের শিক্ষার জন্য নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। 


(৩.) পুঁথিগত ও যান্ত্রিক শিক্ষা 

পাশ্চাত্য শিক্ষা পদ্ধতি ছিলো পুঁথিগত ও যান্ত্রিক। কোন ক্রমে মুখস্ত করিয়ে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়াই ছিলো এই শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র লক্ষ্য। 

এই শিক্ষা গ্রহণের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কোন আনন্দ ছিলো না। স্বাধীনতাও ছিলো না। চার দেওয়ালের মধ্যে দশটা - চারটা নিয়মের অনুশাসন এখানে ছাত্রদের পড়াশোনা করতে হতো। ফলে তাদের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ, ব্যক্তিসত্ত্বা এবং সৃজনশীলতা ইত্যাদি কোন কিছুরই বিকাশ ঘটতো না। রবীন্দ্রনাথ তাই ঔপনিবেশিক শিক্ষার ইস্কুলকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন "একটা প্রকান্ড ছাঁচে ঢালা কল"। 

(৪.) ডিগ্রি অর্জন মূল লক্ষ্য 

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, সব দেশেই শিক্ষা ব্যবস্থার দুটি উদ্দেশ্য আছে। একটি ছোট উদ্দেশ্য, শিক্ষাকে ব্যবহারিক কাজে লাগানো অর্থাৎ ডিগ্রি লাভ করে তাকে উপার্জনের লক্ষ্যে ব্যবহার করা। অপর বড়ো উদ্দেশ্যটি ছিলো মানবজীবনের পূর্নতাসাধন। 

কিন্তু ঔপনিবেশিক শিক্ষা ছোট উদ্দেশ্যটি অর্থাৎ কোনরকমে একটি ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট অর্জনে উৎসাহিত করে তোলে। পাঠ্যক্রমের সবটুকু আত্মস্থ না করেও, এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেনী, তৃতীয় শ্রেণী ইত্যাদি কোন একটি ডিগ্রি লাভ করতো। 

অর্থাৎ অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাঠ্যক্রমের সম্পূর্ণ শিক্ষাকে আত্মস্থ না করেই উতরে যেতো। ফলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই অসম্পূর্ণ থেকে যেতো এবং শিক্ষা অর্জনের মধ্যে কোন সমতা থাকতো না। ফলে এই শিক্ষা গ্রহণের পর অবধারিত ভাবেই মানুষে মানুষে বিভেদ ও বৈষম্য সৃষ্টি হতো, যা কখনই একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থার চরিত্র হতে পারে না। 

তাছাড়া, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো "মনুষ্যের পরিপূর্ণ বিকাশ" ও "ব্যক্তিত্বের বিকাশ", যা কখনই ঔপনিবেশিক শিক্ষা কাঠামোতে গুরুত্ব পায় নি। 

(৫.) দেশীয় শিক্ষার অবহেলা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশীয় শিক্ষাকে অবহেলা করা হয়েছিলো। ওপর থেকে ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্যের বিষয় সমূহকে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এই শিক্ষার সঙ্গে দেশের কোন নাড়ির যোগ ছিলো না। 

কেননা ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় জীবনাদর্শ, ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতিনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুই  অবহেলিত ছিলো।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই রবীন্দ্রনাথের মতে, ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিলো জাতীয়তাবিরোধী একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ঔপনিবেশিক আজ্ঞাবাহী একদল কেরানি ও অধস্তন তৈরি করা। ভারতীয়দের পরাধীন করে রাখাই ছিলো এই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। এইজন্য ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রদের স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তি, স্বাধীন সত্তা, ও স্বাধীন চিন্তা ভাবনার কোন বিকাশ ঘটে নি। 

(৬.) গনশিক্ষার ধারা উপেক্ষিত 

যে কোন দেশে শিক্ষার বিস্তারে গনশিক্ষা, লোকশিক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঔপনিবেশিক শিক্ষা প্রবর্তনের আগে ভারতে কবিগান, পুতুল নাচ, যাত্রা ইত্যাদি লোক শিক্ষা ও নানা সাংস্কৃতিক প্রচারনার মধ্য দিয়েই গন শিক্ষার ধারা প্রবাহিত হয়ে এসেছিলো। 

কিন্তু ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় গন শিক্ষার ধারাকে সম্পূর্ণ ভাবেই উপেক্ষা করা হয়। তাছাড়া, ঔপনিবেশিক শিক্ষায় মাতৃভাষাকে এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে উপেক্ষা করায় গনশিক্ষার ধারা একেবারেই রুদ্ধ হয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে ঔপনিবেশিক শিক্ষার এটি ছিলো একটি বড়ো ক্রুটি। 

(৭.) চার দেওয়ালের মধ্যে শিক্ষা 

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার আরেকটি সমালোচনার দিক ছিলো, এই শিক্ষা ছিলো প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ। খাঁচায় বন্দী তোতাপাখীর মতো কিছু বুলি মুখস্ত করানোই ছিলো এই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য। 

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই শিক্ষা ব্যবস্থাতে শিক্ষার্থীদের শরীরমনের কোন বিকাশ ঘটতো না। মৌলিক চিন্তা ভাবনাকল্পনা শক্তিরও বিকাশ ঘটতো না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভে কোন আনন্দও লাভ করতো না। 

এই সমস্ত কারনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের জীবনে "অসম্পূর্ণ" এবং আমাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে "অসামঞ্জস্য পূর্ন" বলে মনে করেছিলেন । এই বিকলাঙ্গ শিক্ষা ধারার বদলে তাই তিনি বিকল্প শিক্ষা ভাবনার কথা চিন্তা ভাবনা করেন। 

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনার মূল দিক

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা চিন্তার প্রধান দিক গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি - 

(১.) শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, জীবনের যা লক্ষ্য, শিক্ষার লক্ষ্যও তা'ই - শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন। সর্বাঙ্গিন বিকাশ বলতে তিনি শুধু মস্তিষ্কের বিকাশের কথা বলেন নি। দেহ, মন, এবং শিক্ষার্থীদের হৃদয়ের পূর্ণ বিকাশ সাধনের কথা বলেছিলেন। 

তাঁর মতে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষের ভিতরে সুপ্ত সৃজনশীল শক্তিকে জাগ্রত করা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি সৃষ্টি করা। অর্থাৎ বলিষ্ঠ, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন মানুষ তৈরি করাকেই রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য বলে মনে করেছিলেন। 

(২.) স্কুলকে অস্বীকার 

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনার একটি প্রধান দিক হলো স্কুলকে অস্বীকার করা বা উপেক্ষা করা। রবীন্দ্রনাথের মতে, চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ ইস্কুল নামক কলে কখনই মানব শিক্ষা সম্পূর্নতা লাভ করতে পারে না। 

তিনি তাই উন্মুক্ত পরিবেশে সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে  শিশু শিক্ষার কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে,শিশুর কাছে শিক্ষা হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার একটি অঙ্গ। সেটা কখনই ক্লাস নামধারী খাঁচার জিনিস হবে না। 

(৩.) প্রকৃতির কোলে শিক্ষা 

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, শিক্ষার পরিবেশ কখনই চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। কারন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কখনই শিক্ষা সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। তাঁর মতে, দুটি পরিবেশ মানুষের সর্বাঙ্গিন বিকাশ ঘটায় - একটি সামাজিক পরিবেশ, অন্যটি প্রাকৃতিক পরিবেশ। 

সামাজিক পরিবেশ থেকে মানুষ পায় তার ভাষা, ভাবসম্পদ ও রীতিনীতি। অন্যদিকে দেহ, মনের উন্নতির জন্য মানুষ ঋনি প্রকৃতির কাছে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ খোলা আকাশের নীচে এবং উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে ব্রহ্ম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃতির কোলে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। 

(৪.) শিক্ষা হবে আনন্দময় 

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, শিক্ষা হবে শিশুর কাছে আনন্দদায়ক। শিশুরা উন্মুক্ত পরিবেশে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। রবীন্দ্রনাথ তাই খাঁচায় বন্দী ইস্কুলকে বাদ দিয়ে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে শিশুদের শিক্ষার কথা ভেবেছিলেন। যাতে শিশুরা খেলতে খেলতে শিখতে পারে, প্রকৃতির অপরূপ ঋতু বৈচিত্র্যকে উপলব্ধি করে তারা নিজেদের হৃদয় ও মনের বিকাশ ঘটাতে পারে। 


(৫.) মাতৃভাষায় গুরুত্ব আরোপ
 

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিশু যে কোন বিষয় খুব সহজেই বুঝতে পারে। সেই বিষয়টি নিয়ে মৌলিক চিন্তা ভাবনাও করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ তাই চেয়েছিলেন, শিক্ষার মাধ্যম হোক মাতৃভাষা। কারন মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম। তার কোন বিকল্প নেই। 

(৬.) ভারমুক্ত পরিবেশ 

রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন, শিশু শিক্ষার পরিবেশ হবে, সম্পূর্ণ ভয় মুক্ত এবং ভারমুক্ত। শিক্ষা যাতে শিশুর কাছে মানসিক বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্য তিনি শিশুদের অবাধ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এজন্য প্রথাগত ইস্কুলের কংক্রিটের বিল্ডিং এর আবদ্ধ পরিবেশ, মাস্টারমশাইয়ের শাসানি, দশটা - চারটা নিয়মের গ্যাঁড়াকল, পরীক্ষা ব্যবস্থার ভীতি, মুখস্থ নির্ভর শিক্ষন পদ্ধতি ইত্যাদি সব কিছুকেই তিনি অস্বীকার করেন। 

একবার শান্তিনিকেতনের এক শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের কাছে ছাত্রদের দুরন্তপনার অভিযোগ করলে রবীন্দ্রনাথ ঐ শিক্ষককে বলেছিলেন, দেখুন আপনার বয়সে তো আর ওরা গাছে চড়বে না। এখন একটু চড়তে দিন। গাছ যখন ডালপালা মেলেছে, তখন সে মানুষকে ডাক দিচ্ছে। ওরা ওতে চড়ে থাকলেই বা। 

অর্থাৎ মুক্ত পরিবেশে, অবাধ ঘুরে বেরিয়ে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ছাত্ররা শিক্ষা লাভ করুক, এটিই কবিগুরু চাইতেন। 

(৭.) মনের পরিপূর্ণ বিকাশ 

রবীন্দ্রনাথ চাইতেন, শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুদের শুধু মস্তিষ্কের বিকাশ'ই নয়, হৃদয় ও মনেরও পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটুক। বিশ্বপ্রকৃতির সৌন্দর্য যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে উপলব্ধি করতে পারে, সেইজন্য রবীন্দ্রনাথ শিল্পচর্চাকে বিশেষ করে সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা, চারুকলা, ইত্যাদি নান্দনিক বিষয় গুলিকে পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করার পক্ষপাতি ছিলেন। 

(৮.) সমন্বয়বাদী চেতনার বিকাশ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন, মুক্ত আকাশের নীচে এবং  উন্মুক্ত প্রকৃতির পরিবেশে শিক্ষা লাভ করে "হৃদয় ও মন" দুটি দিক থেকেই মানুষের উদারনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটুক। কারন উদারনৈতিক চেতনা থেকেই সমন্বয়বাদী চেতনার বিকাশ ঘটবে। 

রবীন্দ্রনাথ চাইতেন, মুক্ত মনে মানুষের সঙ্গে মানুষের,সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্কৃতির, সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার সমন্বয় ঘটুক। তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষা পদ্ধতিকে সমালোচনা করলেও, পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্বকে উপেক্ষা করেন নি। তিনি চাইতেন প্রাচ্যের জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্যের জ্ঞান ও সভ্যতার উৎকৃষ্ট দিক গুলির সমন্বয় ঘটুক। তাঁর মতে, মিলন ও সমন্বয়'ই নতুন সৃষ্টিশীলতা ও প্রানের স্পন্দনের জন্ম হয়। 

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনার বাস্তবায়ন 


 প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা :-

(১.) শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা 

রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর "প্রকৃতি ভাবনার" বাস্তবায়ন ঘটাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন - শান্তিনিকেতন। 

১৮৬৩ খ্রিঃ রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে ভুবনডাঙ্গা গ্রামে ২০ বিঘা জমি কিনে প্রথমে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে এই স্থানেই তার শিক্ষা ভাবনাকে রূপায়িত করবার জন্য এর নতুন নামকরন করেন শান্তিনিকেতন। 

রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেছিলেন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বন করেই বেঁচে থাকে। মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই তাঁর মতে, শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতির একটি সমন্বয় গড়ে তোলা দরকার। এই সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ভারতের তপোবনের আশ্রমিক শিক্ষাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। 

(২.) ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা 

১৯০১ খ্রিঃ ২২ ডিসেম্বর, বোলপুরের নিকটবর্তী ভুবনডাঙ্গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা পাঠভবন স্কুল। শান্তিনিকেতনে উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে, খোলা আকাশের নীচে রবীন্দ্রনাথ এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শিশুরা যাতে মারধর বা কড়া শাসনের কারনে শিক্ষাকে ভয় না পায়, সেটাই ছিলো এই বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। 

 শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষন সংক্রান্ত ৩ টি মৌলিক নীতি প্রত্যক্ষ ভাবে প্রয়োগ করেছিলেন।
 এগুলি হল -
  1. এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া, 
  2. শিক্ষার্থীদের নিজেদের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ানো
  3. খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করা। 
ব্রহ্মচর্যাশ্রমে শিক্ষার্থীদের আত্মিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করার জন্য নানা ধরনের সৃজনশীল কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের সমাজ উন্নয়ন মূলক কর্মসূচিও গ্রহন করা হয়। 

(৩.) প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতাবোধ 

ছাত্ররা যাতে বিশ্বপ্রকৃতির সৌন্দর্যকে সহজে উপলব্ধি করতে পারে সেজন্য রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে -
  •  শিল্পচর্চাকে বিশেষ করে সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা, ইত্যাদি সৃজনশীল বিষয় গুলিকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেন। 
  • শিল্পকলার চর্চার জন্য ১৯০৯ খ্রিঃ সেখানে প্রতিষ্ঠিত করেন কলাভবন। 
  • ১৯২৫ খ্রিঃ শান্তিনিকেতনে পঞ্চবটি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বৃক্ষরোপন উৎসবের প্রচলন করেন। 
  • এছাড়া, বিশ্বপ্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে একাত্মতাবোধ জাগরনের জন্য বসন্ত উৎসব, পৌষমেলা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। 

শিক্ষা ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সমন্বয় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী ভাবনা :- 

(১.) মানুষের সঙ্গে মানুষের সমন্বয় 

শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক শিক্ষার পরবর্তী স্তরে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার কথা ভেবেছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন, আমি প্রথমে শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ভেবেছিলাম মানুষকে বিশ্ব প্রকৃতির উদার পরিবেশে মুক্তি দেব। কিন্তু ক্রমে আমার মনে হলো মানুষে মানুষে যে বিরাট ব্যবধান তাকে দূর করে মানুষকে সর্ব (সকল) মানুষের মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। 

অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ যেমন শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তেমনি পৃথিবীর সমস্ত জাতি, ধর্ম, বর্ন মানুষের সঙ্গে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্মিলন ও সমন্বয়ের লক্ষ্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। 

(২.) বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা 

১৯১৯ খ্রিঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন এবং ১৯২১ খ্রিঃ ২২ ডিসেম্বর বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। 

বিশ্বভারতী শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ ছিলো - "পৃথিবী ব্যাপী সংস্কৃতি"। রবীন্দ্রনাথের মতে, বিশ্বভারতী হবে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যার চরিত্র হবে আর্ন্তজাতিক। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয় সাধনই শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হবে না, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি ও সমাজের জ্ঞান চর্চা ও সমন্বয়ের মিলন ক্ষেত্রও হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। 

বস্তুতপক্ষে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ভাবাদর্শের ভিত্তিতে সর্ব বিদ্যার প্রসার এবং বিশ্বমানব তৈরি করাই ছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের কোন ভেদ ও সংকীর্ণতা থাকবে না। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর বিশ্বভারতীর দায়িত্ব ভারত সরকার গ্রহন করে এবং ১৯৫১ খ্রিঃ এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও মর্যাদা লাভ করে। পদাধিকার বলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক হন ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং আচার্য হন ভারতের প্রধানমন্ত্রীপরিদর্শকের অনুমোদন ক্রমে এর উপাচার্য নিযুক্ত হন। 

স্বাধীনতা লাভের পর বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্য হন জওহরলাল নেহেরু এবং প্রথম উপাচার্য হন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শিক্ষা ও গ্রামোন্নয়নের সমন্বয় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন ভাবনা :-  

শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা ও গ্রামোন্নয়ন 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তার শিক্ষা ভাবনাকে কার্যকর করতে গিয়ে শান্তিনিকেতন ভাবনার পরিপূরক হিসাবে গড়ে তোলেন শ্রীনিকেতন। 

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিকড় গ্রামেই নিহিত। তাই তার মতে, শিক্ষার মধ্য দিয়ে গ্রাম সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যদি এটি আমরা করতে না পারি তাহলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে এক বিরাট ব্যবধান থেকে যাবে এবং তা মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ ও বৈষম্য তৈরি করবে। 
রবীন্দ্রনাথ তাই আধুনিক জ্ঞান ও শিক্ষাকে গ্রামীন পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করে গ্রাম সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এটাই ছিলো তাঁর শ্রীনিকেতন ভাবনার মূল কথা
  • এজন্য রবীন্দ্রনাথ নিজ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিদেশে কৃষিবিদ্যা শেখাতে পাঠান। বৈজ্ঞানিক প্রথায় উন্নত বীজ, সার ও সেচের ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের বিতরনই ছিলো এর মূল লক্ষ্য। 
  • ১৯২২ খ্রিঃ সুরুল গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সূচনা করেন, পরে যার হয় শ্রীনিকেতন। 
  • শিলাইদহে ৮০ বিঘা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটি আধুনিক কৃষিখামার গড়ে তোলেন। এছাড়া, স্বল্প সুদে চাষীদের ঋন দেওয়ার জন্য একটি কৃষিব্যাংক স্থাপন করেন। 
  • এছাড়া, গ্রামীন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য তিনি কুটির শিল্পে গ্রামে গ্রামে সমবায় প্রতিষ্ঠা ও তার বিপননের জন্য গ্রামীন মেলার আয়োজন করেন। 
রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন ভাবনা পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীকে প্রভাবিত করেছিলো এবং তিনি গ্রামোন্নয়নের কর্মসূচিকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post